আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুর্ব বাংলা -১৯৭১ : ফিরে দেখা

পুর্ব বাংলা -১৯৭১ : ফিরে দেখা চল্লিশ বছর আগে ১৬ ই ডিসেম্বর,১৯৭১ সালে ঢাকার পতন হয় । সেই দিন পাকিস্থানের সেনাবাহিনী ভারতীয় লে: জে: জাগজিৎ সিং অরোরার নিকট অত্মসমর্পন করে,– যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর সবচেয়ে বড় আত্ম-সমর্পনের ঘটনা। এটা ছিল ১৯৬৭-৭৪ সালের সেই উত্তাল সময় যখন দুনিয়া জোড়া চলছিল বিপ্লেবের জোয়ার । পাকিস্তানের জন্মের ২৪বছর না পেরোতেই বিপ্লীরা একে ছুড়ে ফেলে দেয় । জন্মলগ্নে পাকিস্তানের দু ’টি ভাগছিল ।

র্পুব ও পশ্চিম পাকিস্তান । সেই উত্তাল সময়টাতেই প্রথম পাকিস্তানী জনগনের প্রকৃত সাধারণ ঐক্য ঘটেছিল, যা ছিল শোষণ ও বঞ্চনার বিরোদ্বে । পেশোয়ার থেকে চট্্রগ্রাম পর্যন্ত রাজপথে ছিল একই ম্লোগান ’সমাজতন্ত্র’ । এই আন্দোলন যদি ও ছাত্রদের বিদ্রোহের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল নভেম্বর ১৯৬৮ সালে । ক্রমে যুক্ত হয় কৃষক-শ্রমিক জনতা ।

ইহা শুধু স্বৈরাচারী আয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরোদ্বে ছিলনা বরং তা ছিল সমগ্র ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যব¯থা ও এর র্আথ-সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি একটি প্রচন্ড চ্যালেঞ্জ । তখন সাম্রাজ্যবাদ এবং এই উপ মহাদেশের শাসকগৌষ্ঠীর প্রকৃত স্বরুপ ঊন্মোচিত হয়েছিল । আন্দোলনকারীদেরকে বিভ্রান্ত করতেই তারা প্রথমে ব্যবহার করে নির্বাচনকে। কিন্তুু যখন বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠলো , বিশেষ করে র্পূব বাংলায়, তখনই তারা মতা না ছেড়ে শুরু করল র্নিবিচার নরহত্যা, খুন, ধর্ষন এবং ছাপিয়ে দিল ভারত-পাস্তিানের মধ্যে আরও এক নির্মম যুদ্ব । সে যাইহোক, যখন মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন পূর্ব-বাংলার বৃহৎ বামপন্থী রাজনৈতিক দলটি আন্দোলন ত্যাগ করল, তখনই সাধারন মানুষের আন্দোলন সংগ্রাম সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হল।

শ্রেণী চেতনা থেকে যে আন্দোলন উদ্ভুত হয়েছিল তা রুপান্তরিত হলো জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে যার নেতৃত্বে ছিলেন ধনিক শ্্েরণীর প্রতিনিধি শেখ মুজিবুর রহমান । চীনের সাথে আয়ুবের ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক ছিল । সেই সম্পর্কের সুবাদে তিনি পিকিং পন্থী বাম রাজনৈতিক নেতাদেরকে বুঝিয়েছিলেন যে তিনি ও তার শাসন ব্যবস্থা সাম্রাজ্রবাদ বিরোধী আন্দোলনে লিপ্ত । পুর্ব বঙ্গে মাওলানা ভাসানীর ব্যাপক জনপ্রীয়তা ছিল । ভাসানীর ১৯৭০ সালের নির্বাচন বর্জন খেটে খাওয়া, মেহেনতী মানুষকে বিপ্লবী নেতৃত্ব থেকে ক্রমান্নয়ে ভিন্ন পথে পরিচালিত করে ।

শেখ মুজিবুর রহমানে আওয়ামী লীগ কে ফাঁকা মাঠে গোল করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় । যার ফলে জাতীয় পরিষদের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন পেয়ে পুর্ব পাস্তিানে ব্যাপক বিজয় অর্জন করে। মুলত: আওয়ামী লীগ ছিল ধর্মরিপে, ধনতান্ত্রিক এবং রনশীল একটি দল । প্রধানত: পেটি –বুর্জুয়াদের সমর্থনই ছিল এর প্রধান শক্তি । এই দলটি পাকিস্তানী সামরিক শাসক ও অভিজাত শ্রেণীর বিরোদ্বে বাঙ্গালী সমাজের ুব কে কাজে লাগাতে সম হয়েছিল ।

মুজিব সফলভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠিও অভিজাত শ্রেণীর বিরোদ্বে বাঙগালী জাতিয়তাবাদী চেতনাকে রাজনৈতিক দরকষাকষির প্রধান অস্র হিসাবে ব্যবহার করতে পেড়েছিলেন । সাম্রজ্যবাদ ও ভারতীয় ধনিক অভিজাত শ্রেণী তাকে শ্রেণীস্বার্থে সমর্থন ও লালন করেছিল –ধনতান্তিক শাসন ব্যবস্থাটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য । কিন্তু যুদ্ব প্রিয় সৈনিক শাসন কর্তৃক দশকের পর দশক ধরে অবিচার এবং চলমান আন্দোলন পুর্ব বঙ্গের জনগনকে দিনে দিনে বিুদ্ব করে তুলছিল যা পশ্চিম পাকিস্তানী খেদাও আন্দোলনে রূপ নেয় । জাতিগত শোষণ ও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করে বাঙ্গালী সমাজকে বিদ্রোহী করে তুলতে । ১৯৪৮-১৯৫১ সালে পাকিস্তানের যে উন্নয়ন বাজেট ছিল, এর মাত্র ২২% অর্থ বরাদ্ব দেয়া হয় পূর্ব পকিস্তানে -যেখানে দেশের অর্ধেকের চেয়ে ও বেশী মানুষ বাস করছিল ।

এছাড়া ও র্পুব পকিস্তান থেকে সংগৃহিত অর্থ ২০ বছরের ও বেশী সময় ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজধানীতে প্রতিবছর ৩ বিলিয়নের ও বেশী অর্থ খরচ করে আসছিল । ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী র্ঘুণিঝড়, এবং ২০০,০০০ ল বাঙ্গালীর সহায়সম্পদ এক ভয়াবহ আগূনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় সামরিক বাহিনী জনগনকে ত্রান প্রদানে সর্ম্পুন ব্যার্থতার পরিচয় দেয় । বাঙ্গালী জনসাধারনের প্রতি নির্যাতনবৃদ্বি, গেড়িলা যুদ্বের উত্থান সশস্র প্রতিরোধ আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় । এমনকি সেনাদপ্তর ও ছাউনী গুলোতে দেখা দেয় অস্থিরতা ও আনুগত্যহীনতা । বাঙ্গালী বাবুচির্, ধোপা এবং সাধারন কাজের লোকেরা ও কাজ ছেড়ে চলে যায় ।

বাজারের দোকানদারগণ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর কাছে পণ্য বিক্রি করতে অ¯ী^কার করে। সামরিক বাহিনীর আক্রমনের কোড নাম দিয়েছিল ’অপারেশন ব্লিথ্জ’ যাহা শুরু হয়ে ছিল ২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে - যা এক র্নিমম হত্যা যজ্ঞের সূচনা করে । নির্বিচারে নারী ধর্ষন ছিল নির্যাতনের আর এক জঘন্য ও র্নিমম অত্যচারের উদাহরণ । পাকিস্তানী রেজিম্যন্ট র্পুব বঙ্গে এমন এক গনহত্যায় লিপ্ত হয় যেমন ভিয়েতনামে জে: গ্রেসীর নেতৃত্বে করা হয়েছিল । জেনারেল টিক্কা খান বাঙ্গালী নিধনের নির্মম কসাইয়ে পরিনত হয় ।

মন্টোগোমারীর সৈনিকরা যেমন করেছিল ঊত্তর আফ্রিকায় । জেনারেল টাঁইগার’ নিয়াজি যিনি পাকিস্তানের পে আত্ম-সর্মপন দলিলে স্বার করেছিলেন -তিনি র্গব করে লিখেছিলেন আমার ডাকনাম ’ঁটাইগার’ দিয়েছিলেন ব্রিগ্রেডিয়ার ওয়ারেন, কমান্ডার,১৬১ ইনফেন্ট্রি ব্রিগেট, দিত্বীয় বিশ্ব-যুদ্বের সময়-আমার কৃতিত্বের জন্য । অপারেশন ব্লিথজ পরিচালনা করছিল পাকিস্তান সেনাবাহনিী, তাদেরকে সহায়তা করছিল জামাত-ই-ইসলামী । সেই দলটি কতিপয় প্যারা-মিলিটারী বাহিনী গঠন করে । যেমন : আল বদর, আল শামস ও রাজাকার বাহিনী-আর তাদেরকে সার্বিক সহায়তা করে মার্র্কিন গোয়েন্দা সংস্থা –সি.আই. এ।

জেনারেল হাকিম আরশাদ কোরাইশী তার লিখিত বইয়ে উল্লেখ করেন যে,”মাওলানা তোফায়েল মাহমুদ, আমীর, জামাত-ই-ইসলামী সেনা হস্তেেপর পর আমাদের সাথে সাাৎ করেন এবং বিশেষ করে তাদের দলীয় লোকদের দ্বারা গঠিত রাজাকার বাহিনীর বিরত্ব ভুমিকা সর্ম্পকে জানতে চান ”। ঐতিহাসিক সত্য হলো কোন সেনাবাহিনী যতই শক্তিশালী হোকনা কেন-জনগন জেগে উঠলে তাকে কেউ আর দমিয়ে রাখতে পারে না । একটি উপাখ্যান চালু আছে যে, ভারতীয় বাহিনীর কাছে পকিস্তানী বাহিনী পরাজিত হয়েছে । কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো যে, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এর আগেই - গন জাগরণ,গন অসহযোগ,হরতাল এবং মুক্তিবাহনিী ও বাম পন্থী সংগ্রামীদের সশস্র প্রতিরোদের মূখে পঙ্গু ও অর্কাযকর হয়ে পড়েছিল। র্স্মতব্য যে, ভারতীয় বাহনিীর অভিযানের প্রধান উদ্বেশ্য ই ছিল পাকিস্তানী বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা বাম পন্থার শ্রমিক, কৃষকদের সভা ও সংগঠন সমূহকে ধ্বংস করে দেয়া ।

অল্প সময়ের মধ্যেই ইন্দিরা গান্ধীর নিকট এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, ভারতের আভ্যন্তরীন স্থিতিশীলতা সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে । বাম পন্থার শ্রমিক, কৃষকদের সংগ্রাম ও আন্দোলনকে প্রতিরোধের জন্য এই সতর্কতা মুলক ব্যবস্থা গ্রহন অতি আবশ্যক হয়ে পড়েছিল । বিশেষ করে পশ্চিম বঙ্গে । যেখানে ইতিমধ্যেই বামরা মজবুত গনভিত্তি তৈরী করে ফেলেছে, কৃষকদের আন্দোলন - সংগ্রাম রাজনৈতিক ও সামাজিক েেত্্র অস্থিরতা সৃষ্ঠি করেছে দেখে ভারতীয় শাসক গৌষ্ঠি আতংকিত হয়েপড়ে । টাইম ম্যাগাজিনে –পিটার হ্যাজ র্হাষ্ট মন্তব্য করেন যে,”লাল বাংলা দিল্লীকে এক মহাবিপদ সংকেত দিচ্ছে- যা ইসলামাবাদের চেয়ে ও গুরুতর” ।

একটি ঐক্যবদ্ব সমাজতান্ত্রিক বাংলা দনি এশিয়ায় এক বিপ্লবী ঝড় তুলতে পারত । সম্ভাব্য এই ঝড়ের/বিপ্লবের কারনেই আমেরিকা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর প্রেরণ করেছিল –পাছে যদি ভারত র্ব্যাথ হয় । কিন্তু একটি বিপ্লবী পার্টি ও লেলিন বাদী সাহসী নেতৃত্বে অভাবে সেই সম্ভাব্য বিপ্লবের মৃত্যু ঘটে । বিগত চল্লিশ বছরের ধনতান্ত্রিক স্বাধীনতা বাংলার সাধারণ জনগনকে দিয়েছে শুধুমাত্র দরিদ্রতার কষাঘাত ও দু:খ দুর্দশা । কোন কোন েেত্র পরাধীনতার আমলের চেয়ে ও অবস্থার অবনতি ঘটেছে ।

ভারতীয় শ্রমজীবীদের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ও পাকি¯তানের সাধারণ জনগণের জীবনে চরম র্দুদশা তাদের নিত্য সঙ্গী । কিন্তু ১৯৭১ সালে এই উপমহাদেশের একটি অংশের বিপ্লবের প্রকৃত কারন সমুহ সমগ্র এলাকার জন্য একটি বড় সতর্ক বার্তা। এই এলাকার পারস্পরিক সর্ম্পক হলো একই সূত্রে গাথাঁ । আর তা হলো, ইতিহাস,ভৌগলিক অবস্থান, সামাজিক অবস্থা এবং সংস্কৃতি। আফগানিস্থান থেকে র্বামা র্পযন্ত বিপ্লব সাধন একটি আন্ত: সর্ম্পকযুক্তবিষয় - যা প্রকৃত পইে হতে পারে একটি ’র্সাক’(দণি এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগীতা সংস্থা ) তৈরী হতে পারে যেমন দণি এশিয়া সমাজতান্ত্রিক স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন ।

এখন ও এ অঞ্চলে পুনরায় গনজাগরনের ও বিদ্রোহের সম্বাভনা বিদ্যমান । দরিদ্রতার প্রকৃত কারন সমূহ অনাহার,অসুখ-বিসুখ, অশিা, বেকারত্ব, দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতি, পশ্চাৎপদ অবকাঠামো, ধর্মীয়-অন্ধত্ব, বঞ্চনা-শোষন ও সন্ত্রাস ইত্যাদী একই রকমভাবে বিদ্যমান । তা হলে ভিন্নভাবে এর সমাধান হতে পারে কি ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.