আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নোবিতা রিফুর রম্য লেখার চেষ্টা এবং একটি কাক ডাকা ভোর

যে জন দিবসে মনের হরষে পোস্ট পড়িয়া দেয় না কমেন্টখানি... তাহার উপর জ্বলিল ভাইয়ের বদনজর পড়িবে লইও জানি... কি যেন নেই! ঘুম থেকে কেবল উঠলুম, এখনও চক্ষু মেলি নাই। তাও টের পাইতেসি, কি যেন নাই। চক্ষু বন্ধ করিয়াই ভাবিতে লাগলুম কি না থাকিতে পারে? অনেক্ষন ভাবাভাবির পর টের পাইলাম কি নাই। জিনিষটা হইল ফ্যানের শব্দ। ফ্যানের শব্দ আবার থাকিবে না কেন? আমার ফ্যান তো বিএমডব্লিউ বা মারসিডিজের নয় যে নিঃশব্দে চলিবে।

আমার ফ্যান হইতেছে ন্যাশনাল ১নম্বর ফ্যানের ২ নম্বর এডিশন। তাইলে শব্দ হইতেছে না ক্যান? ফ্যানটা কি চুরি হইয়া গেলো? মানুষের মানিব্যাগ, মোবাইল, মন চুরি হয় শুনিয়াছি। আমার ফ্যান আবার চুরি করিল কিডা? চুরি হইতেই পারে, কারন ফ্যানটি আমার বেডরুমে থাকায় কেউ তাকে পাহারা দেওয়ার কস্ট করে নাই। চক্ষু বন্ধ করিয়াই আফসোস করিতে লাগিলুম। "আহা এ দুনিয়াতে ভালো মানুষীর দাম নেই, আমার এত বিশ্বস্ত পাখাকে কিডা চুরি করিল?" আরও অনেক কিছুই চিন্তা করতাম, কিন্তু গরমে আর চক্ষু মুদিয়া থাকা জাইতেসে না।

তাই কিঞ্চিত বাধ্য হয়েই চক্ষু মেলিলাম। চক্ষু মেলিয়াই দেখি ছাদ হতে ঝুলিয়া আমার সবুজাভ বৈদ্যুতিক পাখা আমার দিকে দাত কেলিয়ে তাকাইয়া আছে। আহ বাচলুম! তার মানে আমার পাখা চুরি হয়নি। মানির মান আল্লায় রাখে। বদ্ধ ঘর থেকে ফ্যান কি করে তক্ষকাভক্ষন (চুরি) হইল, সেই ব্যাপারে আমার পিতামাতাকে কোনোরূপ কৈফিয়ত দিতে হইবেনা ভেবে বড়ই পুলকিত বোধ করলুম।

কিন্তু পাখা ফিরে পেতেই আরেক দুশ্চিন্তা মাথায় ঢুকল। ফ্যান তো জায়গামতই হুতুম প্যাচার মতন ঝুলিতেসে, তাইলে ফ্যানের আওয়াজ কর্ণগোচর হইতেসে না কেন? ভালো সমস্যা, কারেন্ট না থাকায় কি আমার মগজও ধীরে কাজ করিতেছে? কারেন্ট! এই তো পাওয়া গিয়াছে। এই হইল সকল রহস্যের হোতা। এতক্ষনে বুঝলাম কারেন্ট না থাকায় ফ্যানের শব্দ শোনা জাইতেছিল না। উফ।

হাফ ছেড়ে বাচলুম। ঘুম থেকে উঠার ৫ মিনিটের ভিতর একটি জটিল রহস্যের মসাধান করলুম। তারমানে আমার মগজ তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন হইতেছে। ভালো। আরেকটু তীক্ষ্ণ হইলেই মনে হয় বুদ্ধি দিয়াই ক্ষৌরকর্ম সম্পন্ন করা যাইবে।

এই সব সাত পাচ ভাবিতে ভাবিতে খাট থেকে নামলুম। আজকে দাত ব্রাশ করিতেই হবে। বিগত ২দিন ব্রাশ করা হয় না। ১ম দিন পেস্ট খুঁজে পাইনি বলে ব্রাশ করিনি, আর ২য় দিন থেকে তো ব্রাশই লাপাত্তা। নাহ! আজকে যেভাবে হোক ব্রাশ করিতেই হইবে, দরকার হলে পাশের রুমের বড় ভাইয়ের কাছ থাকিয়া ব্রাশ মারিয়া দিব, কারন তাকে পরিচিত জনেরা ছোট খাট ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বলিয়া চিনে।

মহৎ কাজে ছোট খাট চুরি চামারি করিলেও মনে হয় কোন ক্ষতি হয় না। দুই দিন ব্রাশ না করিবার পর আজকে দাঁত মাজা নিঃসন্দেহে যে একটি মহৎ কাজ হইবে, সেই বিষয়ে আমার কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু ব্রাশের আগে একটি অতীব জরুলি কাজ বাকি পড়িয়া আছে। কয়েক হালি দিন আগে আমি একটি ঘামাচি পাউডার উপহার পেয়েছিলুম। চুরি করতে যাওয়ার আগে উহা মাখিয়া গেলে ক্ষতি কি? পাউডার মাখিলে নিশ্চয়ই আমাকে অত্যাধিক ভদ্র লাগিবে, যার ফলে বড় ভাই আমার মনের কুমতলব টের পাইবেন না।

বাঘের মত মিয়াউ.. মানে হালুম করে গিয়ে পাউডারের বোতল ধরলুম। ঢাকনা খুলে মাখিতে জাইব, তখই ঘটল বিপত্তি। অতি উতসাহে বোতল হইতে নিরগত পাউডার এই অধমের হাতে না পড়িয়া মেঝেতে পড়িয়া গেলো। কি আর করা। অপচয়কারি শয়তান বধুর দেবর।

অগত্যা মেঝে হইতে পাউডার খানি তুলিয়া মুখে, গলা এবং বাকি দৃষ্টিগোচর স্থানে লাগালুম। শুভকাজে দেরি করিতে নেই। জলদি পাশের রুমের দিকে পা বাড়াইলাম। পথিমধ্যে আমার দেয়ালে ঝুলানো আয়নার সাথে দেখা। আয়না যখন সামনে আসিলই, ফ্রিতে নিজের চেহারাখানা দেখিয়া লই।

আহা সেকি চেহারা। চোখ জুড়াইয়া গেলো। কিন্তু এ কার মুখমন্ডল দেখিতেছি? আফ্রিকান জুলু প্রজাতির কোন সুদর্শন যুবকের মুখ আমার আয়নায়! আমার কোন ভুল হইতেছে না তো? মনে হয় আমি অন্য কারও আয়নার সামনে চলিয়া আসিয়াছি। নাতো! আমি তো ঘর হইতেই বাহির হইনাই। তাইলে অন্য কারও আয়না ক্যামনে পাইলুম? নিশ্চয়ই এটি আমারই আয়না।

আর সুদর্শন নিগ্রো যুবকটিও আমি। কিন্তু আমাদের বংশে কোন নিগ্রো আছে বলে তো সুনিনি। এমন কি আমার বিগত জন্মদিনের ছবিগুলাতেও তো নিজেকে ফরসাই মনে হইয়াছিল। ভাবো রিফু ভাবো। হটাত মাথায় আসিল, যে গতকাল রাতে স্বপ্নে মরুভুমিতে অনেক্ষন ঘুরিয়া বেড়াইয়াছিলুম।

তাতেই মনে হয় আমার ত্বকের মেললিনের পরিমান সামান্য বাড়িয়া গিয়াছে। নাহ! তাও তো সম্ভব না। কে কবে শুনিয়াছে স্বপ্ন কখনও সত্যি হয়? তাহলে তো............ যাকগে, কাজের সময় উল্টা পাল্টা চিন্তা না করিয়া আবার আয়নার দিকে তাকালুম। এই নিগ্রো যুবকের সাথে এবার আমার কিঞ্চিত পেলুম। এই বেচারারও আমার মতন ছাগলা দাড়ি আছে।

হঠাত কি যেন ভেবে মেঝের দিকে তাকালুম, এবং সকল বিষয় জলবৎ তরলং হইয়া গেলো। কিছু মুহূর্ত পূর্বে ঘামাচি পাউডার সরাসরি মেঝেতে না পড়িয়া গত রাত্তিরে ভস্মীভূত হওয়া মশা নির্বাপক গোলোকের উপড় পড়িয়াছিল। আমি সেই ভস্ম সমেত পাউডার আমার অঙ্গে মাখিয়া ফেলিয়াছি। উফ, আরেকটি রহস্য সমাধান হইল, তার মানে আমি নিগ্র নই। আমি খাটি বাঙ্গালী।

কিন্ত চেহারা সুরতে তো এখনও আমি আফ্রিকান জুলু সাজিয়া আছি। এই রুপ নিয়া পাশের রুমে ব্রাশ চুরি করিতে গেলে জান নিয়া ফিরিয়া আসিতে পারিব কিনা তাহা অনিশ্চিত। সুতরাং এখন আমাকে আগে গোসল করিতে হইবে। আমি করিব গোসল! সে তো তাইলে এক বিরাট ইতিহাস হইবে। সর্বশেষ কবে আমি শাওয়ারের জলধারার নিচে গেছিলুম তাহা এই মুহূর্তে মনে পরিতেছি না।

যাই হোক, আজ এর একটা বিহিত করিতেই হইবে। ঝড়ের গতিতে শরীর মোচড়াইতে মোচড়াইতে বাথরুমে ঢুকলুম। ঢুকেই দেখি নোতুন বিদেশি সাবান। আহা, নিশ্চয়ই বড় ভাই গতকাল আনিয়া রাখিয়াছে। ডানে বামে না তাকাইয়া হালকা শরীর ভিজাইতে গেলুম।

কিন্তু হায়। এতকাল পরে জলধারার ছোঁয়া আমার ত্বক ভাল দৃষ্টিতে নিল না। প্রচন্ড হাড় কাঁপানো ঠান্ডার অনুভূতি আমাকে ঠেলে জলধারা হইতে বাহির কোরিয়া দিলো। কিন্তু কোন কিছুই আমাকে আজ নতুন বিদেশী সাবান হইতে দূরে রাখিতে পারিবে না। নতুন ফন্দি আটলুম।

বালতিতে পানি জমাইয়া তাতে সাবান ভিজাইয়া সারা গায়ে আচ্ছা মতন জন্মের সাবান লাগাইলাম। এই সময় বাথ্রুমের দরজার বাইরে হুটোপুটি সোনা গেলো, তার মানে সাবানের মালিক ঘুম থেকে উঠিয়া গিয়াছেন। সে টের পাওয়ার আগেই আমাকে বাথরুম হইতে পালাইতে হইবে। জলদি পুনরায় জলধারা ছাড়িতে গিয়ে মনে পড়িল কবি বলিয়া গিয়াছেন, "আমি কি আর কাউরে ডরাই? ভাঙ্গতে পারি লোহার কড়াই। " এই কবিতা মনে আশায় বল পাইলুম।

যা হইবার হইবে। এ সুগন্ধি গোলককে আজ হেলায় যাইতে দিবো না। এই ভাবিয়া আরেক দফায় তা পুরণাঙ্গ শরীরে মাখলুম। আহ কি শান্তি! আরেকবার কি মাখিব? না, আর মাখার দরকার নাই। সারা শরীরে অর্ধ শুকনো সাবান চট চট করিতেছে।

এইবার ধুয়েফেলাই উত্তম। কিঞ্চিত খুদাও অনুভাবিত হইতেসে। মনের সর্বশক্তি একত্র করিয়া জলধারার হ্যান্ডেল ঘুরাইয়া দিলাম ও মনের সকল বল একত্র করিয়া চক্ষু বুজিয়া তীব্র শীতল জলের প্রবাহ শরীরে লাগার অপেক্ষা করিতে লাগিলাম। অপেক্ষা... অপেক্ষা...অপেক্ষা... কিছু মুহূর্ত অপেক্ষা করার পরও পানির ছোঁয়া পেলুম না। আরে ব্যাটা পানি, তুই কি আসবি নাকি আমি হৃদয় খানের মতন "ছুয়ে দেউ আমায়" টাইপের সঙ্গিত শুরু করুম? নাহ! এইরকম হুমকির পরেও যখন পানির ছোঁয়া পেলুম না তখন বাধ্য হয়ে চোখ মেললুম।

দেখিলুম যে শাওয়ারে পানি নাই। হায় হায়। একেই কি বলে চোরের দশদিন আর গৃহস্তের একদিন? এতো দিন পানি পাইয়াও গোসল করি নাই বলেই কি আজ পানি আমার সাথে এরুপ করিতেছে? ইতিমধ্যে আমার ক্লাসের সময় ঘনাইয়া আসিয়াছে। আজ বোধয় তাহা মিসই হইয়া যাইবে। ইতিমধ্যে আমার বড়ভাই বাথরুমের দরজার বাইরে হাউ কাউ লাগাইয়া দিয়াছে, সম্ভবত তিনি তার সাবানের পরিনতি ইতিমধ্যেই আন্দাজ খাইয়া নিয়াছেন।

আহ! আজকে আমি শেষ। ঘুম থেকে উঠে যে কার মুখ দেখিয়াছিলাম। একটু আগে তো আমি নিজের মুখই আয়নায় দেখে বের হয়েছি, সেজন্যই কি এই দুরবস্থা? থাক, আজকে সারাদিন বুঝি আমায় বাথরুমেই আটকে থাকিতে হইবে। কমপক্ষে বড় ভাইজান অফিসে না যাওয়া পর্যন্ত এখান থেকে বের হওয়া নিরাপদ না। ইহা ভেবেই তো আমার মাথা ঘুরিতেছে।

মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়িলাম। পিছনে বাথরুমের জানলা দিয়ে রোদ উঠছে... হাজার বছরের পুরান রোদ... ****************** সকল চরিত্র কাল্পনিক  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.