আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি

৭ই মার্চ, ১৯৭১ সাল (বাংলা আর আরবি তারিখ জানি না)। আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংালির চরম দু্‌ঃসময়ে বজ্রকন্ঠে ঘোষনা দেন "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। " বাংালি জাতি যখন নেতৃত্বের অভাবে ভুগছিল, এই মহান নেতা তখন তাদেরকে নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরনা যোগান। ৪১ বছর পেরিয়ে, এবার আসুন আমরা দেখি ৭ই মার্চ, ২০১২'র দৃশ্যপট। সকাল ১০:০০ টা - সারা রাস্তা সেই ভাষন শুনতে শুনতে ভার্সিটিতে গেলাম।

প্রেসক্লাবের পর থেকে জ্যাম শুরু হল। খুবই ভাল কথা। এটার জন্যে মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম যখন গতকাল রাতেই "শো-ডাউন" এর রুট জেনেছিলাম। তো যাই হোক, ক্যাম্পাসে ঢুকে তো পুরা বেকুব বনে গেলাম। দুনিার সব সিটি বাস ভার্সিটির ভিতর দিয়ে যাচ্ছে।

টি এস সি তে এসে বন্ধুদের কাছে শুনলাম যে শাহ্‌বাগে রাস্তা বন্ধ করে বাংলার দামাল ছেলের "কিছু একটা" করছে। যাই হোক, সারা দিন শেষে ভার্সিটির বাসের জন্যে দারালাম। আরেকবার বেকুব হলাম যখন শুনলাম বাস আগের টৃপই দিয়ে ফিরতে পারেনি তখনও সবার অতি আকাংখিত সেই "শো-ডাউন" এর জন্যে। ঠিক আছে, বাংলি যখন গোটা ঢাকা শহর জুরে "শো-ডাউন" করতে ব্যাস্ত, তখন আমি এই অধম "অবাংালি" এক দু্‌ঃসময়ের প্রকৃত বন্ধুকে সাথে নিয়ে হাটা দিলাম। "হাটা দিলাম" মানে কিন্তু আসলেই আল্লাহ প্রদত্ত পা দু খানিকে চালিয়ে রওনা দিলাম।

যদিও হন্টন পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে একজন সহৃদয়বান রিকশাওয়ালা যেতে রাজি হয়েছিলেন, কিন্তু, নিলক্ষেত বাদে ভার্সিটি থেকে বের হবার সকল রাস্তা "শো-ডাউন" কারিদের জন্যে সুগম করার লক্ষ্যে বন্ধ থাকায়, আল্লাহ প্রদত্ত পা দুটোর উপর ভরষা করা ছারা গতি রইল না। হাটি হাটি পা পা করে এগুলাম পথের দেশপ্রেমি দামাল ছেলেদের "কর্মযগ্ঞ" দখলাম। হাই কোর্টের সামনে এসে দেখলাম, এই মোড়ের সব দিকের রাস্তা বন্ধ। এবং রাস্তা খোলার আশায় অপেক্ষমান গাড়ির লাইন আমার এবং আমার বন্ধুটির দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেছে। মোড়ে্ নৌকা নিয়ে ছেলেরা কিসের জন্যে যেন অপেক্ষা করছিল।

বেশ কয়েকজন আবার জনতার সেবক (নাকি রাজনীতির সেবক?) পুলিসের অনুরোধ উপেক্ষা করে রাস্তায়ই বসে পড়ল। এসব দেখতে দেখতে আমরা প্রেসক্লাবের দিকে হাটছি। সাথে আরো অসঙ্খ অবাংালি মিছিল করে হাটছেন যার যার গন্তব্যে। তখন রাস্তার অপর পাশ দিয়ে অনেকগুলো গাড়ি তীর বেগে হাই কোর্ট মোড়ে গেল। পাঠকরা কি বুঝতে পেরেছেন গাড়িগুল কার ছিল? সম্মানিত "কেউ একজন" গাড়ি তে করে আসলেন "শো-ডাউন" এ অংশ নিতে।

আর অভাগা "সকল ক্ষমতার উৎস" জনতা নিজের কপাল এবং কর্মকে (ভোট দেওয়া) দুষতে দুষতে পদব্রজে চল্‌ল। পথে যেথে যেতে চারদিকে দেখি নৌকার বাহার। আমরা কল্পনা করছিলাম যে নৌকা দিয়ে আর কি কি করা যেতে পারে। নৌকায় চাকা লাগিয়ে সেটাকে আরেক প্রকারের বাহন হিসাবে ব্যাবহার করা যায়। সম্মানজনক ট্রফি হিসাবে এর প্রচলন করা যেতে পারে, ইত্যাদি ইত্যাদি ।

পথে দুইজন জনতার সেবক (!) পুলিশকে জিগ্ঞেষ করলাম যে "ভাই রাস্তা কোনদিকে খোলা আছে?" তারা করুনার হাসি হেসে জবাব দিল। তো আমরা আবার সেদিকে হাটা ধরলাম। এরমধ্যে, মহাখালি গামী ভার্সিটির বাসে থাকা আরেক বন্ধু ফোন দিয়ে জানাল যে সব রাস্তা বন্ধ থাকায় তাদের বাসটি দুনিয়া ঘুরে যাচ্ছে। বাসটি ভার্সিটির হওয়াতে তারা নিজ উদ্যোগে কিছু বন্ধ রাস্তার ব্যারিকেড সরানোর সাহস এবং সুবিধা পেলেও, সাধারন পরিবহন গুলোর অবস্থাতো সহজেই অনুমেয়, তাইনা? সে যাই হোক, আমরা অবশেষে বাইতুল মোকাররমের সামনে এসে রিকশা পেলাম। এবং সবেধন নিলমনি, সেই রিকশাওয়ালা, সুজোগের শুধু সদ্বব্যাবহার না, পু্র্নাঙ্গ ব্যাবহার করে দ্বিগুন ভাড়া হাকলো।

তো কি আর করা, আমরা যেহেতু অবাংালি এবং আমরা যেহেতু "শো-ডাউন" এ অংশ নেই নাই, তার মাশুল বাবদ সেই দ্বিগুন ভাড়ায় রাজি হয়েই আমাদের অভাগা পা দুটোকে বিশ্রাম দিতে সেই রিকশায় চড়লাম। আচ্ছা এবার আসুন একটু ভাবি, যাকে নিয়ে এতো কিছু, সেই মহান নেতা যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি কি চাইতেন বা করতেন? তিনি কি চাইতেন দেশের সবখানে, সব জায়গায় তার নাম এতটাই যৌক্তিক বা অযৌক্তিক ভাবে ব্যাবহার হোক যাতে দেশের মানুষ স্বাধিনতার এই অবিসংবাদিত নেতার নাম অবহেলা আর অপমানের সাথে স্বরণ করতে শিখে যায়? তিনি কি চাইতেন, তিনি যে দেশের স্বপ্ন দেখতেন, সে দেশের সাধারন মানুষ তার নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করুক? তিনি কি নিজের নামে কিছু করার জন্যে দেশের রাজধনীর সকল মানুষকে এভাবে জিম্মী করতেন? তিনি যদি এসব দেখতেন, তার নাম এবং সম্মান কে কোথায় নামিয়ে এনেছে তারই প্রিয় বান্দারা সেটা যদি জানতেন তাহলে কি তিনি চিৎকার করে বলতেন না "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি" বিঃদ্রঃ এহেন দর্বল বাংলা লখনির জন্যে ক্ষমা চাচ্ছি। ৬ বছর ইংলিসে পড়াশুনার সুফল এটা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।