আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাশুন্য অভিযান- কৃত্রিম উপগ্রহ-২য় পর্ব (Space Exploration- Artificial satellite, Chapter-2)

প্রবাসী ১৯৫৭ সালে মহাশুন্যে স্পুটনিক-১ কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপনের মধ্য দিয়ে রাশিয়া এগিয়ে গেল একধাপ। সূচনা হল মহাশুন্য অভিযানের। মানুষের কাছে উন্মুক্ত হল নতুন জগত। এতদিন পৃথিবী ঘিরে প্রদক্ষিন করত একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। এবার চাঁদের নতুন সঙ্গী জুটল।

রুশ শব্দ স্পুটনিক এর মানেও হল সঙ্গী ভ্রমনকারী। এর ওজন ছিল ৮৩.৬ কিলোগ্রাম আর পৃথিবী পৃষ্ঠের ২১৫ কিলোমিটার উপর থেকে ৯৪০ কিলোমিটারের উপরের কক্ষপথে তা পৃথিবীকে ৯৬ মিনিটে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করত । রেডিও টেলিভিশনে স্পুটনিকের ব্লিপ,ব্লিপ শব্দ শুনে অবাক বনে যেত পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষ । মানুষের হাতে গড়া প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ- স্পুটনিক-১ বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতে দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক-২ উৎক্ষেপন করল রাশিয়া ১৯৫৭ সালের ৩রা নভেম্বর। স্পুটনিক-২ এর ওজন অর্ধ টন এবং সে উপগ্রহে ভ্রমনকারী ছিল মহাশুন্যে প্রথম প্রানী কুকুর “লাইকা” স্পুটনিক-১ ভেঙ্গে পড়ে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সাথে সংঘর্ষে ছাই হয়ে গেল ১৯৫৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারী।

স্পুটনিক-২ ও একইভাবে ভেঙ্গে পড়ে ছাই হয়ে যায় ১৯৫৮ সালের ৪ঠা এপ্রিল। কুকুর লাইকা মারা গেছে অনেক আগেই, মহাশুন্যে পৌছানোর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই। স্পুটনিক সিরিজে মোট ৭ টি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠায় রাশিয়া। রশিয়ার দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ- স্পূটনিক-২ আমেরিকানদের নিজস্ব পরিকল্পনা ছিল মহাশুন্য নিয়ে। মহাশুন্যে রাশিয়ার স্পুটনিক সর্বাপেক্ষা ধনী দেশ আমেরিকার জন্য হয়ে দাড়াল মান সম্মানের ব্যাপার ।

মরিয়া হয়ে উঠল আমেরিকা। ১৯৫৭ সালের ডিসেম্বরে কৃত্রিম উপগ্রহ ভ্যানগার্ড মহাশুন্যে উৎক্ষেপনের চেস্টা ব্যার্থ হল। টেলিভিশনে সবাই দেখল আমেরিকার উপগ্রহ উৎক্ষেপনের পর পরই আগুন ধরে মুখ থুবড়ে পড়তে। সবচে বেশী বিরক্ত হলেন ওয়ের্নার। জার্মান ভি-২ রকেটের স্থপতি ওয়ের্নার তখন কাজ করছেন আমেরিকার রকেট প্রোগ্রামে আলাবামাতে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় ওয়ের্নারকে রাখা হয় নি ভ্যানগার্ড প্রোগ্রামে। ওয়ের্নারকে এবার যুক্ত করা হল রকেট প্রোগ্রামে। এরপর থেকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ওয়ের্নার যুক্ত থেকেছেন আমেরিকার মহাশুন্য অভিযানের নেতা হিসেবে। অবশেষে জুপিটার সী রকেটের সাহায্যে ওয়ের্নারের টীম পেন্সিল আকৃতির প্রথম আমেরিকান কৃত্রিম উপগ্রহ এক্সপ্লোরার-১ মহাশুন্যে সাফল্যজনক ভাবে স্থাপন করল ৩১ জানুয়ারী ১৯৫৮ সাল। এক্সপ্লোরারের ওজন ছিল মাত্র ১৪ কিলোগ্রাম।

পৃথিবী থেকে সর্বনিম্ন ৩৫৬ কিলোমিটার উপর থেকে সর্বোচ্চ ২৫৫০ কিলোমিটার উপরে থেকে ১১৪ মিনিটে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করত এক্সপ্লোরার। এক্সপ্লোরার ১ এর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি পৃথিবীর চারপাশে আবিস্কার করল এক বিকীরন বলয়। এই বলয়ের নামকরন হল এক্সপ্লোরার-১ এর বিজ্ঞানী জেমস ভ্যান এলেনের নামে। আমেরিকার প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ -এক্স প্লোরার-১ এর আবিস্কৃত বিকীরন বলয় ভ্যান এলেন বেল্ট। আমেরিকার প্রথম উপগ্রহ ৪বছর পর থেকে পৃথিবীতে তথ্য পাঠানো বন্ধ করে দিলেও তা মহাশুন্যে ঘুরতে থাকে ৩১ মার্চ ১৯৭০ সাল পর্যন্ত।

আমেরিকা দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ ভ্যানগার্ড -১ মহাশুন্যে পাঠায় ১৭ই মার্চ ১৯৫৮ সালে । আমেরিকার দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ- ভ্যানগার্ড-১ এক্সপ্লোরার-১ এর ব্যাটারী শেষ হয়ে যায় ১৯৫৮ সালের জুনেই কিন্তু এর সুর্য্যশক্তি চালিত ট্রান্সমিটার সক্রিয় থাকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত। পৃথিবীর ৬৫০ থেকে ৪,০০০ কিলোমিটার উপর দিয়ে এটি এখনো পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে চলেছে। ধারনা করা হচ্ছে যে এটা আরো ২০০ বছর পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকবে। ভ্যানগার্ড সিরিজের মোট তিনটে উপগ্রহ উতক্ষেপন করে ।

প্রথমদিকে ন্যাভাল রিসার্চ ল্যাবোরেটরী মহাশুন্য কার্য্যক্রম শুরু করলেও মধ্য ১৯৫৮ সালে তা স্থান্তরিত হয় ন্যাশনাল এয়ারোনটিক্স এন্ড স্পেস এজেন্সী বা নাসা(NASA=National Aeronautics and Space Agency)’ র তত্বাবধানে। কৃত্রিম উপগ্রহ। গ্রহকে চারপাশে ঘোরা বস্তু হল উপগ্রহ । পৃথিবীরএকমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল চাঁদ। ১৯৫৭ সালের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে শুরু করে ২০১০ সালের ১লা অক্টোবর পর্যন্ত মহাশুন্যে পাঠানো মানুষের হাতে গড়া কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা ৬৫৭৮ ( যুক্তরাস্ট্রের স্পেস সার্ভিলেন্স নেটওয়ার্কের হিসেব অনুসারে ) ।

এক ডজনের ও বেশী দেশের ৪০ টি উৎক্ষেপন কেন্দ্র থেকে পাঠানো বিভিন্ন ধরনের ও কাজের কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ষাটের দশকে শুধুমাত্র আমেরিকা এবং রাশিয়াই কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠালেও এখন অনেক দেশই নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশুন্যে পাঠাচ্ছে। নিজস্ব প্রযুক্তিতে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো দেশ গুলো হল-উত্তর আমেরিকাঃ যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, ইউরোপঃ রাশিয়া, বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালী, বুলগেরিয়া, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউক্রেন এশিয়া- জাপান, চীন, ভারত, উত্তর কোরিয়া, ইজরায়েল এবং ইরান। এশিয়াতে প্রথম উপগ্রহ পাঠায় চীন,জাপান- ১৯৭০ সাল, ভারত- ১৯৭৫ সাল, উত্তর কোরিয়া ১৯৯৮ ,ইজরায়েল-১৯৮৮ সাল এবং ইরান ২০০৫ সালে। কৃত্রিম উপগ্রহ কেন? …….. (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।