আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক বিকেল হুমায়ূন

না বলা কথা... [বি:দ্র: এই ব্লগটি কাউকে না পড়ার জন্য অনুরোধ করিছ। এটি একান্তই ব্যক্তিগত ব্লগ। ধন্যবাদ। ] ৬ মার্চ ২০১২ মঙ্গলবার রাত্র ১১:৩৭ ময়ূর ভিলা মোহাম্মদপুর ঢাকা-১২০৭ বিকেল পৌনে চারটা। নিউএজ পত্রিকার অফিসে বসে গল্প করছি রাসেল কাকার সাথে।

তার পরিচয় তিনি জাহাঙ্গীর কাকার বন্ধু। টেবিলের উপর চা রাখা। খেতে ইচ্ছে করলেও সুজনতার খাতিরে খেতে পারছি না। কারণ, আমাকে চা সাধা হয়নি। কাজ ও কথা- দুটোই শেষ হলো।

সোফা থেকে উঠে বের হতে যাবো এমন সময় তিনি বললেন, চা খেলে না যে! খেয়ে যাও। তোমার জন্যই চা আনালাম। ততক্ষণে আমি দরজা থেকে বের হয়ে গিয়েছি। শরীরটা বাহিরে রেখে ভিতরে উকিঁ মেরে বললাম, এখন না! আরেকদিন। পত্রিকা অফিসের পাশেই এফডিসি।

কোনোদিন এফডিসির ভিতর প্রবেশ করিনি। ইচ্ছে করল এফডিসিতে ঘুরে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে যাই। কিন্তু গেটে দুজন প্রহরী। ঢোকার ইচ্ছেটা উবে গেল! হাটতে শুরু করলাম। উদ্দেশ্যহীন যাত্রা।

কারওয়ান বাজার মোড়ে বড় একটি বিল্ডিং-এর (খুব সম্ভবত একুশে ভবন) পাশ দিয়ে ছোট্ট একটা গলিতে আগাগোড়া টং দোকানে ঠাসা। একটি চায়ের দোকানে বসলাম। এক পিস কেক, দুটি বিস্কুট, এক গ্লাস পানি আর এক কাপ চা খেয়ে আবার উদ্দেশ্যবিহীন হন্টন শুরু করলাম। হাটতে হাটতে শাহবাগ হয়ে পাবলিক লাইব্রেরির দিকে ঢুকলাম। তখন বিকেল ৫টা বাজতে কিছুক্ষণ বাকি।

সুইজারল্যান্ডের ফিল্ম ফেস্টিভাল চলছিল। ভাবলাম, একটা সিনেমা দেখলে মন্দ হয়না। কিন্তু পরক্ষণে চিন্তাটা বাদ দিলাম। বড় পর্দায় সিনেমা একা দেখে মজা নেই। সঙ্গী থাকলে মজাটা ভাগ করা যায়।

মোহনা থাকলে ভালো হতো। কিন্তু বেচারি বারিধারায় গেছে। অন্যমেলার ১৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বইমেলা চলছে। মূলত এটাকে 'হুমায়ূন আহমেদ বইমেলা' বলা চলে। প্রতিবার বইমেলাতে আমি হুমায়ূন আহমেদ এবং মোহাম্মদ জাফর ইকবালের বই কিনি।

কিন্তু এবার কিনিনি। দুএকবার কেনার জন্য স্টলের সামনে গেলেও বই না কিনেই ফিরে এসেছি। এমনকি দু'একদিন আগে অন্যপ্রকাশের এই বইমেলাটিতেও গিয়েছিলাম। কিন্তু বই নাড়াচাড়া করে চলে এসেছি। কিনিনি।

আজও বই নাড়াচাড়া করছি। কিন্তু কিনছি না। কী করব, ভেবে পাচ্ছিনা। সবে সোয়া ৫টা বাজে। রাত্র ৮টায় কনাকে পড়াতে যেতে হবে।

সুতরাং এখন বাসায় গেলেও চলবে না। ইচ্ছে করলে কোনো বন্ধুকে ফোন দিয়ে দেখা করা যায়। কিন্তু করলাম না। হঠাৎ করেই হুমায়ূন আহমেদ-এর দুটি বই কিনে ফেললাম--- রঙপেন্সিল এবং পায়ের তলায় খড়ম। বই দুটির মূল্য ৩৩৮ টাকা রাখল, তাও ২৫ % কমিশনে।

২০% হলে আরো বেশি দাম পড়ত। দামটা একটু বেশিই। ওসমানী মিলনায়তনের গেটের পাশে বসলাম। চারপাশে লোকজনের আনাগোনা। মিলনায়তনের ভিতরে অনুষ্ঠান হচ্ছে।

লোকজন আসছে, যাচ্ছে। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। তাপর রঙপেন্সিল বের করে পড়া শুরু করলাম। টানা দুঘন্টা পড়ে শেষ করলাম। শেষ করেছি বলাটা বোধহয় ঠিক না।

দু'একটা লেখা ইচ্ছে করেই পড়িনি। ক্যান্টিনে ঢুকে চটপটি আর কফি খেলাম। তারপর কনাদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। আহমেদ ছফার 'যদ্যপি আমার গুরু'তে পড়েছিলাম, জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক তাকে একটি উপদেশ দিয়েছেন। যখন কোনো বই পড়বে, তারপরই বইয়ের উপর একটি রিভিউ লিখে ফেলবে।

উপদেশবাণী শোনার পর আহমেদ ছফা অর্থনীতির উপর একটি ইংরেজি বই নিলেন আবদুর রাজ্জাকের কাছ থেকে। সেটা শেষ করে টানা ১৫/১৬ দিন ধরে বেশ কষ্ট করে একটি রিভিউ লিখে আবদুর রাজ্জাকের কাছে জমা দিলেন। কিন্তু কৌতুকটা হচ্ছে--- আবদুর রাজ্জাক সেই রিভিউ কোনোদিন ছুঁয়েও দেখেননি। আমারও আজ ইচ্ছে করছে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের উপর একটি রিভিউ লিখতে। কিন্তু জানি, আমি লিখব না।

তবে একটি বিষয়ের উপর একটু না লিখলে মনটা খচখচ করতেই থাকবে। মনের খচখচানি দূর করতেই এ লেখার অবতারণা। বইটির প্রথম লেখাটি অমরত্ব নিয়ে। টাইম ম্যাগাজিনে ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১১ এর প্রচ্ছদ কাহিনী: 2045, The year Man Becomes Immortal. অর্থাৎ এ বছর মানুষ অমরত্ব পাবে। স্বেচ্ছামৃত্যু ছাড়া প্রকৃতিপ্রদত্ত মৃত্যু আর হবে না।

সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, বায়োলজিস্টরা ইতোমধ্যে জরাগ্রস্ত ইদুঁর নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। তাদের টেলমোরজ এনজাইম দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, ইদুঁরের জরা-প্রক্রিয়াই শুধু যে বন্ধ হলো তা না, তারা ফিরতে লাগল যৌবনের দিকে। এখন মানুষের উপর এ পরীক্ষা করা হবে। সফল হলেই মানুষ অমরত্ব লাভ করবে।

মজার ব্যাপার হল, হুমায়ূন আহমেদ ব্যাপারটি কঠিনভাবে বিশ্বাস করেছেন বলেই মনে হয়। বইটিতে সে বেশ আফসোস প্রকাশ করেছেন ততদিন ধরণীতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবেন না বলে। শুধু তাই নয়, অ্যামেরিকা ক্যামো থেরাপি নিতে যাবার আগে ছুটির দিনে' তাকে নিয়ে প্রচ্ছদ করেছিল। সেখানেও তিনি মানুষের অমরত্বের ব্যাপারটি উল্লেখ করে গেছেন। ঘটনাটি নি:সন্দেহে চমৎকার।

এরকমটি ঘটলে পৃথিবীর বহু বিতর্কের অবসান হবে, বিশেষ করে স্রষ্টা সম্পর্কিত বিষয়, পরকাল সম্পর্কিত ধারণা। একই সাথে নানা নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে। সে-যাই হোক, অমরত্বের কথা ভাবতেই কেমন যেন শিহরণ বোধ করছি। মানুষকে মরতে হবে না। সে অমরত্ব পাচ্ছে।

সত্যিই বিস্ময়কর। আচ্ছা, ১৯৪৫ সালে আমার বয়স হবে কত? ৫৮ বছর। আমি কি ততদিন বাচঁব? বাচঁলেও কি অমরত্ব পাবার জন্য যে চিকিৎসা নিতে হয়, তা কি নেয়ার সামর্থ্য থাকবে? হা হা হা। কত উদ্ভট চিন্তাভাবনাই না করি। তাহলে কি আমিও হুমায়ূন ফোবিয়ায় আক্রান্ত হলাম? কি জানি, হতেও তো পারি।

হলেই বা মন্দ কি! প্রিয় লেখক বলে কথা! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।