আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খালাফ আল আলী হত্যার তদন্তের উপর নির্ভর করছে লাখ লাখ সৌদি প্রবাসীর ভাগ্য

অনেক আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকেরা নিজ কর্ম ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। অতীত ঐতিহ্যের ফলে একটা সময় ছিল যখন সৌদি আরবে আসতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিমানভাড়া ছাড়া অন্য কোনো খরচ লাগত না। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও মালিক করত। তা ছাড়া অনেক সময় শ্রমিকদের মালিক বা স্পন্সর একাধিক ভিসা দিয়ে আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে আসার সুযোগ করে দিত। এমনকি ভিসার সাথে অফিসিয়াল খরচের জন্য কিছু রিয়ালও দিত।

বাংলাদেশী শ্রমিকেরা অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের চেয়ে কাজ দ্রুত আয়ত্ব করতে পারায় স্পন্সররা শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের অগ্রাধিকার দিতেন, যা বিদেশী নাগরীকদের কাছে পরিচিত। তথাপি মালিক পক্ষ মাঝে মধ্যে মূল্যবান সামগ্রী উপহার দিয়ে তাদের থেকে বেশি কাজ আদায় করে নেয়। কিন' বর্তমান প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। এখন সেই একই শ্রমিকদের সন্দেহ তালিকায় রেখে ঠকবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী হিসেবে মনে করা হয়। ফলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

তা ছাড়া দিচ্ছে না আকাম বা পেশা পরিবর্তনের সুযোগ। বড় বড় কোম্পানিতে যাও দু-একটা ভিসা পাওয়া যায় তা আবার সাধারণ শ্রমিকদের নাগালের বাইরে। অন্য দিকে চড়া মূল্য তো আছেই। এখন বাংলাদেশী একটা ভিসা লাগাতে ৮ লাখ টাকা গুনতে হয়। তাও বিমান টিকিট ছাড়া।

সৌদি নাগরিক খালাফ আল আলী বাংলাদেশে সৌদি আরব দুতাবাসের দ্বিতীয় সচিব। সৌদি নাগরিকদের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় তিনি দেখাশুনা করতেন। তিনি গত মধ্যরাতে তার বাস ভবনের পাশেই সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন এবং পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরব। আর সৌদি আরবে বাংলাদেশী কিছু শ্রমিকের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেরজন্য ইতিমধ্যে সৌদি সরকার বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিভিন্ন অফিসিয়াল কর্মকান্ড স্থগিত করে রেখেছে।

বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রতি একসময় সৌদি সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গি থাকলেও এখন আর তা নেই। তারা এখন বাংলাদেশীদের উগ্র এবং অপরাধপবণ লোক হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। সৌদি আরবে বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি আসলেও এখান থেকে কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছেনা। গত ২২ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিয়ার মোশাররফ হোসেন এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফরে আসেন। সফরে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী,শ্রমমন্ত্রী সহ সৌদি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাত করেন।

কিন্তু সৌদি কর্মকর্তারা বাংলাদেশীদের বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক না আনার সিন্ধান্তের কথা জানান। প্রবাসী কল্যান মন্ত্রীর সফরের এক সপ্তাহের মাথায় এই ধরনের হত্যাকান্ড সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য অশনি সংকেত বহন করছে। সৌদি আরবে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ২২লাখ বাংলাদেশী নাগরিক কাজ করছে। বাংলাদেশে সৌদি নাগরিকের খুনের প্রভাব যে এখানে বাংলাদেশী শ্রমিকদের উপর পড়বেনা তার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবেনা। বাংলাদেশ সরকার যদি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে খালাফ আল আলীর হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখিন করতে না পারেন তাহলে সৌদি আরব সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্য হবে এবং অন্যান্য দেশও বাংলাদেশী শ্রমিক নিতে অনাগ্রহ দেখাবে।

তাতে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিবে। তাই সরকারের মন্ত্রিদের কথার ফুলঝুড়ি না বের করে যতদ্রুত সম্ভব অপরাধীদের গ্রেফতার করে তাদের বিচারের সম্মুখিন করা ২২লাখ সৌদি আরব প্রবাসীদের প্রানের দাবী।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।