আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনামুখী সুঁইয়ে রূপোলী সুতো ও একটি নাকফুল (আমার পঞ্চাশতম পোষ্ট)

“আমি নিরালায় একা খুজেঁ ফিরি তারে, ‍স্বপ্নবিলাসী, কল্পনাপ্রবণ আমার আমিরে.........” আমার গ্রামের বাড়ি একটি দ্বীপে- হাতিয়া, তারও গ্রামের বাড়ি একটি দ্বীপে, আমার দ্বীপের পাশাপাশি একটি দ্বীপ- সন্দ্বীপ। আমার পৃথিবীতে আগমন যে সময়ে, তারও পৃথিবীতে আগমন সেই কাছাকাছি সময়ে। কিন্তু আমার লেখার ধার যতটুকু, তার লেখার ধার তারচেয়ে অনেক, অনেক গুণ বেশি। আমি তার কথা বলছি, আমি আব্দুর রাজ্জাক শিপনের কথা বলছি। আমি তার লেখা ‘সোনামুখী সুঁইয়ে রূপোলী সুতো’-র কথা বলছি।

(১) প্রথমেই থমকে দাঁড়াই! লেখকের সাথে আসানসোলের ঝাঁকরা চুলের বাবরি দোলানো কবির উপস্থিতিতে মনটা আনন্দে ভরে উঠে। কান পেতে রই রেললাইনে তাদের অপূর্ব সুর ঝংকার শোনার জন্য। শুনতে থাকি একের পর এক সিম্ফনি। তারা সুর তুলে এগিয়ে যায় খন্ড খন্ড কিন্তু গুরুত্বপূর্ন কিছু বিষয়ের ভিতর দিয়ে। চটের বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে থাকা মানবশিশুর সিম্ফনি শুনে কিছুক্ষনের জন্য হলেও থেমে যাই, নিজের ভাবনাকে নিয়ন্ত্রনকারী নিউরনগুলোর ছুটোছুটি দ্রুত বেড়ে যায়।

এই নিউরনগুলিই আবার নিশ্চল হয়ে পড়ে চাঁদনীর করুণ রসে,মনে হয় এরকম কতো চাঁদনী সিম্ফনি শুনেছি, এরকম কতো চাঁদনী আছে আমাদের আশেপাশে, অথচ কখনো ভাবিনি তাদের কথা। চিন্তা করিনি বোন হিসেবে, ভেবেছি শুধুই অচ্ছুৎ! সালাম শিপন, তোমায় সালাম। (২) “মাছির জাতপাত নেই। জাতপাত শুধু মানুষের”- মানবনীতির পাশেই আছে রাজনীতি, আছে শক্ত প্যারোডি। সিম্ফনিগুলো শুনতে শুনতে আঁতকে উঠছিলাম, ভাবছিলাম এটি কবির সেই বিখ্যাত সুরের মতোই আরেকটা ‘বিদ্রোহী’ সুর কি না! ইদানীং আমাদের সমাজে ‘বিদ্রোহী’ আর ভালো লাগে না, ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

আমাকেও পাড়িয়ে দিতো, যদি না রিপা নীল খামে চিঠি পাঠাতো! রিপা তার স্বপ্নের সাথে আমাকেও নিয়ে গেল নাকফুল পর্যন্ত। এই নাকফুল সিম্ফনি আমায় এতো বুঁদ করে রাখলো যে, এই মধ্যরাতে মনে হলো আমিও আমার রিপার জন্য নাক (সোনামুখী সুঁই) ফুল (রূপোলী সুতো) চাই। (৩) আমায় এখন বঙ্কিম টানে না, কারণ আমার আছে প্রমথ চৌধুরি। আমায় ‘কুসুমাদপি সূর্যটা টুপ করে পশ্চিমে ডুব দেয় কি দেয় না, সেই দৃশ্য অবলোকনে আমরা ব্যর্থ হলেও ঘনীভূত অন্ধকার আঁচ করা যায়’- ভাষা সহজ হতে দেয় না, যতটা সহজ হই ‘মা আহাজারি করছিলেন, রানু চিৎকার করে কাঁদছিল’- বাক্যচয়নে। কিন্তু বিভ্রান্ত হয়ে যাই যখনই বঙ্কিম আর প্রমথ আমার সামনে একসাথে চলে আসে।

এদেরকে কখনোই আমি একসাথে দেখতে চাই না, তাতে মোজার্টের নাইনথ সিম্ফনি শোনার আবেদনটাই হুমকীর মুখে পড়ে। (৪) “স্বপ্ন কাজল না, স্বপ্ন চোখে এঁকে রাখা যায় না- এ কথা পুরোপুরি সত্য না! কাজলের মতো করে স্বপ্নও চোখে লাগিয়ে রাখা যায়। মানস আয়নায় স্বপ্ন জিইয়ে রেখে, স্বপ্ন ছুঁতে হাত বাড়াতে বাড়াতে হাতটা যখন লম্বা হয়, এক সময় স্বপ্ন ছুঁতেও পারা যায়’—এই সুর ঝংকারে আমার সামনে থেকে যেনো এক নিমিষে আসানসোলের কবি অদৃশ্য হয়ে যায়, সেখানে শুধু উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে থাকে বিরলপ্রজ সাদা মনের মানুষদের দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো আব্দুর রাজ্জাক শিপন। আবারো সালাম শিপন, তোমায় সালাম। (৫) এবার কিছু সোজা কথা।

বইটির প্রচ্ছদটি আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে, ভালো লেগেছে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর লেখা সেই বিখ্যাত কবিতা ‘কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা’-দেওয়ায়। মুগ্ধ হয়েছি নজরুল, জীবনানন্দ এবং পূর্নেন্দু পত্রীর কবিতাগুলোর সুন্দর গাঁথুনিতে। মনে দোলা লেগে গেছে অদ্ভুত সুন্দর ‘নাকফুল’ থিমটির জন্য। মনে হচ্ছে নাকফুলের মানে শুধু মেয়েরাই জানে না, আমরা ছেলেরাও জানি! (৬) এটা আমার পঞ্চাশতম পোষ্ট, কীভাবে কখন এতোগুলো পোষ্ট লিখে ফেলেছি, আমি খেয়ালই করি নি। সামুর সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।