আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন ক্লিকেই ডলার!

আমারে দিবো না ভুলিতে একটি প্রিমিয়াম একাউন্টের দাম ৭ হাজার টাকা। তবে আপনি ২ হাজার টাকা দিয়েও শুরু করতে পারেন। প্রতিদিন আপনার একাউন্টে ৫০টি বিজ্ঞাপনের লিংক আসবে। লিংকগুলোতে ক্লিক করলে প্রতিদিন এক ডলার করে পাবেন। এভাবে মাসে ৩০ ডলার।

তবে প্রথম দু’মাস কোনো টাকা পাবেন না। এই দু’মাসে আপনার আয়কৃত ৫ হাজার টাকা প্রিমিয়াম একাউন্টের চার্জ বাবদ কেটে নেয়া হবে। তবে তৃতীয় মাস থেকে আপনি মাসে ২ হাজার ৫শ’ টাকা করে পাবেন। আপনি যদি আপনার পরিচিত কাউকে দিয়ে আকাউন্ট খোলাতে পারেন তাহলে কমিশন হিসেবে ৫ ডলার পাবেন। এই টাকা বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংক থেকে তুলতে পারবেন।

এভাবেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পদ্ধতির অপব্যবহার করে দেশে ‘ডিজিটাল প্রতারণা’ চলছে। এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বেকার তরুণ-তরুণী, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এমএলএম পদ্ধতি অনুসরণ করে যারা নিজেদের বন্ধু ও স্বজনদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছেন। এই সুযোগে ওয়েবসাইটভিত্তিক নামসর্বস্ব কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা নিয়ে আত্মগোপনও করেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৭ হাজার টাকায় প্রিমিয়াম একাউন্ট খোলার বিপরীতে প্রতিদিন গ্রাহকের ই-মেইল ঠিকানায় ৫০টি বিজ্ঞাপনের লিংক পাঠানো হচ্ছে। এসব লিংকে ক্লিক করে প্রতিদিন আয় হচ্ছে এক ডলার। একজন সদস্য কমপক্ষে ১২ মাস এই পদ্ধতিতে ডলার আয় করতে পারবেন বলে মৌখিকভাবে জানানো হচ্ছে। তবে দেওয়া হচ্ছে না কোনো কাগজপত্র। এদিকে রাজধানী ও মহানগরীর সীমানা পেরিয়ে এই ডিজিটাল প্রতারণার জাল এখন মফস্বল শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকের অনেক ব্যবহারকারী এখন এই প্রতারণার জাল বন্ধুদের মাঝেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বাংলা কমিউনিটি ব্লগগুলোতেও চলছে জোর প্রচারণা। অনেকে পোস্ট দিয়ে বলছেন, ‘প্রিয় বন্ধু, সবাই নিজেদের অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে কিছুটা বাড়তি আয় করতে চান। অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই বাড়তি আয় করা সম্ভব। এজন্য সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ব্যয় আর ক্লিক করলেই আপনি ভালো টাকা আয় করতে পারবেন।

এটা আপনার জন্য সম্ভব করেছে .... (প্রতিষ্ঠানটির নাম ও ওয়েব ঠিকানা)। ’ ফেসবুক ব্যবহারকারী সুমাইয়া মেহজাবিন জানান, এই ধরনের প্রতারকরা আমার প্রোফাইলে প্রতিদিন গড়ে ১০টি করে পোস্ট করে। মেজেস দিয়ে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে। এ থেকে মুক্তি পেতে ওই সকল ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্লক করতে হয়েছে। বর্তমানে এই ডিজিটাল প্রতরণার নেতৃত্বে দিচ্ছে ডুলেন্সার, অনলাইন অ্যাড ক্লিক, পেইড টু ক্লিক, সেফটি ক্লিক, স্কাইলেন্সার, পিটিসি ফর বিডি, অ্যাড সোর্সিং, ক্লিক টু পেইডসহ আরো অনেক ওয়েবসাইটভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।

যাদের অধিকাংশেরই নেই কোনো প্রতিষ্ঠানিক ভিত্তি বা অফিস। হোটলে, রেস্টুরেন্ট, বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত স্থানসহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা পরিচালনা করছে প্রতারণা। রাজধানীর ঝিগাতলার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শফিউল চৌধুরী বলেন, ‘ভার্সিটির’ এক বন্ধুর মাধ্যমে ডুলেন্সারের সদস্য হয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পাইনি। আমি আরো কয়েকজনকে সদস্য বানিয়েছি।

তারাও টাকা পাচ্ছেন না। শুরুতে বিষয়টা বুঝতে পারিনি। এখন বুঝতে পারছি আমরা প্রতারণার শিকার। ’ তবে বাংলাদেশে যে প্রতিষ্ঠানগুলো এই ডিজিটাল প্রতারণার সূচনা করে তাদের মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্পিক এশিয়া অনলাইন অন্যতম। কোম্পানিটি ২০১০ সালের ১১ আগস্ট চট্টগ্রামে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত হয়।

সূত্র জানায়, সাধারণ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানির মতোই তারা বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। প্রথমে তারা সপ্তাহে গ্রাহকের ই-মেইলে দু’টি প্রশ্নপত্র পাঠায়। প্রতিটির উত্তরের জন্য দেওয়া হতো ১০ ডলার। এসব প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে নিজের মতামত, পরামর্শ ও পছন্দ জানাতে হতো। স্পিক এশিয়ার প্রিমিয়াম একাউন্ট খোলার জন্য ২০০ এবং নিবন্ধনের জন্য ২০ ডলার দিতে হতো।

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রায় ১৫ লাখ গ্রাহককে প্রতারিত করে ২৫০ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফ্রিল্যান্সার ফেরদৌস বাপ্পি জানান, বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে ডলার আয় ব্যবসা করে অনেকে নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দাবি করছে। কিন্তু এটা কোনোভাবেই ফ্রিল্যান্সিং নয়। যেসব ওয়েবসাইট ব্যবহার করে এই প্রতারণা করা হচ্ছে সেই সকল ওয়েবসাইটও প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী নয়। এমন অনেক সাইট রয়েছে ৫-৬ মাস প্রতারণার পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই এমএলএম কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন পায়নি। বাংলাদেশে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে আরজেএসসি থেকে কোনো এমএলএম কোম্পানিকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে না। এমএলএম বিষয়ে নীতিমালা তৈরির পরই এদের নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সচেতন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অবিলম্বে বাংলাদেশে প্রতারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন।

বাংলা ফরেক্স স্কুল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম থেকে নেওয়া ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.