আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিরোশিমায় প্রথম আনবিক বোমা- কিছু তথ্য

পৃথিবীর প্রথম ব্যাবহৃত আনবিক বোমা। এটা বানাতে ৬০ কেজি ইউরেনিয়াম-২৩৫ লেগেছিল। এটার ক্ষমতা ২০ কিলোটন টিএনটি'র সমান। আজকাল ৫ মেগাটন ডাল ভাত! অবস্হা: আগস্ট ১৯৪৫ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন প্রায় শেষ।

প্রধান অক্ষঃ শক্তি জার্মানী প্রায় সব জায়গাতেই আত্মসমর্পন করে ফেলেছে। নির্দেশ: তখন আমেরিকার ৩৩ তম প্রসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান ক্লিয়ারেন্স দিলেন 'প্রজেক্ট ম্যানহাটানে'র তৈরী আনবিক বোমা জাপানে ফেলা যাবে। কোত্থেকে: ফিলিপাইনের কাছাকাছি একটা স্হান প্রশান্ত মহাসাগরে একটা দ্বীপ 'টিনিয়ান' কে প্লেন টেক অফ করার জায়গা হিসাবে নির্বাচিত হল, ছবি দেখুন: এখান থেকে হিরোশিমা প্রায় ঘন্টা ছয়েকের যাত্রা। প্লেন। তখনকার দূরপাল্লার বোমারু বিমান বি-২৯ এর তিনটাকে নির্বাচিত করা হল এই অভিযানে যাবার জন্য, যার মধ্যে ১ টা (পরবর্তি নাম 'এনোলা গে') বোমা বহন ও ড্রপ করবে, একটা বি-২৯ (দ্যা গ্রেট আর্টিস্টি) যন্ত্রপাতির দক্ষতা ও যোগাযোগ ঠিক রাখবে আরেকটা বি -২৯( নেসেসারি ইভিল) ছবি তোলার কাজ করবে।

মূল বোমা বহনকারী বিমান: একটা বি- ২৯ যার তখনকার নাম ছিল ভি-৮২, সেটাকে বোমা বহন করার এবং ড্রপ করার কাজের জন্য নির্ধারণ করা হল। এটার গতি সর্বোচ্চ ঘন্টায় ৩৫০ মাইল। উপরের ও নীচের ছবি দেখুন। পাইল্ট ও ক্রু। মূল বিমানের পাইল্ট ও ক্রু ছিলেন মোট ১১ জন যাদের অধিনায়ক ছিলেন কর্ণেল পল টিবেটস (১৯১৫-২০০৭), ছবি দেখুন: বাঁ থেকে তিন নম্বর হলেন সেই কর্ণেল পল টিবেটস।

পল টিবেটস ছাড়া বাকিরা সবাই বোমা ফেলার বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। কর্ণেল পল টিবেটস বিমানের নাম ভি-৮২ বদলে তাঁর মায়ের নামানুসারে নাম রাখলেন 'এনোলা গে' এবং একদিন আগে নতুন নাম পেইন্ট করা হল। নীচে আবার ব্রিগে. জেনারেল (অবঃ) পল টিবেটস, ২০০৭ সালে ওহায়োতে ৯২ বছর বয়সে মারা যান। না তিনি পাগল হয়ে যান নি। যাত্রা।

টিনিয়ান দ্বীপ থেকে প্রায় সাড়ে ছয় ঘন্টার পথ হিরোশিমা। ৫ আগস্ট ১৯৪৫ প্লেনে বোমাটা ভরে ফেলা হল, কারন রাতে আর সময় পাওয়া যাবেনা। টিনিয়ানের যেখান থেকে বোমাটা প্লেনের ভিতরে ভরা হয়েছিল তার ছবি: ভোর রাত প্রায় দুটো, টিনিয়ান থেকে ১১ জন ক্রু আর বোমা সহ 'এনোলা গে' যাত্রা করল উত্তর-পশ্চিমে জাপানের হিরোশিমার উদ্দেশ্যে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল ১লা আগস্ট বোমা ফেলা হবে, কিন্তু একটা হারিকেন (ঝড়) প্রশান্ত মহাসাগরে দেখা দেয়ায় তারিখ বদলে ৬ আগস্ট করা হল যা খুব কম লোকই জানত। যাত্রাপথটা দেখুন, মনে রাখবেন সেটা ১৯৪৫ সাল, প্রযুক্তি তখন এত উন্নত ছিলনা।

বোমা ফেলা। ৬ আগস্ট ১৯৪৫, হিরোশিমা সময় সোমবার ভোর , পাইলট নীচে হিরোশিমাকে দেখার আগেই ৩৩ হাজার ফুট উচুতে উঠে গেলেন। তার তিন ঘন্টা আগেই বোমার ক্রু বোমাটাকে আরমড (তৈরী) করে রেখেছিলেন। সকাল ৮-৪৫, হিরোশিমার আকাশে প্রায় ৩১০০০ ফুট উচু থেকে হিরোশিমার টি আকৃতির এইওয় (Aioi Bridge) সেতুর উপর বোমাটা রিলিজ করা হল, রিলিজ করেই বহুবার রিহার্সাল করা পাইলট ১৫৫ ডিগ্রি বাঁক নিয়ে প্লেন নিয়ে কোথাও না তাকিয়ে ফিরতি যাত্রা করলেন। ৪৩ সেকেন্ড পরে বোমাটা মাটি থেকে ১৮৯০ ফুট উপরে বিষ্ফোরিত হয় এটাকে বলা হয় 'এয়ার বার্স্ট', এতে ক্ষয়ক্ষতি বেশী হয়।

এই বেচারা ভবনটা প্রথম ধাক্কাটা খায়। বিষ্ফোরনের ধাক্কাটা ১৮.৫ কিলোমিটার দুরে চলে যাওয়া 'এনোলা গে' প্রচন্ড ভাবে অনুভব করে। উপরের ছবিটা প্রায় ৭ কি.মি দুর থেকে তখনই নেয়া, আর পোলারয়েড গগলস পড়েও 'এনোলা গে'র একজন ক্রু ঐ বিষ্ফোরণ দেখে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গেলেন। এই আগুনের গোলা এবং মাশরুম প্রায় ৪৫০০০ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠে। অর্থাৎ যদি ঐ 'এনোলা গে' বোমা ফেলে মজা দেখার জন্য আকাশে দাঁড়াত তাহলে পুড়েই মারা যেত।

হিরোশিমাতে মানুষ ছিল প্রায় তিন লাখের মত, তাদের প্রায় ১,৪০,০০০ মারা যান ৬ আগস্ট ১৯৪৫ থেকে ডিসেম্বর ১৯৪৫ এর মধ্যে (মতভেদ আছে) । বোমা ফেলে 'এনোলা গে ফেরৎ আসলেন । বোমা ফেলার পর হিরোশিমা। মে ১৯৪৫ জার্মানী আত্মসমর্পন করার পর জাপান আত্মসমর্পনের জন্য সম্পুর্ণ তৈরী ছিল, বোমাটা ফেলার কোন দরকারই ছিলনা বলে অনেকে বলেন। প্রয়োজন ছিল কিনা আবার জাপানের নাগাসাকিতে তিন দিন পর একই ধরনের বোমা ফেলার, সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন।

যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা, যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা। সুত্র: বিভিন্ন বই, ম্যাগাযিন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.