আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্মজীবী নারীদের নিয়ে কিছু ইসলামপন্থীর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষন...

সকল মতাদর্শকে আন্তরিকতার সাথে অধ্যয়ন করি। নারী উচ্চশিক্ষিত হোক , পিএইচডি করুক, বিদেশে পড়ুক , চাকরী করুক ,ব্যারিস্টার হোক , ডাক্তার হোক এমন বিষয়ে অনেক ইসলামপন্থীর দৃষ্টিভঙ্গী চরম অনুদার। উচ্চশিক্ষিত ও কর্মজীবী নারীদের নিয়ে ইসলামপন্থীদের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষন করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। প্রশ্ন-১ সন্তান প্রতিপালন, স্বামী-সংসার, নিজের কাজ-কর্ম করেই তো সময় পাওয়ার কথা না আবার চাকরী করার সময় কোথায়? উত্তর: কোন বডি ইউজ করে দিনে ৩০০ টাকা ইনকাম হয় আবার লিওনেল মেসি ,রোনালদো , রোনালদিনহো, বা টেন্ডুলকাররা একই বডি ইউজ করে ইনকাম করে হাজার ডলার। সুতরাং কোন উচ্চ শিক্ষিত মহিলার রুটিন অবশ্যই বস্তির মেয়ের দৈনন্দিন রুটিন থেকে আলাদা হতে হবে।

অশিক্ষিত মেয়ে ও বস্তির মেয়ে সন্তান প্রতিপালন, স্বামী-সংসার ও নিজের কাজ-কর্ম করে প্রতিদিন। সন্তান প্রতিপালন, স্বামী-সংসার, নিজের কাজ-কর্ম এর বাইরে জাতির জন্যে সমাজের জন্যে অবশ্যই সময় দেয়াটা তাকে আল্লাহ তায়ালা যে যোগ্যতার আমানত দিয়েছেন তার প্রপার ইউটিলাইজ মাত্র। আমি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের দায়িত্বশীল থাকার সময় একটা কথা শুনতাম আর বলতাম সেটা হল "যে দায়িত্বশীল কাজ করেন তিনি বেশী যোগ্যতা সম্পন্ন না। যিনি বেশী কাজ করাতে পারেন তিনি বেশী যোগ্যতা সম্পন্ন। " যে মায়েরা সব কাজ সন্তানদের করে দেন তারা কখনো নিজের পায়ে দাড়াতে পারেনা।

লুথু পুতু মার্কা সন্তানেরা কঠিন পরিস্থিতি হ্যান্ডল করার যোগ্যতা রাখেনা। আর স্বামীকে আল্লাহর আসনে বসানোর কোন সুযোগ নেই । বউ বাপের বাড়িতে গেলেও স্বামী এক পোয়া চাল রান্না করে খেতে পারেনা এমন একগ্রুপ স্বামী তৈরী করেছে এই সমাজ এই বলে যে "রান্না বান্না হল উত্তম সাংসারিক কাজ , স্বামী ভক্তি ও সেবা। " প্রানপ্রিয় স্ত্রীদের রান্নাবান্নায় সহযোগীতা করা স্বামীদের কর্তব্য হওয়া উচিত। ছেলেদের রান্না মেন্ডাটরী বলছিনা তেমনি মেয়েদের জন্যে চাকরীও মেন্ডাটরী বলছিনা।

"লেস ইম্পোর্টেন্ট ওয়ার্ক মাস্ট বি ডান বাই লেস ইম্পোর্টেন্ট পারসন" এই তত্ত্ব দিয়ে টাইম বাচিয়ে জাতির সেবার জন্যে মহিলারা সময় রাখতে পারেন বা জাতির বৃহত্তর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারেন। কোরানের আয়াত গুলো শুধু পুরুষের জন্যে নয়। এটা মনে রাখা দরকার। আমার আম্মু অনার্স লাইফে আমাকে শহরের বাসার কাজ করতে বলেছিলেন। আমি বললাম আমি বুয়ার কাজ ৩০ দিন করলে বাচবে ৬০০ টাকা আর আমি ১২ দিন কাউকে ১ ঘন্টা করে পড়ালে পাব ৩০০০ টাকা।

তাই আমি কম গুরুত্বপূর্ন কাজ করব কেন? কম গুরুত্বপূনূ কাজ করা সময় অপচয়। যোগ্যতা সম্পন্ন মহিলারা শুধু সন্তান লালন পালন করে বাসায় বসে থাকলে আল্লাহ প্রদত্ত আমানতের খিয়ানতই করবেন শুধু। শিক্ষিত লোক ঘরে বসে থাকলে শিক্ষিত মেয়ের সাথে বস্তির মেয়ে ও অশিক্ষিত মেয়ের রুটিনের মধ্যে কি পার্থক্য থাকে? শিক্ষিত মানুষকে কর্মবিমূখ করা সমাজ পিছিয়ে দেবার মত একটা অউত্তম মানসিকতা। সব নারীর যোগ্যতা সমান নয়। সন্তান লালন পালন , বাজার করার সহ নরমাল কাজ করার যোগ্যতা কিন্তু ব্যাতিক্রম বাদে সবনারীরই সমান।

প্রশ্ন:-২ আমি বাইরে থাকব আর কাজের বুয়া আমার সন্তানকে খাওয়াবে, কাজের বুয়া সন্তান প্রতিপালন করবে আর সন্তানও কাজের বুয়ার মানষিকতা নিয়ে বড় হবে তাই মেয়েদের চাকরী করা ঠিক না। উত্তর: ইসলাম কাজের বুয়া আর ধনীর দুলালীর মধ্যে কোন পার্থক্য রাখেনি। এটাই ইসলামী ভ্রাতৃত্ব। অথচ কিছু ইসলামপন্থীরা নিজের মতামতকে ডিফেন্ড করার জন্যে মানুষে মানুষে ভাগ করে ফেলছেন। বুদ্ধু কিছু ইসলামপন্থী নারীরা এটা বুঝেনা যে ভাল মাবাবার সঙ্গ সন্তানের জন্যে বেশীক্ষন লাগেনা।

বিচক্ষন ও জ্ঞানী মা বাবা থেকে অল্প সময়ের সাহচর্য্যে সন্তানেরা অনেক কিছু শিখতে পারে। উচ্চশিক্ষিত আমলদার কর্মজীবী মায়ের সন্তানেরা যে আত্ববিশ্বাস ও গাইডলাইন পাবে তা ঘরে রিলাক্স মোডে থাকা শিক্ষিত অশিক্ষিত মায়েদের সন্তানেরা কল্পনাও করতে পারেনা। ঘরে বইসা থাকলে কেবল সন্তান লালন হয় এমন ভাবা ঠিকনা। উচ্চ শিক্ষিত সম্পন্ন মায়ের অল্প সঙ্গতেই সন্তান ভাল ভাবে বেড়ে উঠতে পারে। কথায় আছেনা জ্ঞানীদের সঙ্গ।

উচ্চ শিক্ষিত সম্পন্ন মা এর দুরদৃষ্টি তো সাধারন মেয়ে যারা ঘরে রিলাক্সে বসে থাকে তাদের মত হবেনা। যারা ঘুরা ফিরা বেশী করে বা সমাজের সাথে ডিলিংস হয় যাদের বেশী তাদের মেধার তীক্ষ্নতা বেশী হওয়াটায় স্বাভাবিক। শিক্ষা শুধু বই পড়ে হয় না সফর করেও হয়। অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানও একটা শিক্ষা। চাকুরীজীবী মহিলারা সমাজ থেকে শিখতে পারে।

বস্তির নারীও সন্তান জন্মদান ও লালন করতে পারে আর শেখ হাসিনারও এই ক্ষমতা একই। এটা ব্যাতিক্রম কিছু আছে বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। ব্যস্ত মহিলা খালেদার পুত্র তো ঠিকই রাজনীতিতে পাকা হয়েছেন। কর্মজীবী মহিলার সন্তানেরা ভাল হচ্ছেন এই কথার উত্তরে ব্যাতিক্রম থাকতে পারে বলে উত্তর দেয়া উত্তরের স্বার্থে উত্তর দেয়া মাত্র। উচ্চশিক্ষিত কোন মায়ের ছেলে মেয়েরা নষ্ট হয়ে গেছে উদাহরন দেন তো! বরং ঝড়ে পড়ার রেসিওটা উচ্চশিক্ষিত চাকুরীজীবী মায়ের ছেলেমেয়েদের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত ঘরে বসে থাকা মা'দের সন্তানদের বেশী।

কারন উচ্চশিক্ষিত সমাজসচেতন চাকুরীজীবী মা সমাজ কোন দিকে পরিবর্তন হচ্ছে তার খবর রাখেন। অপরপক্ষে উচ্চশিক্ষিত রিলাক্সে থাকা মা টিভি আর ঘুমিয়ে আড্ডায় কাটিয়ে দেন দিনের বেশিরভাগ সময় থাকেন সমাজ সম্পর্কে বেখবর । প্রশ্ন-৩ অর্থ উপার্জন করবে স্বামী আর আমরা মেয়েরা ঘর-সংসার সামলাব, সংসারের খরচ চালানোর দায়িত্ব পুরুষের মেয়েদের না। উত্তর: অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন নারীদের বড় ময়দানে কাজ করতে না দেয়া চরম পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতা। আর ইসলামী পুরুষদের কাছেও পুরুষতান্ত্রিকতা থাকতে পারে।

আর ইসলামী নারীদের কাছে নারী স্বার্থবিরোধী রোগ সংক্রমিত হয় তাদের মনের অজান্তেই। নারীরা স্বামী থেকে অধিক যোগ্য হোক বা নারীরা বড় ময়দানে কাজ করুক পুরুষ শাষিত সমাজ মেনে নিতে সহজে চায়না। অফিসের বস দেখেননা? কম যোগ্যতা সম্পন্ন লোকদের চালাতে পারেন সহজে। একটু বেশী যোগ্যতা সম্পন্ন এমপ্লয়ী হলে চালাতে হিমশিম খেতে হয়। পুরুষরা কম যোগ্যতা নারী প্রিফার করে পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতায়।

এক্ষেত্রে "তোমরা পরস্পরের পরিচ্ছেদ স্বরুপ" এই আয়াতটি মনে রাখলে হয়ে যায়। প্রশ্ন-৪ স্বামীদের ইনকাম কম হলেও স্ত্রী হিসাব ছাড়া উচ্চাকাঙ্ক্ষী তাদের কথা আলাদা। স্বামীর যা ইনকাম সে অনুযায়ী বাসা ভাড়া নিলে ভাড়া বাকী থাকার কথা নয়। আমি আমার কথা বলতে পারি যে, আমার কোনো দিন বাসা ভাড়া বাকী পড়েনা আবার মাস শেষে কোনো উদ্বৃত্তও থাকে না। উত্তর: খারাপ বাসায় থাকবে তবুও বেটার লাইফ পাওয়ার জন্যে ট্রাই না করার মানসিকতা চরম র্নিলজ্জতার।

"দারিদ্র বিমোচনে ইসলাম " আল্লামা ইউসুপ আল কারযাবীর বইটা আপনাকে ও আপনার দৃষ্টিভঙ্গীকে চরম বদলে দেবে। যে জাতি নিজের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করেনা আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেনা। প্রশ্ন-৫ চাকরী করলে সন্তান লালন পালন কে করবে? উত্তর: অনেক ইসলামপন্থীরা এটা বলেননা যে সন্তান বড় হয়ে গেলে তখন উচ্চ শিক্ষিত মায়েরা কি করবে? আর সন্তান লালন করার জন্যে কতক্ষন লাগে? শরীরটা দিয়ে মানসিক শক্তি থাকলে অনেক কাজ করানো যায়। যারা জীবনে সফল হন তারা ইসলামী সাধারন মহিলার মত ঘরের ২/৪ টা কাজ করে রিলাক্সে থাইকা স্মরনীয় বরনীয় হননা। সিংহভাগ ইসলামপন্থীরা মাইয়াদের রিলাক্সে রাইখা স্টার প্লাস সহ হিন্দী সিরিয়াল দেখার সুযোগ করে দিতে মনের অজান্তে ইচ্ছুক কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নারীরা উচ্চশিক্ষিত হয়ে কর্মদক্ষ হয়ে কাজে লাগুক তা মানসিক ভাবে চাননা।

এই মানসিকতার লোকজন ক্লিয়ারলি পিছিয়ে আছে। ইসলাম আপডেটেড কিন্তু অনেক ইসলাম পন্থীদের চিন্তাধারায় পিছিয়ে যাওয়ার উপাদান আছে যদিও এরা সৎ ও সৎ চিন্তা করে। উচ্চশিক্ষিত আপুদের বলব ভাবনার কোন কারন নেই হালাল হারাম ফরজ ওয়াজিব ঠিক রেখে এগিয়ে যান। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার শুরুতেই আপনারা সবচাইতে বেশী কাজে লাগবেন। তবে সন্তান পালনের জন্যে কর্মস্থলে নারীদের জন্যে পরিবেশ চাই।

সন্তান ছোট থাকলে কর্মঘন্টা অর্ধেক হওয়া প্রয়োজন বা কর্মজীবী নারী অফিস আওয়ার ৪ ঘন্টা করবেন না ৮ ঘন্টা করবেন তা আইন করে নির্ধারিত করে দেয়া যেতে পারে এবং সংসারের দিকে লক্ষ্য রেখে সন্তান বড় হওয়া পর্যন্ত কর্মজীবী মহিলাদেরকে কর্মঘন্টা তাদের নিজেদের চুজ করার অপশান আইন করে দেয়া যেতে পারে। অবশ্যই বেতনও তখন হবে অর্ধেক। স্বামী সন্তানের উপর নির্ভরতা নারীর আত্ববিশ্বাস ও ব্যাক্তিত্বের জন্যে চরম ভীতিকর। অনেক স্বামী আজীবন বাচেননা বা সব সংসার স্থায়ী হয়না আবার সব সন্তান আম্মা আব্বাকে দেখেনা। সিস্টেম দুঃখী মানুষের জন্যে।

ইসলাম যেখানে দুঃখী মানুষের কথা বলে সেখানে কতেক ইসলামপন্থী সুখীদের উদাহরন টেনে আনেন শুধু। মেয়েদের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত না হওয়ার কারনে বাংলাদেশ সহ বিশ্বসমাজে তারা শুধু মুখ বুঝে সব সয়ে গেছেন বা যাচ্ছেন। গুটি কয়েক ইসলামপন্থী নারীর সুখের সংসার বাংলাদেশের বা বিশ্বের সব সংসারের নারীদের প্রতিচ্ছবি নয়। কর্মহীন নারীরা বেশীরভাগ সংসারে মেরুদন্ডহীন , পরোমুখাপেক্ষী ,আদৃষ্ট, সিদ্ধান্তগ্রহন প্রক্রিয়ায় দর্শক। প্রশ্ন-৬ যত শিক্ষিত বউ তত রনকৌশলী,তত আগ্রাসী তত খারাপ।

উত্তর: রাসুলের স্ত্রী হযরত আয়েশার (রাঃ) যুদ্ধে অংশ গ্রহন করার রুপটা অনেক ইসলামপন্থী বেমালুম ভূলে যায়। কম যোগ্যতার লোকদের তো চালাতে সুবিধা তাই পুরুষ নিজের স্বার্থেই বেশী যোগ্যতার মহিলা পছন্দ করে না। এটিকেই ইসলামের ছদ্মবেশে পুরুষতান্ত্রিকতা রুপে আইডেন্টিফাই করা যায়। শেষ কথাঃ উচ্চ শিক্ষা ইসলাম এপ্রিশিয়েট করে তাই ইসলাম উচ্চশিক্ষিত হতে নারীদের বাধা দেয়না। আবার অবৈধ যৌনতা সৃষ্টি হতে পারে এমন জায়গা ছাড়া কর্মজীবী হতে নারীকে নিরুৎসাহিত করেনা।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.