আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্মজীবী মায়েদের জন্য

আমার নাম হিতুনা.। বডটজস না!! আমার বানান অনেক ভূল হয়। বুঝে নিয়ে পড়বেন। ধইন্যা পাতা।

ছোট্ট ছোট্ট চোখে অসীম এক অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে দেয়, ছোট্ট শরীরে ছোট্ট ছোট যে আশা তার পুরোটাই ঘুরতে থাকে আপনাদের অপেক্ষায়।

ছোট্ট এই মানুষটি অযথাই পাইচারী করে, নিজের মনেই সময় গুনতে থাকে। পরিবারের ছোট্ট এই সদস্যটি আপনার কন্যা বা পুত্র। ইট কাঠের জংলা ঢাকা শহর হোক আর আলো-হাওয়া খেলা করা আউটার ঢাকাই হোক, আজকের বাস্তবতা হল- ‘এক জনের আয়ে ব্যয় অপেক্ষা ঋণ জয়তু’। তাই পরিবারের কপালে সুখের নজর ফোটা চড়াতে স্বামীর পাশাপাশি স্ত্রীকেও ছুটতে হচ্ছে অর্থের চাকা দৌড়াতে। এরই মাঝে বাড়ির খুদেঁ সদস্যটি বেড়ে উঠছে হয় নিকট আত্মিয়ের কাছে অথবা গৃহ পরিচারিকার সান্নিধ্যে অথবা ডে কেয়ারে।

স্বাভাবিক ভাবেই তাই মায়ের অন্তর আর মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন ব্যবস্থায় গোলাযোগ পূণঃ পূণঃ। বাবুটা কি করছে? ঠিক মত যত্ন আত্তি হচ্ছে কিনা! বিশেষ করে যারা নতুন মা হয়েছেন এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে ৯-৫ টার দাবার কোটে সদ্য ফিরলেন। তার উপরে সোশ্যাল সাইট, সংবাদপত্রের কলামগুলোও মায়েদের দুশ্চিন্তার কারণ- আদরের সন্তানটি সহি সালামত আছে কিনা (বিশেষ করে গৃহ পরিচারিকার কাছে যদি লালিত হতে থাকে); কিংবা ওর বেড়ে ওঠা ঠিক মত হচ্ছে কিনা! এটা সত্য যে ওর সবচেয়ে বড় শিক্ষক আপনি, আপনার অনুপস্থিতি বাজারের সবচেয়ে দামি খেলনাও পূরণ করতে পারবেনা; তবে এতাও ঠিক যে আপনি যতটুকু সময় ওকে পাচ্ছেন –কোয়ালিটি টাইমটা যদি নিজেদের মধ্যে শেয়ার করেন তবে কিন্তু সারাদিনের ঘাটতি পূরণ সম্ভব। আসুন দুজন মিলে চেষ্ঠা করি- ******************************* • বাড়ি ফিরে ওকে সবার আগে আলিংগন করুন। ও যেন বুঝতে পারে যে ও যতটুকু আকুল ছিল আপনি তার ঢের বেশি ব্যকুল ছিলেন।

• বাড়ি ফিরবার সময় ওর জন্য নতুন নতুন খেলনা কিনতে সময় ক্ষেপন করবার চেয়ে জল্‌দি ফিরবার দিকে মনোযোগ দিন। আপনি-ই ওর সবচেয়ে প্রিয় খেলার উপকরণে পরিণত হোন। • ওকে একান্তে বেশ কিছুটা সময় দিন ফিরবার পর। অন্য কারো সাথে কথা বললেও এমন ভাবে বলুন যাতে ও বুঝতে পারে যে আপনার ফুল কনসেনট্রেশন ওর দিকেই। • ওকে জিজ্ঞেস করুন সারাদিনের বৃত্তান্ত; কথা শেখেনি তাতে কি? ও যেসব শব্দগুলো জেনারেট করবে সেগুলোও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

সেগুলোকে প্রাধান্য দিন। • যাদের বাড়ি ফিরে উনুনের দারস্ত হতে হয় তারাও মজা করে করতে পারেন- রান্না; বাবুর সাথে। আমার মেয়ের বয়েস দুই ছুই ছুই। আমি ওর ছোট হাড়ি পাতিলে ওকেও কিছু কাজ দেই। নয়তো আটা দিয়ে লেই বানাতে দেই।

ওকে শাক বাছতে দিন। হাত ধুয়ে নিলেই তো সারা। • বাড়ি ফিরে মা যদি ঘর-কন্নায় ব্যস্ত না হয়ে না’ই পারেন তবে বাবাকে কিন্তু বাবুর সাথে খেলা/ সময় কাটানোর গুরুদায়িত্ব নিতেই হবে। বণে যান ওর ঘোড়া। • বাবু যদি স্কুল পড়ুয়া হয়- তবে বাবা-মা উভয়েরই উচিত হবে কিছুটা সময় ওকে গাইড করা।

• খাবারটা এক সাথে খেতে পারলেই ভালো। বাবুর সোশ্যালাইজেশন বাড়বে, বাড়বে পারিবারিক সম্প্রীতি। ও যদি নিতান্তই ছোট হয়; একা খেতে না পারে তবুও ওকে টেবিলের পাশে বসিয়ে নিন। এখন বাজারে হাই চেয়ার পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রাইজ রেঞ্জে। তাতে বসিয়ে দিন না খুদে কেমিস্ট কে।

খাওয়ার চেয়ে বেশি খেলুক; তবু ওকে সাথে রাখুন। • ঘুমের আগের সময়টি ওকে নিজেই বিছানাটা এরেঞ্জ করুন। ওকে কাজ দিন। আমার কন্যা চাদর টান করে। অথবা বালিশ টেনে দেয়।

ও নিজেকে খুব ইমপরটেন্ট মনে করে তখন। • বিছানায় ওকে নিয়ে গড়াগড়ি করে কিছুক্ষন খুনশুটি করুন। গল্প বলুন। ওর কাছ থেকেও শুনুন গল্প। • বাবুর কপালে চুমু খেতে ভুলবেন না।

ও ঘুমিয়ে থাকলেও কপালে আপনার পরশ বুলিয়ে দিন। • বাবুকে নিইয়ে সাজুগুজু করুন। ওকে নিয়ে যেমন খুশি তেমন সাজো খেলুন ছুটির দিনে। • ছুটির দিনগুলোকে অর্থবহ করে তুলুন। প্রতিটা মূহুর্ত একসাথে থাকুন বাবুর।

ও কে নিয়ে পার্কে যান, খোলা মাঠে চাঁদর পেতে ঘন্টা খানেক পুতুল খেলুন, পিকনিক আমেজে । ********************************************** কিছু কিছু বিষয় কিন্তু ওদের মানসিক গড়নে – গঠনে বেশ প্রভাব রাখে। এই বিষয়গুলোর বেশির ভাগ বিষয়-ই নির্ভর করবে আপনার আচরণের গড়ণ, ধৈর্য আর বিশ্বাসের উপর- • সেইং ‘আই এম সরি’ঃ ভূল হতেই পারে আপনার, ছোট্ট বাবু বলে পার পেয়ে গেলেই চলবেনা। ওকে সরি বলুন। এতে আপনি ওর কাছে ছোট হবেন না, বরং নিজের অজান্তেই ও শিখে নেবে শিষ্ঠাচার আর বিনয়ী হতে।

সেই সাথে ওর মাঝে দায়িত্ববোধের জন্ম নেবে কিভাবে ভুল স্বীকার করে নিতে হবে আর কিভাবে শুধরাতে হবে সেগুলো। কখনো যদি বাবুটা অগ্রহণযোগ্য আচরণ করে এবং আপনি মাথা গরম করে সমাধান করেন অথবা সঠিকভাবে তার সমাধান করতে না পারেন তার জন্যও তার সাথে কথা বলুন। ওকে জানান ওটা আপনার করা ঠিক হয় নি। • ওকে শুনি আর কোচ করি উপদেশ নয় বরং ওকে হাতে কলমে শিখিয়ে দিন সমস্যা কিভাবে সমাধান করতে হবে। বাস্তবিক ভাবে না শিখিয়ে শুধু উপদেশ দিলে কিংবা কেবলই নিশেধাজ্ঞা গারি করলে বাবুটি আপনাকে কেবলি ডিক্টেটর হিসেবে দেখবে।

নিজেই ভাবুন, অন্যকেও আপনার উপর খবরদারি করলে আপনিও কিন্তু কিঞ্চিত হলেও বিরক্ত হন। বি এ গ্রেট কোচ। • সাধারণ হয়েও অসাধারণ বাচ্চারা খুব অল্পতেই খুশি হয়। হাতে চাঁদ এনে দেবার চেয়ে, চাদের বুড়ির গান শোনাতেই দেখবেন একফালি হাসি বেয়ে পরবে ছোট্ট সোনার মুখে। ছোট ছোট কিছু কাজ একসাথে করুন- একসাথে টিভিতে ওর প্রিয় কার্টুনটা দেখুন, হাসির অংশগুলোতে আপনিও হেসে গড়াগড়ি খান।

ওর প্রিয় গানের তালে দুজন মিলে হাত-পা ছুড়ুন- শেক ইয়র টেইল ফেদার! এই ছোট ছোট মুহুর্তগুলো কখন যে ওর কাছে খুব ভালোবাসার একটা স্মৃতি হয়ে যাবে, কে যানে! • হতে হবে একেবারে আলাদা অন্য মায়েদের চেয়ে কর্মজীবি মায়েরা শিশুর সাথে সময়টা কম পান। আর তাই তাদের আক্ষেপের-ও শেষ নেই। কিন্তু মনে রাখুন- আপনি অনন্য মা; যাকে সকল লাইফেই ব্যালেন্স করতে হয়। নো কমপ্রোমাইজ। কর্মজীবি মায়েরা যারা পুণঃরায় আবার মা হতে যাচ্ছেন তাদের জন্য বিষয়টা একটু কষ্টকর।

আগের মত বাবুর সাথে হাত পা ছুড়ে খেলতে না পারলেও; বিশ্রাম নিতে নিতেই ওর সাথে গলা ছাড়ুন। ওকে পাশে রেখে ওর খেলার সাথি হোন। • ওর অনভিপ্রেত আচরণ হোক বার্তা- কি হচ্ছে ওর সাথে বাচ্চারা বহুবিধ কারণে অনভিপ্রেত আচরণ করতে পারে; তার মানে এক নয় যে ও হাত ছাড়া হইয়ে যাচ্ছে, বা বেয়ারা। হতে পারে ও আপনাকে কিছু বোঝাতে চেয়েও পারছেনা, হতে পারে ও ক্ষুদার্ত/ টায়ার্ড অথবা কোন কারনে বিরক্ত। ওর চাই আপনার আরো মনোযোগ।

ওর যত্নে অবহেলা অথবা অন্যায় হচ্ছে- হয়ত ও কিছুই বোঝাতে পারছেনা। এরকম অবস্থায় আমরা ভ্রু কুচকে বলি- বাবু ভারি বিরক্ত করছে! না! ওকে বোঝার চেষ্টা করুন- বুঝুন অঘটনের আগেই। • আসুন জানাই পরিবার ও বিশ্বাসের বাণী পাতিলে-পাতিলে টক্কর খায়না এমন কথা অকল্পনীয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মতের দ্বিমত হতেই পারে। তার বহিঃপ্রকাশ শিশুর সামনে করা যাবেনা।

কথা বলুন ধৈর্যের সাথে; কথা বলুন যুক্তি দিয়ে-শান্ত ভাবে। কথা বলুন বাবুর আড়ালে। ওকে পারিবারিক বন্ধনের মূল্য বুঝতে দিন। ওর সামনে কাওকে গাল মন্দ করবেন না; কিংবা কটুক্তি করবেন না কারোব্যপারে। আপনার ধর্মের বানী খুব ছোট কাল থেকেই ছড়িয়ে দিন ওর মাঝে-খেলার ছলেই, কিংবা শুরু করুন খাবার/ ঘুমের আগের প্রার্থণা দিয়েই।

• প্রকৃতিও হোক শিক্ষক প্রকৃতি হল শিশুর প্রথম শিক্ষক। ওকে খেলতে খেলতে পরতে দিন। ও তা থেকেই শিখবে সাবধানতা। কখনোই ওভার-প্রটেক্টিভ হওয়া উচিতনা। এটি ওর কনফিডেন্স লেভেলকেও জিরো করে দেবে।

• নিজেকে তৈরি করি ওকে করবার আগে একজন হাসিখুশি প্রাণ-চঞ্চল মা-ই গড়তে পারেন একটি সুস্থ-সজীব পরিবার। তাই নিজেকে আদর্শ, সুস্থতা ও বিচক্ষণতার চালুনী দিয়ে চেলে নিন। নিজেকে উদ্যোমী করুন- ঝেড়ে ফেলুন –‘ফ্রাস্ট্রেশন’। আপনি ফিট তো ফ্যামিলি হিট। *********** সবচেয়ে বড় কথা-নিজেকে হারানো চলবেনা।

নিজের কথা ভুলে সব বিসর্জন দিয়ে মন মরা হয়ে দিনান্তিপাত করলে- তার নেগেটিভ ভায়াব্রেশন আপনার আশে-পাশের কাছের মানুষকেও মন মরা করে দেবে। আপনার শখ আহ্লাদকে জিইইয়ে বাখুন; লালন করুন, পুরণ করুন। নিজেকে উপহার দিন। টিনএজ বইয়েসে যেমন সাজুগুজুর বাক্স নিয়ে আয়নার সামনে বসে পরতেন, বসে পরুন। জীবন একটাই- তাইনা? পরবর্তীঃ মাতৃত্বকালীন ছুটির পর অফিস ফেরার প্রস্তুতি


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.