আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইংরেজী ছায়াছবির বাংলা রিভিউঃ হ্যারি পটার এন্ড দি ডেথলি হ্যালোস পার্ট টু ।

সম্প্রতি দেখলাম হ্যারি পটার এন্ড দি ডেথলি হ্যালোস পার্ট টু। যদি কাউকে বিগত বছরের কিছু আলোড়নসৃষ্টিকারী ছায়াছবির নাম বলতে বলা হয়-তাহলে হ্যারি পটার সিরিজের শেষ ছবিটি তালিকায় থাকবে নিঃসন্দেহে বলা যায়। সিরিজটির দীর্ঘ দশ বছরের পথচলা শেষ হয়েছিল এই ছবিটির মাধ্যমেই। গত বছরের highest grossing ফিল্মগুলোর মধ্যে এটার অবস্থান ছিল একেবারে প্রথমে। বক্স অফিসে ঝড় তোলা এই ছবিটির মোট আয় 1.3 বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

যার বদৌলতে এটা এখন সর্বকালের 3rd highest grossing film(worldwide),এবং highest grossing NON-CAMERON film of the world. গতবছরের বক্স অফিস হিট করা প্রায় সকল চলচ্চিত্রই সমালোচকদের কাছে নেগেটিভ রিভিউ পেয়েছিল,যেমনঃপাইরেটস এর রটেন টমেটো ফ্রেশ রেট ৩৪%,ট্রান্সফর্মাসের ফ্রেশ রেট ৩৫%,টোয়াইলাইটের ফ্রেশ রেট ২৫%.সে জায়গায় এই ছবিটি বিশেষভাবে সমালোচকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়। আর এই কারনেই রটেন টমেটোতে এর ফ্রেশ রেট কিনা ৯৬%!আর top critics দের কাছে একেবারে ১০০% ফ্রেশ!(আমার কথা বিশ্বাস না হলে রটেন টমেটো থেকে দেখে আসতে পারেন)। ছবিটির imdb রেট ৯ এর কাছাকাছি। আগেই বলে রাখি,ডেথলি হ্যালোস হলো হ্যারি পটার সিরিজের সর্বশেষ বই। জটিল প্লট এবং বিস্তৃত চিত্রনাট্যের কারনে বইটিকে দুইভাগ করে ছবি নির্মান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ডেথলি হ্যালোস পার্ট টু ওই বইয়ের শেষের ২৫০ পৃষ্টা অবলম্বনে তৈরী করা হলেও ,কাহিনীর পুরোটা তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। তাই অনেকেরই মুভিটাকে খাপছাড়া মনে হতে পারে। কিন্তু বইটা পড়া থাকলে এরকম মনে হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠবে না! গভীর কাহিনী এবং নির্মানশৈলীর কারনে বিখ্যাত পত্রিকা দি ডেইলি টেলিগ্রাফ মুভিটিকে আখ্যা দিয়েছে ,'deeply satisfying'.গার্ডিয়ানের মতে,'epic and heartbreaking'.টাইমসের মতে,'totaly iconic and enterly epic'. ১৩০ মিনিটের এই মুভিটির কাহিনী কখনোই এখানে পুরোপুরি বর্ননা করা সম্ভব নয়। তারপরও কিছু জিনিস তুলে ধরার চেষ্টা করছি। হ্যারি ও তার দুই বন্ধু রন এবং হার্মায়েনী তাদের প্রয়াত প্রধানশিক্ষক ডাম্বলডোরের উপদেশমত ৭ টি হরক্রাক্স ধ্বংস করার অভিযানে নামে।

যেগুলো ধ্বংস করলে ভোল্ডেমর্টকে বিনাশ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এর পথে থাকে অসংখ্য বাধা বিপত্তি। তারা প্রথমে জাদুকরদের ব্যাংক গ্রিংগটসে গোপনে হামলা চালায়। হ্যারি ভোল্ডেমর্টের আরেকটি হরক্রাক্স খুঁজে পেতে সক্ষম হলেও ভোল্ডেমর্ট তাদের অভিযান সম্বন্ধে জেনে যায়। তারপর হ্যারি হগোয়ার্টসে যাওয়ার প্ল্যান করে।

যাওয়ার সময় তাদের ডাম্বলডোরের ছোটভাইয়ের সাথে দেখা হয়। হ্যারি তার প্রয়াত প্রধান শিক্ষকের পূর্বের জীবনকাহিনী সম্ভন্ধে অনেক কিছু ডাম্বলডোরের ছোট ভাই আবারফোর্থের কাছ থেকে থেকে জানতে পারে। তারপর তারা তাদের সহপাঠী নেভিল লংবটমের সাহায্যে গোপন প্যাসেজ ধরে হগোয়ার্টসে ঢুকে পড়ে। তখন তারা রুম অব রিকোয়ারমেন্টে হগোয়ার্টস ছাত্রদের সংগঠন ডাম্বলডোর আর্মির সদস্যদের সাথে মিলিত হয়। তারপর হ্যারি তার সহপাঠিনী লুনার সাহায্যে অপর হরক্রাক্স খুজতে যায়।

সেখানে হ্যারি,রন আর হার্মায়েনীকে আক্রমন করে ড্রাকো ম্যালফয় ও তার দুই বন্ধু। ভয়ানক আগুনের সৃষ্টি করে ম্যালফয়ের বন্ধু গয়েল। শেষে গয়েল আগুনে পুড়ে মারা যায়। ম্যালফয়ও মারা যেত যদি হ্যারি শেষমূহূর্তে তাকে উদ্ধার না করত। ম্যালফয় তাকে আক্রমন করলেও হ্যারি তার শত্রুর এরকম ভয়ানক মৃত্যু চায় নি।

তারপর লর্ড ভোল্ডেমর্টের বাহিনী হগোয়ার্টসে আক্রমন করে। ভোল্ডেমর্টবিরোধী সংগঠন অর্ডার অব দি ফনিক্স ও হগোয়ার্টসের শিক্ষকেরা তাদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এই ফাঁকে হ্যারির অভিযান চলতে থাকে। তারপর শ্রিকিং শ্যাকে হ্যারির অত্যাচারী শিক্ষক স্নেইপকে এল্ডার ওয়ান্ড জনিত কারনে হত্যা করে ভোল্ডেমর্ট। উল্লেখ্য স্নেইপ ডাম্বলডোরকে আগের বছর হত্যা করেছিল।

তাই ওনার প্রতি এমনিতেই হ্যারির প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল। মৃত্যুর ঠিক আগে হ্যারি,রন আর হার্মায়েনী একটি বিশেষ কারনে শ্রিকিং শ্যাকে উপস্থিত হয়েছিল। তারপর স্নেইপ মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মূহূর্তে হ্যারিকে তার কিছু মেমরী দিয়ে যায়। তায় ঠিক পরেই হ্যারি পেনসিভের মাধ্যমে স্নেইপের মেমরীতে প্রবেশ করে। সত্যি কথা বলতে কি পেনসিভের ভিতর ওই কয়েকটি মূহূর্তই ছিল পুরো সিনেমাটার সবচেয়ে উত্তেজনাকর মূহূর্ত।

হ্যারি জানতে পারে স্নেইপের প্রকৃত আনুগত্য। তারপর হ্যারি জানতে পারে হ্যারির মা লিলির সাথে স্নেইপের ছোটবেলার সম্পর্ক সম্বন্ধে। ডাম্বলডোরের মৃত্যুর প্রকূত রহস্যও হ্যারি জানতে পারে। হ্যারি জানতে পারে তার জীবনের ছক কিভাবে একেছিলেন ডাম্বলডোর আর স্নেইপ। হ্যারির প্রতি তার ভালোবাসা কেন স্নেইপ বাস্তবে দেখাতেন না তাও উন্মোচিত হয় পেনসিভের মাধ্যমে।

হ্যারি তারপর জানতে পারে,'harry must die for erase voldemort'.অর্থ্যাত্‍ হ্যারিকে মরতেই হবে যদি ভোল্ডেমর্টকে উত্‍খাত করতে চায়। তারপর হ্যারি তার জীবনের মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুর দিকে ছুটে যায়। ভোল্ডেমর্ট তাকে হত্যা করে। কিন্তু পেভেরেলদের উত্তরাধিকার সূত্রে হ্যারি ডেথলি হ্যালোসের মালিক হয়। সেই ডেথলি হ্যালোসের একটি ছিলো পূনঃজন্মী পাথর।

হ্যারি সেটা ব্যাবহার করে আবার নিজের আত্না ফেরত পায়। তারপর হ্যারির সাথে ভোল্ডেমর্টের প্রচন্ড ডুয়েল হয। শেষে হ্যারী জয়লাভ করলেও হোগার্টের যুদ্ধু তার অনেক বন্ধু ও শিক্ষক নিহত হয়। উপরের কাহিনীটা হলো মূল কাহিনীর একটি অতি সংক্ষিপ্ত বর্ননা। পুরোটা জানতে হলে অবশ্যই সিনেমাটা দেখতে হবে।

'ভালোবাসা ও মৃত্য' এই দুটিই ছবিটির মূল বিষয়। তাছাড়া এতে আত্ন্যত্যাগের বিষয়টিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে খুব সুন্দরভাবে। সব মিলিয়ে একটি দূর্দান্ত ছায়াছবি বলা যায় এটাকে। চমত্‍কার সব ভিজুয়াল এফেক্ট আর দুর্দান্ত অভিনয় যেন মুভিটিকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। সাউন্ডট্র্যাকগুলোও খুব সুন্দর।

শেষ করছি এই ছবিটি নিয়ে রটেন টমেটোর দুইজন খ্যাতনামা সমালোচকের বক্তব্য দিয়ে,'it's a perfect emotional journey' এবং 'powerfuly acted,visual dazzlings and deep story make the last potter film truly satisfying'. directed by:david yates, starring:daniel radcliffe,emma watson,rupert grint,alan rickman,michal gambon etc. ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।