আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা সিটি কলেজ: যখন অতিরিক্ত কড়াকড়ির কারনে মিডিয়ার বিষয়বস্তু

তাশফী মাহমুদ একরাশ স্বপ্ন নিয়ে প্রতীক ভর্তি হলো স্বণামধন্য রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ঢাকা সিটি কলেজে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়েছে অনেক আগেই। ভর্তি হলো কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করতে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই কলেজটি ছাড়াও শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজ, ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ঢাকা ও এর বাইরের বিভিন্ন কলেজে একই বিষয়ে অনার্স কোর্স করানো হয়। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল আসেনি প্রতীকের।

খুব ছোট থেকেই জেদ ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। ছোট বেলায় প্রতীক এই ‘টিভির মতো’ জিনিসটা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতো। নিজের কম্পিউটার ছিলো না। তার পাশের বাসার বন্ধুর কম্পিউটার ছিল তখন থেকেই। জেদটা পাল্টে হলো লক্ষ্য হিসেবে।

পেশা হিসেবেও অনেক সম্মানজনক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্যেও প্রত্যাশিত ফলাফল না থাকায় ভর্তি হতে পারলো না কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুয়েট সে তো অনেক দূরের কথা। আর্থিক অবস্থাও স্বচ্ছল নয় যে, টাকার বিনিময়ে অধ্যয়ন অর্থাৎ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবে। অতঃপর অনেক খোঁজখুঁজির পর ভাগ্যদেবী যেন মুখ তুলে চাইলেন।

প্রতীক খোঁজ পেল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স পড়ার। ফরম তুললো অনেক আশা নিয়ে। মৌখিক পরীক্ষা দিল, খুশির কথা, সুযোগও হলো পড়ার। অনেকটা নিশ্চিন্ত হলো সে, মোটামুটি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে কম্পিউটার থাকবে না, তা কেমন করে হয়? বাবা মার কাছে জেদ ধরে কম্পিউটারের জন্য, বাবা মাও অনেক কষ্টে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কিনে দেয় কম্পিউটার, ঝকঝকে তকতকে একটি কম্পিউটার।

প্রথম ক্লাসে সে তার মতো আরো অনেক স্বপ্নচারিনী দেখতে পেল। যাদের উদ্দেশ্য এক। ঢাকার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ঢাকা সিটি কলেজ নিয়মশৃঙ্খলার দিক দিয়ে অন্যতম সেরা এটা মানতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ইউনিফর্ম পরা বাধ্যতামূলক করলেও এটা মনে রাখতে হবে যে, এখানের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি পরিপক্ক। কিন্ডারগার্টেনের নিয়মশৃঙ্খলার সঙ্গে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলার তুলনা করা যাবে না।

শ কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য প্রতীক এই শিক্ষা জীবনে কিন্ডারগার্টেনের জীবনের চেয়ে আলাদা করতে পারল না। শৃঙ্খলাই জীবন, নি:সন্দেহে। কিন্তু এ কি ধরনের শৃঙ্খলা, যে সামান্য কোনো কারণেই অপদস্থ করা হয় একজন ছাত্রকে, এমনকি গায়ে হাত তোলাও হয়? প্রতীকের মনে পড়ে, স্কুলের হুজুর স্যারের কথা, যে কিনা টিফিনের পরে নামায না পড়লে লাইন ধরে পেটাতো তাকে। বিকেলে এলাকার আড্ডায় অন্যান্য বন্ধুদের কাছে শুনে অবাক হতো প্রতীক। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই নাকি খুব বন্ধুত্বপরায়ণ, তাদের সিনিয়র বড় ভাই আপুরা নাকি একসঙ্গে বসে অনেক আড্ডা মারে, এমনকি পড়ালেখায় কোন সমস্যা হলে তারা ছুটে যায় সিনিয়রদের কাছে।

সিনিয়ররা যদি সমস্যার সমাধান না দিতে পারে তবে ছুটে যায় তারা তাদের ক্লাস টিচারের কাছে নিঃসঙ্কচে। তাদের রয়েছে ড্রামা, থিয়েটার, ফিল্ম, ডিবেট, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি আরও অনেক বিভিন্ন ক্লাব। তারা এগুলোর সদস্য হয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মনোযোগী হচ্ছে এর মাধ্যমে। আর প্রতীক, বড় ভাই কি ক্লাসমেটদের সঙ্গে কথা বলাতেও অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়।

ক্লাসমেট কোনো মেয়ে কথা বলতে হয় ভয়ে ভয়ে, টিচার দেখলে খবর আছে। ক্যাম্পাস আসলে কি জিনিস তা ব্যাখ্যার উপায় নেই। ক্লাসমেটদের সাথে বাইরে কোথাও বসে গল্প করা যাবে না। কোনো টিচার দেখে ফেললে সমস্যা, বিচার দেবে ডিপার্টমেন্টে। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের মধ্যকার সম্পর্কের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যেমন ‘দায়ী’ নয়, তেমনি এর দায়দায়িত্বও অবশ্যই সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও নয়।

প্রতীক দেখেছে দুটি ছেলে ও মেয়ের মধ্যকার সম্পর্কের জের ধরে ব্যক্তিগত আক্রোশ ঝাড়তে একজন শিক্ষক ঘটনাটিকে ইস্যু বানিয়েছেন এবং তা গড়িয়েছে থানা পুলিশ পর্যন্ত। ছেলেটিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনেক শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে। তাদের শেষ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। কি এমন দোষ ছিল তাদের? কি জন্য তাদের মাঝ পথে ফেলে দেওয়া হলো নর্দমায় প্রতীকের অন্য সহপাঠীরা আর খুব বেশি হলে এক বছরের মধ্যে বের হয়ে যাবে স্নাতক শেষ করে। কিন্তু প্রতীকের বর্তমান অবস্থান থেকে এখনো অজানা, ঠিক কয় বছর পর সে স্নাতক পাশ করে বের হতে পারবে।

সে পরীক্ষা দিয়েছে তিন সেমিস্টার, চার সেমিস্টার পরীক্ষা হয়েছে কিন্তু সেশন জটে মাত্র দুটি সেমিস্টারের ফলাফল বেরিয়েছে। সে দুটির ফলাফল কবে বের হবে তাও অজানা। প্রথম সেমিস্টারে যেসব সহপাঠী খারাপ করেছিল তাদের সুযোগ হয়েছিল পুনরায় পরীক্ষা দেবার। কিন্তু সে ফলাফলও এখনো অদৃশ্য। প্রতীক যখন উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে তখন তার ব্যাচে ছিল ১৫০ জনের মতো, কিন্তু কালের ব্যতিক্রমে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ জনেরও কম।

চলে যাওয়া ব্যাচমেটরা অনেকটা সময় নষ্ট করে পাড়ি জমিয়েছে বিভিন্ন প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি ভারি সার্টিফিকেটের মূল্য তারা কেন বুঝলো না, কেন তাদের আটকাতে পারলো না এই সার্ফিকেটের মূল্য? কেন পাড়ি জমাতে হয়েছে অন্যত্র? পরিশেষে প্রতীকের হয়েই বলি, সংশ্লিষ্ট সবাইকে, দেখুন খাঁচার মধ্যে এই আগামীর উড়ন্ত প্রতিভাকে বন্দি রাখবেন না। আমি নিশ্চিত, তারা টিয়া পাখি নয় যে খাঁচা থেকে বের হতে পারলেই অরণ্যে উড়ে যাবে। তারা শান্তির প্রতীক পায়রার ন্যায়। শিক্ষা দিন, খাঁচা থেকে বের হতে দিন।

বেলা শেষে খাঁচায় প্রবেশ করবেই। ******ঢাকা সিটি কলেজ এ পড়ুয়া বর্তমান ও সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রশ্ন, এখানে যা লেখা হলো ,তা'কি সত্যি ????******** ---------------------------------------------------------------------------------- সুত্র----বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’ লেখক---আশিক মাহমুদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে গণযোগাযোগ বিভাগে অধ্যয়নরত, চতুর্থ সেমিস্টার। ----------------------------------------  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.