আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের সংবিধানের সহজ পাঠঃ পর্ব ১

পরিবর্তনে বিশ্বাস করি। আমরা অনেকেই আমাদের সংবিধান সম্পর্কে খুবই কম জানি। অথচ রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদের সংবিধান সম্পর্কে জানা। নিজে জানা এবং অন্যকে, যারা জানতে আগ্রহী তাদের জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। এই লেখাটি কয়েকটি পর্বে বিভক্ত হবে এবং প্রতি পর্বে সংবিধানের এক একটি করে বিষয় তুলে ধরা হবে।

লেখাটির তথ্য সূত্র শেষ পর্বে দেয়া হবে। সংবিধান একটি রাষ্ট্রের দর্পন স্বরূপ। প্রতিটি রাষ্ট্রেরই একটি সুনির্দিষ্ট সংবিধান রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এই সংবিধান প্রণীত হয়, এবং একই সালের ১৬ই ডিসেম্বর হতে এটি কার্যকর হয়।

বাংলাদেশের সংবিধান রচনার ইতিহাস সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ই এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই বছরের ১৭ই এপ্রিল থেকে ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত এই কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে। জনগণের মতামত সংগ্রহের জন্য মতামত আহবান করা হয়। সংগ্রহীত মতামত থেকে ৯৮টি সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। ১২ই অক্টোবর, ১৯৭২ তারিখে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন সংবিধান বিল গণপরিষদে উত্থাপন করেন।

এরপর ৪ঠা নভেম্বর, ১৯৭২ সালে বিলটি পাস হয় এবং আইনে পরিণত হয়। সংবিধান লেখার সময় খসড়া পর্যালোচনার জন্য ড. আনিসুজ্জামানকে আহবায়ক, সৈয়দ আলী আহসান এবং মযহারুল ইসলামকে ভাষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি কমিটি গঠন করে পর্যালোচনার ভার দেয়া হয়। গণপরিষদ ভবন, যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন, সেখানে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির বৈঠকে সহযোগিতা করেন ব্রিটিশ আইনসভার খসড়া আইন-প্রণেতা আই গাথরি। সংবিধান ছাপাতে ১৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিলো। শিল্পী হাশেম খান অলংকরণের দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৪৮ সালে তৈরী ক্র্যাবটি ব্রান্ডের দুটি অফসেট মেশিনে সংবিধানটি ছাপা হয়। বাংলাদেশের প্রথম হস্তলিখিত সংবিধান ছিল ৯৩ পাতার। হস্তলিখিত সংবিধানটির মুল লেখক ছিলেন আব্দুর রউফ। হস্তলিখিত সংবিধানটির অঙ্গসজ্জা করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। গণপরিষদের সদস্যরা হস্তলিখিত মূল সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজী লিপিতে স্বাক্ষর করে ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭২।

গণপরিষদের ৩০৯ জন সদস্য হস্তলিখিত মূল সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি। বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময় রাষ্ট্রপ্রতি ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান [ বিস্‌মিল্লাহির-রহ্‌মানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে)/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে। ] প্রস্তাবনা আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া [ জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের] মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি; [ আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল -জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে ;] আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে; আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করিতেছি যে, আমরা যাহাতে স্বাধীন সত্তায় সমৃদ্ধি লাভ করিতে পারি এবং মানবজাতির প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্খার সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে পূর্ণ ভূমিকা পালন করিতে পারি, সেইজন্য বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তিস্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুণ্ন রাখা এবং ইহার রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য; এতদ্বারা আমাদের এই গণপরিষদে, অদ্য তের শত ঊনআশী বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসের আঠারো তারিখ, মোতাবেক ঊনিশ শত বাহাত্তর খ্রীষ্টাব্দের নভেম্বর মাসের চার তারিখে, আমরা এই সংবিধান রচনা ও বিধিবদ্ধ করিয়া সমবেতভাবে গ্রহণ করিলাম। ২য় পর্ব (চলবে...) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.