আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোমড় ব্যথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

ঘটনা ১: জনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। বর্তমানে পড়াশুনার বেশ চাপ। সামনে পরীক্ষা তাই রাত জেগে পড়াশুনা করতে হচ্ছে। কিন্তু গত ৩/৪ দিন হলো সে পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে পারছে না। চেয়ার-টেবিলে বসলেই কিছুক্ষনের মধ্যেই কোমড় এবং পিঠে ব্যথা অনুভব হচ্ছে।

বেশিক্ষন চেয়ারে বসা তার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠছে দিন দিন। ঘটনা ২: রফিক সাহেব প্রাইভেট ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই তাকে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হতো। প্রথম দিকে অনেকক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করার পর পিঠে-কোমড়ে ব্যথা হতো যেটা তেমন একটা আমলে নিতেন না। ভাবতেন এমনিতেই কমে যাবে।

ইদানিং ব্যথাটা ঝুকে বসে কাজ করতে গেলেই বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আজ আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়ানোর সময় খেয়াল করলেন শরীরটা একটু সামনের দিকে ঝুকে আছে। কম্পিউটারে কাজের জন্য বসলেই এখন কোমড়ে একটা টানটান ব্যথা অনুভব করছেন। ঘটনা ৩: রহিম বেপারি, চাউলের আড়তদার। এক বস্তা চাউল নিচ থেকে উঠাতে গিয়ে হঠাৎ কোমড়ে ব্যথা পান তিনি।

আস্তে আস্তে ব্যথা ডান পা দিয়ে নিচে নামতে শুরু করে। তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে আসে সে। আসার সময় পাশের ফার্মেসি থেকে ব্যথার ঔষধ ও নিয়ে আসে। বাসায় এসে ব্যথার ওষুধ খায় এবং গরম স্যাক দেয় কোমড়ে। কিন্তু কিছুতেই ব্যথা কমে না।

রাত যত বাড়ে ব্যথাও বাড়তে থাকে এবং ডান পায়ের নিচে নামতে থাকে। পরদিন সকালে সে আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না তীব্র ব্যথার কারনে। উপরের তিনটি ঘটনার আলাদা আলাদা প্রেক্ষাপট হলেও ঘটনা তিনটির সারকথা একই। অর্থাৎ তিনজনই কোমড় ও পিঠ ব্যথায় ভুগছেন। কোমড় ব্যথা: কোমড়ে বা কোমড় থেকে পায়ের দিকে প্রসারিত ব্যথাকে কোমড় ব্যথা বা লো ব্যাক পেইন বলা হয়ে থাকে।

কোমড় ব্যথা আসলে কোন রোগ নয়, এটা আসলে রোগের উপসর্গ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ জীবনের বিভিন্ন দশায় কোমড় ব্যথায় ভোগেন। কোমড় ব্যথার কারন: প্রধানত দুটি কারনে কোমড় ব্যথা হতে পারে: ১. কাঠামোগত বা ম্যাকানিক্যাল সমস্যা ২. বিভিন্ন অসুখ বা প্যাথলজিক্যাল সমস্যা ১. কাঠামোগত বা মেকানিক্যাল সমস্যা: কাঠামোগত পরিবর্তনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে:  পশ্চার জনিত সমস্যা: অস্বাভাবিক ভাবে অনেকক্ষণ বসে বা দাড়িয়ে কাজ করলে এ ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে। কোমড়ের চারদিকের মাংসপেশি বা জয়েন্টে বেশি সময়ের জন্য টান লাগলে এই ব্যথা হয়। উপসর্গ সূমহ: - বেশি সময় অস্বাভাবিক ভাবে বসে থাকলে ব্যথা হবে, স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যথা হবে না - ব্যথা সব সময় থাকবে না - ব্যথা পায়ের দিকে ছড়াবে না - নড়াচড়া করলে ব্যথা লাগবে না  ডিসফাংশনজনিত সমস্যা: অনেকদিন কারো পশ্চারগত সমস্যা থাকলে অর্থাৎ অস্বাভাবিক ভাবে অনেকদিন কাজ করলে কোমড়ের চাড়িদিকের মাংশপেশির এবং হাড়ের এক ধরনের পরিবর্তন হয়, এর ফলে এই ব্যথার সৃষ্টি হয়।

উপসর্গ সূমহ: -কোমড়ের মাংশপেশিতে টান পড়লেই ব্যথা হবে -স্বাভাবিক অবস্থায় যেতে চাইলেই ব্যথা অনুভূত হবে -নড়াচড়া করলে ব্যথা লাগবে -যে কোন একদিকে নড়াচড়া কমে যাবে -ব্যথা সব সময় থাকবে না  ডিরেঞ্জমেন্ট জনিত সমস্যা: আমাদের মেরুদন্ডে মোট ৩৩ টি হাড় থাকে। মেরুদন্ডের প্রতি দুই হাড়ের মাঝে থাকে ডিস্ক বা ইন্টার ভারটিব্রাল ডিস্ক। এই ডিস্কের বাইরের দিকে থাকে শক্ত আবরণী এবং ভিতরে জেলির মতো নরম পদার্থ থাকে। আমরা যদি খুব বেশি সামনে ঝুকে কাজ করি অথবা কোন কারনে যদি ডিস্কে আঘাত লাগে তাহলে জেলির মতো পদার্থটি বাইরে বের হয়ে যায় এবং স্নায়ুকে চাপ দেয়। ফলে কোমড় বা কোমড় থেকে পায়ের দিকে ব্যথার সৃষ্টি হয়।

উপসর্গ সূমহ: - ব্যথা খুব তীব্র হবে - ব্যথা সব সময় থাকবে - ব্যথা কোমড় থেকে পায়ের দিকে প্রসারিত হতে পারে - অনেকক্ষেত্রে পায়ের অনুভূতি এবং শক্তি কমে যেতে পারে (সূত্র: ম্যাকানিক্যাল ডায়াগ্‌নোসিস এন্ড থেরাপি -২০০৭) ২. বিভিন্ন অসুখ বা প্যাথলজিক্যাল সমস্যা:  এনকাইলোজিং স্পোন্ডাইলাইটিস  রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস  অস্টিওমায়েলাইটিস  বোন টিউমার  অস্টিওপোরোসিস  প্যাগেট্‌স ডিজিস  প্রোস্টেট ক্যান্সার  ফাইব্রোমায়ালজিয়া ইত্যাদি পরিত্রানের উপায়: আমাদের শরীরের কাঠামোগত পরিবর্তনের কারনে যে ব্যথার সৃষ্টি হয় সেÿেত্রে ওষুধের ভূমিকা থাকে নগণ্য। কারন কাঠামোগত পরিবর্তন শুধু ওষুধ সমাধান করতে পারে না। এছাড়াও কিছু প্যাথলজিক্যাল সমস্যার (যেমন এনকাইলোজিং স্পোন্ডাইলাইটিস, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, ফাইব্রোমায়ালজিয়া ইত্যাদি) ক্ষেত্রে ওষুধ পরিপূর্ণ সমাধান দিতে পারে না। এসব সমস্যা সমাধানে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। কোমড় ব্যথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা: আমরা যদি উপরের ৩টি ঘটনার দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো: ১ম ব্যাক্তি পশ্চার জনিত সমস্যায় ভূগছেন, ২য় ব্যাক্তি ডিসফাংশন জনিত সমস্যায় ভূগছেন এবং ৩য় ব্যাক্তি ডিরেঞ্জমেন্ট জনিত সমস্যায় ভূগছেন।

এ সকল সমস্যার পরিপূর্ণ এবং সঠিক সমাধান রয়েছে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায়। এক্ষেত্রে একজন কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিষ্ট রোগীকে ফিজিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল এবং প্যাথলজিক্যাল টেষ্টের মাধ্যমে রোগীর সমস্যা নিরুপণ করেন এবং সেই সমস্যা অনূসারে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে থাকেন: -পশ্চারাল এডুকেশন -ম্যানুয়াল থেরাপি -ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি -মোবিলাইজেশন -মুভমেন্ট উইথ মোবিলাইজেশন -থেরাপিউটিক এঙ্ারসাইজ -আরগোনমিক্যাল কনসালটেন্সী -ইলেকট্রোথেরাপি বা অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা (যেমন:SWD, UST, IRR, Traction) ইত্যাদি। -কিছু কিছু ক্ষেত্রে ড্রাগ্‌স বা ওষুধ একজন কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিষ্ট শুধু রোগীর কোমড় ব্যথার চিকিৎসা করেন না, সেই সাথে রোগীকে তার পূর্বের কার্যক্ষমতা ফিরে পেতে সাহায্য করে থাকেন। সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন, ব্যাথামুক্ত জীবন যাপন করুন। ডাঃ নওয়াব রেজা মো: রাসিফ ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিষ্ট, সিআরপি-মিরপুর ঢাকা।

ডাঃ মাহমুদুল হাসান আল ইমাম ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিষ্ট, অর্থোপেডিক বিভাগ, সিআরপি সাভার, ঢাকা। ই-মেইল: ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.