আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

bidhata jano unaka sorga stan dai

দিনের শেষে প্রতিবেদক : চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনের শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি আর নেই। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর ধানম-ির বাসায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ঃ রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি ১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।

ঢাকায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন শেষে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। একসময় নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের সংস্পর্শে তিনি মঞ্চনাটকের সঙ্গে জড়িত হন। ক্লাশের বাইরের সময়টা তিনি মঞ্চনাটকের প্রশিক্ষণ গ্রহণ, নাটকের রিহার্সেলে ব্যয় করতেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের নির্বাচিত নাট্যবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

তার সময়েই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিক আদলে মুক্তমঞ্চ নির্মিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও তার অবদান রয়েছে। শিক্ষা জীবন শেষে তিনি অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। বিটিভিতে নিয়মিত অভিনয়ের পাশাপাশি মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে টানা ৪ দশকের অভিনয় জীবনে সবসময় তিনি একক অবস্থানে ছিলেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে কয়েকজন অভিনয়শিল্পী মঞ্চ ও টিভি নাটককে অসম্ভব জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলেন, ফরীদি ছিলেন তাদেরই একজন।

ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকে ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি নিজেকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়। নীল নকশার সন্ধানে, দূরবীন দিয়ে দেখুন, ভাঙ্গনের শব্দ শুনিসহ তার অভিনীত বহু নাটক দীর্ঘদিন মনে রাখবে এ দেশের মানুষ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন এই শক্তিমান অভিনেতা। ফরীদি অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে আছেÑ নীল নকশার সন্ধানে (১৯৮২), দূরবীন দিয়ে দেখুন (১৯৮২), ভাঙ্গনের শব্দ শুনি (১৯৮৩), ভবের হাট (২০০৭), শৃঙ্খল (২০১০)। এছাড়া সংশপ্তক নাটকে ‘কান কাটা রমজান’ ফরীদি অভিনীত জনপ্রিয় চরিত্র।

অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে আছেÑ হুলিয়া, দহন, সন্ত্রাস, একাত্তরের যীশু ব্যাচেলর, শ্যামল ছায়া, জয়যাত্রা, আহা! প্রভৃতি। কয়েক দশকের কর্মময় জীবনে হুমায়ুন ফরীদি নায়ক, খল, পার্শ্বচরিত্রসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তফার সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ ছিলেন। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকেই হুমায়ুন ফরীদি অনেকটা একাকী-নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতেন।

একমাত্র মেয়ে দেবযানী বাবা হুমায়ুন ফরীদির দেখাশোনা করতেন। অভিনয়ের ব্যস্ততা অনেকটা কমিয়ে দিয়ে শেষ জীবনে হুমায়ুন ফরীদি নাটক পরিচালনায় মনোনিবেশন করেছিলেন। জনপ্রিয় এই অভিনেতা ফুসফুসের জটিলতাসহ আরো কিছু সমস্যায় ভুগছিলেন। স¤প্রতি রাজধানীর ধানমি র মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করা এবং কম ঘুমানোর কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এতে তার দেহের ওজন কমে যায়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও হ্রাস পায়। এ কারণে তাকে কয়েক ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে বিশ্রামে থাকতে এবং নিজের শরীরের প্রতি আরো যতœবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি কিছুদিন ধরে নিজ বাসায় বিশ্রামে ছিলেন।

ধানমি র নতুন ৯/এ’র ৭২নং বাসায় তিনি একাই থাকতেন। তার বাসার পরিচালক রুবেল জানান, আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার ঘরে গিয়ে দেখি তিনি বিছানায় নেই। অনেক ডাকাডাকির পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বাথরুমের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি ফরীদি ভেতরে পড়ে আছেন। পরে ডাক্তার এসে জানান, তিনি আর নেই। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

হুমায়ুন ফরীদির মৃত্যুর খবরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। নাট্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন ধানম-ির বাড়িতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করে পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, শিল্পী সমিতি, প্রযোজক সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার পৃথক পৃথক শোক বার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোকবাণীতে বলেন, নাট্যাঙ্গন ও সংস্কৃতিতে হুমায়ুন ফরীদির অবদান বিশেষভাবে স্মরণে রাখবে বাংলাদেশ।

বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক শোক বার্তায় বলেছেন, অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি দেশের মানুষের মনে চিরজাগরুক থাকবেন। বহুমাত্রিক অভিনয় ক্ষমতার এই শিল্পীর শূন্যতা সহজে পূরণ হবে না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.