আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশান বা সভ্যতার সংঘর্ষে অসভ্যতার রাজনীতি - একটা বিশাল বিশাল ক্যাচাল।

এইটা আমার ব্লগ। একটা প্রেশার কুকারের সব সাইড বন্ধ করে দিয়ে, আপনি যদি সেইটায় ক্রমাগত হিট দিতে থাকেন, তো কুকার এর ভেতরের জিনিষ গুলো ক্রমাগত ফুটতে থাকবে। ফুটতে ফুটতে এক পর্যায়ে সেইটা প্রচন্ড ভাবে বিস্ফোরিত হবে। এমনকি বারস্ট করার আগে সে যদি, কোন একটা ফুটো পায়, সেই ফুটো দিয়ে ঐ প্রেশার টা তিব্র বেগে বের হয়ে যেতে গিয়েও বিস্ফোরণ হতে পারে। আর প্রেশার কুকারের ভেতরে, যদি পানির বদলে, পেট্রল থাকে, তো সেই বিস্ফোরণ হবে ভয়াবহ।

কারন, পেট্রলের দাহ্যতা অনেক বেশি কিন্তু স্ফুটনাঙ্ক অনেক কম। তাদের সাথে কোন আলোচনা না করে, তাদের কে এই ভাবে পিটিয়ে, গুলি করে, অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষকে হত্যা করে, অজস্র মানুষকে মারত্নক ভাবে আহত করে, এই ভাবে বের দেয়া। এবং তাদের প্রতিনিধি মেডিয়া কে বন্ধ করে দিয়ে, কমিউনিটি ব্লগ সাইট ব্লক করে, ব্লগ এর এডমিনদের গ্রেপ্তার করে, তাদের মতামত প্রকাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে, সরকার তাদের আরও খুঁচিয়ে তুলছে। গত কয় এক মাসে ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল এবং মৌলবাদীদের উত্থান এই বিস্ফোরণের সাথে তুলনিয়। রিলিজিয়াস পিপল কে পৃথিবীর সব দেশে সেন্সেটিভলি দেখা হয়, কারন ইনারা বাই ডিফল্ট সেনসিটিভ মানুষ ।

কিন্তু, সমস্যা হইছে। এই মৌল জনগোষ্ঠী টাকে গত কয় এক বছর ধরে তেমন কোন বড় অপরাধ না করা সত্ত্বেও ক্রমাগত খোঁচানো হইছে এবং হইতাছে। যার ফলে, তাদের একটা ক্ষোভ পুঞ্জিভুত হইছে। এবং যেইটার বিস্ফোরণ ঘটছে। আনফরচুনেটলি, সেই বিস্ফোরণ কে কনটেন করার বদলে নিয়মিত আর্মড বাহিনীর ১০,০০০ সদস্য দের দিয়ে একটা রক্তক্ষয়ী অভিযান এর মাধ্যেম আরও বেশি খোঁচানো হইছে এবং তাদের ক্ষোভ কে আরও বাড়িয়ে দেয়া হইছে, যেই টা এই রাষ্ট্রকে সামনে ভয়ানক ভাবে অস্থিতিশীল করবে।

আরব দেশ থেকে উদ্ভুত ইসলাম, বাংলার বদ্বীপের নরম পলিমাটির জমিনে এসে অনেক নমনীয় একটা রুপ নিয়েছে। আবহমান বাংলার সামাজিক অনুশাসন এবং সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে, মানুষকে কনভিন্স করতে পারার কারনে এই দেশে ইসলাম ৮০% মানুষের ধর্মে পরিনত হয়েছে। ধর্মের সামাজিক অনুশাসন আর ধর্মের আত্মিক দিকটা কিন্তু এক নয়। স্রস্টার সাথে প্রার্থনার মাধ্যমে মানুষের যে স্পিরিচুয়াল কানেকশন হয় তাই, ধর্মের মুল প্রণোদনা। সামাজিক অনুশাসনের প্রয়োগ টা ধর্মের সেকেন্ডারি অবজেক্টিভ।

রাসুল (সাঃ) আরব দেশে জন্ম নিয়েছিলেন বলে আরব দেশের অনেক সামাজিক নীতি ইসলামিক অনুশাসনে রুপ নিয়েছে। এই সামাজিক অনুশাসনের জায়গায় এসে এই দেশের ধর্ম প্রচারকেরা, বাংলার পীর আওলিয়ারা অনেক এডজাস্টমেন্ট করেছেন, যা আমাদের বাঙ্গালি পরিচয় এর সাথে ইসলামিক পরিচয় এর সম্মিলন করে একটা নতুন আইডেন্টিটির জন্ম দিয়েছে, যাকে আমরা বলি, বাঙ্গালি মুসলমান। ধর্মের সাথে বাঙ্গালি মুসলমান এর এই এডজাস্টমেন্ট টা, নির্দ্বিধায় সবাই মেনে নেয় নাই। যারা ধর্মের মৌল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন, যারা ধর্মের ব্যেপারে ১০০% অনড়, তারা এই এডজাস্টমেন্ট এর মধ্যে একটা কনফ্লিক্ট দেখেন। এবং এই কনফ্লিক্ট টা নিয়ে তাদের একটা ক্ষোভ আছে।

এবং সমাজে ধর্মের সামাজিক অনুশাসন গুলোর স্ট্রিক্ট প্রয়োগের জন্যে একটা এক্টিভিজম তারা করে আসছেন ৭০০ বছর ধরেই। এবং প্রায়শই তারা সামাজিক স্পেসে তাদের এই এজেন্ডা নিয়ে মুখোমুখি হন এবং অনেক সময় তারা সমাজপতিদের ক্রিড়ানক হিসেবে নিজের অবস্থান কে বেচে দিয়ে, কিছু সাফল্য অর্জন করলেও বেশির ভাগ জায়গায় তারা ব্যাকফুটে। কিন্তু, ধর্মের মৌলিক বিষয়ে ১০০% কট্টর গোষ্ঠীরাও কিন্তু মেনে নিয়েছেন যে, বাঙ্গালি মুসলমান একটা স্বতন্ত্র স্বত্বা, যেইটা সময়ের সাথে টিকে গ্যেছে, যেইটা নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করে লাভ নাই। কিন্তু, তবুও তারা তাদের চাহিদা মোতাবেক একটা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু,অত্যন্ত রক্ষণশীল সেই চাওয়া অর্জনের জন্য চরম পন্থা বা পৃথিবীর অনেক দেশের মত হিংস আচরণ তাদের মধ্যে কখনওই দেখা যায়নি।

ফলে তাদের আন্দোলন অনেক অনেক লো কি এবং তাদের স্পিরিট ও খুব লো। মনের বাসনা যাই থাকুক মুল জন্গষ্ঠির ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই সামাজিক আন্দোলন টির তেমন সফল হওয়ার সম্ভাবনা না দেখার কারনে, তারাবেশীর ভাগই ধর্মের স্পিরিচুয়াল দিকেই মনোনিবেশ করেছেন। ফলে তারা নিজেদের মধ্যে একটা জগত গড়ে নিয়েছেন, যাতে তারা অনুশাসন গুলো মেনে চলেন এবং সেই জগত সামগ্রিক সমাজের মধ্যে সহাবস্থানের সময় নিজস্ব আইডেন্টিটি মেন্টেন করে। এই সুন্দর, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাঙ্গালি মুসলমান সমাজের একটা ইউনিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু,তাদের কে প্রায়ই রাজনিতির মাঠে টেনে আনার চেষ্টা করে এক দিকে বিএনপি অন্য দিকে আওয়ামী লীগ আর সবার সামনে ছিল জামাত ।

বিএনপির লাগে, এই ধর্মীয় গ্রুপ টাকে নিজের পক্ষে রেখে ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে। আর আওয়ামি লীগ যখন দুর্নীতি এবং গুন্ডামি তে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয় তখন এই চৌর্যবৃত্তি গুলোকে ঢেকে রাখার জন্যে একটা দন্দের প্রয়োজন পরে। এবং দন্দ টাকে, পাব্লিক আই এ রেখে,চৌর্যবৃত্তি গুলোকে আড়াল করার জন্যে সব সময় তাদের একটা প্রতিপক্ষ লাগে । সেই দন্দ টা হইলো, ধর্মীয় মৌলবাদ, প্রতিপক্ষ হইলো ইস্লামিস্টরা । ফলে, আওয়ামী লীগ এর লুটপাট তন্ত্রে যখনি চারিদিক সরগরম হয় তখনি চেতনা ব্যবসায়িরা ইসামিস্ট দের ধরে টানটানি শুরু করে।

অথচ, আমার নিজস্ব অবযারভেশান হইলো, প্রচণ্ড ভাবে প্রভোকড বা খোচানির মুখোমুখি না হলে, তারানিজস্ব জগত থেকে বেরিয়ে রাজনিতির জগতে আসার উচ্চাভিলাষ কখনও খুব একটা দেখায় নাই। সামাজিক ইসু গুলো নিয়ে তাদের ক্ষোভ বেশি, কিন্তু সেইটায় তারা পরাজিত পক্ষ এবং এইটা তারা মেনে নিছেন। রাজনৈতিক বিষয়ে তারা দেশের উন্নয়ন দেখলেই খুশি হন, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে পার্টিসিপেট করেন এবং দেশের ভাল মনদ নিয়ে আর দশটা নাগরিকের মত উদ্বিগ্ন থাকেন। পার্থক্য হইলো সরকার যখন,সামাজিক ইসু নিয়ে আইন প্রনয়ন বা এই ধরনের কোন কাজ করেন, তখন তারা তাদের ডেরা থেকে উঠে ডাক দেন, মুভমেন্ট করেন । কিন্তু, সরকার না মানলে, হার মেনে নিজের ডেরায় ফিরে যান।

আল্লা বিল্লায় মনোযোগ দেন। তাদের, এই আন্দোলন টা নন ভায়লেন্ট হওয়ার অন্যতম কারন, ডেমোক্রেসি এবং ফ্রিডম অফ স্পীচ ডেমোক্রেসি বিল্ট ইন ভাবে, এক্সট্রিমিজমকে চাপা দেয় এবং ফ্রিডম অফ স্পীচ বিল্ট ইন ভাবে, একটা অগ্রহণযোগ্যে আইডিয়া কে বর্জন করে। কারন, একস্ট্রিমিস্ট যখন দেখতে পায়, মাক্সিমাম জন গোষ্ঠীর আছে তার আইডিয়ারকোন বেইল নাই। তখন সে ডিস্পিরিটেড হয়ে পরে। এবং সে যখন তার আইডিয়া নিয়া জনে জনের কাছে যাইতে পারে, তখনসে একটা আইডিয়ার কন্টেস্ট এর মুখে পরে।

এবং কন্টেস্ট হয়ে যখন আইডিয়া টা ফাইনালি বেল পায়না, তখন, সেইটা বাতিল হয়ে যায়। এইটা সে মেনে নায়, কারন, আইডিয়ার গ্রহণযোগ্যতার এট্রিশান প্রসেস বা ধীরে ধীরে বাতিল হয়ে যাওয়ার প্রসেস টা তার চোখের সামনেই ঘটে। মুক্তসমাজের প্রধান তাত্ত্বিক, জন স্টুয়ারট মিল এইটা বলে গিয়েছিলেন , ” একজন ব্যক্তির যে কোন বিষয়ে আলোচনা করার, মতামত দেয়ার এবং পর্যালোচনা করার(এই যুগে বলবেন, ছবি আপলোড করার,ভিডিও দেখানোর, টক শো করার, এডিটোরিয়াল লেখার) সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে, তা যতই অনৈতিক হোক। সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিলে একটা যুক্তি তার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার সীমা পেরিয়ে, তার যৌক্তিকতার শেষ সীমায় পৌঁছায়। " এই ফ্রিডম টা যখন সমাজ এলাউ করে, তখন আর একটা কাজ হয় একজন কট্টর রক্ষনশিলের মনের কষ্ট অটোমেটিক চাপা পইড়া যায়।

এইটারেই, বলে ফ্রিডম অফ স্পিচ। আমাদের দেশে ফ্রিডম অফ স্পিচ বলতে বোঝানো হয়, সুশীল দের নাটক,গান বা কবিতা লেখার অধিকার। কিন্তু, একজন এক্সট্রিম রক্ষন শীল মানুষের, এক্সট্রিম মত প্রকাশের অধিকার টাও ফ্রিডম অফ স্পিচ, আমার দেশের যা ইচ্ছা লিখারঅধিকার ও যে ফ্রিডম অফ স্পিচ, দিগন্ত টিভির নিজস্ব দৃষ্টিতে সংবাদ দেখানোর অধিকারটাও যে ফ্রিডম অফ স্পীচ – সেইটা কিন্তু আমাদের মুক্ত চিন্তা ওয়ালারা অস্বীকার করেন। অবশ্যিই তা যত ক্ষণ পর্যন্ত সমাজে হারমবা ক্ষতি না করে বা আর অফেন্স বা আহত না করে। এখন দেখা গ্যেছে , আমাদের দেশে কেউ যদি, খিলাফত কায়েমের আলাপ করে তো সাথে সাথে একদল বলে উঠেঃ জঙ্গি, জঙ্গি,জঙ্গি।

ধর! ধর! ধর! মার!!! জেল এ ঢুকা। ফলে এমন একটা অবস্থা দারাইছে, যে ধরে নেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে ধর্মীয় মৌলবাদীদের জন্যে ফ্রিডম অফ স্পীচ টা প্রযোজ্য নয়। কিছু দিন আগে, ধর্মীয় মৌলবাদীদের ইন্টারনেট এর ব্লগিং এর স্পেস সোনার বাংলা বন্ধ করে দেয়া হইলো। তার এডমিন রে গ্রেপ্তার করা হইলো।

ধর্মীয় মৌলবাদীদের মধ্যেও শিক্ষিত, অশিক্ষীত, সুশীল, কুশিল, এক্সট্রিম এবং লিবারেল আছে। এদের মধ্যে সব চেয়ে এনলাইটেন্ড অংশ টা ব্লগিং করে। এদের আলোচনার স্পেস টাকে বন্ধ করে দেয়া হইলো, কোন প্রতিবাদ ছাড়া। এই ব্লগের এডমিন, মোহাইমেন কে, গ্রেপ্তার করাহইলো। কেও প্রতিবাদ করলো না।

চার জন ব্লগার এর প্রতিবাদে ইন্টারনেট সরগরম, কিন্তু,কেও বলে না, ব্লগার কিন্তু গ্রেপ্তার ৫ জন এবং ফারাবি সহ একচুয়ালি ৬ জন। ফলে,বাংলাদেশে ইস্লামিস্ট দের কাছে সিগনাল গ্যেছে –তাদের জন্যে ফ্রিডম অফ স্পীচ প্রযোজ্য না। একই ভাবে তারা দেখছে, তাদের মতামত প্রকাশের স্পেস দিগন্ত টিভি এবং ইসলামিক টিভি বা আমার দেশ বন্ধ করা হইছে। তো দেখা যাচ্ছে, সরকার ছলে বলে কৌশলে, ধর্মীয় রক্ষনশীল দের সকল মত প্রকাশের স্পেস কেড়ে নিছে এবং তাতে প্রগতিশীল এবং বাংলায় বাক প্রকাশের স্বাধীনতাবন্ধ আফগান হয়ে যাওয়ার ভয়ে উল্লম্ফন কারি গুষ্ঠির কোন প্রতিবাদ নাই। এই ভন্ডামিটা তাদের চোখে পরে।

এইটাতো ডাইরেক্ট দেখা গ্যেছে। আর একটা জিনিষ আছে, যেইটা দেখা যায় নাই। সেইটা হল,বাঙ্গালি সেকুলার মেডিয়ার ইনভিজিবল ফ্রিডম অফ স্পীচ সাপ্রেশান। আমাদের মেডিয়া এখন সম্পূর্ণ ভাবে সরকার এর বশীভূত। হেফাজত যখন, ৪ এপ্রিল প্রথম বার নামলো, সেইটা ছিল বিশাল একটা ব্যাপার।

প্রায় ৫ থেকে ১০ লক্ষ লোক, ঢাকায় মিছিল করছে। কিন্তু, দিগন্ত টিভি বাদে প্রতি টা চ্যানেল , আই রিপিট প্রতিটা চ্যানেল দেখাইছে –নাটক, উচ্চাঙ্গসঙ্গীত আর শাবনুর আর সালমান খান এর বাংলা সিনেমা। মিডিয়ার এই ধরনের একটা কালেক্টিভ ভন্ডামি কিন্তু, ফ্রিডম অফ স্পীচ এর বড় একটা সাপ্রেশান। এত বড় একটা বিক্ষোভ হইলো, আর আপনি ন্যাশনাল মেডিয়াতে বলতাছেন,কিছু হয় নাই, তখন কিন্তু আপনি যেই গ্রুপ টাকে নিয়ে এত বড় একটা মিথ্যা কতা বলতাছেন –তাদের এন্টাগোনাইয করতাছেন। এবং এইটা যখন কালেক্টিভলি সব গুলো মেডিয়া করতাছে, তখনতাদের এই ক্ষোভ এর লেভেল টা অনেক বড় থাকতাছে, কারন তারা রিয়ালাইয করতাছে, একটা দুইটা মেডিয়া নয়, পুরো সিসটেম তাদের বক্তব্য কে সাপ্রেস করার কাজ করতাছে।

সেকুলার মেডিয়া তাদের কথা বলবে না আর তাদের রিপ্রেসেন্টিটিভ মেডিয়া কে সরকার বন্ধ করেদিবে- তাইলে তো তাদের যাওয়ার কোন জায়গা থাকতাছেনা। এইটার ফলাফল এক্সট্রিমিজম। চরম এক্সট্রিমিজম। এবং এর ফলে সামনে যদি, তারা রাস্তা ঘাটে ইরাক আর পাকিস্তানের মত বম্ব ফুটানো শুরু করে, আমি অবাক হবনা। আর একটা ইম্পরট্যান্ট খোচানির পেরেক হইলো, যুদ্ধপরাধের সাথে ইসলাম কে সংযুক্ত করা।

৭১, সালে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেরসময় যারা রাজাকার হইছিল, তারা মুলত ছিল ২৫ থেকে ৩৫ বছরের। এদের অনেকেই ছিল চোর, ছ্যেচর এবং নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষ এবং গুন্ডাপান্ডা। কিন্ত, পরবর্তীতে এই রাজাকার এর স্টেরিওটাইপ করা হইছে, তা একজন টিপিকাল ইস্লামিস্ট। কাদের মোল্লার যে ছবি, আমি নেট এ দেখি তাতে তার দাড়ি দেখি না। নিয়াজি বা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনার সাথে যেই সব রাজাকার এর ছবি দেখি, তাদের বেশীর ভাগ এর কিন্তু দাড়ি দেখিনা।

রাজাকার এর পরিচয় আমাদের সমাজে অনেক বড় একটা স্টিগমা। আমাদের সমাজ রাজাকার দের ঘৃণা করে। এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষের শক্তি বলে আসলে কিছু নাই। অল্প কিছু, রাজাকার যাদের বেশির ভাগ এখন মরে গ্যেছে তারা বাদে এই দেশের আপামর জনতা, ইস্লামিশট নন ইস্লামিস্ট সবাই দেশের মুক্তি চেয়েছিল। ফলে, একটা মানুষ।

যার দাড়ি আছে, যে একজন ইস্লামিস্ট কিন্তু তার ইস্লামিস্ট পরিচয় এর জন্যে যখন তাকে, রাজাকার এর মত একটা ঘৃণ্য টাগ খেতে হচ্ছে, তখন তার মধ্যে একটা প্রচন্ড ক্ষোভ জন্মাচ্ছে, যারা তাকে ট্যাগিং করছে,তাদের বিরুদ্ধে। এইটা হওয়ার মুল দায় ৩০ লক্ষ মানুষের হত্যার দায় যাদের আছে সেই যুদ্ধপরাধী দল -জামাতের। মউদুদিবাদি জামাতে ইসলামি তাদের রাজনৈতিক অর্জনের জন্যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের হত্যা সহ অন্যান্য কাজে পারটিসিপেশানকে আড়াল করার জন্যে পরবর্তীতে ইসলাম এর রক্ষা কারি হিসেবে আবর্তিত হয়। এবং জামাত সব সময় দেখাতে চাইছে, এই দেশের সকল ইস্লামিসট জামাত সাপোর্ট করে। ফলে জামাত একটা পারসেপশান সৃষ্টি করে যে, তার ভোট ব্যাঙ্ক অনেক বড়।

এবং জামাত এর এই ভোট ব্যাঙ্ক টাকে পাওয়ার জন্যে প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল প্রায়শই তাকে কাছে টানে এবং দূরে ঠেলে। জামাতকে পক্ষে টানা না টানার সমীকরণে, পরবর্তীতে ইসলামি রাজনীতির সকল পক্ষ কেই, যুদ্ধপরাধের সাথে সম্পৃক্ত করা হয় বা এই ধরনের পারসেপশান তৈরি করা হয়। এই টাড় মাধ্যমে জামাত এর যুদ্ধাপরাধ ঢেকে রাখার জন্যে এবং রাজনৈতিক অর্জনের জনে বিশাল একটা ধুম্রুজাল সৃষ্টি করে। ফলে দেখা যাচ্ছে, একজন মানুষ যদি ইস্লামিস্ট হয়, তাকে প্রথমে প্রুফ করতে হচ্ছে, সে রাজাকার না। যেইটা, একজন নন জামাতি ইস্লামিস্ট এর জন্যে খুব অপমানজনক।

এই ডিভিশন টা সৃষ্টির আর এক নায়ক, আওয়ামী চেতনা ব্যবাসায়িরা। তাদের কারন টা রাজনৈতিক। আওয়ামী লীগ যখন দুর্নীতি বা দুশাসনে, সারাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ক্যাডার দের সন্ত্রাশে জনপ্রিয়তা হারায়, তখন এই ইসুগুলো ঢেকে রাখার জন্যে একটা ডিভাইড এন্ড রুল এর গেম এর প্রয়োজন হয়। যুদ্ধপরাধিদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালির এই ক্ষোভ টাকে, টিকিয়ে রাখার জন্যে, জামাত তখন একটা স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ শক্তির গেম খেলে। এই গেম টা যত ইন্টেনস হবে, তাদের দুর্নীতি ততই আড়ালে থাকবে।

এবং জামাত যেহেতু ধীরে ধীরে বিলিয়মান একটা শক্তি, এই খেলার অংশ হিসেবে - মৌলিক ইসলামে বিশ্বাসী সকল মানুষ কে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করে গেম এর স্কোপ টা আরেকটু বাড়ানোর প্রয়োজন পরে । হেফাজত কিন্তু জামাত না এবং সকল ইস্লামিস্ট জামাত না। মউদুদিবাদি জামাত এর সাথে কউমি মাদ্রাসা ভিত্তিক হেফাজত এর একটা ট্রাডিশনাল দ্বন্দ্ব আছে এবং আল্লামা সফি মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার হওয়ার কোন স্টিগমা নাই। কিন্তু, ৫ মে রাতে আওয়ামী লীগ এর সাধারন সম্পাদক সৈইদ আশরাফকে বলতে শুনলাম, এরা সব রাজাকার। নইলে এদের বাপ রা রাজাকার ছিল, বা যুদ্ধাপরাধি ছিল।

এইটা শুধু ৫ মে এর গেম না, অনেক পুরনো গেম। এইটাও আমাদের দেশে ইস্লামিস্ট দের ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ করছে। কিন্ত,তবুও তারা এই সব প্রভকেশানের মুখে চুপচাপ ছিল, নিজেদের মত থাকতো। এই ঘুমন্ত ড্রাগন কে তার মুল ধরে টান দেয়, মুলত এই আওয়ামী লীগ আর বিএনপির ক্ষমতার পলিটিক্স। এই গল্প সবার জানা।

প্রথমে ৩০০ মানুষ কে হত্যার অপরাধ প্রমানিত হওয়ার পরেও কাদের মোল্লার আতাতের রায়। সেই রায় এর প্রতিবাদ করতে গুটি গুটি পায়ে, মধ্যবিত্ত তরুনদের শাহবাগে আগমন। তারপর গনজাগরন। তারপর পোষা বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে আওয়ামী লীগ এর শাহবাগ ছিনতাই। রাজিব হত্যা।

রাজিব কে নিয়ে লাশের রাজনীতি। রাজিব কে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহিদের মর্যাদা দান, রাজিব এর বাসায় প্রধান মন্ত্রী ভ্রমণ,তারপর থাবা বাবার ধর্মীয় বিদ্বেষ পূর্ণ, ঘৃণ্য, নেক্কার জনক লেখা গুলো কে, নেট এর কোনা কুপচি থেকে বের করে- আমার দেশ এবং মাহমুদুর রহমান কত্রিক আলেম সমাজ এবং তৌহীদি জনতাকে খোঁচানো, এরপর,রাসুল কে অপমানের প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভ থেকে ভাংচুর,লুটপাট,এমনকি জায়গায় জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, পুলিশ কত্রিক পাখির মত গুলি করে মানুষ মারা, এবং আরও বিক্ষোভ, ঢাকায় শো ডাউন, শো ডাউনে নবীকে কুৎসা রচনার শাস্তি দেয়ার আইন সৃষ্টি দাবির পাশে সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য আরও ১২টা দাবী তোলা, তারপর ফলো আপ শো ডাউনে ৫ তারিখ রাতে ১০,০০০ পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি দিয়ে অভিযানে অজ্ঞাত সঙ্খক মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়া ...... সবাই জানে এই গল্প। আর এখন যেইটা ঘটতাছে, তা পিউর প্রপাগান্ডা। ২৫০০ থেকে, ২৫০০০ মানুষ মৃত্যুর যে দাবী গুলো উঠতাছে, তা একটা চরম মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে ।

সর্ব সাকুল্যে মানুষ মারা গ্যেছে, বোধ হয় ১০ থেকে ১৫। (যেইটাও অনেক বড় একটা ঘটনা) কিন্তু রাবার বুলেটে আহত হইছে, অজস্র অগুনিত মানুষ। কিন্তু,প্রপাগান্ডা গুলো কিন্তু মানুষের মনে দাড়িয়ে যাচ্ছে। নিরপেক্ষ মেডিয়া না থাকাতে মানুষ কি বিশ্বাস করবে বুঝতে পারতেছেনা। ফলে প্রপাগান্ডাকেই বিশ্বাস করছে।

মিথবাসটিং যা হচ্ছে, তাতে অনেক মিস ইনফরমেশান আছে। যেমন, লাশ এর ওজন দিয়ে, দেখানো হচ্ছে,একটা ট্রাক এ ৫ টন এর উপর ওজন নেয় না। কিন্তু, বাংলাদেশে একটা এভারেজ ৮ টনি ট্রাক, ১৪ টন টানে। ফলে কি কি বিশ্বাস করবে তা নির্ভর করছে, কার পজিশন কি তার উপর। কিন্তু বোঝার বিষয় যেটা তা হল, এই পুরো ইভেন্ট গুলোর মুল ইন্সটিগেটর আমার দেশ গ্রুপ বা মাহমুদুর রহমান কিন্তু, ধর্মীয় মৌলবাদি না।

নেসনালিস্ট। আমার দেশ এই গুটিটা চালছে, বি এন পিকে শাহবাগ থেকে উদ্ভুত,রাজনৈতিক বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্যে এবং বি এন পির রাজনৈতিক এলাই জামাত কেরক্ষা করার জন্যে। শাহবাগের ফলে যে গন জাগরন হইছে, তাতে বি এন পি বিপদে ছিল। জামাতের মত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি কে তারা এলাই বানায় খমতায় নিছে। এখন মধ্যবিত্ত যখন আনরিজারভেডলি জামাত কে প্রত্যাখ্যান করলো, তখন বিএনপির স্ট্রেটেজি ছিল, শাহবাগ কে বিপদে ফেলা।

শাহবাগের নামে, কুতসা রচনা করা, এবং শাহবাগকে নাস্তিক দের আন্দোলন হিসেবে দেখানো। অথচ, শাহবাগ এমন একটা আন্দোলন যাতে,আস্তিক, নাস্তিক,হিন্দু, মুসলমান, গরীব, বড়লোক, মাদ্রাস্রার ছাত্র, ইংলিশ মিডিয়ামের ইয়ো পোলাপান, গ্রামবাসি,প্রবাসি সবাই জয়েন করছে। শাহবাগ জামাতের অস্তিত্ত কে প্রস্নের মুখে ফেলে, এমনকি বিএনপির ভেতর থেকেও জামাতকে দূর করার কথা উঠে আসে। কিন্তু, বিএনপি সেইশুদ্ধিকরনের দিকে যায় নাই। বরং বিএনপির মুখপাত্র মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ পত্রিকা শাহবাগ কে ডিলেজিটিমাইয করার স্ট্রেটেজি নেয় এবং থাবা বাবার সুযোগ নিয়ে, শাহবাগের উপর নাস্তিকতার টাগ লাগায় দেয়, যেই পজিশনটা বিএনপির জন্যে, কনভেনিইয়েন্ট।

বি এন পির রাজনৈতিক বেশ্যাব্রিত্তির এই ফাদে ইউয হইছে, ধর্মীয় রক্ষনশীলেরা যাদের এখন আমরা হেফাজত হিসেবে চিন্তাছি। আমাদের দেশ, এই যে কাজ টা করেছে, তা আমার মতে একটা চরম ইরেস্পন্সিবিলিটি। যারা যারা এইটা অস্বীকার করেন, তারা গত তিন মাসে নিহত, ৩০০ থেকে ৬০০ মানুষের ফেমিলি কে গিয়া জিজ্ঞেশ করতে পারেন। রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্যে, দেশে এই রকম ভয়াবহ একটা অস্থিতিসিলতা সৃষ্টি করা টা অনেক মানুষ কে জীবন দিয়ে মুল্যে দিতে হইছে। ঘটনা যা ঘটার তাঘটছে।

কিন্তু, আপনি যদি হেফাজত বা তাদের সাথে অন্যান্য ধর্মীয় মৌলবাদীদের পারস্পেক্টিভ দেখেন তাইলে দেখবেন্। তাদের পয়েন্ট হইলো। কই, আমরা তো তোমাদের কোন ডিস্টার্ব করি নাই। তোমরা কত নাচ গান ফুরতি কর- কই আমরা গিয়া তোমাদের বাধা দেই নাই। তোমরা তোমাদের মত ছিলা, আমরা আমাদের মত ছিলাম।

এখন আমার নবীরে নিয়া কেন তোমরা এই ধরনের নোংরা কথা লিখলা। এর পর যখন শাস্তি দাবী করলাম, তোমরা কেন, আমাদের গুলি করলা। শেখ হাসিনারে নিয়ে কটূক্তি করলে জেল এ গিয়ে ডিম থেরাপি, আর আমার নবীরে নিয়া কটুক্তি করলে, আমরা যদি শাস্তি চাই, তো আমাদের উপর গুলি ? তাদের প্রাথমিক নেরেটিভটা ঠিক এই রকম। সিম্পল। প্রগতিশীল রাষ্ট্রের মুক্তবুদ্ধির চর্চার পারস্পেক্টিভে এইনেরেটিভে বেশ কিছু সমস্যা আছে।

কিন্তু কথা হইলো, এইটা তো মুক্ত আলোচনার দেশ না। এই খানে, কার্টুনে মখার ছবি থাকলে, মিছিল থেকে ধরে নিয়ে জেল এ নেয়া যাওয়া হয়। এই ধরনের রাসুল এর নামে যাচ্ছেতাই কথা লিখে, সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করাটা আইনের আয়তায় আনতে সমস্যা কি ? ফ্রিডম অফ স্পীচ এর আয়তায়, অফেন্ড প্রিন্সিপাল এ এইটাতে কোন দন্দ নাই। কিন্তু,নেরেটিভ টা জটিল হয়, আপনি যদি হেফাজতের তের টা দাবী কে কন্টেক্সটে নিয়ে আসেন। প্রথমত তারা শুরু করছিল, রাসুল এর উপর খুবি নোংরা কথার শাস্তি দাবী করে, কিন্তু এই সুযোগে তারা তাদের সকল মনোবাসনা দাবী করে ফেলছে।

এবং ঢাকা শো ডাউনের সাকসেস এর গরমে চরম রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ দেখাইছে। তারা এমনও বলছে যে, ৫ তারিখ এর পর দেশ চলবে আল্লামা শফির কথা। নিজের স্পেস টা থেকে এই ভাবে বেরিয়ে এসে হটাৎ এত উচ্চাভিলাশ দেখানো টা একটা ব্যপক হঠকারি সিদ্ধান্ত ছিল। হেফাজত যে খুব ইনোসেন্ট একটা শক্তি তা কিন্তু না। তারা যথেষ্ট ভায়োলেন্ট একটা দল।

এবং ইতিপূর্বে তেমন ভায়লেন্স যে দেখায় নি টা কিন্তু না। রামু বা পটিয়ার মত ঘটনা হেফাজতের মতালম্বি মানুষের হাতেই হইছে এবং এখন তারা আরও এক্সট্রিম ভায়লেন্স এর পরিচয় দিচ্ছে। ফটিকছড়ির ঘটনা প্রকাশ করে, হেফাজত কত নৃশংস হতে পারে। এবং তাদের সব দাবী মেনে নেয়া কোনমতেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু, তাদের কে পর্যালোচনা করলে দেখবেন, এরা মূলত প্রতিক্রিয়াশীল গ্রুপ।

তারা ঘুমাই থাকে। কিন্তু যখন ক্ষমতার ক্রিড়ানকরা তাদের নিয়ে নাড়া চাড়া করে, তখনি তারা প্রতিক্রিয়া দেখায়। এবং তাদের প্রতিক্রিয়া ব্রুট এবং ভায়লেনট। তাই তাদের সেন্সিটিভলি দেখতে হবে। এবং তারা কি চায়, সেইটাও একটু দেখা দরকার।

হেফাজতের১৩ টা দাবিরে আমি তাই একটু পর্যালোচনা করব। এই দাবী গুলোর মধ্যে মধ্যে ২টা রাজনৈতিক। ২টা তাদের ধর্মীয় মুল্যেবোধ কে রক্ষা করতে আইনি সংস্কার কামনা করে দাবী ৫ টা তাদের নিজস্ব ধর্ম পালনের অধিকার সূরক্ষার দাবী এবং ৪ টা সমাজ সংস্কার করে সমাজের উপর তাদের নিজস্ব মূল্যবোধ চাপিয়ে দেয়ার দাবী। এই চারটি সামাজিক দাবীই কিন্তু ভণ্ড প্রগতিশীল এবং সত্যিকার এর প্রগতিশীল উভয় এর মুল আপত্তির কারন। হেফাজতের প্রবলেম হইলো, তারা সামাজিক ভাবে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে না পেরে, রাসুল এর নামে আজে বাজে কথা বলাতে ক্ষুব্ধ মুসলমানদের ক্ষোভ কে পুজি করে, তাদের এত দিনের সামাজিক ভাবে অগ্রহণযোগ্য এজেন্ডা কে বাস্তবায়নের আবদার করছেন।

ফলে যেই মানুষটা, হেফাজতের মিছিল গেছে রাসুল এর অপমান এর প্রতিবাদ জানাইতে বা ফেসবুকে হেফাজত কে সাপোর্ট দিচ্ছে সেও বুঝতে পারতাছেনা যেই সব সামাজিক সংস্কার এর দাবীকে সে সাপোর্ট দিচ্ছে - সেই গুলো সে কখনো নিজেই মেনে নিবেনা। কারন তার নিজের মা ,বোন স্ত্রী, শাড়ি পরে ঘুরে বেড়ায়, নাক, কান, ফুটা করে, যেই কান ফুটানি অনুষ্ঠানে সে নিজেই পাড়ার লোককে দাওয়াত দিয়ে খওয়ায়, মৌলভি দিয়ে দোয়া খায়ের করে। হেফাজত, বুঝতে চান না যে, তাদের সামাজিক দাবীগুলোর আদায় এর দায়িত্ত রাষ্ট্র কখন নিতে পারেনা। সমাজ যেইটা এত দিন ধরে যা গ্রহণযোগ্য মনে করে নাই এবং তাদের এত বছরের চেস্টা সত্ত্বেও সমাজ যেইটা মেনে নেয় নাই, এখন হটাত করে একটা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে তারা এত বড় আবদার করে বসবে, আর সেইটা মানতেই হবে – তা কোন যুক্তিপূর্ণ দাবী হইতে পারেনা। আমি মনে করি,এইটা তাদের বোঝানো অসম্ভব ছিলনা।

তাদের কিছু আছে তাদের ধর্মীয় মুল্যে বোধ এর আইনি প্রতিরক্ষা কিছু আছে রাজনৈতিক। এইগুলোর ফ্রিডম অফ স্পিচ এর হারম এবং অফেন্স প্রিন্সিপাল এর আলোকে বিবিধ ইন্টারপ্রিটেশান আছে, ফলে কেন কোনটা মানা যাবেনা, তার সুনির্দিষ্ট কারন আছে। আবার কোনটাই যে একেবারেই মানা যাবেনা, তা না। কারন, গত ২০ বছরে টেকনোলজির আগমন এবং সমাজ ও রাস্ট্রের পরিবরতনের সাপক্ষে কিছু আইন কে যুগোপযোগী করার প্রয়োজনিয়তা এমনিতেই ছিল। কিন্তু আমি অনেক সময়, বুঝতে অক্ষম বাংলাদেশ রাস্ট্রে কেন সংবিধান, নারী নীতি, শিক্ষানীতি, আম নীতি জাম নীতি –এই সব বই এ কি লেখা আছে তা নিয়ে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে দ্বন্দ্ব যুদ্ধের ক্ষেত্র সৃষ্টি করা হয়।

এই সবে কি লেখা আছে, তা দিয়ে কে কার গোপন চুল ছিরে। । এই দেশের সংবিধান আছে রাষ্ট্র প্রতি টা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাস স্থান, চিকিৎসা,নিশ্চিত করবে – আর এই দেশে ক্ষুধার জালায় মা দুই সন্তান সহ মেঘনায় আত্মাহুতি দেয়। ছেলের স্কুল এর খরচ দিতে না পেরে বাপ ছেলে কে ভিক্ষুক বানানোর জন্যে দা দিয়ে হাত কেটে দেয় – আর সেই সময় শিশুটি প্রশ্ন করে “বাবা, আমি ভাত খাব কেমনে ?” তো এই সব নীতি তে কি লিখা আছে, তা দিয়ে কি হয় ? এই সব লিখা নিয়া, এত মারামারির মানে টা কি? আর তাদের নিজস্ব ধর্মীয় অধিকার রক্ষার যে চারটি দাবী, তা ফ্রিডম অফ স্পীচ এর টেনেন্ট মেনে, অবশ্যি মানার বিষয়। এই গুলো অধিকার এর জন্যে যে তাদের দাবী তুলতে হচ্ছে, তাতে বোঝা যায়, তাদের উপর রাস্ট্রিয় ভাবে কিছুটা হইলেও প্রসিকিউশান হচ্ছে যা তাদের ক্ষুব্ধ করছে।

৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদেমুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহতও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধা দান বন্ধ করতে হবে। ১১। রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্রএবং তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। ১২।

সারা দেশের কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দান সহ তাদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। তাই আমি মনে করি, ওদের সাথে বসা সম্ভব ছিল। ওদের কে মেনেজ করা সমভব ছিল। কিন্তু সব কিছু পলিটিকালি দেখতে দেখতে,একটাও ডিসিশান ও হনেস্টীর সাথে নেয়া হয় নাই। সব ছিল স্ট্রেটেজিক ডিসিশান।

কিন্তু, আপনি একটা মানুষ রে, প্রথমে ইগনোর করলেন, তার পর সে জাগলো, আপনি তার ভাই ব্রাদার দের গুলি করে মারলেন। তারপর তার জনশক্তির ক্ষমতা এবং ক্ষমতার রাজনিতির হিসাব মিলানোর জন্যে তারে বললেন, আস বসি কিন্তু তার দাবী পইড়াও দেখলেন না। তারপর, তার মিছিলে আরও গুলি করলেন, তাদের বিক্ষোভে ১০,০০০ আর্মড বাহিনী দিয়ে আপনি বৃষ্টির মতরাবার বুলেট ছুড়ে, অজস্র মানুষকে আহত করে তারে আরও খেপায় তুললেন। এরপরআপনি কি এস্পেক্ট করেন ? সে ভাংচুর করবেনা ? এখন কি করনীয় ? আমার মনে হয়, এখন একটা জিনিষ করনীয় সেইটা হইলো, হনেস্টি, সৎতা এবং রাশানাল থিঙ্কিং সততা দিয়ে ওদের সাথে ডিল করেন, ওরা ওদের সিম্পল জিবিনে ফিরে যাবে। ওরা পসিব্লি আপনার এই শহুরে হাই, ফাই পোস পাস, বারবি ডল সেক্সি কঞ্জিউমারিজম চায় ও না।

ওরা অবশ্যই ছেলে মেয়ে নিয়া, আপনার আমার মত সুন্দর সমৃদ্ধ জীবন চায়। কিন্তু পার্থক্য হইল, ওরা আল্লার রাস্তায় থাকতে চায়। ওদের সকাল বিকাল গালি দেয়া, ছোট করা বন্ধ করেন। অরা ওদের পথেই থাকবে। আপনার সুশিলতায় ডিস্টার্ব করবেনা।

আর ওদের যদি, অনেক অনেক দাবী থাকে। তাহলে রাসুল কে নিয়ে অবমাননার মুল দাবী টা নিয়ে ফ্রিডম অফ স্পীচ এর পারেস্পেক্টিভে আরো ডিটেইলস এ যান। আর বাকি দাবী গুলো নিয়ে ওদের বলেন, দেশের মানুষ না মানলে দেশের মানুষের উপর এই সব দাবী চাপানোই যাবেনা। এবং সমাজ কে সংস্কার করা সরকার এর দায়িত্ত না। সরকার এর দায়িত্ত, দারিদ্র বিমোচন আর রাস্তা ঘাট বানানো।

সমাজ যেই জিনিষ মেনে নেয় নাই, সেই জিনিষ রাষ্ট্র কেমনে মেনে নিবে? ওদের বলেন, তোমাদের রাজনৈতিক দাবী যদি দেশের উপর চাপাইতে চাও, তাইলেও মানুষের কাছে যাও। তোমাদের দাবির সেই গ্রহনযোগ্যাতা থাকলে মানুষ তোমাদের নিরবাচিত করুক। অনেক সুশীল এখন মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকিকরন চাচ্ছেন। এইটা এত দিন চাওনের দরকার পরে নাই, কারন, এর আগে মাদ্রাসার পোলাপান ঢাকায় আইসা, সব কিছু ভাইঙ্গা দিয়া যায় নাই। কিন্ত, যারা ৬ মে এর এই হত্যাকাণ্ড সে, ৮ জন হোক আর ৪০৮হোক- জাস্টিফায়েড মনে করছে, সেই সব সুশীল এর ওয়াজ, নসিহত কি তারা মানবে ? ওদেরকে বুঝতে হলে, ওদের আশি টাকার বাটা সেন্ডেল পরে, আপনাকে ওদের কাতারে দাড়াতে হবে, তাদেরকে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আপনার সমান অধিকার দিয়ে-তাদের চোখে দুনিয়াটাকে দেখতে হবে ।

সে আপনার কথা শুনবে। দেখবেন সে আপনার মত একটা মানুষ যে সাকিব আল হাসান এর ফ্যান, যার মধ্যে প্রেম, ভালবাসা, সেক্স, ক্ষুধা, নিজের পরিবার এর প্রতি ভালবাসা, দেশপ্রেম, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বাসনা –সব আছে। সে আল্লাহ প্রেরিত বর্বর কোন জন্তু না। কিন্তু কলোনির রুলার এর ভাব নিয়ে, নিজের কালচারাল কাপিটাল এর উপর ভর দিয়ে, এই সাবঅল্টারন জনগোষ্ঠীর উপর বর্বরতা দুরিকরনের যে ওয়াজ নসিহত আপনি করবেন, তা তারা লাথি দিয়ে আপনার মুখের উপর ছুড়ে দিবে। ওদের সাথে ডিল করার সময় রেস্পেক্ট এবং হনেসটি দুই টাই লাগবে ।

আপনি যারে ফকিরনির পুত মনে করেন, তারও সেলফ রেস্পেক্ট আছে। তার ইজ্জত ধরে খুচা খুচি করবেন না। এবং আপনি নিজেও রাশনাল হন , সৎ হন । এক এক সময় এক এক স্ট্রেটেজি তে গুটি চালবেন না। যদি রাশনাল হয়ে হনেস্টির সাথে ওদের সাথে ডিল করেন।

দেখবেন তার মধ্যেও রেশনালিটি আছে। এবং র‍্যাশনালভাবে তাকে বুঝান, দেখবেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে। তার আইডিওলজিকাল চাওয়া আড়াল করে সেও এই দেশের দারিদ্র মুক্তির সংগ্রামে সেও আপনার সাথে পার্টিসিপেট করবে, যদি সেইটা সত্যি আপনার চাওয়া হয়ে থাকে  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।