আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাযুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে চেয়েছিল ক্যু চেষ্টাকারীরা

আমি একজন সাংবাদিক আমাদের সময় ডেস্ক : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পটভূমি ও পরবর্তী অবস্থা নিয়ে ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্তকরণে বিদেশি শক্তির মদদে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের তৎপরতা এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির চেষ্টা করার বিষয়ে মত প্রকাশ করা হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক করিমের বেশকিছু মন্তব্য রয়েছে। প্রতিবেদনটি ভাষান্তর করে প্রকাশ করা হলÑ সম্প্রতি বাংলাদেশে উগ্রপন্থী হিযবুত তাহ্রীর প্রভাবিত কিছু সেনাসদস্যের ক্যু চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো সেনাবাহিনীতে এধরনের চিন্তা-ভাবনা করা মানুষ এবং কর্মকর্তারা রয়েছে।

বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করছিল সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার জন্যই এই ক্যু পরিকল্পনা করা হয়। অপরদিকে শেখ হাসিনা সরকার যেখানে ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছে সেখানে এই সম্পর্ক নষ্ট করার জন্যও এই পরিকল্পনা করা হয়। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক করিম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান, ‘২০০১ এবং ২০০৬ সালের মধ্যে জামায়াত-ই-ইসলামীর আমাদের বেসামরিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় অনুপ্রবেশ করে। ধারণা করা হয়, উগ্রপন্থী হিযবুত তাহ্রীরের মতো মৌলবাদী সংগঠনগুলো সরকারের সামরিক-বেসামরিক দপ্তরগুলোতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলোতে অনুপ্রবেশ করেছে। ’ অন্তত ১৬ জন চাকরিরত এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই ক্যু চেষ্টা করেছিল।

জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ মাসুদ রাজ্জাক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কিছু গোঁড়া সেনাকর্মকর্তা গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিল। ’ এ অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার কর্মকর্তাদের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ-খবর করছে। ক্যু চেষ্টার সঙ্গে হিযবুত তাহ্রীরের সম্পর্ক ছিলÑ তা করিম নিশ্চিত করেই বলেছেন। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ২০০৯ সালে হিযবুত তাহ্রীরকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। যদিও তিনি জানান যে, তিনি জানতেন না ভারত এই ক্যু চেষ্টার ব্যাপারে আগেই জানিয়েছিল বাংলাদেশকে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক হিযবুত তাহ্রীর নেটওয়ার্কে শিক্ষিত মানুষ থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য অনেকেই রয়েছে। তাদের একটি সু-সংগঠিত এবং প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে থেকে তাদের অর্থায়ন করা হয়। তারা বাংলাদেশে ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও করিম জানান। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা গোলাম আযমকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭১ সালে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধাপরাধ যেমন হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এ কারণেই তাদের অবস্থান অনেকটা নেতিবাচক হয়ে গেছে। যার জন্য এই বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা বলে জানান করিম। হাসিনা সরকার ২০১১ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে আবারও সেক্যুলার নীতিগুলো পুনর্বহাল করেন।

করিম বলেন, উগ্রপন্থী এবং জঙ্গি ইসলামপন্থীরা এই সেক্যুলার রাষ্ট্রকে তাদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা শুরু করে। হাসিনার বিরুদ্ধে এক প্রকার কুৎসা রটানো হচ্ছে যে হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত করছে। তারা বলছেÑ হাসিনা ভারতের সঙ্গে অনেক বেশি মেশার চেষ্টা করলেও ভারত তা করছে না। কারণ এতকিছুর পরেও তিস্তা চুক্তি হয়নি। প্রতিশ্র“তি না রাখার অনেক ইতিহাসই আছে ভারতের।

তিস্তা চুক্তিটি না হওয়ায় তাদের এই উপলব্ধি আরও দৃঢ় হয়। গত বছর ভারত সরকার বাংলাদেশকে না জানিয়েই মনিপুর রাজ্যে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের চুক্তি করেছে। এই চুক্তি বাংলাদেশের মাঠপর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার জš§ দেয়। কারণ ওই বাঁধ হলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পানি এবং কৃষির ওপর বিরূপ প্রভাব পরবে। দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ছিটমহল নিয়ে কিছু চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কারণে তাও হয়নি। তিনি বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশে সামনেই নির্বাচন, তাই বিদেশি যেসকল এজেন্ট এখানে কাজ করছে তারা উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করছে। একই অবস্থা সীমান্তেও। এখন আর এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। ’ হাসিনার ভারতপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি দেশে তার জনপ্রিয়তায় চির ধরিয়েছে।

করিম বলেন, ‘আপনি শুধু কল্পনা করুন, এই সেক্যুলার সরকারকে হটিয়ে একটি উগ্রপন্থী ইসলামী দল ক্ষমতায় এলো। আমাদের সীমান্ত এমনিতেই অনেক স্পর্শকাতরঃ তখন অনেক সমস্যাই দেখা দেবে। ’ করিম আরো জানান, ‘ভারত বাংলাদেশকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে, যেন বাংলাদেশ বিশ্বাস করতে পারে। হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বেশকিছু তথ্য আদান-প্রদান হয়েছিল এবং তার প্রধান অনুঘটক হিসেবে আমি কাজ করেছিলাম। ঢাকা বাংলাদেশে উলফা কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে।

আমরা ভারতের কাছে ডজন খানেক চিহ্নিত অপরাধী হস্তান্তরের জন্য বলেছি। ভারত আমাদের কাছে তাদের হস্তান্তর করার ব্যাপারে প্রতিশ্র“তি দিয়েছে। ” বাংলা নিউজ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।