আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোলাহলের কারাগার

স্বপ্নবাজ। একটা রাতের রংধনুর স্বপ্ন দেখি...। -কিঙ্কর আহ্সান কোলাহলের কারাগার কিঙ্কর আহ্সান ক. অনেক জোড়াতালির পর বাড়িটা দাঁড়িয়েছে মাত্র। জানালাগুলো অমসৃন কাঠে ঢেকে দেয়া। ইটের শরীরজুড়ে কাঁচা সিমেন্টের ঘ্রাণ।

সদর দরজার পাশে ভাঙা সুরকি,বালু। এ আমাদের নতুন সংসার। আমি আর বাবা। ঘুম ভাঙলেই মাখন ভর্তি বাটারবন আর তিতকুটে রং চা। চোখে পিচুটি নিয়ে চাল বাছা দেখি।

আমার হাসি পায়। মাকে দেখেছি এসব কাজ করতে। পুরুষ মানুষের কি এসব মানায় ! মা দেখলে মুখে আঁচল চাঁপা দিয়ে হাসত আর বলত‘এভাবে আর কদ্দিন। বিয়ে করো আর আরেকটা। ’ প্রতিদিনই অঘটন।

মাছ কুটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলে। মুরগির ঝোল পাতিলেই উবে যায়। নুন বেশি পড়ে তরকারিতে। প্রতিদিন বাঁধাধরা এক খাবার ডিমভাজি। শরীর থেকে ডিম-ডিম গন্ধ পাই।

সূর্য রোদের শামিয়ানা পাতার আগেই বাবাটা দুম করে উধাও। অফিস। দিনভর কী এক জঘন্য কাজ করে কে জানে ! ভাল্লাগে না। মন জুড়ে আমার আকুুলি-বিকুলি। ক্লাস? সে তো সেই দুপুরে।

কী করি আমি। তোপখানা রোডে আমাদের বাড়ি। ধার দেনা করে মাথা গোজার এ ঠাইটুকু পেয়েছে বাবা। বরিশালের পাট চুকিয়ে মায়ের এখানে আসতে ঢের দেরি। মধ্যবিত্তের তৃপ্তি সামন্যতেই।

বাবা আজকাল বাবুই পাখি হয়ে গেছে। কাজ শেষ হতে না হতেই তার আসা চাই এ ভাঙা প্রসাদে। হোক না সে বাসার কল থেকে টিপ টিপ করে জল ঝরে সারাক্ষন,হোক না তার জানালার ফাঁক গলে হু হু করে ঢোকে শহুরে কোলাহল। মাঝেমধ্যে ঘরে তালা দিয়ে বের হয়ে যাই। অচেনা শহর।

নোংরা,আঁশটে। দম বন্ধ হয়ে আসে। পরিচয়ের শুরুতেই পর করে দেয়। এ শহর আমার নয়। একদম না।

আমি শামুক হয়ে যাই। নগরের কনিষ্ঠ শামুক। আমার মনের পরতে পরতে লজ্জা। খোলসে মুখ লুকিয়ে রাখি সব সময়। সচিবালয়ের সামনের দেয়ালে ঠাসা পেপারগুলো পড়ি।

মুখস্ত হয়ে যায় কালো অক্ষরগুলো। বাবা জানলে বলত,‘পড়ার বই মুখস্ত হয় না তোমার । আর এগুলো ....। সব ঠোট¯থ ছিল আমার। পরীক্ষায় ফাস্ট হতাম।

’ আচ্ছা, সব বাবাই কি ফা¯ট হন ! সবার মুখে যে একই কথা। এখানে মাঠ নেই। নেই পুকুর। আছে শুধু অজস্্র রিক্শা আর গাড়ির বহর। ফুটপাতজুড়ে নোংরা পত্রিকা বিক্রি করা মানুষ।

ঝালমুড়ি,ভেলপুরি,শিককাবাবের পোড়া লাল-খয়েরি রং মেশান মাংস। টাইপ রাইটারের কুৎসিত খটখট শব্দ। ওলটপালট সব। শান্তি নেই ইশকুলেও। দৌড়ে ফিরি বাড়ি।

বাড়িতে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে কংক্রিটের দেয়ালগুলো। কত কথা ওদের সঙ্গে। না বলতে পারলে তো পেট ফেটে মারা যাব। দে দৌড়। খ. বাবা রাত জাগতে পারে না।

পাশে শুয়ে নাক ডাকে। শরীরে তার লেপটে আছে শুকনো ঘাম। বাবুই পখিটা বড় ক্লান্ত। আমি একা পড়ে থাকি বিছানায়। বড্ড একা।

একটা সময় কোলবালিশে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠি। বলি ‘ও বাবা,আমায় একটা মাঠ দাও, ঘুড়ি ওড়াব। দাও পুকুর ,হাত-পা মেলে জল কেটে সাতার কাটব। মাছেদের সঙ্গে গল্প জুড়ে দেব। এ কোলাহলের কারাগারে থাকব না আর।

একটা সেকেন্ডও না। ’ বাবা ঘুমে কাদা। শোনার সময় কই তার। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।