আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাল্মীকিরা আসে যায় — টোকন ঠাকুর

দ্বিমাসিক সাতপাতা এখনো সন্ধ্যা আসে! এখনো ‘সমস্ত দিনের শেষে’ ধুলোমাখা সব প্রতিশ্রুতি এসে জড়ো হয়, সন্ধ্যায়। ‘সন্ধ্যার নদীর জলে এক ভিড় হাঁস ওই- একা’; বসে থাকে। বসে থাকে ‘করুণ শাখায়। ’ উঁচু রেলব্রিজ থেকে, অন্ধকার··· ছড়িয়ে পড়ে নিচু জলাভূমি থেকে, অন্ধকার··· জড়িয়ে ধরছে অদূরে গ্রামের গল্প, সেই গল্প ঝিমধরা বনের দিকে হারিয়ে যাচ্ছে আমরা সন্ধ্যার ঠোঁটে, আগুন জ্বালিয়ে, টান দিচ্ছি বাঙলা কবিতায়। বাঙলা কবিতা জড়ো হচ্ছে, বড়ো হচ্ছে সন্ধ্যার তুরীয় তর্কে, আর গুঁড়ো গুঁড়ো শব্দপুঞ্জ ঘন হচ্ছে, দানা বাঁধছে, আর জানা হচ্ছে একদিন- আমরা সন্ধ্যার পক্ষে, স্মারকলিপি দিয়েছি রাত্রিসংঘে! দুই· এক সন্ধ্যায়, বিরলে ব্রজের সানাই বেজেছিল! এক সন্ধ্যায়, পুনর্ভবা নদী থেকে আমরা আর ফিরতে পারিনি! এক সন্ধ্যায়, বিসর্জনের অশ্রুপাত ঠেকাতে পারিনি! এক সন্ধ্যায়, একঝাঁক সন্ধ্যা এসে বলেছিলঃ অন্ধকারে দশদিকই যাওয়া যায়, একা! অন্ধকারে নিষিদ্ধের কথা যায় লেখা! এক সন্ধ্যায়, বনে বনে বিন্দু বিন্দু, সেই আমাদের জ্বলে উঠতে শেখা! এখনো সন্ধ্যার নামে, শাহবাগ ঘুরেফিরে আসে।

শাহবাগ আমাদের তরুণ কবিতা! শাহবাগ আমাদের ডিঙিজল··· ঢেউ! শাহবাগ আমাদের বিউটি বোর্ডিং! শাহবাগ ম্যারিয়েটা, রেকস্‌ রেস্তঁরার আলো! সন্ধ্যায় শাহবাগ, সেই মেয়েটির মুখ; যাকে আমি খঁুজেও পাব না··· সন্ধ্যায় শাহবাগ, গ্রন্থে গ্রন্থে এখনও গ্রামীণ! সন্ধ্যায় শাহবাগ, মন্ত্রে মন্ত্রে ভীষণ দীক্ষিত! সন্ধ্যায় শাহবাগ, ঘুরেফিরে কবি! কবিও লিখেছে সন্ধ্যা, মৎসগন্ধা নারী কবিও মেখেছে ধুলো, ধুলো সরকারি কবিও রেখেছে বাক্য, বাক্যে তরবারি কবিও দেখেছে দৈন্য, দীর্ণ ভাড়াবাড়ি·· সন্ধ্যায়, শাহবাগে, মুঠো মুঠো অন্ধকার ভীষণ উড়ছে সন্ধ্যায়, শাহবাগে, করপুটে মহাকাল, ভীষণ দুলছে সন্ধ্যায়, শাহবাগে, শাহবাগই ভীষণ ফুলছে তিন· যারা কবি, যারা সব সন্ধ্যাবেলার কবি; যাদের জন্য সেই চিরায়ত ঝরাপাতা··· যাদের জন্য সেই ক্লাসিক্যাল অভিমান; যাদের জন্য সেই অমলের ডাকঘর, চিঠি নিয়ে আসা অথবা চিঠি নিজেই আসবে বলে, যাদের জন্য আজও সুধা আসবে সুধা ভাসবে··· অথবা যারা আট বছর আগেই একদিন, মধ্যরাতে মরে গিয়ে, নিজেরই প্রক্সি দিয়ে শাহবাগে ফিরে এসেছে, এই সন্ধ্যায়- জানি, বাল্মীকিরা ফিরে ফিরে আসে। জানি, বাল্মীকিরা কখনও তো নিজেই ব্যাধ! জানি, বাল্মীকিরা স্বীকার করে- ‘নিজেকে শিকার। ’ জানি, বাল্মীকিরা একদিন চলেও তো যাবে··· আমাদের তৃণবন্ধু, অন্ধকারে বিন্দু বিন্দু বাল্মীকিরা মাঝরাতে ফিরে চলে যায় বাল্মীকিরা ভাড়াবাড়ি- কত ভাড়া দেয়? বাল্মীকিরা ফিরে আসে, প্রতি সন্ধ্যায় চার নব্বই-এর নাব্যভাষা, মিলেনিয়াম দ্যাখে নব্বই-এর বাল্মীকিরা, শেখে আত্মখুন! নব্বই-এর নাব্যভাষা, বয়সে তরুণ! নব্বই-এর ন্যায্যআশা, ঘামে আসবে নুন! নব্বই-এর নাব্যভাষা, আগুন আগুন! আমাদের বন্ধুকবি- যেন সেই কবিবন্ধু- আহত হবার মতো অবিমিশ্র বেদনা রয়েছে যাদের, অবিনাশী স্বপ্ন খেয়েছে যাদের··· অসম্্‌ভব যাদের চেয়ার ও টেবিল প্রজ্ঞাপাঠ, এই সন্ধ্যায়, শাহবাগে পৃথিবীর আলো? বাঙলা কবিতা, গীতিমুখ্য বেদনায় আজও রক্তিম! বাঙলা কবিতা, স্মৃতিমুখ্য বাসনায় আজও ধূসর! বাঙলা কবিতা, স্মৃতিভেজা দুঃখদহে আজও শীতাভ! বাঙলা কবিতার ভিতর দিয়ে, সন্ধ্যার শাহবাগে, আমার বাল্মীকি বন্ধুরা আজও বসে থাকে। ঝিলের সীমিত জলে যে প্রকার মাছমন ভেসে ভেসে থাকে, যেপ্রকার সন্ধ্যার মাধুরী খুব সেজেগুঁজে ঢঙ করে ডাক দেয়, ইশারা মারে, বলেঃ ‘টাকা লাগবে না, আয় আয় আমরা সন্ধেটাকে খাই জামাকাপড় খুলে রেখে আমার বাড়ি আয়···’ ‘নাভিতে সবুজ ধান’ বুনে বুনে যদি সেই একই কথা বলি, ‘দাসেরে করিও মা’ দাসেরে রেখো না মনে··· সন্ধ্যাতীরে, বাল্মীকিরা বিভঙ্গ চেতনা এলে ত্রিভঙ্গ মুরারী রেখে বাল্মীকিও ভেঙে ভেঙে যায় যেহেতু কবিতাব্রতী- ভাঙাকাচও জোড়া দিতে চায় পাঁচ একটি প্রকৃত প্রেম, প্রকৃত মাদক, তাতে কবি অভ্যস্ততা চায়! ‘বালুচর’ শব্দটি যে রকম তৃষ্ণার্ত, অথচ পাশেই জল ‘অভিমান’ শব্দটি যে রকম রোমান্টিক, কিন্তু প্রযুক্ত ব্যথায় ‘ভালোবাসা’ শব্দটি যে রকম ‘ধারণাসম্মত’, কিন্তু ‘বিশ্বাসে’ এগুতে চায় আমারও তো চাওয়া ছিল কিছু, একদিন যার পিছু পিছু··· আজ, সেই-ই আমার পিছনে আসে, আমি তাকে কবিতা ছঁুড়ে মারি আজ অবশ্য বুঝতে পারছি, আরও একদল বাল্মীকি আসছে! ওরা কি সন্ধ্যায়, শাহবাগে বসবে? তর্কে তর্কে, প্রীতিমুগ্ধ অগ্নিসম্মেলন হবে। একদল কাঁটাবনে, নীলক্ষেতে গিয়ে আর প্রতর্কে ফিরবে না একদল চলে যাবে ভুবন ইশকুলের বিশাল বিশাল ছাত্রাবাসে একদল ভাড়াবাড়ি, একদল কবিতায়··· একদল রোদে রোদে, ঘুরছে বৃথায় একজন একজন করে বাল্মীকির মুখ মনে আসে।

যারা হয়তো শাহবাগে ফিরবে না সেদিনের মতো সেই লুপ্ত সন্ধ্যার কণা কণা মাধুরীতে গুপ্ত সুষমায়- আমার মনে পড়েছিল, ইভাবতি নদী দেখে একদিন, এক সন্ধ্যায় আমার আত্মার অন্তত এক-চতুর্থ অংশ আমি রেখে এসেছি সে নদীর জলে! শীতে, সর্ষেফুলের মতো জ্বলে ওঠা ইভাবতি, তোমাদের মনে পড়ে? অন্তত তেরটি কবিতা, লেখা আছে একদিন নদীজলে তারা খুব ভেসে যেতে চায় তেত্রিশ কোটি ঢেউয়ে তাই-ই তো, বাল্মীকিরা এসে, যেতে চায় তাই-ই তো, বাল্মীকিরা ভেসে যেতে চায় (কবিতাটি সাতপাতার দ্বিতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.