আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ রেষারেষি বন্ধ করতে আর কতজন রুবেল,কাসেম,মিলন,মৃধার প্রান দিতে হবে ?????

...............................................................................................................................................................। তত্ত্বাবোধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে চারদলের ঘোষিত গনমিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে বলি হয়েছেন এই হতভাগা চারজন। লক্ষীপুরে দু’জন-রুবেল ও আবুল কাসেম। বাকি দু’জন আবুল হোসেন মৃধা এবং লিমন ছৈয়াল চাঁদপুরে। এবার একটু এই চারজনের প্রসংগে আসা যাক।

রুবেল-বিদ্যুত মিস্ত্রি,তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি,দালাল বাজার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের সহসভাপতি,রাজনীতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ মিস্ত্রির কাজ করতেন। আবুল কাসেম-তেওয়ারিগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। আট সন্তানের জনক। স্থানীয় চেয়ারম্যানের ভাষ্য আবুল কাসেম কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করতেন না। আবুল হোসেন মৃধা-রিকশা চালক,রাজনিতির ‘র’ও বুঝতেন না তিনি।

রিকশা চালিয়ে সংসার চলছিলনা বিধায় একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋনও নেন,সকালে ঋনের কিস্তি পরিশোধ করে রিকশা নিয়ে শহরে যান আর দুপুরেই খবর আসে তিনি মারা গেছেন। লিমন-রিকশা চালক,বাড়ির পাশের এক বিএনপি নেতা লিমন কে বিভিন্ন কাজে লাগাতেন। ধীরে ধীরে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সেটাই তার জন্য কাল হয়ে দাড়াল। আমাদের রাজনীতিতে প্রতিহিংসা এক বিরাট আকার ধারন করে আছে।

এই প্রতিহিংসার বেড়াজালে আটকে একের পর এক প্রান দিতে হচ্ছে আমাদের সাধারন জনগনকে। কি বুঝে আমাদের সাধারন জনগন রাজনীতিকে এত মধুর ভাবে আলিঙ্গন করেন আমার বোধগম্যে আসেনা?এত ভালোবাসা রাজনীতির প্রতি!!নিজের জীবিকা ফেলে রাজপথে আন্দোলনে নামেন,ঘরে সবাই অপেক্ষমান কখন তিনি বাড়ি আসবেন হাসি মুখে?হাতে বাজার ভর্তি ব্যাগ নিয়ে। না আসলে যে খাওয়া হবেনা। পরিবার ছেড়ে তিনি রাজপথে ব্যস্ত। কিসের আশায়?কিসের ভালোবাসায়?তাহলে কি রাজনীতি এতদিন ধরে তার সংসার চালাচ্ছে?যদি চালিয়ে-ই থাকে তাহলে সে পয়সা কিভাবে আসে?উপরের বড় বড় নেতারা এসব ছোট নেতাদের সংসার চালানোর পয়সা দেন?নাকি এমন কোন পথ তাদের ধরিয়ে দেন যাতে তারা অতিসহজে পকেট ভারি করতে পারেন?নাকি এরা প্রত্যেকে পৃথিবীতে নতুন নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে?আমি বুঝিনা যদিও অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর আমাদের চারপাশেই বর্তমান।

অথচ এরা প্রত্যেকেই রাজনীতির ‘র’ও বুঝেনা। যদিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে শিক্ষা কোন বড় বিষয় নয়। আমাদের নেতারা সাংবাদিক ডেকে নিজেদের চারপাশে মাইক্রোফোন জড়ো করে বড় বড় কথার ফুলঝুড়ি ছড়াবেন আর রাজপথে রাজনীতি বিষয়ে অজ্ঞ আমাদের সহজ সরল মানুষগুলো তাদের কথামত মুখস্থ স্লোগানে হুংকার ছাড়বেন,বিশৃংখলা সৃষ্টি করবেন। তাদের বিরুদ্ধে মোকাবেলার জন্য ঠিক তেমন ভাবে বিপক্ষরা তাদের অনুগত সাধারন জনগন এবং পুলিশকে লেলিয়ে দিবেন। আর রাজপথে বিশৃংখলার এক মহা নরক তৈরী করবেন।

আতংকে থাকবে বাকি সহজ সরল সাধারন মানুষ গুলো। এ কেমন রাজনীতি আমাদের বাংলাদেশে?এ কেমন বোধ আমাদের সহজ সরল জনগনের?নেতা হওয়ার বড় শখ আমাদের। এত মধুর আনন্দ এত মধুর স্বাদ আমাদের রাজনীতিতে,যে কারনে আমাদের ছেলেগুলো স্কুল কলেজ বাদ দিয়ে এলাকার রাজনৈতিক অফিস গুলোতে আড্ডা জমায়,উপরের নেতার পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাড়ায়। আমাদের নেতারাও পরম আদরে তাদের কাছে টেনে নেয়। তাদের কর্মকান্ডে এদের ব্যবহার করে নিজেরা ফায়দা লুটে।

রাজনীতি এখন আমাদের দেশে ব্যবসা হয়ে দাড়িয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক মানে চাকরি নিশ্চিত হওয়া,রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক মানে এলাকায় বুক ফুলিয়ে চলা,রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক মানে বিচারের রায় পক্ষে যাওয়া,রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকা মানে এলাকায় সব কিছু করার ক্ষমতা হাতে নেওয়া,রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক মানে বাজারে একটি দোকান ভাড়া নিতে কিংবা জমি কিনতে এক ধাপ এগিয়ে থাকা,রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকা মানে নিজেকে সম্মানিত ব্যক্তি মনে করা,………,…। এসবের মিশ্রন আমাদের রাজনীতিকে কুলষিত করে ফেলেছে। অতীত থেকে এ ধারা বজায় আসছে বলে এখন সবাই এ ফায়দা লুটতে ব্যস্ত,নেতা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। আর নেতা হতে হলে উপরের বড় নেতার মন জয় করতে হবে,আর বড় নেতার মন জয় করার জন্য যেকোন ধরনের কাজ করতেও তারা দ্বিধা করেনা।

হয়ত এ কারনেই রুবেল,মৃধা,লিমনরা রাজনীতিতে নাম লেখান,রিকশা চালিয়ে ভালো ভাবে থাকা যায় না,মিস্ত্রির কাজ করেও ভালো ভাবে থাকা যায়না তাই। পেট বাচাতে রাজনীতি?নেতা হলে পয়সা হবে এই আশায়। হায়রে রাজনীতি!!ধিক্কার!!!!!!!রাজনীতিকে নয়,ঐ সকল রাজনীতিবিদদের যারা রাজনীতিকে এত কাল ধরে কুলষিত করে এসেছেন,এখনো করছেন,সহজ সরল জনগনদের মিথ্যে আশা দিয়ে দলে ভিড়াচ্ছেন,সহজ সরল জনগনদের কর্ম থেকে বিচ্যুত করে নেতা হবার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। রাজনীতি হল সবচেয়ে বড় দেশপ্রেম,অথচ তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করছেন না। এটা রাজনীতি নয়।

এভাবে নেতা হওয়া যায় না। জোর কাউকে নেতা বানানো যায় না,রাজনীতি শেখানো যায়না। রাজনীতি জাগ্রত হয় মন থেকে। নেতা হওয়া এত সহজ কথা নয়। আপনাদের কাছে কর জোড়ে অনুরোধ রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে নিবেন না,সুস্থ মানুসিকতা নিয়ে রাজনীতি করতে না পারলে দয়া করে কেটে পড়েন।

আর অহেতুক সাধারন জনগনদের নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখাবেন না। আপনাদের মহিমা তো ধীরে ধীরে মহাত্না গান্ধী,আব্রাহাম লিংকন,শেখ মুজিব,…,কেও হার মানাতে চলেছে! যেই ইস্যুর কারনে রাজপথে নামা,বিশৃংখলা সৃষ্টি হওয়া,অহেতুক চারজন লোকের প্রান যাওয়া,তাদের চারজনের কেহই ভালো করে বিষয়টি সম্পর্কে জানেনা না। তারা জানেনা নির্বাচন কমিশন,তত্ত্বাবোধায়ক সরকার,অন্তবর্তিকালীন সরকার সম্পর্কে। গনতন্ত্র কাকে সমর্থন করে তাও তারা জানেন না। মোদ্দকথা গনতন্ত্র সম্পর্কে তাদের ধারনাই নেই।

অথচ দিন রাত রাজনীতি রাজনীতি করেই শেষ পর্যন্ত বলি হয়ে গেছেন। এসব কিছুর জন্য দায়ী আমাদের নষ্ট রাজনীতি। আর নষ্ট রাজনীতির জন্য দায়ী নষ্টরাজনীতিবিদগন। তাদের রাজনীতি সম্পর্কে তুচ্ছ ধারনা,দেশপ্রেমের বিরাট শুন্যতা,প্রতিহিংসা,অশিক্ষা,ক্ষমতার লোভ ইত্যাদি। রাজনীতি নিয়ে ব্যবসা না বন্ধ হলে সহজ সরল জনগন,বখাটের দল রাজনীতির দিকে ঝুকবেই,বন্ধ হবে না অহেতুক হরতাল,নৈরাজ্য,অবিচার,টেন্ডারবাজি ইত্যাদি,আর এগুলো বন্ধ না হলে বন্ধ হবে না এমন হত্যাকান্ড।

আমাদের সাধারন জনগন যে অসীম অবুঝ,তারা যে কোনদিনও বুঝবেন না আমাদের রাজনীতিবিদদের চালবাজি। হাজার প্রান গেলেও আবার যখন কোন দল রাজপথে নামতে বলবে,সাথে সাথে সব ছেড়ে পথে নেমে আসবে,আবার যখন তাদের মোকাবেলার জন্য আরেকদল রাজপথে ডাকদিবে সাথে সাথে তাদের অনুগতরা সব ছেড়ে পথে নেমে আসবে। কেউ আসে নেতা হতে,কেউ বা দু’শো টাকার জন্য। আর পুলিশতো এক পাশেই আছেই সরকারের অনুগত হয়ে। রুবেল,মৃধা,কাসেম,লিমনের মত হাজার জনের প্রান গেলে তাদের কি আসে যায়?তাদের তো কারো বুক খালি হয় না,তাদের খেলা বরঞ্চ আরো জমে উঠে।

বিপক্ষ দলকে দোষারোপ করার জন্য শক্তিশালী একটা ইস্যু তারা পেয়ে যায়। আমাদের রাজনীতিবিদদের রেষারেষি বন্ধ হতে আর কতজন রুবেল,মৃধা,কাসেম,লিমনের প্রান দিতে হবে??? হাজার প্রান গেলেও বোধহয় তাদের রেষারেষি বন্ধ হবে কিনা কে জানে?কিন্তু আমাদের অবুঝ লোকদের কবে বুঝ হবে?কোন দলই তো আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনা। যেদলই ক্ষমতায় আসুক আপনাকে রিকশাই,…,… চালাতে হচ্ছে। তাহলে কেন অযথাই রাজপথে নামা?নাকি এই প্রান দেয়া হিংসাত্নক রাজনীতির বিরুদ্ধে আপনাদের আন্দোলন?যদি তা-ই হয় তাহলে রেষারেষির সমাপ্তি ঘটাতে আর কতজন রিক্সা চালক,মিস্ত্রি,সাধারন জনগন প্রান দিতে প্রস্তুত আছেন বলবেন কি? তথ্যসূত্র সংগ্রহ দৈনিক প্রথম আলো,৩০জানুয়ারি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।