আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০১০এর শেয়ার বাজারে হাসিনা সরকারের হানিমুন তান্ডবের কাছে ১৯৯৬ সাল স্বপ্ন ত্রুটি!

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ ও ৭৩ সালের তুলনায় ৭৪ সালে খাদ্যশস্য তথা ফসলের ভাল ফলন হয়েছিল (সৈয়দ আবুল মকসুদ, প্রআলো ৮ই জানুয়ারী ২০০৮)। তারপরেও স্রেফ বন্যার অজুহাতে এবং ভারতে খাদ্য সংকটকে উদ্দেশ্য করে ব্যাপক মজুদদারী, কালোবাজারী ও চোরাচালানের কারণে ১৯৭৪ সালের র্দূভিক্ষে কয়েক লক্ষ মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পূর্বে মুজিব আক্ষেপ করে বলেছিল পশ্চিম পাকিস্তানে ২০ টাকা মণ চাউল আর আমার এখানে এটা ৪০ টাকা। ক্ষমতায় গেলে তিনিও বাংলার মানুষকে ঐ ২০ টাকা মণ দরে চাউল খাওয়াবেন। কিন্তু মুজিবের আপন ভাই শেখ নাসের, আমির হোসেন আমু সহ দলের বহু নেতা-কর্মী পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ঐ ৪০ টাকা চালের মণকে ৪০০ টাকা এবং লবণের সেরকে ৮০ টাকা বানিয়ে ছাড়ল।

আর বর্তমানে কথায় কথায় আওয়ামী-বাকশালী গং বলে ১৯৭৪ সালে নাকি আমেরিকার জন্য র্দূভিক্ষ ঘটে ছিল। তাহলে ব্যাপারটা দাড়াল এ রকম কেউ ইচ্ছে করে হাত ও শরীর পুড়িয়ে চেচালো ওষুধ, ওষুধ! কিন্তু সময় মত তা না পেয়ে শরীর অকেজো হলে দোষ দিলো যে কেউ ওষুধ দিল না? অথচ শরীরটা কেন ইচ্ছাকৃত পোড়ানো হল তার কোন জবাবদিহিতা নাই। বদরুদ্দিন উমর, ফুড কন্ফারেন্স বইয়ের লেখক অবুল মনসুর আহমেদ সবাই সাক্ষী দিচ্ছেন যে ১৯৭৪ সালে মুজিব সরকারের অনিয়ম, র্দূনীতি-লুটপাটের কারণে লক্ষ লক্ষ লোককে অনাহারে প্রাণ দিতে হয়। এ ছাড়াও বিদেশী সংবাপত্রেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়; ১৯৭৪ সালের ৩০ শে মার্চ গার্ডিয়ান, ১৯৭৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে লন্ডনের নিউ স্টেট্সম্যান, ১৯৭৪ সালে ২রা অক্টোবর,লন্ডনের গার্ডিয়ান, ১৯৭৪ সালের ২৫ অক্টোবর হংকং থেকে প্রকাশিত ফার ইস্টার্ণ ইকোনমিক রিভিয়্যূ, নিউয়র্ক টাইমস পত্রিকা ১৯৭৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর লন্ডনের ডেইলী মিরর পত্রিকা, ১৯৭৫ সালের ৬ই জানুয়ারি ডেইলী টেলিগ্রাফ উপরের সব কয়টি বিশ্ব বিখ্যাত পত্র পত্রিকা একটাই সাক্ষ্য দেয় মুজিব সরকারের চরম ব্যার্থতা, অনিয়ম, র্দূনীতি-স্বজন প্রীতিই ১৯৭৪ সালের র্দূভিক্ষের জন্য দায়ী। তারপর মুজিব কন্যা হাসিনা ১৯৯৬ সালে অতীতের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে একটি বারের জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দানের জন্য ভোট ভিক্ষা করলেন।

জনগণ তাকে ১৪৭টি আসন দিলে এরশাদের জাপার সমর্থনে সরকারে আসল। তারপর সেই ১২ই জুনের পর হতেই কারসাজি ও কৃত্রিম মূল্য বৃদ্ধি ঘটিয়ে শেয়ার বাজারকে চাঙা করতে লাগল। এই নিয়ে জুলাই ১৯৯৬ হতে খালেদা জিয়া সহ বিভিন্ন বিরোধী দল ও অর্থনীতিবিদরা বার বার হুশিয়ারী দিল যে এভাবে জুয়া খেলে শেয়ার বাজার ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে। তাতে কিছু রাঘব বোয়াল লাভবান হলেও সাধারণ শেয়ার বিনিয়োগকারী পথে বসবে। কিন্তু হাসিনা ও তার চামচারা বলল খালেদা শেয়ারবাজারের উত্থানে হিংসা করেন এবং অর্থনীতিবিদদের জ্ঞান কম বললেন।

হাসিনার ক্ষমতায় আসার আগে যে শেয়ার বাজারের সূচক ৭০০র কিছু বেশী ছিল এবং কালে ভদ্রে দৈনিক লেনদেন ১০ কোটি টাকার উপর উঠত সেটা জুলাই হতে গড় লেনদেনই হত ৩৫ কোটি টাকার উপর। ঐ সময় সর্বস্তরের মানুষকে ফুসলিয়ে লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারী কেউ জমি, সম্পদ, বন্ধক ও লোনের মাধ্যমে তাদেরকে শেয়ার কেনার জন্য প্ররোচিত করে। ফলে ডিসেম্বর ১৯৯৬ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ঘটল বিশাল ভূমি ধ্বস। যে শাইনপুকুর সুচনাতে ১০০ টাকা হতে ৯০০ টাকা অতিক্রম করে হাজার টাকার হওয়ার পথে ছিল তা ৮০ টাকা হয়ে গেল এবং সূচক ১২০০ হতে ৫০০তে নেমে এল। এই কারসাজিতে সালমান দরবেশ সহ আওয়ামী নেতা-ব্যাবসায়ীরা বাজার হতে ৪০-৬০ হাজার কোটি টাকা লুটে নিল।

তারপর ১৯৯৭ সালে এমন ভাবে মামলা হল পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন চেয়ারম্যান স্বীকার করলেন যে শক্তভিত্তিতে মামলা হওয়া উচিত ছিল তা না হয়ে দূর্বল হওয়াতে তাতে না পারা যায় দরবেশদের শাস্তি দিতে অথবা নতুন মামলা করতে। আজও সেই ১৫ বছরের মামলা ঝুলে আছে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি জোটগত ভাবে ক্ষমতায় আসলে মৃত প্রায় শেয়ার বাজার স্বাভাবিক ও যৌক্তিক ভাবে অগ্রসর হতে থাকে। সাইফুর রহমান এমন কড়া নিয়ম বেধে দেন যে কোন শেয়ার একদিনে ১০% এর বেশী মূল্য বৃদ্ধি ঘটলে তার লেনদেন বন্ধ সহ উক্ত কোম্পানী কালো তালিকা ভূক্ত হবে। ফলে কোন ধরণের কেলেংকারী ঐ ২০০১-০৬ মেয়াদে ঘটেনি।

আর সূচক বৃদ্ধি পেয়ে দাড়ায় ২০০০ এরও বেশী। ফলে দেশের বিভিন্ন মানুষ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আস্থা ফিরে পায়। এটা ফখরুদ্দিনের তত্তাবধায়ক সরকারের সময়ও ছিল। ২০০৮ সাল নাগাৎ ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জের সূচক দাড়ায় ২৭০০। কিন্তু ২০০৯ সালে হাসিনার মহাজোট এসে সাইফুর রহমানের বেধে দেওয়া নিয়মকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ১৯৯৬ সালের ন্যায় জুয়ার আসর বানিয়ে দেয়।

এবার অবশ্য ৪-৫ মাসে নয় চালাকি করে ২ বছর সময় নিয়ে অগ্রসর হয়। যে শেয়ার ১০ টাকা করে ছাড়ে তা ২ সপ্তাহে মূল্য দাড়ায় ৫০০ টাকা। এই নিয়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বার বার সতর্ক করা হলেও এস.ই.সি, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রণালয় বলে যে তারা সচেতন আছে তেমন কিছু ঘটবে না বরং সবাই বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারে সেই পরিবেশ নাকি হাসিনার মহাজোটের আমলে সৃষ্টি হয়েছে। বস্তুত এই তিন সংস্থার কার্যক্রম একটা টোপ ছাড়া আর কিছুই নয়। মূলেই কলকাঠি নেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

মানুষকে এবারও রীতিমত সরকারের সাথে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি মহল লোভ, উৎসাহ রীতিমত ফুসলিয়ে শেয়ারবাজারে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করায়; Click This Link ২০০১-০৬ সালে যেখানে পরিচিত-প্রতিষ্ঠিত তথা জেনুইন কোম্পানী গুলো এস.ই.সির কঠিন নিয়মে লেনদেন করত সেখানে হাসিনার মহাজোট দরবেশদের মত বড় পরিচিত কোম্পানী গুলোকেতো বটেই ভুয়া কোম্পানী গুলোকেও কোন বাধা ধরা নিয়মে রাখল না। যে যার ইচ্ছা মত প্রতিদিন শেয়ারের দাম ৫০-১০০ এমনকি ২০০% হারে শেয়ারে দাম বৃদ্ধি ঘটিয়েছিল জুন ২০১০ হতে। ঐ সময় রিকশাওয়ালা, কুলি-মজুর, চা বিক্রেতা সবাইকে আওয়ামী-বাকশালীরা বলত "আজকা সকালে ১০ হাজার খাটাওতো ২০ হাজার, ২ দিন পর ৩০ হাজার আর সপ্তাহ পর ১ লাখ টাকা হইব"। ফলে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসের আগে একদিনের সর্বোচ্চ লেনদেন ২৫০০ কোটি টাকা হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু জুয়ার আসর তাই দরবেশ, লোটাস, সামিট গ্রুপ তথা হাসিনার প্রিয় লোকেরা নিজেদের শেয়ার উচ্চ দামে বিক্রি করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়।

ফলে এবার ৪০-৫০ হাজার কোটি নয় দেড় হতে ২ লক্ষ কোটি টাকা দেশের শেয়ার বাজার হতে লুট হল। ২৭০০র সূচক যেখানে ৮৫০০ হয়েছিল সেটা ৭৫০০ হয়ে গেল। বিশাল ক্ষতিগ্রস্থ হল ৩৩লক্ষ সাধারণ শেয়ার ব্যাবসায়ী। সেই জানুয়ারী ২০১১ হতে আজকে ২০১২ ফেব্রুয়ারীর শুরু পর্যন্ত তদন্ত, মামলা, লোকসানের টাকা উদ্ধার তথা প্রণোদনা ইত্যাদির মূলা ঝুলিয়ে এক বছর পার করে দিল। যে টাকা দরবেশ গং নিয়ে গেছে সেই টাকা কি ৩৩লক্ষ বিনিয়োগকারী কি আর ফিরত পাবে? আগামী ৫-৬ বছরেও কি এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারবে? এবার দুটো বিষয় ১) মানুষকে ফুসলানো ও টোপ গেলানোতো হয়েছেই এবং ২) সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ভুয়া কোম্পানীর নিবন্ধন হয়ে শেয়ার বাজারে ঢুকেছে।

সেই দুনিয়ার অপর প্রান্ত ওয়েষ্ট ইন্ডিজ যেখানে নিজ দেশেই সঠিক পরিচয় নেই বাংলাদেশে সরকারের মদদে ঢুকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিল! উদ্দেশ্য একটাই যে এদের সাথে জড়িতদের ধরাতো দূর চিহ্নিত করা যেতে না পারে। আজকে শেয়ারবাজারে এই করুণ ধ্বসে মানুষ আত্নহত্যা করছে অনেকেই হয়ত হৃদরোগ, টেনশনে মারা গেছে, কারো সংসার ভেঙে ফকিরের অবস্থা হয়েছে তাদের জন্য মামলা করে দোষীদের ধারতো দূর ইব্রাহিমের তদন্ত রিপোর্টও অর্থমন্ত্রী মুহিত প্রকাশ করছে না। সহজেই বুঝা যায় তার নেত্রী হাসিনাও এই লুটপাটের বখরা পেয়েছে। তাই মুহিত ভয় পায় যে পাছে দলীয় প্রধান ফেসে যায়। কিন্তু হাসিনার চুরি ও শিানজুড়ি এমন সে বলে "বিএনপির সময় শেয়ার বাজার নড়েও না চড়েও না"।

কিন্তু বিএনপি কেন এরশাদের সময়ও যে শেয়ার বাজারে কাউকে এ রকম গোহারা তথা সর্বস্ব উজাড় হতে হয়নি এই কথা হাসিনা ও তার চামচারা স্বীকার করবে না। বিষয়টা সেই ১৯৭৪ সালের মুজিবের প্রিয় পাত্র গাজী গোলাম মোস্তফার মত। যে সাড়ে ৭ কোটি কম্বল চুরি করেও তার হতে কম্বল উদ্ধার ও তাকে জেলে পুড়াতো দূর বরং রিলিফের প্রধান পদেই বহাল তবিয়তে রেখে দেওয়া হয়। আর আজকে মুজিব কন্যা সরাসরি এই শেয়ারবাজারের লুটপাটের সাথে জড়িত! হাসনিা ও তার প্রিয়পাত্ররা ২০১০ সালে শেয়ার বাজারের সাথে যে হানিমুন গেম খেলল তার তুলনায় ১৯৯৬ সাল নিতান্তই স্বপ্নের ত্রুটি! ১০ টাকা/কেজি চালের মত শেয়ারবাজারে মধুময় স্বপ্নের মূলা দেখিয়ে এখন হাসিনা বুঝিয়ে দিচ্ছে ঐ রকম স্বপ্ন দেখাটা ৩৩লক্ষ মানুষের গুরুতর দোষ ছিল!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।