আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হারিয়ে যাওয়া বালিকারা

আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি। মাঝে মাঝে এমন কিছু সময় এসে চলে যায় তা আর ফিরে আসে না। সেরকম কিছু সময়ে কিছু বালিকার দেখা পেয়েছিলাম। সেসব বালিকা সময়ের স্রোতেই হারিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে অবসরে তাদের মনে করতে একেবারে খারাপ লাগে না।

স্কুল বালিকা, দৃষ্টি প্রেম অতঃপর রাক্ষুসী সবে ক্লাস সিক্সে উঠেছি। প্রাইমার স্কুল পেরিয়ে হাই স্কুল আমার কাঁধে দুটি টানা ডানা দিয়েছিল। আমি ছিলাম ক শাখায়, খ শাখায় পড়ত তাসলিমা নামের অদ্ভুত সুন্দর এক বালিকা। আমাদের দেখা হত কেবল ইসলাম শিক্ষা ক্লাসে। প্রথম ক্লাস থেকে সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত,আমিও তাকিয়ে থাকতাম (ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজবে “তোমায় দেখলে মনে হয়..হাজার বছর তোমার সাথে ছিল পরিচয়)।

তাকিয়ে থাকার খেলা চলছিল। ক্লাসের বাইরে,মাঠে, রাস্তায় একই রকম দৃষ্টি বিনিময় অব্যহত রইল। ক্লাস তথা প্রায় পুরো স্কুলে প্রচার হয়ে গিয়েছিল আমাদের “দৃষ্টি প্রেমের” কথা। দুই বছর দৃষ্টি প্রেম দৃষ্টিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কখনো একটা কথাও বলিনি।

ক্লাস এইটে দুই শাখার এক সাথে ক্লাস শুরু হল। এখন পুরো সাতটি ক্লাসে চলতে থাকল “দৃষ্টি প্রেম”। কিন্তু বিধি বাম। একদিন অংকের স্যার ক্লাসে আমাকে ডেকে বললেন “পেরেম কর পেরেম,অংকে পাস ৪৩ আর পেরেম করস? তারপর মরে গেল আমার দৃষ্টি প্রেম! পত্রমিতালী এবং ঠিকানা পছন্দ না হওয়ায় হারিয়ে যাওয়া ক্লাস নাইনে পড়ালেখা ফাঁকি দিয়ে আমার হাতে অখন্ড সময়। যেই বই সামনে পেতাম সেটাই পড়তাম।

কোন এক ম্যাগাজিনে পত্রমিতালী বিভাগে আমার নাম ঠিকানা পাঠিয়ে দিলাম কি এক কৌতুহলে। বহুদিন পর “অরিন” নামের একটি মেয়ের চিঠি আসল। উত্তর না দেয়ার মত কঠোর লোক আমি নই! দিলাম উত্তর। এরপর পুরো ১ বছর পত্র চালাচালি হল। ক্লাস টেনে বাসা পরিবর্তন করলাম।

নতুন বাসার ঠিকানা লিখে তাকে চিঠি লিখলাম। কিন্তু অরিনের মনে হয় আমার নতুন বাসার ঠিকানা পছন্দ হয়নি! তাই আর উত্তর দেয়নি। হারিয়ে গেল আমার পত্র বন্ধু ভাষা শিক্ষার আসর এবং মুঠোফোন অনার্স ফার্ষ্ট ইয়ার,অপরিচিত এক নম্বর থেকে ফোন আসল। এক তরুনী, মনে হল চাইনিজ ভাষায় কথা বলল। কিছুই বুঝলাম না।

রেখে দিলাম। রাতে আবার ফোন দিল সে (তরুনীটির নাম মনে পড়ছে না)। পরিচয় বিনিময়ে জানতে পারলাম সে সিলেটের ফুরী। প্রথমদিনে অনেক্ষন কথা বললাম। পরের দিন থেকে আমাদের ফোনালাপ হয়ে গেল “সিলেটি ভাষা শিক্ষার আসর”।

অনেক শব্দ শিখিয়েছিল আমাকে। এক সপ্তাহ কথা বলার পর তরুনীটি আমার ভাষা শিক্ষা অসম্পূর্ণ রেখে ফোন করা বন্ধ করে দিল। আমি একদিন তার ফোনে ট্রাই করে দেখলাম “ফোন বন্ধ”। আফসোস আজ পর্যন্ত আমি সিলেটি ভাষা শিখতে পারলাম না। জানালার পাশের সিট , সুন্দরী আপু এবং বোকামি চট্টগ্রাম যাবার জন্য ট্রেনে জানালার পাশে নিজের সিটে বসে আছি।

আমার পাশের সিটে এক সুন্দরী আপু এসে বসল। উনি আমার কাছে জানালার পাশে বসার আবদার করল। আমি অতটা কঠিন প্রকৃতির লোক না যে সুন্দরী আপুকে অবহেলা করবো। কথা শুরু হল। আপু দেখি খাবারের দোকান নিয়ে হাজির! কেক, বিস্কুট, নুডলস, আপেলে দুজন ভাগ করে খেলাম।

এ যেন ছোট্ট সংসার! জানালার পাশের সিট ছেড়ে দিয়ে তাহলে লাভই করলাম। পরের বার এভাবে জানালা ছেড়ে দিব বলে শপথ করলাম। এর আগে কয়েকবার জানালা না ছাড়ার জন্য আফসোস করলাম। এ কথা ও কথা বলতে বলতে উনি আমার ফোন নম্বর নিলেন এবং বললেন "ঢাকায় গিয়ে তোমাকে ফোন দিব"। যাওয়ার আগে বলল "সিগারেট বেশী খেওনা"।

আমি ভাব ধরে উনার ফোন নম্বর নিলাম না। আমিতো জানি উনি ফোন করবেই! কিন্তু আজ দুবছর সেই আপু ফোন করেনি! আমি আজও ঢাকায়,একই ফোন নম্বর ব্যবহার করি। ছবি : ইন্টারনেট ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।