আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুজিঁবাজার কেড়ে নিল ৯ বিনিয়োগকারীর প্রাণ

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে অব্যাহত দরপতন। পুঁজি হারিয়ে প্রতিদিনই নিঃস্ব হচ্ছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী। পুঁজি হারানোর হাতাশা আর দুশ্চিন্তায় আবার কেউ কেউ বেঁচে নিচ্ছেন আত্মহননের পথ। সর্বশেষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী লিয়াকতের মৃত্যুসহ আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৯ জনে। ২০০৭ সাল থেকে শেয়ারবাজারের বিস্তৃতি বাড়তে থাকে।

এ ধারা ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এর পর থেকেই শুরু হয় ধারাবাহিক পতন । যা এখনো অব্যাহত। দরপতনে অনেকেই পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। প্রতিবাদ করতে করতে অনেকে হয়েছেন অসুস্থ, কেউ কেউ নিজেকে সামলাতে না পেরে করেছেন আত্মহত্যা।

যার ধারাবাহিকতায় গত ৩০ জানুয়ারি স্ত্রী আর ৬ বছরের কন্যা সন্তানকে রেখে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন এক বিনিয়োগকারী লিয়াকত আলী। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাত্র কয়েকশ’ গজ দূরে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত লিয়াকত ১৯৯৬ সালে শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন এবং ২০০৩ সাল পর্যন্ত এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু সে সময় ৫ লাখ টাকা লোকসান হওয়ার পর শেয়ার ব্যবসা ছেড়ে দেন। পরে ২০০৯ সালে শেয়াববাজার আবার চাঙ্গা হতে শুরু হলে তিনি ফের বিনিয়োগ শুরু করেন।

তার শেষ সম্বল আশুলিয়ায় অবস্থিত ১২ শতাংশ পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। এছাড়া সঞ্চয়পত্র ভেঙেও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু টানা দরপতনের বিনিয়োগকৃত সব পুঁজি হারিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে ভিন্ন ভিন্ন বিও একাউন্টে তার বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৭০ লাখ টাকা। মৃত্যূর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত শেয়ার ধস এবং মার্জিন লোনের কারণে তার কাছে আর একটি টাকাও অবশিষ্ট ছিল না।

ফলে বাধ্য হয়েই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহুতি দেন এ বিনিয়োগকারী। শুধু লিয়াকত আলীই নন শেয়ারবাজারের এ বিপর্যয় কেড়ে নিয়েছে রনি জামান, রনি সাহা, ড.মাহবুবুর রশিদ, মিল্লাত হোসেন, হাবিবুর রহমান, রতন চৌধুরী, নাজিবুল হাসান ও হাফিজুর রহমান সহ আরো কয়েকজন বিনিয়োগকারীর প্রাণ। তাদের ঠেলে দিয়েছে আত্মহত্মার পথে। বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের দেয়া তথ্যমতে, গত ৩০ নভেম্বর অফিসের সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহুতি দেন বিনিয়োগকারী হাবিবুর রহমান। আর এ আত্মহত্যার কারণ হিসেবে ওঠে আসে সেই পুঁজি হারানো আর নি:স্ব হওয়া।

মাস সাতেক আগে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে একই ভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন আরেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী রনি জামান। ২৩ বছরের এ যুবক সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে নামেন পুঁজিবাজারে। তবে এ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকাই ছিল তার স্বর্বস্ব। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে এ টাকা ধার করেন তিনি। পুঁজি হারিয়ে চাপ সহ্য করতে না পেরে অবশেষে আত্মহত্যার পথই বেছে নেন এ যুবক।

রনির মৃত্যুর মাত্র দু'দিন পরে একই পথে হাটলেন খুলনায় সর্বশান্ত বিনিয়োগকারী হাফিজুর রহমান। বিনিয়োগ করে পুঁজি হারানোর চাঁপ সামলাতে না পেরে হ্রদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এ বিনিয়োগকারী । গত ২৪ সেপ্টেম্বর আত্মহুতি দিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের পায়শ্চিত্ত করলেন বরিশালের আরেক বিনিয়োগকারী নাজিবুল হাসান। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকৃত প্রায় অর্ধকোটি টাকা হারিয়ে মাত্র ২৬ বছরে বয়সেই পৃথিবীকে বিদায় জানান তিনি। আর মুনাফাখোরদের জানিয়ে গেছেন ধিক্কার।

একই বছরে পুঁজি হারিয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ড. মাহবুবুর রশিদ ও রতন চৌধুরী । পাশাপশি ঋণ করে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত দিতে না পেরে মৃত্যূর মিছিলে যোগ দেন মিল্লাত হোসেন। প্রবাসী স্বামীকে না জানিয়ে ইউনিপে টু‘র পাশাপাশি পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগ করেছিলেন শারমিন আক্তার । বিনিয়োগের কিছু দিন পর দু’ জায়গায় পুঁজি হারান এ নারী। সব হারিয়ে লাজ-লজ্জার ভয়ে তিনিও যোগ দেন এই আত্মহুতির মিছিলে।

এভাবে যতো দিন যাচ্ছে ততই খারাপ হচ্ছে আমাদের পুঁজিবাজারের অবস্থা, আর ততই বাড়ছে আমাদের স্বজন হারানোর ব্যাথা। ফলে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীরাই আজ ক্ষুব্ধ সরকার আর তার ধূসর শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রকদের প্রতি। তাদের অভিযোগ পুঁজিবাজার যখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে স্ফীত হচ্ছিল তখন যদি সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণ করা হতো এবং বিনিয়োগকারীদের নির্দেশনা দেওয়া হতো তাহলে রাঘববোয়াল জুয়ারিদের ফাঁদে পা দিত না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ঝড়ে পড়ত না এতোগুলো মূল্যবান প্রাণ। প্রতিদিনই প্রকাশিত-অপ্রকাশিত ঘটনায় অনেক প্রাণ যাচ্ছে।

যেভাবেই হোক প্রত্যাশিতভাবে মারা যাচ্ছে আমাদের অনেক স্বজন। কিন্তু পুঁজিবাজার পতনে নি:স্ব হয়ে প্রাণ দেয়াটা স্বজনদের জন্য যেমন ব্যাথাদায়ক জাতির জন্যও লজ্জাজনক ও ভবিষ্যৎ দুর্দশারই আগাম বার্তা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।