এবার টার্গেট বিএনপি প্রধান এবং ১৮ দলীয় জোটের অবিসংবাদিত আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
শাসকগোষ্ঠির পায়ের তলা থেকে যখন মাটি সরতে থাকে তখন সেই মাটি ধরে রাখার জন্য তারা মরণ কামড় দেয়। বিগত ৪ বছরে বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তায় যতখানি ধস নেমেছে তার চেয়ে বেশী ধস নেমেছে বিগত ২ মাসে, অর্থাৎ বিগত ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে। শাসকগোষ্ঠি যখন মহাসংকটে নিক্ষিপ্ত হয় তখন তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। দিশেহারা হয়ে সেই সংকট থেকে পরিত্রাণে জন্য তারা বেপরোয়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বাংলাদেশেও বর্তমান সরকার দ্রুত হ্রাসমান জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারের জন্য কঠোর নীতি গ্রহণের নামে একের পর এক প্রচ- দমননীতি চালিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে সরকারের কতিপয় মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ নেতার বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আশঙ্কা করছেন যে সরকার পায়ের তলার অপসৃয়মান মাটি ধরে রাখান জন্য আরেকটি মরণ কামড় দিতে যাচ্ছে। এবার তাদের সেই বেপরোয়া পদক্ষেপের টার্গেট হতে যাচ্ছেন বিএনপি প্রধান এবং ১৮ দলীয় জোটের অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিগত ২ মাসের সংঘাত সংক্ষুব্ধ রাজনৈতিক ঘটনাবলী পর্যালোচনা করে সরকার মনে হয় এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে দেশের রক্তক্ষয়ী ঘটনাবলী থেকে জন্ম নেয়া এক পিচ্ছিল রাজনীতিকে বেগম জিয়া সরকার বিরোধীতার সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিক পথে পরিচালনা শুরু করেছেন। তার এই সুপরিকল্পিত ও সঠিক কিন্তু আপসহীন নেতৃত্ব যদি অব্যাহত থাকে তাহলে দেশে অচিরেই গণঅভ্যূত্থান সংঘঠিত হবে।
রাজনৈতিক মহল মনে করছেন যে এই মুহূর্তে ঢাকা মহানগর রাজনৈতিক হানাহানিতে তুলনামূলক ভাবে কম অশান্ত এবং পুরাপুরি টালমাটাল না হলেও মফস্বলের অনেক গুলো জেলা থেকে ইতোমধ্যেই গণ অভ্যূত্থানের পদধ্বনি ক্রমশই সরব হচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত প্রচারণা
গত কয়েকদিন ধরে সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগের ধরন দেখে মনে হচ্ছে যে অতি সহসাই সরকারের সুনির্দিষ্ট টার্গেট হতে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, বিএনপি’র চেয়ারপার্সনসহ ১৮ দলীয় জোট নেতাদের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কাজের হুকুমের আসামি করে মামলা করা হবে। তিনি বলেন, যে হরতাল ডেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ ১৮ দলীয় জোট নেতারা নাশকতা করার হুকুম দিয়েছেন। তার মতে বিএনপি মুখে বলেছে যে তারা শান্তিপূর্ণ হরতাল করবে।
কিন্তু বাস্তবে তারা চোরাগোপ্তা হামলা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, যে বেগম খালেদা জিয়াকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো অভিযোগ করেছেন যে হরতাল করার জন্য ইস্যু লাগে। সেই ইস্যু সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি নিজেরাই নিজেদের সভায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, গোলাগুলি করেছে এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর করেছে।
মাহবুবুল আলম হানিফ আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া নাকি বাংলাদেশকে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান বানাতে চান। সেই উদ্দেশে এবং যুদ্ধাপরাধীদেরকে বাঁচানোর জন্য তিনি নাকি দেশ ধ্বংস করছেন।
বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে আওয়ামী নেতৃবৃন্দের অভিযোগের অন্ত নাই। তিনি নাকি কাবা শরীফের গিলাফ নিয়ে দলীয় রাজনীতি করেছেন। বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেছেন, যে খালেদা জিয়ার চার পাশেও নাস্তিক রয়েছে।
তারা তার বক্তৃতা লিখে দেয় এবং পরামর্শ দান করে। সময় মতো তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে বলেও পরিবেশ মন্ত্রী হুমকি দেন।
খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে -মায়া
তবে সরকারের এসব দুরভিসন্ধিমূলক প্রচারণার গোমর ফাঁস করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। ১৮ দলের হরতাল বিরোধী একটি সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মহানগরী আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কোনরূপ রাখ ঢাক না করে ঘোষণা করেছেন যে হরতালের নামে সারা দেশে নাশকতা সৃষ্টি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার জন্য খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে সরকারের আস্তিনের নীচে যে মতলবটি লুকিয়ে আছে সেটিকে বের করে দিয়েছেন জনাব মায়া।
ক্ষমতাসীন মহল মনে করছেন যে তাদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠান এবং আগামী দিনে ক্ষমতায় আরোহণের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হলেন বেগম খালেদা জিয়া। দল হিসেবে বিএনপি দেশের বৃহত্তম দুটি দলের অন্যতম। গত ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশ অকস্মাৎ এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিক্ষিপ্ত হয়। তখন সঠিক নেতৃত্বের অভাবে বিরোধী দলের আন্দোলন অশান্ত সমুদ্রে দিক নির্দেশনাহীন জাহাজে পরিণত হয়েছিল। ওই সময় চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুর অবস্থান করছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দিশেহারা বিএনপি
আনুমানিক ১০ দিন বেগম জিয়া সিঙ্গাপুর ছিলেন। এই ১০ দিনে সারা দেশে যে প্রবল গণআন্দোলন শুরু হয় সেই গণআন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। এই কয়েকদিনে পুলিশের গুলি বর্ষণে শতাধিক আদম সন্তান শাহাদত বরণ করেন। মাত্র এক দিনে বগুড়ায় ১৩ জন এবং জয়পুরহাটে ৭ জন - মোট ১৯ ব্যক্তি পুলিশের গুলীতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। প্রায় একই সময় সৃষ্টি করা হয় গণজাগরণ মঞ্চ।
গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টির তৃতীয় দিনেই মঞ্চের নায়কদের স্বরূপ সচেতন মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়। তারা পরিষ্কার বুঝতে পারেন যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভাজনে একটি বিশেষ ঘরানার রাজনীতিকে প্রমোট করার জন্যই গণজাগরণ মঞ্চের জন্ম দেয়া হয়েছে। অথচ খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি’র অন্যান্য নেতা জাগরণ মঞ্চের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অনুধাবনে নিদারুন ব্যর্থতার পরিচয় দেন। কয়েকদিনের ব্যবধানে বিএনপি’র এক এক নেতা জাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে এক এক রকম মন্তব্য করেন। কেউ প্রশংসা করেন, কেউ সমালোচনা করেন।
ফলে জাতীয়তাবাদী, ইসলামী এবং আধিপত্যবাদ বিরোধী মহল চরম বিভ্রান্ত হন। এর পাশাপাশি পুলিশ যেভাবে পাখী শিকারের মতো নিরস্ত্র জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে সেই বেপরোয়া হত্যাকা-ের বিরুদ্ধেও খালেদা বিহীন বিএনপি সঠিক, প্রতিবাদী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণে ব্যর্থ হয়। খালেদা জিয়া বিহীন বিএনপি’র সেই সময়ের নেতৃত্ব চরম দিধাদ্বন্দ্ব এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে।
শুধু মাত্র বিএনপিই নয়, জাতীয়তাবাদী, ইসলামী এবং আধিপত্যবাদী ঘরানার অন্তর্ভুক্ত সমস্ত দল এবং নেতা তখন মর্মে মর্মে বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি অনুভব করতে থাকে।
কান্ডারী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন
এই সময় বাংলাদেশ এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়।
চারিদিকে বারুদের গন্ধ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ছাড়া ২/৪ দিনে এতো মৃত্যু কখনো দেখেনি কেউ। বাংলাদেশের দুর্গত মানুষ তখন কায়মন বাক্যে বেগম জিয়ার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কামনা করছিলেন।
কথায় বলে, নেতার সাথে জনতার নাকি বিনা সুতার এক অদৃশ্য বাঁধন থাকে। সেই বাঁধনে সম্ভবত টান পড়ে এবং খালেদা জিয়া জনগণের মনের আর্তি নীরবে শ্রবণ করেন এবং দ্রুত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
দেশে ফিরে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি একটি সংবাদ সম্মেলন করে দিশেহারা মুজলুম জনতার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন শক্ত হাতে। পুলিশের হত্যাকা-কে তিনি গণহত্যা এবং শাহবাগে এক শ্রেণীর উদ্যোক্তার ধর্মহীনতার পরিচয় উন্মোচন করেন। অতঃপর একের পর এক হরতালসহ বেগম জিয়া কঠোর কর্মসূচি দিতে শুরু করেন। জেনারেল এরশাদের ক্ষমতাচ্যুতির ১৩ বছর পর আবার বেগম জিয়া আপসহীন নেত্রীর দুঃসাহসী ভূমিকায় আর্বিভূত হন। মুহূর্তের মধ্যে রাজনৈতিক দৃশ্য পট পাল্টে যায় এবং নৈরাজ্য ও ধর্মহীনতার পথে দ্রুত ধাবমান জাতির রসাতল যাত্রা রুখে দেন।
আগামী ২ থেকে ৩ মাস সমগ্র জাতির জন্য এক মহা ক্রান্তিকাল। জাতি আজ সুষ্পষ্ট ভাবে দুইটি শিবিরে বিভক্ত এক দিকে জাতীয়তাবাদী, ইসলামী, আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদ বিরোধী শক্তি। তাদের অবিসংবাদিত নেতা হলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। অন্যদিকে সেক্যুলার ও আধিপত্যবাদ পন্থী শক্তি। জনমত দ্রুত সংগঠিত হচ্ছে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে।
সম্ভবত সে কারণেই বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের চিন্তা ভাবনা চলছে ক্ষমতার করিডোরে। তেমন একটি পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সমগ্র দেশ। ভয়ঙ্কর অরাজকতার কবলে নিক্ষিপ্ত হবে বাংলাদেশ, যেখান থেকে ফেরার আর কোনো পথ থাকবে না।
মোবায়েদুর রহমান
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।