আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুচিন্তার উপত্যকায় দাঁড়িয়ে প্রলাপ-লিখন

আমি যেন এক মেঘ হরকরা গত কয়েক ঘন্টা যাবত নিজেকে কল্পনা করছি মৃত্যুশয্যায়, নিজের পক্ষে আর কোনও ধরণের প্রহর গণনাই যখন আর সম্ভব না, সে সময় বন্ধু-শুভাকাঙ্খি-পরিচর্যাকারিগণ আমার হয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুর প্রহর গুনবেন হয়তবা। সেদিন আমি মোটেও আশা করিনা থেমে থাকবে সুন্দর পৃথিবীর যাবতীয় কোলাহল, চলমান সংসারের সকল উতসব, আত্মিয়-বন্ধুদের মহতী কিংবা তুচ্ছ আনন্দের কারণগুলো; কিন্তু এটুকু আশা করবো সে কোলাহল আর উতসবগুলো 'অনিবার্য কারণ বশত কেউ পিছিয়ে না দিতে পারলেও অন্তত খুব নীরবে ঘটতে থাকবে যাতে করে আমার অজ্ঞান-অচেতন সত্ত্বাও টেরটি না পায়। লোকে বলে আমার বন্ধু-ভাগ্য ঈর্ষনিয়; এটুকু তো আমার সামান্যই চাওয়া। কিন্তু এই আমিও কি আত্মিয়-বন্ধুদের বিপন্নতা-বিপদাপন্নতার দিনে পূর্বনির্ধারিত উতসব-আয়োজনে যাইনি কখনো? যেতে হয়েছে বলে গেছি কখনোবা, তবে সঙ্গোপনে, জানান না দিয়ে। আমার মৃত্যুশয্যার দিনে হয়তবা আমার প্রানপ্রিয় কোনও বন্ধুর পুত্রকন্যার জন্ম হবে, জন্মদিন থাকবে কিংবা পূর্বনির্ধারিত শুভবিবাহের উৎসব থাকবে।

পিছিয়ে যাবে কি সেসব 'অনিবার্য কারণবশত' এই 'বাঙলার এক বিপন্ন চারনের' কারণে! আমার মাথাটা এখন নাজিম হিকমতের চেয়েও বেশি ঘুরছে, গোলমেলে লাগছে সব, মাথা নষ্ট হবারই জোগাড়। কী অবিমৃশ্যকারী এই জগতসংসার, আর ততোধিক এই ভার্চুয়াল জগতসংসারের লীলা! এ যে শাঁখের করাত! উতসবের পাশেই ঝুলতে থাকা কালো পোস্টারের দিকে আমি আর তাকাতে পারছি না; আমি আর নিতে পারছিনা। আমার ভাবনাগুচ্ছ যেনবা কোনো সাতরাস্তার মাথার মোড়ের যান-স্রোতের মতো; এ মুহূর্তে ভাবছিঃ আমার কোনো আপাত-নিরীহ লেখাও হয়তো আহত করেছে কাউকে, খোঁজ রাখিনি কোনোদিন, ভাবিওনি তেমন করে। আমাদের বাড়ন্ত দুরন্ত ছুটন্ত উন্মত্ত ভার্চুয়াল জগৎসংসারের বোধবুদ্ধি হিতাহিতজ্ঞান মুল্যবোধ সবকিছু কেমন ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। লেখকদের নাকি বিবেক থাকতে হয়, আসলে তাদেরকে 'বিবেক' হয়েই উঠতে হয়।

বিবেক আর শুভবুদ্ধির চর্চা করতে গেলে যে মাথা খারাপ হয়ে যেতে বাধ্য, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের চাপ তো আরো বেশি করে বিকলনের প্রভাবক। ভোঁ ভোঁ ধাঁধাঁ ভুভুজেলা!! আজ আমরা সারা দুনিয়ার সবকিছু জেনেও যথাক্রমে একচক্ষু কিংবা জ্ঞানপাপী হয়ে থাকবার মতো চাতুর্য কিংবা রুঢ়তা অর্জন করতে পেরেছি। এওতো মানবসভ্যতার অমোঘ একটা অবদান! আমি কি দেখিনি একটা পর্যায়ে গিয়ে কখনো কখনো বিখ্যাত কোনো মৃত্যুবার্ষিকীও আমাদের জন্যে এক ধরনের উৎসবের উপলক্ষ এনে দেয়। কোনোদিন মৃত্যু চিন্তা আসে নাই; আজ সেই মৃত্যু চিন্তা আমাকে দাঁড় করিয়ে দিল এ কোন সাতমাথায়, কোন শাঁখের করাতের মুখোমুখি? নাকি আমি আজ শরশয্যায়? স্বেচ্ছামৃত্যুর শরশয্যায় শুয়ে ভীষ্ম যেমন পঞ্চপাণ্ডবকে নসিহত করছিলেন সেই দীর্ঘ বয়ানের মতো বাচালতায় পেয়ে বসলো নাকি! এবারে চরম স্বগতোক্তি ঃ আমার কি তবে আজ ভার্চুয়াল জগত থেকে স্বেচ্ছামৃত্যুর সময় এসে গেছে?! ২২। ০১।

২০১২ রাত্রিবেলা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.