আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইটস দি ইকনমি, স্টুপিড: শফিক রেহমান

ছাত্র প্রশ্ন : আমেরিকার বিয়াল্লিশতম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন, যিনি তার ইচ্ছানুযায়ী বিল ক্লিনটন নামে বেশি পরিচিত, তার সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মা’ল আব্দুল মুহিত, যিনি সংক্ষেপে মুহিত নামে পরিচিতÑ এই দুইজনের মধ্যে মিল কি? উত্তর : দুজনই স্টুপিড শব্দটি ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত। তবে দুজনের মধ্যে গরমিলটা হচ্ছে ক্লিনটন ক্ষমতায় যাবার আগে শব্দটি বহুল ব্যবহার করেছিলেন। আর মুহিত ক্ষমতাসীন হবার পরে শব্দটি বহুল ব্যবহার করেছেন। শব্দটি ক্লিনটনের মুখ নিঃসৃত ছিল না। একচল্লিশতম প্রেসিডেন্ট জর্জ হার্বার্ট বুশ (১৯৮৯-১৯৯৩)-এর পুনঃনির্বাচনের বিরুদ্ধে যখন ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন, তখন লিটল রক শহরে (আমেরিকার অঙ্গরাজ্য আরকানস-র রাজধানী) তার ক্যামপেইন হেড কোয়ার্টার্সের সামনে ইটস দি ইকনমি, স্টুপিড (It's the economy, stupid) স্লোগান সংবলিত একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়।

ক্লিনটনের পলিটিকাল স্ট্র্যাটেজিস্ট জেমস কারভিল ১৯৯২-এ নির্বাচনী অভিযানের সূচনায় এই সাইনবোর্ড টাঙ্গান। তিনি চেয়েছিলেন ভোটারদের বোঝাতে তাদের দলের মূল লক্ষ্যটা কি। বিল ক্লিনটন তখন ছিলেন আরকানস-র তরুণ গভর্নর। তিনি বলেছিলেন, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বুশ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে শোচনীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। তাই আমেরিকান ভোটারদের উচিত হবে বুশকে বাদ দিয়ে ডেমক্রেট ক্লিনটনকে নির্বাচিত করা।

এই স্লোগান দিয়ে ক্লিনটন আমেরিকান নাগরিকদের বলেছিলেন, যেহেতু তারা ভাবছেন অর্থনীতির তুলনায় অন্যান্য ইসুগুলো বেশি ইম্পরট্যান্ট সেহেতু তারা স্টুপিড। বস্তুত এই স্লোগান দিয়ে ক্লিনটন প্রতিটি আমেরিকান নাগরিককে স্টুপিড বলে অপমানিত করেছিলেন। অন্যদিকে ক্লিনটন বোঝাতে পেরেছিলেন, ওই সময়ে দেশের একমাত্র রাজনৈতিক ইসু ছিল অর্থনীতি। আমেরিকায় তখন মন্দাবস্থা চলছিল। বহু লোক বেকার ছিল।

ক্লিনটন নির্বাচিত হন। তিনি আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থানকে উন্নত করেন। বেকারের সংখ্যা কমে যায়। তিনি খুব জনপ্রিয় হন এবং পরপর দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বলা হয় সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা যদি না থাকতো এবং ক্লিনটন যদি তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী হবার সুযোগ পেতেন তাহলে তিনি অবশ্যই পুনঃনির্বাচিত হতেন।

ক্লিনটনের প্রেসিডেন্সি (১৯৯৩-২০০১) এখনও আমেরিকার সাম্প্রতিক স্বর্ণযুগ রূপে বিবেচিত। তার পরে তেতাল্লিশতম প্রেসিডেন্ট হন রিপাবলিকান জর্জ ডাবলিউ বুশ (হার্বার্ট বুশের বড় ছেলে)। তার প্রেসিডেন্সিতে (২০০১-২০০৯) আমেরিকা আবার মন্দাবস্থায় ফিরে যায়। বর্তমান ডেমক্রেট প্রেসিডেন্ট ব্যারাক ওবামা ২০০৯ সাল থেকে আমেরিকার অর্থনীতিকে আবার উন্নত ও দৃঢ় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও ২০১১-র মাঝামাঝিতে আমেরিকায় বেকারের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪ মিলিয়ন।

এই বেকারত্ব দূর করার জন্য দি ডেইলি বিস্ট-এ (১৯.০৮.১১) বিল ক্লিনটন ১৪ দফা প্ল্যান প্রকাশ করেন। আমেরিকায় এখনো ক্লিনটনকে মনে করা হয় তিনি ছিলেন একজন ইকনমিক উইজার্ড (economic wizard) বা অর্থনৈতিক জাদুকর। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে মুহিতের স্টুপিড শব্দটি ছিল মুখনিঃসৃত যা চলতি বছরের শেষে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের বর্ষ পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠানে আবারো প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি ‘রাবিশ’ শব্দটিও প্রায়ই প্রয়োগ করেন। ইলেকশন ম্যানিফেস্টোতে আওয়ামী লীগ যে পাচটি অগ্রাধিকারের কথা বলেছিল তার মধ্যে প্রথমই ছিল দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা।

ইশতেহারে বলা ছিল, ‘দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময়মতো আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মজুদদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে, চাদাবাজি বন্ধ করা হবে। ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি, সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।

’ আরো সহজ এবং মন ও ভোটজয়ী ভাষায় নির্বাচনী অভিযানে প্রার্থী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দশ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবো। সেটা সম্ভব না হবার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলেন যে আদৌ তিনি সেই রকম কোনো প্রতিশ্রুতি দেন নি। কিন্তু তার এই মিথ্যা কথন তুলে ধরেন বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান পল্টনে এক জনসমাবেশে ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে। ক্ষমতায় না থেকেও ক্লিনটন তার দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য ১৪ দফা প্ল্যান দিয়েছেন। আর মুহিত ক্ষমতায় থেকে গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১১-তে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সরকারি সাপ্লিমেন্টে তার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন।

তার ধ্যান ধারণায় বাংলাদেশের বিপন্ন ভোক্তা বা কনজিউমাররা আশ্বস্ত হতে পারেনি। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলেও... ২০১১-তে মূল্য বৃদ্ধির একটি ছবি দৈনিক সমকাল (২৭.১২.২০১১) (প্রকাশক এ কে আজাদ যিনি এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সভাপতি) তুলে ধরেছে। তাতে দেখা যায় জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে দাম বেড়েছে : আইটেম খুচরা দাম বৃদ্ধির পরিমাণ চাল (সরু) ৫০-৫৫ কেজি প্রতি ৫ তেল ৯৬-১১১ কেজি প্রতি ১৬ চিনি ৫৭-৬৮ কেজি প্রতি ১১ বিদ্যুৎ ইউনিট প্রতি গড় ২১% সিএনজি ১৬-৩০ ঘনফুট প্রতি ১৪ অকটেন ৭৭-৮৯ লিটার প্রতি ১২ পেট্রল ৭৪-৮৬ লিটার প্রতি ১২ ডিজেল ৪৪-৫৬ লিটার প্রতি ১২ দৈনিক প্রথম আলোর রিপোর্টের মতে (২৬.১২.২০১১) সয়াবিন তেলের দাম হয়েছে ১২৩ থেকে ১২৬ টাকা। গত এক বছরে পাচ দফায় জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। এর প্রতিক্রিয়ায় পরিবহন খাতে খরচ বাড়ার ফলে শিগগিরই বিভিন্ন ভোগ্য পণ্যের দামসহ বাড়ি ও বাহন ভাড়া আরো বাড়বে সেটা নিশ্চিত।

এখানে মনে করা যেতে পারে যে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে যাবার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিকে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮-এ দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার অব্যাহতভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ধারায় ফিরে যায়। সেপ্টেম্বর ২০১১-তে বিশ্ব বাজারে যখন তেলের দাম আরো এক দফা কমে যায় তার পরেই বাংলাদেশে তেলের দাম আরো এক দফা বাড়ানো হয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ‘জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ালে ইতিমধ্যেই টাকার মূল্যমান কমে যাওয়া, সরকারের রাজস্ব আয়ের অপর্যাপ্ততা ও সরকারের ঋণগ্রস্ততার ফলে সংকটাপন্ন অর্থনীতির অবস্থা আরো খারাপ হবে। ... মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান প্রায় ১০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।

পাশাপাশি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য চলতি অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় ২০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। ’ এত বিশাল ভর্তুকি দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় জানিয়ে তথ্যবিবরণীতে বলা হয়, ‘এ অবস্থায় জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে হলে এ খাতে সরকারকে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হবে, যা সরকারের বর্তমান আয় থেকে সঙ্কুলান করা অসম্ভব। এ পরিমাণ ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হলে অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় ব্যয়সহ উন্নয়ন ব্যয় কমাতে হবে, যা কাম্য নয়। অন্য দিকে ব্যাংকিং খাতে সরকারের ঋণগ্রহণ অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। ’ অগ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এই ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য এবং অগ্রহণযোগ্য।

এই ব্যাখ্যার বিপরীতে ভোটাররা পাল্টা অনেক প্রশ্ন তুলতে পারে। যেমন, কেন টাকার মূল্যমান কমে গেল? কেন সরকারের রাজস্ব আয় অপর্যাপ্ত হলো? কেন সরকার ঋণগ্রস্ত হলো? কেন অর্থনীতি সংকটাপন্ন হলো? এরপর ভোটাররা প্রশ্ন তুলতে পারে কেন ইলেকশন ম্যানিফেস্টো প্রকাশের সময়ে আওয়ামী লীগ এসব বোঝেনি বা বলেনি? ফাইনালি ভোটাররা প্রশ্ন তুলতে পারে এই অবুঝ সরকার কেন এখনো ক্ষমতায় আছে? এই সরকার নিজেদের অক্ষমতা, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা স্বীকার করে নিয়ে কেন পদত্যাগ করছে না? মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর মতে নভেম্বর ২০১১-তে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১২ শতাংশ ছুয়েছে যা গত দেড় দশকের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। ১৯ ডিসেম্বর ২০১১-তে মুহিত স্বীকার করতে বাধ্য হন ‘শুধু বিশ্বে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে বলেই বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি হয়নি। দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু কারণেই মূল্যস্ফীতি হয়েছে। ’ কিন্তু ‘বিশ্বে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে’, এই তথ্যটি কি সঠিক? ১৩ ডিসেম্বর ২০১১-তে বিবিসি থেকে জানানো হয় বৃটেনে নভেম্বরে কনজিউমার প্রাইসেস ইনডেক্স (সিপিআই) আগের মাসের ৫% থেকে কমে ৪.৮% হয়েছে।

২৮ ডিসেম্বর ২০১১-তে ইনফ্লেশন ডেটা ডট কম-এ জানানো হয়, আমেরিকাতে ২০১১-র মে থেকে অক্টোবরে এই ছয় মাসে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৩.৬৫ এবং সেটা নভেম্বরে কমে হয়েছে ৩.৩৯%। বস্তুত পশ্চিমি বিশ্বের চলমান মন্দাবস্থায় বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রীরা নিয়তই চেষ্টা করছেন মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে এবং তাদের অনেকেই সফল হয়েছেন। ইউকে এবং ইউএসএ-র সর্বশেষ পরিসংখ্যান দুটি এর প্রমাণ। কিন্তু বিদেশে যাই হোক না কেন দেশের মানুষ সেটা শুনতে আগ্রহী নয়। তারা শাদামাটা ভাবে বোঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম, বাড়ি ও বাহন ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে এবং আরো বাড়বে।

এরা ভাষার মারপ্যাচ বোঝে না। এরা পরিসংখ্যানের জটিলতা বোঝে না। অনিয়ন্ত্রিতভাবে দাম বেড়ে যাবার ফলে এদের সংসার বিপর্যস্ত, স্বপ্ন বিধ্বস্ত, জীবন বিপন্ন। সাধারণ মানুষের কাছে দৈনন্দিন বাস্তবতা হলো বাজারের দাম দুঃস্বপ্ন, বাড়ি ও বাহন ভাড়া দুঃসহ। তারা মর্মে মর্মে বুঝছে বর্তমান সময় একটি সুদীর্ঘ দুঃসময়।

তারা বোঝে ১২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মানে তাদের সঞ্চয় এবং আয় প্রকৃত অর্থে ১২ শতাংশ কমে গিয়েছে। দেশের টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থার আরো কয়েকটি অনাকাক্সিক্ষত চিহ্ন হলো : এক. ডলারের দাম বেড়েছে। ২০১০-এ এই সময়ে প্রতি ডলারের দাম ৭০ টাকা ছিল। এক বছর পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এটি হয়েছে প্রায় ৮০ টাকা। অর্থাৎ, ডলারের বিপরীতে এক বছরে টাকার দাম কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ।

খোলা বাজারে ডলার এখন ৮৩ টাকা হবার রিপোর্ট এসেছে। দুই. রাজধানীর কিছু এটিএমে বা ক্যাশ বুথে ক্যাশ টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। তিন. কিছু ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ক্যাশ টাকা দিতে পারছে না। ‘ব্যাংকে টাকার হাহাকার’ শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। চার. সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন চারটি ব্যাংক, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা বিপুল পরিমাণে আমানত সরিয়ে ফেলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, এ বছরের জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে বিপুল পরিমাণ আমানত হারায় এই ব্যাংকগুলো। এ সময়ের মধ্যে সোনালী ব্যাংক থেকে গ্রাহকেরা ৫৭৩ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। জনতা ব্যাংক থেকে তুলেছেন ৯৯০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৭০৬ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংক থেকে গ্রাহকেরা তুলে নিয়েছেন ছয় কোটি ৩১ লাখ টাকা। অর্থাৎ, আমানতকারীরা সরকারি ব্যাংকের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় সরকারি ব্যাংকে আমানতকারীদের কম হারে সুদ দেয়া হয় বলে এমনটা ঘটেছে।

পাচ. ইনডিয়াতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ছাপতে দেওয়া প্রাথমিক স্তরের ৮০ লাখ (অপর একটি সূত্র মতে ২৫ লাখ) কপি বই নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে পৃন্টিং বিল পরিশোধ করতে না পারায় এবং বন্দরের শুল্ক পরিশোধ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় আশংকা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে দেশের বহু উপজেলায় শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যবই পৌছাবে না। সংকটে জর্জরিত ব্যাংকিং সিসটেম ডলার সংকট ও তারল্য সংকটে জর্জরিত দেশের গোটা ব্যাংকিং সিসটেম ২০১১-তে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছে। এক. দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশে ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে শংকা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জনৈক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর ক্রমান্বয়ে চাপ বাড়ছে।

সামনে এ চাপ আরো বাড়বে। যে হারে আমদানি দায় বাড়ছে সে হারে ডলারের সরবরাহ বাড়ছে না। তিনি জানান, চলতি মাসে বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানির জন্য পরিশোধ করতে হবে ৫০ কোটি ডলার। এর বাইরে পামঅলিন ও গম আমদানি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ, পেট্রোবাংলা থেকে বিদেশী তেল-গ্যাস অনুসন্ধানী কম্পানি শেভরনের পাওনা ও বিসিআইসির সার আমদানি দায় পরিশোধ করতে হবে।

অপর দিকে কয়েকটি ব্যাংকের বকেয়া আমদানি দায় পরিশোধ করতে হবে। সব মিলে চলতি মাসে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হবে অন্য মাসের তুলনায় বেশি, কিন্তু সে হারে ডলারের সরবরাহ বাড়বে না। আর সরবরাহ না বাড়লে রিজার্ভ থেকে পরিশোধ করতে হবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৮০০ কোটি ডলারে নেমে আসতে পারে। সাধারণত একটি দেশের ইমার্জেন্সি খরচ মেটাতে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করার মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকতে হয়।

বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে সোয়া তিন বিলিয়ন ডলার করে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। সে হিসাবে তিন মাসে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ রাখতে হয়। দাতা সংস্থা আইএমএফ সব সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক হাজার কোটি বা ১০ বিলিয়ন ডলার রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছে। কিন্তু ১ ডিসেম্বর ২০১১-তে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯৩০ কোটি ডলারে নেমে যায়। এখন আশঙ্কা হচ্ছে, সামনে রিজার্ভ ৮০০ কোটি ডলারে নেমে আসবে।

দুই. রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক চারটির পরিচালনায় অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তীব্র মত বিরোধিতা চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, ‘... পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরো বেশি নজরদারি প্রয়োজন... এই ব্যাংকগুলোকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো আক্ষরিক অর্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতায় নিতে হবে। ’ প্রতিধ্বনি তুলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

তাদের সম্পদ ও দায় এবং পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা সবক্ষেত্রেই দুর্বলতাগুলোও আরো স্পষ্ট হয়েছে। অনভিজ্ঞদের হস্তক্ষেপে এবং চাপের মধ্যে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ... ব্যাংকগুলোকে স্বাধীনভাবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও শক্ত হতে হবে। শুধু চিঠি দিয়ে দায়সারা গোছের দায়িত্ব পালনে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

’ এদের এসব বক্তব্য অরণ্যে রোদনের মতোই হবে। কারণ সরকার এই ব্যাংকগুলোকে তার রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে ব্যবহার করতে চায়। তিন. চারটি সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একটি সরকারি কৃষি ব্যাংক রাজনৈতিক লক্ষ্যে ব্যবহার করেও রাজনীতি সামাল দিতে পারছে না। তাই ২০১১-তে অর্থ মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক বিবেচনায় আরো দশটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চারটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।

বাকি ছয়টির সম্পর্কে আরো আলোচনার দরকার আছে বলা হয়েছে পরিচালনা পর্ষদে। নিচে চার্টে দেখুন কোন আমলে কয়টি ব্যাংকের অনুমোদন হয়েছে। কোন আমলে কয়টি ব্যাংকের অনুমোদন সাল শাসন ক্ষমতায় যারা অনুমোদিত নতুন ব্যাংকের সংখ্যা ১৯৮২-১৯৯০ এরশাদের আমল ৯টি ১৯৯১-১৯৯৬ বিএনপি ৮টি ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ ১৩টি ২০০১-২০০৬ বিএনপি (চারদলীয় জোট) লাইসেন্স দেয়া হয়নি ২০০৬-২০০৮ তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাইসেন্স দেয়া হয়নি মোট বেসরকারি ব্যাংক সংখ্যা ৩০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিদেশী ব্যাংক ১৮টি মোট ব্যাংক সংখ্যা ৪৮টি রাজনৈতিক বিবেচনায় আরো ব্যাংক বর্তমানে দেশের ১৭টি ব্যাংক ঝুকির মধ্যে থাকা সত্ত্বেও মহাজোট সরকার নতুন আরো দশটি ব্যাংকের অনুমোদন কেন দিতে চাইছে? অন্তত এ ক্ষেত্রে এই সরকার সত্য কথা বলেছে। বলা হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায় আরো নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিতে হবে। জানা গেছে বর্তমান সরকারের আমলে বিশটি আবেদন জমা পড়েছে।

সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন: http://shafikrehman.com/home/details/116 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।