আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমএলএম ব্যবসা নিষিদ্ধ

kamrul hasan সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০১২ দ্রুত ধনী হওয়ার লোভ দেখিয়ে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা করার দিন শেষ। এখন আর মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে কাউকে প্রতারণা করা যাবে না। বহুস্তর বিপণন (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং), পিরামিড সদৃশ বিক্রয় কার্যক্রম, নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, টেলি মার্কেটিং, ডোর টু ডোর এবং মেইল অর্ডার সেল বিক্রয় কার্যক্রমের মতো কোন অবস্তুগত বা অলীক পণ্য বিক্রি করা যাবে না। আইনের কোন ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। তবে এমএলএমে শুধু বস্তুগত পণ্য বিক্রি করা যাবে এবং এসব পণ্যে মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

এ মোড়কে আবার পণ্যের উৎপাদক, পরিমাপ, ওজন, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আজ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে ডাইরেক্ট সেল আইন-২০১২। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা আইনের এ খসড়ায় ১৩টি অধ্যায়, ৫০টি ধারা ও দুইটি তফসিল রয়েছে। ডাইরেক্ট সেল আইন-২০১২ এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কিছু না থাকলে এই আইনে অস্থাবর বাণিজ্যিক সামগ্রী বলতে স্থানান্তরযোগ্য এমন পণ্য বা দ্রব্য বা সম্পদ বা সেবা বুঝাবে যার ইজারা, স্বত্ব বা মালিকানা হস্তান্তরযোগ্য এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ এর অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া ই-মার্কেটিং বলতে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত পণ্য বা সেবার কেনা-বেচা কার্যক্রমকে বলা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের পঞ্চম অধ্যায়ে ২১ ক্ষেত্রে ডাইরেক্ট সেল ব্যবসা নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অবস্তুগত বা অলীক পণ্য এবং সময়ের ধারাবাহিকতা বা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিপণনযোগ্য হবে এমন পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে ডাইরেক্ট সেল ব্যবসা নিষিদ্ধ। এছাড়া স্থাবর সম্পত্তি (জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান বা অফিস স্পেস, গাছ), সমবায় পদ্ধতিতে খামার বা সমিতি বা ব্যবসা এবং ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানি, শেয়ার বা ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয়, সকল প্রকার সঞ্চয় পত্র, বোনাস স্কিম, কিস্তির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ বা সঞ্চয় বা বিলি বণ্টনের ক্ষেত্রেও ডাইরেক্ট সেল ব্যবসা নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে লটারির টিকিট, প্লাটিনাম, স্বর্ণ, ব্রোঞ্জ, পারদ, ধাতব মুদ্রা, আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য, উগ্র মৌলবাদী বই, ফিল্ম, সিডি, ভিসিডি, অশ্লীল ছবির ফিল্ম, সিডি বা ভিসিডিসহ আরও কিছু পণ্য ডাইরেক্ট সেলের মাধ্যমে বিক্রয় করা নিষিদ্ধ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে ভারত, চীন, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এমএলএম ব্যবসা পরিচালনার সুনির্দিষ্ট আইন বা নীতিমালা রয়েছে।

বাংলাদেশে তা নেই। অথচ এ ধরনের ব্যবসা বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়ছে। এতে বলা হয়েছে, যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর (রেজসকো) থেকে নিবন্ধন নিয়ে এবং এমনকি নিবন্ধন ছাড়াও অনেকে এমএলএম ব্যবসা করছে। এগুলোয় কোন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে তারা হয়রানি ও প্রতারণা করছে জনগণের সঙ্গে।

অনেক কোম্পানি গচ্ছিত অর্থ আত্মসাৎ করেও মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। এ অবস্থায় এমএলএম ব্যবসাকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা জরুরি। খসড়ায় বলা হয়েছে, ১০ বছর আগে ১৬টি থাকলেও ২০১০ সাল নাগাদ ৭০টি কোম্পানি এমএলএম রেজসকোতে নিবন্ধিত। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রেজসকো বর্তমানে নিবন্ধন বন্ধ রেখেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে এমএলএমের নামে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, সমবায় সমিতি, পর্যটন ও হলিডে প্যাকেজ, আবাসন ও বনায়নের পাশাপাশি ভেষজ ও হারবাল, কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এবং গৃহস্থালি ও নিত্য ব্যবহার্য পণ্য কেনাবেচা হচ্ছে।

এ পদ্ধতির ইতিবাচক দিক হচ্ছে- বিপুল পরিমাণ মানুষের কমিশন হিসাবে আয়ের সুযোগ। আর নেতিবাচক দিক হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি, অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা ইত্যাদি। শুধু আইন প্রণয়ন নয়, এ আইনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে একটি পরিদপ্তর করা হবে, যা ‘ডাইরেক্ট সেল নিয়ন্ত্রণ পরিদপ্তর’ নামে অভিহিত হবে। পরিদপ্তরের একজন নিয়ন্ত্রক থাকবেন, যিনি হবেন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব ও ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে- ডাইরেক্ট সেল বা সরাসরি বিক্রয় কার্যক্রমের লাইসেন্স দেয়া, লাইসেন্সের কার্যকারিতা স্থগিত, বাতিল ও পুনর্বহাল করা; ক্রেতা, ক্রেতা পরিবেশক ও ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্য প্রতিরোধ এবং তা লঙ্ঘনের অভিযোগ নিষ্পত্তি; অপরাধ সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনা ইত্যাদি।

আইন পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ বর্তমানে যেসব কোম্পানি ডাইরেক্ট সেল ব্যবসায় জড়িত, তাদের আইন জারির ৯০ দিনের মধ্যে নিবন্ধকের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।