আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিডিআর এখন চৌকিদার, সেদিন কি ঘটেছিল দলকুইয়া সীমান্তে ? ঐতিহ্য কি হারাতে বসেছে বিজিবি ?

ঐতিহ্যবাহী বিডিআর বিজিবিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর এখন তাদের সেই ঐতিহ্য হারাতে বসেছে, জনমনে এ ধারণা জন্মেছে। সিলেটের পদুয়া কুড়িগ্রামের রৌমারীর মতো বহু গৌরবদীপ্ত ইতিহাসের উত্তরাধিকারী বিজিবির সদস্যরা আজ বিএসএফ তো বটেই ভারতীয় চোরাকারবারীদের হাতেও লাঞ্ছিত হচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে। সেদিন কুমিল্লার ঘটনার মধ্য দিয়েও এ বিষয়টি সকলের সামনে উঠে এসেছে। গত শুক্রবার কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের দলকুইয়া সীমান্তে কি ঘটেছিল ? কি কারণে বিজিবি সদস্যরা গুলী চালাতে বাধ্য হয়েছিল- সরেজমিন অনুসন্ধানে তা বের হয়ে এসেছে। পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য।

শাহ আলমের মতো এক চোরাকারবারীর দলকে বাধা দিতে গিয়েই বিজিবি হামলার মুখে পড়ে। ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় সশস্ত্র জনতা এক বিজিবি সদস্যকে। অবশ্য অনেক দেন-দরবারের ২০ ঘণ্টা পর ধরে নিয়ে যাওয়া বিজিবি সদস্যকে রক্তাক্ত ও মারাত্মক আহত অবস্থায় ফেরত দেয় বিএসএফ। তাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে পিলখানাস্থ বিজিবির সদর হাসপাতালে। বাংলাদেশ রাইফেলস-বিডিআর একটি ঐতিহ্যবাহী দুঃসাহসিক প্রতিষ্ঠান।

২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের জের ধরে বিজিবিতে পরিণত হয় বিডিআর। দু'শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী বিডিআরের ঝুড়িতে আছে অনেক সাফল্য গাথা। কিন্তু সেই ঐতিহ্যবাহী এবং সাফল্যমন্ডিত বিজিবি কি আজ তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এমন প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে জনমনে। বিজিবি কেন আজ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ, ভারতীয় চোরাকারবারীদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে ? এমন প্রশ্নও জনমনে দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে বিডিআর ২০০১ সালে সিলেটের পিয়াইন নদীর বক্ষে অপদখলীয় পদুয়া গ্রাম পুনরুদ্ধার করে, একই বছর কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে বিএসএফের তান্ডব প্রতিহত করে সেই বিডিআর থেকে রূপান্তরিত বিজিবি কি এই ? দু'শ বছর ধরে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবির ওপর ভারতীয় চোরাকারবারীদের এমন হামলা ? সেদিন কি বিজিবির সদস্যরা শৌর্য বীর্যের অধিকারী ছিল না ? সীমান্তে বারবার গর্জে ওঠা বাহিনীর সেদিন কেন এমন হাল ছিল।

কেন তারা সেদিন গর্জে উঠতে পারেনি, এসবের উত্তর আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। জনগণের ধারণা বর্তমানে অনুসৃত নীতির কারণেই সেদিন বিজিবি গর্জে উঠতে পারেনি। যা ঘটেছিল দলকুইয়া সীমান্তে গত শুক্রবার কুমিল্লার দলকুইয়া সীমান্তে কি ঘটেছিল তার খোঁজ খবর নিতে গিয়েই বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয়রা জানান, ভারতের শাহ আলম (৩৫) মাদকের গডফাদার। সে ওই এলাকার মাদক সম্রাট।

গত শুক্রবার সকাল পৌনে ৭ টার দিকে শাহ আলম তার সঙ্গীদের নিয়ে দুই কার্টুন ফেন্সিডিল বহন করছিল। দুই কার্টুন ফেন্সিডিল নিয়ে তারা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল যখন, তখনই বাংলদেশ সীমান্তে চারজন বিজিবি সদস্য টহল দিচ্ছিলো। টহল দল বিষয়টি টের পেয়ে তাদেরকে ধরতে গেলে দু'কার্টুন ভর্তি ফেন্সিডিল ফেলে শাহ আলমের নেতৃত্বে চোরাকারবারীরা পালিয়ে যায়। বিজিবির সদস্যরা ফেন্সিডিলগুলো উদ্ধার করে তাদের ক্যাম্পে ফেরার সময় পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র চোরাকারবারীর দল পেছন থেকে বিজিবির সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। হামলার জবাব দিতে গিয়ে বিজিবির সদস্যরা ছয় রাউন্ড গুলী ছোঁড়ে।

এ সময় শাহ আলম গুলীবিদ্ধ হয়। শাহ আলম গুলীবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তার স্ত্রী ও স্বজনদের নেতৃত্বে তাদের সঙ্গী-সাথীরা বিজিবি সদস্যদের ওপর একযোগে হামলা চালায়। তারা লাঠিসোটা, দা, ছেনি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিজিবি সদস্যদের ধাওয়া করে। এ সময় তিন বিজিবি সদস্য প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও হাবিলদার লুৎফর রহমান (৫৫) মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় ভারতের পুকুর গ্রামের কিছু মানুষ লুৎফর রহমানকে জিরো পয়েন্টের বাংলাদেশ অংশে এসে ধরে নিয়ে যায়।

তারা তাকে এ সময় বেধড়ক পেটায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা হালিবদার লুৎফরের মুখে রক্ত দেখেছেন। তারা ধারণা করছেন, লুৎফরের সামনের দাঁত ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। মাথা ও সারা শরীরে আঘাত করা হয়েছে। এদিকে ভারতীয় লোকজন গুলীবিদ্ধ শাহ আলমকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে।

ুগ্রামের লোকদের হাত থেকে বিজিবির হাবিলদার লুৎফরকে মারাত্মক আহত অবস্থায় বিএসএফ সদস্যরা উদ্ধার করে তাদের স্থানীয় ক্যাম্পে নিয়ে যায়। অপহৃত লুৎফরকে উদ্ধার করতে শুক্রবার দুপুর ২০৮৮ নম্বর মেইন পিলারের কাছে বিজিবি-বিএসএফ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পর্যায়ের আড়াই ঘণ্টার পতাকা বৈঠক সমঝোতায় পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। পরে গভীর রাত তিনটার দিকে বি-বাড়িয়ার আখাউড়া আইসিপিতে বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের কাছে লুৎফরকে ফেরত দেয় বিএসএফ। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বিশেষ ব্যবস্থায় বিজিবির পিলখানাস্থ সদর দফতর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.