আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দৈশিক জাতীয়তাবাদ ও বৈশ্বিক উম্মাহ-চেতনা

৪  জাতীয়তার তর্কিত উপাদান নিগ্রো বললে আমরা এমন জাতির লোক বুঝি, যাদের গায়ের রঙ ডেকচির তলার মতো কুচকুচে কালো। যাদের গায়ের রঙ শ্বেত অর্থাৎ সাদা, তাদেরকে বলি শ্বেতাঙ্গ। এখানে তফাত তৈরি করা হয়েছে গায়ের রঙ দেখে। শুধু গায়ের রঙ কালো বলে শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদেরকে শত শত বছর ধরে নির্যাতন করে আসছে। গাত্রবর্ণ দিয়ে মানুষকে দু’ ভাগে ভাগ করে তৈরি এই জাতীয়তার ইতিহাস কেবলই অত্যাচারের ইতিহাস।

আমাদের জানা অতীতের মধ্যে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ সা. প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই অন্যায় রুখে দাঁড়ালেন প্রবলভাবে, স্থূল গাত্রবর্ণের অমানবিক ভেদরেখা তিনি মুছে দিতে সক্ষম হলেন। কৃষ্ণাঙ্গ বিলালকে সম্মানিত করে তিনি মনুষ্যত্বের মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। ইসলামের এই মহৎ শিক্ষার আলো ক্রমে ধর্মনির্বিশেষে মুসলিম জাহান ছাড়িয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে পৃথিবীময়। ফলে কমে আসছে বর্ণবাদ। এ উত্তরণের আধুনিক প্রান্তে এসে অবশেষে একজন কৃষ্ণাঙ্গ আজ মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি একজন কালো পুরুষ ও এক সাদা নারীর শঙ্কর সন্তান।

এভাবে, ইংরেজ জাতি বলে আমরা সেই জাতিকে বুঝাই, যারা ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। এখানে জাতি গঠনের উপাদান হয়েছে ভাষা। হয়েছে মানে ধরে নেয়া হয়েছে, যদিও তা প্রকৃত অর্থে পৃথক কোনো জাতি বুঝায় না। বুঝায় ইংরেজিভাষী জনগোষ্ঠি। তাত্ত্বিকভাবে ভাষা দিয়ে জাতিগঠনের চেষ্টা ব্যর্থ চেষ্টা এবং যৌক্তিক ভুল।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জন্মসূত্রে এই ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার গর্বিত মালিক। কিন্তু তত্ত্ব হিসেবে আমরা এ জাতীয়তা মানি না। কারণ স্রেফ ভাষার একতা অনেককে এক করে ধরে রাখতে পারে না। কীভাবে -- উদাহরণ দিই। জয় গোস্বামী কলকাতাবাসী।

আমার মতো তিনিও বাংলায় লেখেন, বাংলা বলেন। ভাষার ঐক্যে আমরা দু’জনই এক, বাঙালি। ভাষার এই মিল মান্য বটে, তবে এই মিল দিয়েই সাময়িক জনমিল ঘটলেও স্থায়ী মনোমিলের যুক্তি মেলে না। ভাষা এক বলেই তাই তাঁকে আমার জাতীয় ভাই, বন্ধু বা আপনজন বলে মেনে নিতে পারি না, যদিও মানুষ হিসেবে তিনি আমার কাছের এবং সেটি অন্য বিবেচনা। তাঁকে স্বজাতীয় স্বীকার করতে না-পারার কারণ অনেক।

আমরা একে অপরের কাছে যেতে পাসপোর্ট লাগবে। রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে খেতে বসে আমি যদি গোমাংসের অর্ডার দিই, তাহলে গোস্বামী টেবিল ছেড়ে উঠে গিয়ে বেসিনে হড়হড় করে বমি করবেন। তিনি আমাকে হুইস্কি অফার করলে আমি আস্তাগফিরুল্লাহ বলে মুখ ফিরিয়ে নেবো। এভাবে চলাফেরা, নৈতিকতা, বোধ-বিশ্বাস সবকিছুতেই আমরা দু’জন দুই মেরুর। আমাদের মুখের ভাষায় মিল, কিন্তু বুকের ভাষায় মিল নেই।

সম্পর্ক মূলত হৃদয়ঘটিত বলে, মুখের মিলে শেষ পর্যন্ত জীবনে জীবন মেলানো যায় না। বৈপরিত্যটা অন্তর্গত, আর ঐক্য বাইরের। ভেতর-বাহিরের দ্বন্দ্বে ভেতরে ভেতরে আমরা বন্ধ হয়ে থাকি। সহাবস্থান তাই সহবোধ দেয় না। এ আড়ষ্টতা নিয়ে হৃদ্যতা গড়ে ওঠা কি সহজ? কীভাবে আমি ও তিনি জাতি-বিবেচনায় এক হবো? একটু আগে যে- রাজনৈতিক দলটির উদাহরণ দিলাম, তারা চোখ-কান বন্ধ করে ‘বাঙালি বাঙালি’ বলে চিৎকার করেই যাচ্ছে।

দুনিয়াজুড়ে ভারতের নাগরিককে ভারতীয়, রাশিয়ার রুশ, ইংল্যান্ডের ইংলিশ, মিশরের মিশরি, পাকিস্তানের নাগরিককে পাকিস্তানি বলা হচ্ছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের মুখে কখনোই ‘বাংলাদেশি’ শব্দটি শোনা যায় না। কারণ ‘তালাক’ বললে যেমন স্ত্রীবিয়োগ ঘটে, তেমনি বাংলাদেশি বললে আওয়ামী লীগত্ব নষ্ট হয়। জাতীয়তা নির্ণয়ের তৃতীয় উপাদান জমির চৌহদ্দি, অর্থাৎ ভৌগোলিক সীমানা। এ নিয়ে বেশি কিছু বলবার নেই। কারণ জমি মেপে মানুষের প্রকৃতি-বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করবার চেষ্টা ধানগাছ চিরে তক্তা বানাবার মতোই হাস্যকর।

যে- ভূমিতে ভূমিষ্ঠ হয়েছি, সে যদি হয় জন্মভূমি, আর জন্মভূমি হবার কারণেই বিশেষ ভূমির প্রতি আমার যদি বিশেষ টান বোধ করবার কথা থাকে, তবে তো আঁতুড়ঘরের ওই স্থানটুকু বড়ই সঙ্কীর্ণ! এইটুকুন জায়গাকে দর্শন ‘দেশ’ বলতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান তা মানবে না। সে তর্ক আপাতত থাক, আশু ঝামেলা হলো, আমি কেন আমার কয়েক বর্গ ফুটের জন্মস্থানকে না বুঝিয়ে ‘জন্মভূমি’ বলে কয়েক হাজার বর্গ মাইল বুঝাচ্ছি? কোন্ কারণের আকর্ষণে ক্ষুদ্র ভূ-টুকরো মাইল মাইল ছড়িয়ে গেলো? কারণ কোনো একটা আছে। সেটাই দরকার। কারণ ওই কারণটা দিয়ে একইভাবে আমি আমার হাজার মাইল আয়তনের জন্মদেশের সীমানাকে পৃথিবীর প্রান্তসীমা অবধি ছড়িয়ে নেবো। ঠিক তখন আরো চমৎকার একটা কারণের জন্ম হবে, যার সাহায্যে আমি চমৎকৃত হয়ে আবিষ্কার করবো যে, আমার জন্মদেশটা আসলে বিশ্বদেশ, আর আমি একজন বিশ্বনাগরিক।

বস্তুত, বিশ্বাস ও জীবনধারার দুস্তর দূরত্ব নিয়ে শারীরিকভাবে কেউ কাছে থাকলেই বা নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখার ভেতরে অবস্থান করলেই সে আমার সঙ্গে একই জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, এ কোনো যুক্তির কথা নয় বরং নিছক আবেগ। এ আবেগ বাস্তবতা উপেক্ষা করে নিজের দেশকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দেশ বলে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে এবং দেশ ও জাতির প্রতি বিদ্বেষ সঞ্চার করে। কবি বলেছিলেন, আপনাকে বড় বলে বড় সেই নয়। কিন্তু নিজেকে বড় ও গৌরবান্বিত ভাবার মধ্যে যে এক ভীষণ রকম স্বাদ আছে, তা সবাই জানে বলে কাউকে বলতে হয় না। জাতীয়তাবাদীরা সেরা জাতি, তাদের নিজের দেশ ‘সকল দেশের সেরা’।

হিটলার এটা খুব চমৎকার বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জার্মান রক্ত হলো পৃথিবীর সবচে’ অভিজাত রক্ত। চেম্বারলেনের কথায়, যা-কিছু ভালো তা অবশ্যই জার্মান, অ-জার্মান মানেই খারাপ। কপালে খারাপি ছিলো জার্মানদের, তাই খারাপদের হাতে খুব খারাপভাবেই তারা মার খেয়েছিলো। ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ আসলে দৈশিক অহংবোধ।

সাম্রাজ্যবাদীরা আরবদের মাথার ভেতর এই অহমিকা ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। ফলে তারা ভাবলো, ইসলামের জন্ম হলো আমাদের দেশে, ইসলামের নবী-কিতাব আমাদের ভাষায়, অথচ ইসলামী খিলাফাতের কেন্দ্র আরবের বাইরে অনারব কনস্ট্যান্টিনোপলে, এটা তো অপমানজনক। তারা তাদের জাতীয়তাবাদ নিয়ে হামলা করলো উসমানী খিলাফাতে, খিলাফাত গেলো ভেঙে। সেই সঙ্গে আদর্শবাদী মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের শক্তিও খানখান হয়ে গেলো। সাম্রাজ্যবাদীরা চেপে বসতে লাগলো মুসলিম দেশগুলোর ঘাড়ের ওপর।

আমাদের দেশেও আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ আমদানি হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এ নিয়ে গর্বের সঙ্গে রাজনীতি করছে। কিন্তু আসল কথা হলো, নাগরিকত্ব বা রাষ্ট্রীয় পরিচয় আর জাতীয়তা আদৌ এক জিনিস নয়। মতি মিয়া রতনপুর গ্রামে বাস করেন – এখানে রতনপুর যেমন তাঁর গ্রামের ঠিকানা; তেমনি তিনি বাংলাদেশে বসবাস করেন, এর অর্থ হলো বাংলাদেশ তাঁর রাষ্ট্রীয় ঠিকানা। মতি মিয়া বিদেশ গেলে এই ঠিকানা কাজে লাগবে। দেশে যেহেতু বিদেশিরা বেড়াতে বা কাজ করতে আসে, তাই মাঝেমধ্যে দেশেও তাঁকে বলতে বা লিখতে হতে পারে যে তিনি একজন বাংলাদেশি।

এই দেশীয় পরিচয় আর স্বকীয় জাতীয়তা এক জিনিস নয়। সাধারণ বুদ্ধিতেই দু’য়ের পার্থক্য বুঝা যায়। কিন্তু অসৎ রাজনীতিবিদরা দলীয় সুবিধা নিতে সহজ সরল জনগণকে ভুল বুঝাতে চেষ্টা করেন। তাঁরা জনগণের স্বকীয় সংস্কৃতি, গৌরবময় ঐতিহ্য, পররাষ্ট্রের নিগ্রহের প্রতিশোধ, দেশপ্রেম ইত্যাদি ক্ষুদ্র আঞ্চলিক আবেগকে উস্কে দিয়ে দেশীয় পরিচয়ই মানুষের মৌলিক পরিচয় এমন ধারণা জনমানসে প্রতিষ্ঠা করতে চান। এ চেষ্টা অতীতে যেমন ছিলো, আজও আছে।

ভারতে হিন্দু কর্তৃক নির্যাতিত সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্যে নিরাপদ ও স্বায়ত্তশাসিত পৃথক ভূখণ্ডের দাবিতে স্বাধীন পাকিস্তান আন্দোলনের সময় মুসলিম জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রবলভাবে এই চেষ্টা শুরু হয়েছিলো। সে দেশে ১৮৮৫ ঈসায়ীতে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থরক্ষার লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকারেরই সরাসরি উদ্যোগে অ্যালান অকটেভিয়ান হিউমের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় সর্বভারতীয় কংগ্রেস, যা পরে দু’টি ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। একটি ধারা ছিলো যথারীতি ব্রিটিশ সমর্থক। অন্যটি ছিলো উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা লালা লাজপৎ রাই-এর অধীনে – গোঁড়া, সাম্প্রদায়িক, মুসলিমবিদ্বেষী এবং ভারতকে নিরঙ্কুশ রামরাজ্য বানানোর যুদ্ধে শপথবদ্ধ। অতএব কোনো দিক থেকেই ভারতের নির্যাতিত সংখ্যালঘু মুসলিমদের জাতীয় অস্তিত্ব ও স্বার্থের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনো সুসম্পর্ক থাকার কথা ছিলো না।

কিন্তু অতি কৌশলে এ দলটি ইসলামী খিলাফা ও মুসলিম উম্মাহ্-চেতনায় উজ্জীবিত স্বাধীনতাকামী মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে সমর্থ হয় (পরে অবশ্য অসৎ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে ব্যর্থ হয়, সেটি এখানে আলোচ্য নয়) এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে কতিপয় মুসলিম রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃস্থানীয় লোক এদের চক্রান্তের শিকার হয়ে হিন্দু-মুসলিম মিলনের ফাঁকা বুলি আওড়াতে শুরু করেন। সঙ্কীর্ণ আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের দূষিত ধারণাকে ইসলামীকরণ করবার চেষ্টা করেন। তাঁরা বলেন: কোনো জনগোষ্ঠীর জাতীয়তা নির্ণয়ের মাপকাঠি ধর্ম নয় বরং ভৌগোলিক সীমারেখা। তাই ভারতের হিন্দু-মুসলিম ধর্ম-সংস্কৃতিনির্বিশেষে আমরা সবাই এক জাতি। তাঁরা এ ধারণার নাম দেন ‘মুত্তাহিদা ক্বাওমিয়্যাত’ বা ‘একজাতিতত্ত্ব’।

পরিস্থিতির প্রয়োজনে অমুসলিমদের সঙ্গে মুসলিমদের সাময়িক রাজনৈতিক চুক্তির কথা আর হিন্দু-মুসলিম মিলে একই জাতিসত্তা গঠনের কথা এক কথা নয়। এ দ্বিতীয় কথাটি নিয়েই আমাদের কথকতা। কেননা তা সরাসরি কুরআন-হাদীসবিরোধী, তবু খামাখাই কেউ কেউ এসব স্পষ্ট জাহিলি জাতীয়তা-আঞ্চলিকতার ফ্যাসাদকে ইসলামসিদ্ধ প্রমাণ করতে চেষ্টা করছেন। অথচ কুরআন বলছে, বংশীয় আভিজাত্য, গোত্রপ্রীতি, ভাষাগত বিভক্তি, আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ – এ সবই যুলম। হাদীসের ভাষায় এগুলো জাহিলিয়্যাত।

তাত্ত্বিক আলিমদের মতে শয়তানি চিন্তা। সাম্প্রতিক আলিম লেখক সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী জাতীয়তাবাদকে ‘জাহিলি যুগের ভ্রান্ত ধর্ম’-এর সঙ্গে তুলনা করে জাতীয়তাবাদীদেরকে সে ধর্মের ‘পূজারী’ বলে মন্তব্য করেছেন। মাফ করবেন, অনিচ্ছাসত্ত্বেও এ উদ্ধৃতিটুকু: “এই উদার প্রগতির যুগেও এমন অনেক ধর্মের সাক্ষাত মেলে যেসব ধর্মের আকীদা-বিশ্বাস ও শিক্ষামালা খুবই হাস্যকর যা তার অনুসারীদের নির্বোধ ও চেতনাহীন পশুর মত জোয়ালে বেঁধে রেখেছে এবং তাদেরকে নিজেদের বুদ্ধি-বিবেচনা ও চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করার অনুমতি দেয় না। এরপর এমন কিছু ধর্ম ও বিধি-ব্যবস্থাও আছে যেগুলো ধর্ম নামে কথিত হবার উপযোগী নয় বটে, কিন্তু আপন নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতার আওতায়, স্বীয় অপরিসীম শক্তি ও সরকারের মধ্যে এবং আপন অনুসারীদের অন্ধ আনুগত্য ও ভক্তির আবেগাতিশয্যে প্রাচীন ধর্মগুলো থেকে কোনক্রমেই কম নয়। এগুলো সেইসব রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক দর্শন যেগুলোর ওপর আজকে মানুষ ঠিক তেমনি বিশ্বাস পোষণ করছে যেমনটি আগে বিভিন্ন ধর্ম ও জীবনদর্শনের ওপর পোষণ করতো।

এগুলো হচ্ছে এ যুগের জাতীয়তাবাদ, ভৌগোলিক ও আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজবাদ বা সমাজতন্ত্র সমূহবাদ ইত্যাদি। এসব নতুন ধর্ম নিজেদের একচোখা নীতি, সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও হৃদয়হীনতার ক্ষেত্রে প্রাচীন জাহিলী যুগের বিভিন্ন ধর্ম ও মাযহাবের চাইতেও এক ডিগ্রী বেশি। ” ——— আবুল হাসান আলী নদভী; ‘মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?’; মুহাম্মদ ব্রাদার্স, ঢাকা; ২০০৪; পৃষ্ঠা ৩১৫। আমাদের আলোচিত তিনটি ছাড়া জাতীয়তা নির্ধারণের উপাদান হিসেবে নৃতাত্ত্বিক গঠন ও ব্যবহারিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের কথাও উল্লেখ করা হয়ে থাকে, তবে তা আলোচনার পূর্ণতার উদ্দেশ্যেই। আদতে এ দু’টো বিবেচ্য হিসেবে অপেক্ষাকৃত অধিকতর বিস্তৃত ও জটিল এবং গুরুত্বের দিক থেকে গৌণ।

তাই আমরা এখন ফিরে যাবো আলোচনার মূলে এবং দেখবো জাতীয়তার উপাদান হিসেবে কুরআন কোন্ মৌলিক বিষয় ও বৈশিষ্ট্য স্থির করেছে, তাঁর অনুসারীদের কাছে এ সংক্রান্ত চিন্তার কী নীতি ও পদ্ধতি উপস্থাপন করেছে এবং রাসূল সা. তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী সাহাবী ও তাঁর প্রিয় উম্মাহকে কী শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।