আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোন এক অনিন্দিতার গল্প! (২য় পর্ব)

স্বপ্নরা ডানা মেলুক ইচ্ছে মত ..নীল আকাশে. প্রথম পর্বের লিন্ক। Click This Link সেদিন প্রিতম সন্ধ্যার শীতল সমীরন নামার আগ পর্যন্ত অপেক্ষাই করে গেল কিন্তু পায়েল এল না! বেশ কবার ফোন করার চেষ্টা করেছে প্রিতম। লাভ হলো না। ফোন সুইচ অফ! কিছুটা রাগে...কিছুটা অভিমানে ফুলগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে চলে গেল ফিরে..রাতে আর পায়েলকে ফোন দিল না..অনলাইন ও হলো না প্রিতম। প্রচন্ড রকমের মন খারাপ তার! সে ভাবতেই পারে নি যে পায়েল এমন কোনো কান্ড করবে!..কেন যেন মনে হচ্ছিল পায়েল এমন করতে পারে না...ভাবছিল একবার ফোন করে জানা উচিত কি হয়েছে তার.." এত বার ফোন দিলাম..তখন যখন ধরল না এখন আর কি ধরবে!" নিজের মনে মনে ভেবেই আবার ফোন দিল প্রিতম।

রিং হচ্ছে অপর প্রান্তে... :হ্যালো? :তুমি এত্তক্ষন কোথায় ছিলে? কোনো খবর নেই! আমি তোমার জন্য কত্তক্ষন দারিয়ে ছিলাম সে খবর রাখো? কি হইছে তোমার পায়েল?? : ওহ। এম। জি। আমি তো একদম ভুলে গেছি!!!! সরি সরি!! মনেই ছিল না যে তুমি এমন ঝড়-বাদলের দিনে স্কুলে আসবা! : নাহ! তেমন কিছু না। এর চেয়ে বেশি কিছু প্রিতম বলতে পারে নি।

অভিমান গুলো যেন পেট থেকে শুরু হয়ে বুক দিয়ে উঠে গলা পর্যন্ত গিয়ে ঠোটের ঠিক আগায় গিয়ে আটকে রইল। মুখ দিয়ে আর বেরোল না! পায়েল জানতেও পারলো না কোন এক জন অধীর আগ্রহ নিয়ে তার জন্য পথ চেয়ে বসে ছিল। এর পর প্রিতম মনে মনে ঠিক করলো যতক্ষন না পর্যন্ত সে পায়েলের দিক থেকে কোন সারা পাচ্ছে ..নিজ থেকে কিছু বলবে না সে। "কি এমন ঠেকা পরেছে! সে যদি না বোঝে তো আমিও কিছু বলবো না!" প্রিতম ঠিক করলো এখন থেকে একটু দুরে দুরে থাকবে সে পায়েলের। হয়তো একটু হলেও তখন অনুভব করবে প্রিতমের প্রয়োজন।

সেই আশায় প্রিতম প্রতিদিন ফোন করা বন্ধ করলো। আর ফোনের দিকে তাকিয়ে আশায় থাকলো হয়তো পায়েল নিজে থেকেই কল করবে..কিন্তু হায়..অপেক্ষার প্রহর যে আর শেষ হয় না। ওদিকে অনিন্দিতার যেন কোন খেয়াল ই নেই প্রিতমের এত অনুরাগের দিকে..খানিকটা যেন বেখায়ালী চারপাশটা নিয়ে...জীবনকে নিয়ে পায়েল কখনো খুব সিরিয়সলি ভাবেনি..যখন যা হবার দেখা যাবে..এমন মন মানসিকতা আর সদা হাস্যজ্জল মেয়েটির জীবনে সামনে কি ঝড় আসছে তার টের হয়ত এখনো পায়নি সে। কারো জন্য ভাবতে ভালো লাগে না পায়েলের..হয়তো তেমন করে কেউ এখনো ভাবতে শিখায়নি তাকে..ভালোবাসার বিরোধী সে নয়। খানিকটা উদাসীন বলা যায়।

..হঠাৎ প্রচন্ড বৃষ্টি। পায়েল সেদিন অন্য কিছু না ভেবেই একা একা সেই বৃষ্টি তে ভিজছিল..খালি রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাটা পায়েলের সব সময়ের সখ! কোন জায়গায় কোন শুনশান রাস্তা যদি থাকে তো পায়েল তার ঠিক মাঝখানটা দিয়ে হাটা শুরু করে। এই ঝড় বৃষ্টির মদ্ধে এমন শুন্য একটা রাস্তা দেখে পায়েল নিজেকে সামলাতে পারে নি। দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টি স্নান করছিল শুন্য সে রাজপথে! এতটায় মগ্ন ছিল যে পেছন দিক দিয়ে লাল রঙের র‌্যাংলার টা শো শো করে আসছিল সেটা সে টের ও পায় নি। সেই কখন থেকে ড্রাইভারটা পায়েলের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

কিন্তু বাপ্পার "আজ বৃষ্টি নামুক" গানের বদৌলতে তাও গেল না। শেষে ঠিক পায়েলের সামনে এসে ব্রেক কষা লাগলো তার! গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টির মধ্যে বেরোতে বাধ্য হল শান্ত। :এই মেয়ে! চোখ-কান নেই!! রাস্তার মাঝখানে দারিয়ে এসব কি হচ্ছে! (রাগে হিশিসিয়ে উঠছিল শান্ত। আজকে বোর্ড মিটিং! সময় মত যেতে হবে! প্রেজেন্টেশন আছে। কি ঝামেলা!) ..পায়েলের তার পর ও কোন খেয়াল নেই! কানে হেড ফোন, চোখ বন্ধ আর বৃষ্টির এত সুন্দর মিষ্টি মধুর অনুভূতি! শান্ত এতক্ষন পেছন থেকে কথা বলছিল।

কোন জবাব না পেয়ে আস্তে আস্তে মেয়েটার সামনে গিয়ে দারালো। আর সামনে গিয়ে কোন কথা বেরোলো না শান্তর মুখ দিয়ে। অপলক চোখে চেয়ে রইল সামনে দারানো মেয়েটির মুখের দিকে! কি অদ্ভূত এক ভালোলাগা। আর পবিত্রতায় ঘেরা যেন মেয়েটির চারপাশ। শান্তর মনে হলো সে কোন দিবা স্বপ্ন দেখছে...যেখানে তার স্বপ্নের রানী তার সামনে দারিয়ে আছে।

পাথর হয়ে দারিয়ে রইলো..বৃষ্টির ছপ ছপ শব্দ ছারা কিছুই কানে যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই চোখ খুললো পায়েল। চেয়ে দেখল ঠিক তার সামনে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে কেউ একজন! কিছুটা বিব্রত আর বিরক্ত চোখে বললো..(কে আপনি? কি চাই?) বাস্তবে ফিরে এল যেন শান্ত!! :কি চাই মানে! বুঝতে পারছেন না কি চাই?? : কি বুঝব! আমি তো আপনাকে চিনিও না! বুঝবো কিভাবে?? : চারদিকে তাকিয়ে দেখেন মহারানী! তাহলেই বুঝবেন! এটাকে কি নিজের রাজত্বের রাজপথ পেয়েছেন যে যকজন খুশি এভাবে বন্ধ করে বসে থাকবেন?? (এতক্ষনে পায়েলের মনে পড়ল সে কোথায় দারিয়ে আছে) : ওহ! সরি! এই কথা! বললেই তো হয়! আজব! আমি কি আপনার মন পড়তে পারি নাকি যে মুখ দেখেই বুঝে যাব আপনি কি চান?? ওকে সরছি! যান। ভাগেন। যত্তসব! :কি মেয়েরে বাবা!(মনে মনে বির বির করলো শান্ত) ...................................................................................................... তার পর দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিল শান্ত।

যত তারাতারি সম্ভব অফিসে পৌছে সোজা কনফারেন্স রুমে...সবাই অপেক্ষা করছে তার জন্য! যাই হোক ঠিক ঠাক প্রেজেন্টেশটা দিল কিন্তু যা হবার তা তো হয়েই গেছে! সারা ক্ষন পিসির স্ক্রীনে শুধু একটাই চেহারা ভেসে উঠছে! কি যে করবে সে! কে এই মেয়ে! কি নাম? কোথাই থাকে? ভাবতে ভাবতেই দিন গেল শান্তর। বুঝতে পারলো যে করেই হোক খুজে পেতে হবে তার রাজপথের মহারানী কে!! ---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------- শান্ত যেন ঠিক তার নামের উল্টোটি। বেশ চন্ঞল প্রকৃতির। একবার যা মনে ধরে .সে যাই হোক না কেন নিজের সে করে নিবেই। "না" শব্দটি শান্তর অভিধানে নেই.. প্রচন্ড স্বপ্নবিলাসী,কনফিডেন্ট,হাসি-খুশি আর চঞল এই ছেলেটি প্রিতমের ঠিক উলটো।

মনের কথা সে খুব কম ই ধরে রাখতে পারে..তার একটাই ফিলোসফি "জীবনে চলার পথে যদি কখনো সেই একজন স্পেশাল মানুষের দেখা পাও..তবে তাকে যে করেই হোক, ধরে রেখ! যেতে দিও না। " শান্ত মাত্র গত সেমিস্টার এই গ্রাজুয়েশন করে বেরিয়েছে। ভার্সিটি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই এই মাল্টিন্যাশনাল কম্পানীতে জয়েন করেছে। ভালো কাজ। ভালো কো-ওয়ার্কার।

এখানে কাজ করতে বেশ লাগে শান্তর! সবাই এখানে যেন এক পরিরাবের মত! খুব দ্রুত সবাই কে খুব আপন করে নিয়েছে সে। কিন্তু তার-পর ও বন্ধু আড্ডা আর ভার্সিটির হারিয়ে যাওয়া সেই মিষ্টি মধুর দিন গুলো খুব মিস করে শান্ত! কাজের পাশাপাশি গান লেখা আর এখানকার লোকাল একটা রেডিওতে আর জে এর কাজ ও করে শান্ত। নিজেকে সব সময় ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করে সে। রেডিওতে কাজ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত অনেক মেয়ে শান্তর প্রেমে পড়েছে। কারন টা হয়তো তার মন ভুলানো কন্ঠ আর সুন্দর করে কথা বলার ধরন! অবশ্য এ নিয়ে এক ধরনের গর্বও তার মধ্য কাজ করে।

সে জানে সে শ্রেস্ঠ্য। সে এও জানে আশেপাশের মেয়েরা তাকে নিয়ে কথা বলে..কিন্তু শান্ত যেন এখনো ঐ একজন স্পেশালের জন্যই অপেক্ষা করে আছে! যাকে দেখলে চারপাশের সব কিছু স্থির হয়ে যাবে.যাকে বলে .LOVE AT FIRST SIGHT! শান্ত এখনো পর্যন্ত সেই "FIRST SIGHT" এর অপেক্ষাতে ছিল। আজ কেন যেন তার মনে হচ্ছে এই তো সে যার জন্য সে এতটা কাল অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছিল। কিন্তু হায়! কে সে? কোথায় খুজে পাব তাকে??? আকাশ মেঘে ঘেরা... হাসি দিয়ে পাল-তুলে.. অসীমে এই ছোট্ট তরী ঢেউ ভেঙে ছুটে চলে খুব ধীরে কিনারা ঘেসে আনমনে বসে থাকি একি মুখ বারে বারে সাদা ক্যানভাসের আঁচোলে রং তুলির মাঝে আঁকি। আর ভেবে যাই, কে তুমি? কোন সে পথের রাজরানী।

(চলবে...) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।