আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রধান প্রধান সমস্যা ও সমাধানের উপায় - ৪

মানুষের সাধ্যেরে বাইরে কিছুই নেই, যদি তার নির্ভেজাল বোধগম্যতা থেকে থাকে। পর্ব - ৩ এর পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যার সমাধান সমূহ ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করছে প্রতিনিয়ত, কিন্তু বর্তমানে যে ব্যাধিটি সংগ্রামের মাত্রা তীব্রতর করছে তা হল দুর্নীতি। দুর্নীতির মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা আজ ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। পরপর তিনবার নির্লজ্জ জাতি হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সর্বশেষ টিআই রিপোর্টে আমাদের অর্জন ত্রয়োদশ স্থান। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমাদের অবস্থান বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

খুব সহজেই অনুমেয়, কর্মের ফলস্বরূপ আমাদের এই কীর্তি অর্জন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য- একটি দেশের কাণ্ডারির ভূমিকায় এদেরকেই অবতীর্ণ হতে হয়। শুধু দরকার যোগ্য, সৎ, দেশপ্রেমিক দক্ষ নেতা- যে জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় (দক্ষ নেতৃত্ব) সকল কালিমা দূর করে দেশকে এনে দিবে থালা ভরা সম্মান। এছাড়াও আগামী প্রজন্মকে হতে হবে দক্ষ ও দেশপ্রেমিক। এক্ষেত্রে দরকার শুধু সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা।

একটি জাতির মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে শিক্ষার (সাক্ষরতা) হার উন্নত হতে হয় তা অনেক আগেই প্রমাণিত হয়েছে। এ প্রয়োজনীয়তা থেকে প্রত্যেকটি দেশ শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে এটিই স্বাভাবিক। আমাদের দেশেও এই ধারাটি প্রচলিত। ধারাটি প্রচলিত হলেও এর ফল কতটুকু তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ থাকলেও একেবারেই যে উন্নতি হচ্ছে না তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কতটুকু? দুর্নীতির মহোৎসব শিক্ষা খাতকে এমনভাবে আকড়ে ধরেছে যে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে শিক্ষা খাতের অবস্থান বিগত বছরগুলোতে প্রথম হলেও বর্তমানে তৃতীয়।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কমিটি-উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। উচ্চবিদ্যালয়সমূহে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী সংযোজিত হবে। নিম্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একীভূত করা হবে, তারপর ক্রমান্বয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই যে পরিবর্তন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এবং উচ্চবিদ্যালয়সমূহকে একাদশ-দ্বাদশ, তারপর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর কলেজগুলোতেও পরিবর্তন। প্রায় ৭০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৫ হাজার উচ্চমাধ্যমিক এবং দুই হাজার কলেজে ভৌত অবকাঠামোর পরিবর্তন ও উন্নয়ন নিঃসন্দেহে আমাদের দুর্বল অর্থনীতির জন্য সুকঠিন কাজ।

এখানে সম্পদের যে অপচয় হবে, তাও ভেবে দেখার বিষয়। আমরা জানি যে কোনো উন্নয়ন বাজেটের সদ্ব্যবহার করাও সহজ নয়—সকল স্তরেই লাইন লস হবে। আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে স্থাপিত ভৌত অবকাঠামোর শতভাগ ব্যবহার আমাদের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে যে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, এতে নিঃসন্দেহে অনেক সমস্যারও সৃষ্টি হবে। যেমন উচ্চবিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষক ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণীতে পড়াতেন, তাঁদের কী হবে; কলেজে যাঁরা উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে শিক্ষকতা করতেন, তাঁদের কীভাবে ব্যবহার করা যাবে।

ভৌত অবকাঠামো, গবেষণাগার, তার ব্যবহার কীভাবে নিশ্চিত হবে? এসব জটিলতার দিকে না গিয়ে বরং বিদ্যালয়সমূহে যেসব শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে, তা-ই রাখা হোক। বরং শিক্ষানীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সমৃদ্ধি ঘটানো হোক গ্রন্থাগার কিংবা পরীক্ষাগারে, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত উন্নয়নে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে। শিক্ষার যথাযথ পদ্ধতি ব্যবহার ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যয়কে মনে রেখে প্রতিটি পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সারা দেশের ছাত্রছাত্রীদের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা উচিত। পাঠ্যপুস্তকের মানে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে ভাবার কোনো কারণ নেই। ভালো ভালো পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে আমাদের বিনিয়োগ ঘটানো অত্যন্ত জরুরি।

এখনো সরকারি স্কুল-কলেজে পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এরও অবসান চাই। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শিক্ষায় বড় বিনিয়োগ ঘটাতে পারব না। আমাদের তরুণ ছেলেমেয়েদের অফুরন্ত প্রাণশক্তিকে শিক্ষা ও দক্ষতার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য শিক্ষার সকল পর্যায়ে অলিম্পিয়াডের মতো প্রতিযোগিতা চালু করা উচিত। যেকোনো বিষয়ে উৎকর্ষ অর্জনের জন্য প্রতিযোগিতার থেকে অধিক ব্যয়সাশ্রয়ী কোনো পদ্ধতি নেই।

সুতরাং আমাদের তরুণদের প্রাণশক্তিকে ব্যবহারের জন্য, সুপ্তশক্তিকে জাগ্রত করতে জনপ্রিয় প্রতিযোগিতার আয়োজন ও তার বহুল প্রচারে সারা দেশের মানুষকে আগ্রহী করা উচিত। মুখস্থনির্ভর পরীক্ষার ফলে আমাদের ছেলেমেয়েদের সৃজনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে, এ কথাটি প্রায় সবাই বিশ্বাস করে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং তার মূল্যায়নকে খুব গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান গড়া যেতে পারে, যা সারা বছর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মূল্যায়ন নিয়ে গবেষণা করবে। প্রতিবছরই ছাত্রদের সৃজনশীল প্রশ্ন ও সমস্যা দিয়ে তাদের সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করবে।

বিগত কয়েক বছর বোর্ড কর্তৃক এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যে ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। ৭০-৮০ হাজার ছাত্র যদি পারফেক্ট জিপিএ নিয়ে পাস করে তার অর্থ হলো ৭০-৮০ হাজার ছাত্রের মধ্যে জ্ঞানের ব্যবধান বর্তমান মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ণয় করতে পারে না। ছাত্রদের প্রাণশক্তি অফুরন্ত আরও কঠিন সমস্যা দিয়ে তাদের চ্যালেঞ্জ করতে হবে। নিশ্চয়ই সেসব সমস্যাও তারা সমাধান করতে পারবে। বোর্ডের পরীক্ষার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি অত্যন্ত জরুরি।

ভারতে টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ এই দায়িত্ব পালন করছে। আমাদেরও অনুরূপ প্রতিষ্ঠান গড়া দরকার। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা চলিত শিক্ষা পদ্ধতিতে গ্রামে ও শহরে বসবাসরত গরীব জনগোষ্ঠির ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসতে চায় না , কারণ স্কুলে সনাতন পদ্ধতিতে সামান্য লেখাপড়া করে তারা পায় না কোন চাকুরী, পারেনা অন্য কোন উপার্জন কারী কাজ করতে। অযথা কয়েক বৎসর সময় তাদের কাছ থেকে চলে যায় তখন তারা নিজের জীবন নিয়ে নিজেরা বেসামাল হয়ে পড়ে। গরীব পিতা-মাতা তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে অস্থির হয়ে যায়।

স্কুল পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষার প্রচলন হলে গরীব জনগোষ্ঠির ছেলে মেয়েরা স্বতস্ফূর্তভাবে স্কুলে আসবে পড়া লেখার পাশাপাশি কারিগরি কাজ শিখবে ও আত্মকর্মসংস্থানের দিকে নিজেকে নিয়োগ করবে। শিক্ষার ব্যাপকতার বিস্তারের ফলাফল হিসেবে নিম্মবিত্ত জনগোষ্ঠির মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা ও হ্রাস পাবে। প্রচলিত শিক্ষায় পাস পাওয়াদেরকে অনেকে সংবর্ধনা দেয়, পুরস্কার দেয়া হয়। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কিন্তু যারা রেজাল্ট খারাপ করেছে বা পাশ করতে পারেনি সেই বৃহৎ অংশের মঙ্গলের জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, ঝরে পড়া বা অনগ্রসর বিপুল ছাত্রছাত্রী পরিবারের কাছে হয়ে পড়ে বোঝার মত।

অবহেলিত এই বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী একসময় সমাজের অন্ধকার জগতের দিকে পা বাড়ায়। নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সমাজের শান্তিশৃংখলার বিঘ্ন ঘটায়। অথচ এই ঝরে পড়া, পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের কোন বৃত্তিমূলক ট্রেনিং বা কারিগরি শিক্ষাথাকলে তারা নিজেদের পছন্দমত পেশা বেছে নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারতো। বৃহৎ জনগোষ্ঠিকে দক্ষ জনগোষ্ঠি হিসেবে গড়ে তোলা প্রথাগত শিক্ষা কেবল শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই বাড়াচ্ছে।

যদি আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে আমার বিশ্বাস দেশে স্কুলগামী কোনো ছেলেমেয়েই বেকার থাকবে না। যারা ভালো রেজাল্ট করবে তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার পথ উম্মুক্ত কিন্তু যারা পিছিয়ে পড়ে বা পড়া লেখায় অনগ্রসর তাদেরকে কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনগোষ্ঠি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তাই আমাদের দেশের স্কুল/মাদ্রাসাগুলোতে প্রচলিত পাঠ্যসূচির পাশাপাশি ৭ম শ্রেনী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত বৃত্তিমূলক বিভিন্ন ট্রেড চালু করা আবশ্যক। আমাদের সমাজে যে ক্ষেত্রে দক্ষ জনগোষ্ঠি দরকার প্রচলিত শিক্ষা সেরকম দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারছে না। যার ফলে শিতি /অর্ধশিতি বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষকে বিকশিত করা, দক্ষ মানব সম্পদে রুপান্তরিত করা। কিন্তু প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা তা করতে অনেকাংশে অসফল। আমার বিশ্বাস ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণীতে বৃত্তিমূলক ট্রেড,ও কারিগরি শিক্ষা চালু করলে এদেশে একজন ছেলে-মেয়েও বেকার থাকবেনা এবং স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত সকল ছেলে-মেয়ে স্বেচ্ছায় স্কুলে যাবে। এর জন্য বাড়তি কোনো খরচেরও প্রয়োজন হবে না। হেডমাস্টার, দায়িত্ববান শিক, শিক্ষানুরাগী, বিদ্যোৎসাহীদের সহযোগীতায় প্রতিটি মাধ্যমিক স্কুলে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা প্রচলন করা সম্ভব।

৭ম থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত টেকনিক্যাল শিক্ষার ব্যবস্থা করা অধিক যুক্তিযুক্ত হবে। কেননা- *শিক্ষার অধিক বিস্তারের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হিসেবে জনসংখ্যা অত্যাধিক বৃদ্ধির হার ও কমানো সম্ভব। * অশিক্ষিত লোককে সামান্য নগদ ঋণ বিতরণ না করে তাকে কারিগরি শিক্ষা প্রদান করলে সে নিজে নিজের কর্মসংস্থান করে নিতে পারবে। * কারিগরি শিক্ষা স্কুল পর্যায়ে প্রদান করলে তারা সহজে যেমন বেকারত্বের হাত থেকে মুক্তি পাবে তেমনি দেশে বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থান হবে। * বিদেশে যাওয়ার সময় মধ্যসত্বভোগীদের হাতে পড়ে, অশিক্ষিত ও অদক্ষ লোক যেমন প্রতারিত হচ্ছে তেমনি বিদেশ থেকে সর্বস্ব হারিয়ে ফেরত আসছে।

কারিগরী শিক্ষা তা রোধে অবদান রাখবে। যে ভাবে ইলেকট্রনিক পণ্য বাংলাদেশের সকল গ্রামে গঞ্জে ব্যবহার হচ্ছে, উক্ত পণ্যগুলি গ্রামে নষ্ট হলে মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক কারিগর নেই। এ শিক্ষা প্রচলনের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়েও কর্মসংস্থান সম্ভব হবে। রোধ হবে শহর মুখী জনস্রোত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির উর্ধ্বে রাখা রাজণীতি শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার পরিবেশকে করেছে কুলশিত।

শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার ভিত্তিটি নড়বড়ে করে দেয়, শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতি। কত মেধাবী প্রাণ ঝড়ে যায় অসময়ে আর রাজনীতির কালো থাবার কারণন। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র শিক্ষক উভয়েই রাজনীতির পথে তাদের বিচরণ অভ্যাহত রাখছে। তাতে করে দেশের শিক্ষার মান, মর্যাদা, উন্নয়ন, পরিকল্পনা সব কিছুই হারিয়ে যায়। সরকার ইচ্ছা করলেই দেশের শিক্ষাঙ্গণ থেকে রাজনীতির ভয়াল বিচরণ বন্ধ করতে পারেন।

তাতে শিক্ষার গুণগত মান পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো কিছুটা হলেও উন্নতি করা সম্ভব হবে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ বা কন্ট্রোল ছাত্র রাজনীতির পক্ষে যারা যুক্তি দেখাচ্ছেন, তারা আরো বলছেন - ছাত্র রাজনীতির কারনেই সম্ভব হয়েছিল ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নীল নক্সা প্রতিরোধ করা। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে সফলতা অর্জন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ। ১৯৯১ সালে স্বৈরাচার সরকারের উৎখাত ঘটানো, ইত্যাদি।

কিন্তু বাস্তবে ঐ দিনগুলোর ছাত্র রাজনীতি দলীয় রাজনীতির বিষাক্ত ছোয়ায় বিষাক্ত ছিলনা। ঐ দিনগুলোতে ছাত্র রাজনীতি ছিল জাতীয় ছাত্র রাজনীতি। যা ছিল ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে জাতীয় এবং জীবন মরনের সাথে সর্ম্পকিত। যা ছিল বিবেকের ধ্বংশনের প্রতিক্রিয়া বা প্রতিফলন। আর তাই বর্তমানের দলীয় ছাত্র রাজনীতির চেয়ে অতীতের জাতীয় ছাত্র রাজনীতির ভুমিকা ছিল খুবই জুড়ালো এবং সফলতার উজ্জ্বল্যে ভাস্বর ও চিরস্মরনীয়।

বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি মানেই হল দখল, টেন্ডার চিন্তাই, দলীয় সংঘাত, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি। কাজেই পবিত্র ছাত্র রাজনীতিকে দলীয় সংঘাতের বা ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি দিয়ে আর কলংকিত করা যায় না। কেউ কেউ আরো বলছেন, ছাত্রদের লেখা-পড়ার পাশাপশি রাজনীতিও তাদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু আমরা বলব দলীয় রাজনীতির নামে বর্তমান ধারায় প্রচলিত ছাত্র রাজনীতি কখনও ছাত্রদের মৌলিক অধিকার হতে পারে না। ছাত্রদের মৌলিক অধিকার রাজনীতি।

এ ক্ষেত্রে অর্থাৎ এই ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্র হতে পারে, যেমন- লেখা পড়ার সঙ্গে জড়তি সকল কিছু সুষ্ঠু ও সঠিক ভাবে ছাত্র ছাত্রীদরে প্রাপ্য নশ্চিতি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অগ্রণী ভুমিকা পালন করা। জাতীয় ইস্যুতে, যেমন - সবার জন্য খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের সমস্যা দূরীকরণে সরকারকে সহযোগীতা প্রদানের মাধ্যমে সকল নাগরিকের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করা। ছাত্র রাজনীতি হবে সুশৃংখল। যা হতে পারে তার লেখা পড়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমধানের অন্যতম হাতিয়ার। ছাত্র রাজনীতি হবে জাতীর ক্রান্তি লগ্নে এক অনন্য সত্ত্বা যার কোন বিকল্প নাই।

অতীতে জাতীর ক্রান্তি লগ্নে ছাত্র রাজনীতি ছিল উল্লেখ যোগ্য ভাবে প্রশংসনীয়। ছাত্র রাজনীতির সেই ঐতিহ্যগত সুনাম ও সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ফিরে পেতে দলীয় রাজনীতি নামের ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। বর্তমান প্রজন্মকে সুস্থ ও সুন্দর শিক্ষার পরিবেশ উপহার দিতে হলে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কোন বিকল্প নাই। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্ব-মূল্যায়ন সম্প্রতি দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর স্ব-মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সরকার। বাংলাদেশে এ ধরনের মূল্যায়ন নতুন হলেও বিশ্বব্যাপি বেশ পুরনো।

এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পিটার রাড এবং ডেভোরা ডেভিস’ নামে দুই ভদ্রলোকের গবেষণা প্রকাশ হয় ২০০০ সালে। তারা মূল্যায়নের শুরু হিসেবে ১৯৯০ সালকে আবিষ্কার করেছেন। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়ন। উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে শিক্ষার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (local education authority) কর্তৃক এ মূল্যায়ন পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশে শিক্ষার এরকম স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নেই বলে কেন্দ্রীয়ভাবে এই মূল্যায়ন করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর-এর সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এসইএসডিপি) আওতায় ১৭ হাজার ৮৭৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে এ মূল্যায়ন হয়। ব্যানবেইজের সর্বশেষ ২০০৯-এর তথ্যানুসারে বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯ হাজার ৮৩। মূল্যায়ন বিষয়ে বিস্তর আলোচনার সুবিধার্থে মূল বিষয়গুলো জানা যাক। ‘১৪ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষামান উন্নত’ শিরোনামে ১০ অক্টোবর পত্রিকাগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যা বলছে ‘পারফরম্যান্স বেজড ম্যানেজমেন্ট (পিবিএম)’ পদ্ধতিতে বিদ্যালয়গুলোর মান যাচাই এবং ক্রমোন্নতি পরিমাপের জন্য সাতটি সূচকের অধীনে মোট ৪৫টি উপ-সূচকের ভিত্তিতে এ মূল্যায়ন করা হয় ।

প্রাথমিকেও হতে হবে স্ব-মূল্যায়ন স্ব-মূল্যায়ন প্রাথমিক শিক্ষায়ও দরকার। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে না হলেও এ শিক্ষার অবস্থা দেখার জন্য মূল্যায়ন আবশ্যক। বিশেষ করে কতটা শোচনীয় অবস্থা আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার তা স্ব-মূল্যায়ন ছাড়া পরিমাপ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা ৮১ হাজার ৫০৮ টি (ব্যনবেইজ ২০০৯)। এর মধ্যে সরকারি ৩৭ হাজার ৬৭২টি।

রাষ্ট্র যেহেতু প্রাথমিকের দায়িত্ব নিয়েছে, তা কতটা ঠিক মতো হচ্ছে তার জন্য গবেষণার, মূল্যায়নের আবশ্যকতা রয়েছে। আমাদের এরকম ভালো ভালো উদ্যোগ খুব কম নেয়া হচ্ছে তা নয়, কিন্তু সকল উদ্যোগই ভেস্তে যায় বা সফলতার মুখ দেখতে পারে না সরকারের গাফলতি, দুর্নীতি, অদক্ষতা ইত্যাদি নানা কারণে। যে অভিযোগটা এ মূল্যায়নকেও ছাড়েনি। ভবিষ্যতে মাধ্যমিকের মত প্রাথমিক স্তরেও স্বচ্ছভাবে এ মূল্যায়ন হবে, এ আশা সবাই করতেই পারে। উৎপাদন ও কর্মমুখী কারিকুলামেই অগ্রগতি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে সম্প্রতি।

কৃতকার্য ছেলেমেয়েদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ_ প্রত্যাশিত বিষয় ও পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আশ্বাস দিয়েছেন, সারাদেশে কলেজগুলোর যে ধারণ ক্ষমতা আছে তাতে আসন সংকট হবে না; তবে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হবে। আমরাও ধরে নিচ্ছি, কৃতকার্য শিক্ষার্থীরা কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে। তবে দেখা যাবে_ যে ডাক্তারি পড়তে চাইছে তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইছে তাকে হয়তো পদার্থ বা রসায়ন বিজ্ঞানে ভর্তি হতে হবে। এমনকি ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা আছে, এমন শিক্ষার্থীকে হয়তো ইতিহাস বা সাহিত্যে পড়তে হবে।

এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নিজস্ব পছন্দ বা প্রত্যাশার মূল্য সামান্যই। এটি শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক অদ্ভুত নিয়ম চালু করেছে। সেটি হলো অনুষদ বা ফ্যাকাল্টিই নম্বর অনুসারে শিক্ষার্থীর জন্য বিষয় ঠিক করে দিচ্ছে। হয়তো একজন শিক্ষার্থী ইংরেজি সাহিত্যে পড়তে চাইল, কিন্তু বাস্তবে তাকে পালি কিংবা ইতিহাসে পড়তে হয়।

নম্বরই এখানে মুখ্য। এই নম্বরের কারণে বিজ্ঞান ফ্যাকাল্টির কোনো ছাত্রকে কলা কিংবা সোশ্যাল সায়েন্সে আসতে হচ্ছে। পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এই হকিকত জানেন না তাদের মনে হতে পারে, অধিক মাত্রায় পরিকল্পিত ব্যবস্থার কারণে এটি হচ্ছে। কিন্তু আসল সত্য হচ্ছে, এখানে শিক্ষার সঙ্গে কর্মযোগের বিষয়টি একেবারেই গৌণ। সাহিত্য বা বিজ্ঞানে ডিগ্রি নিয়ে ব্যাংকের হিসাবরক্ষক হতে হয়েছে, এমন উদাহরণ অনেক।

অথচ এ কাজের জন্য প্রয়োজন ছিল হিসাববিজ্ঞানের ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা। একইভাবে নাট্যতত্ত্ব বা সঙ্গীতের ডিগ্রিধারীদের শিল্পকলা একাডেমী বা সংশ্লিষ্ট পেশায় চাকরি হচ্ছে না। পুরাতত্ত্ব বিভাগের ছাত্রদের পুরাতত্ত্ব অধিদফতর বা জাদুঘরগুলোতে চাকরি হচ্ছে না। কাউকে কাউকে এমবিবিএস পাস করে ম্যাজিস্ট্রেট হতে দেখেছি। মানুষের পেশা পরিবর্তনের অধিকার আছে।

কিন্তু শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পেশায় কাজ করার মধ্য দিয়ে যে অধিকতর যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখা সম্ভব, অন্য বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের দিয়ে সে কাজ করানো দুরূহ। শিক্ষাঙ্গনের অভিজ্ঞতা অনুসারে পেশা চয়নের সুযোগ নেই। এ কারণে সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে এক ধরনের হাতুড়েপনা। এ হাতুড়েপনায় আমাদের জাতীয় উন্নয়নের ধারা হচ্ছে বাধাগ্রস্ত, কর্মশক্তির হচ্ছে অপচয়। মাদ্রাসা শিক্ষা প্রয়োজন আমূল পরিবর্তন বাংলাদেশের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

নিজেদের রাষ্ট্র পরিচালনা, রাষ্ট্রের উন্নয়ন, জাতির কল্যাণ ও আত্ম নির্ভরশীলতা অর্জনের দায় দায়িত্ব নিজেদের উপর। নিজেদের জাতিকে উন্নত করে গড়ে তোলা এবং বিশ্বের দরবারে নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব নিজেদের। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। এখানকার শতকরা পঁচাশিভাব নাগরিক মুসলাম। এখানকার মানুষ অত্যন্ত ইসলাম প্রিয়, আল্লাহভক্ত ও ধর্মভীরু।

অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ পিছে পড়ে আছে। জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের সম্পদ কম। আমাদের জনশক্তিকে সম্পদে পরিণত করার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মুসলিম হিসেবে আমাদের আছে গৌরবান্বিত ইতিহাস। আছে মহান ঐতিহ্য।

এক উন্নত অনুপম ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধিকারী জাতি আমরা। আমাদের আছে একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আমাদের কাছে আছে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন দর্শন ও জীবন বিধান। আমাদের জীবন দর্শন ও জীবন বিধান সম্পূর্ণ নির্ভুল। পৃথিবীর অন্য কোনো জাতির কাছে নির্ভুল জীবন বিধান নেই।

সারা বিশ্বে আমাদের সোয়াশো কোটি মুসলমান ভাই আছে। তারা আমাদের অংশ। তারা আমাদের সাহায্যকারী ও সহযোগী। এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে আমাদের দেশে চালু করতে হবে নতুন এক শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রণয়ন করতে হবে নতুন শিক্ষানীতি, নতুন কারিকুলাম, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যতালিকা।

এই শিক্ষা ব্যবস্থায় উপরোক্ত ভাবধারাগুলো গতিশীল থাকতে হবে নদীর স্রোতধারার মতো। এই নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা হবে এমন শিক্ষা ব্যবস্থা, যে শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের একটি আদর্শ ও সুসংহত জাতিতে পরিণত করবে। আমাদের জাতিকে প্রকৃত মুসলিম উম্মাহ হিসেবে গড়ে তুলবে। আমাদের জীবনকে সামগ্রিক উন্নতির শিখরে আরোহণ করাবে। স্বাধীন মর্যাদাবান জাতি হিসেবে টিকে থাকতে শিখাবে।

আমাদেরকে পরকালের মুক্তির পথে পরিচালিত করবে। দক্ষতার সাথে দেশ ও জাতিকে পরিচালনার যোগ্যতা দান করবে। আসলে এ ধরনের আংশিক মেরামত, সংস্কার, সংশোধন ও সংযোজন দ্বারা ফল হবেনা। প্রয়োজন আমূল পরিবর্তনের। প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করতে হবে প্রাইভেট টিউশনি নিয়ে সাম্প্রতিককালে নানা মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।

মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত অভিভাবকদের এ উদ্বেগ বেশি। শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ার খরচ অনেক অভিভাবকই বহন করতে সক্ষম নন; কিন্তু কষ্ট করে অভিভাবকদের এ খরচটুকু জোগাড় করতে হচ্ছে। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ার প্রবণতা যেভাবে বেড়েছে, তা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। অপরদিকে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে যথাযথভাবে না পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোয় আগ্রহী বলেও কথা উঠেছে।

ফলে কিছুদিন আগে একবার শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধে আইন প্রণয়নের কথা শোনা গিয়েছিল। সম্প্রতি অবশ্য এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য শোনা যাচ্ছে না। তবে তা বন্ধ না করলে শিক্ষা ব্যবস্থার আরো চরম অবনতি হবে, যা দেশের ভবিশ্যৎ প্রজন্মের জন্য অমঙ্গলকর। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান উত্তরণ শিক্ষা একটি জাতির উন্নতির সোপান। দু:খজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশের শিক্ষার সার্বিক মান এখনও আন্তর্জাতিকমানের নয় এবং দিন দিন এ ব্যবধান বেড়েই চলেছে।

স্বাধীনতার পর থেকে সরকারগুলির শিক্ষা নিয়ে সু-নির্দিষ্ট কোন প্ল্যান না থাকা এবং সেই সাথে শিক্ষাঙ্গনগুলির বেশ কিছু মৌলিক সমস্যা সমাধানে উদাসীন থাকা এর একটি প্রধান কারন। এছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ না হওয়া এবং তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসাবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটও শিক্ষার কাংখিত মান অর্জনে ব্যর্থতার একটি বড় কারন। তবে আশংকার কথা হচ্ছে আমাদের শিক্ষা মানের ক্রমাবনতি ঘটছে। বাংলাদেশ জন্মের অনেক আগে থেকেই এদেশের মানুষ দেখেছে উচ্চশিক্ষার পীঠস্থান এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কিভাবে অনুপ্রেরণা দিয়ে জাগ্রত করেছে জাতিকে, শিক্ষার আলো দিয়ে কিভাবে সংহতি আর একাত্মতায় প্রতিবাদী করেছে শাসকদের অন্যায় আচরণ রুখতে। সেই সাথে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান, আলোচিত হয়েছে শিক্ষকমন্ডলীর গবেষণা নিষ্ঠা আর শিক্ষাদানে একাগ্রতা।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অভিহিত হয়েছে নানা প্রশংসাসূচক অভিধায়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি সেই স্বর্ণালী সময়ের কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এ সকল কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতি এ দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু যুক্তিসংগত কারণেই সাম্প্র্রতিক সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান প্রশ্নসূচক অভিধায় পর্যবসিত হচ্ছে বারবার। শিক্ষার মান প্রকৃতপক্ষে একটি আপেক্ষিক ধারণা।

যে শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে মানবজাতি ও দেশের সার্বিক কল্যাণে, তার অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, তাকে আমরা একটি ভালো মানের শিক্ষা বলতে পারি। দেশে মুলত: দুই ধরনের বিশ্বিবদ্যালয় আছে- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। অবিভক্ত বাংলার প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ১৮৫৭ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। সময়ের পথ পরিক্রমায় ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৫৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। স্বাধীনতা পূর্বকালীন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে পরবর্তীকালে যুক্ত হয় আরো কিছু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

আর ১৯৯২ সালে দেশে উন্মেষ ঘটে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের। সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-রাজনীতি ও শিক্ষক-রাজনীতি সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা, সেশন-জট, ধর্মঘট, আন্দোলন, কাস, পরীক্ষা বর্জন, মারামারি, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া প্রভৃতি ঘটনার কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অভিভাবকদের কাছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এ সকল অভিভাবকগণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প হিসাবে বেছে নিচ্ছেন বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। এর বাইরে সামগ্রিক মেধায় পিছিয়ে থাকা সমাজের উচু শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী যাদের অধিকাংশই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হতে অক্ষম, তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নিয়ে এসেছে বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের অধিকাংশ বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কেই বিশ্ববিদ্যালয় কঠামোর ভিতর ফেলা যায় না।

সার্টিফিকেট প্রদানকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষামানও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা নিম্ন মানের। আমি এখানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানের সাম্প্রতিক অবস্থা, মানের অবনতির কারন ও মানোন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু পর্বে লেখার আশা করি। প্রথমেই জানিয়ে দেই এটি মুলত: একটি সেমিনার এ পঠিত মুল প্রবন্ধ যেখানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নীতি নির্ধারকগন উপস্থিত ছিলেন। তারা শুনেছেন, বাহবা দিয়েছেন, অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই।

আমার জানামতে এখন পর্যন্ত কোন পরিবর্তন হয়নি। আসলে কোন পরিবর্তনের জন্য সমাজের সচেতনতা প্রয়োজন। শুধু সেমিনার এ পেপার পড়ে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয় এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এই ব্লগে লেখা। আর কোথাও থেকে কপি-পেষ্ট করছিনা। এটি আমারই লেখা।

এখানে প্রবন্ধটি সংক্ষিপ্ত রুপে উপস্থাপন করলেও অনেক ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার একই রকম থেকে যেতে পারে। সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। দেশের অন্যতম প্রধান এই সমস্যাটি দুর করার ক্ষেত্রে আপনারা আপনাদের মন্তব্য রাখবেন বলে আশা করি। বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান কিছু সুনির্দিষ্ট সূচকের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয় এবং তার ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির র‌্যাংকিংও করা হয়। দুঃখের বিষয় এই সূচকগুলির ভিত্তিতে করা বিশ্বের ৫০০ টি কিংবা এশিয়ার ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয় - এর মধ্যেও বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম নেই।

এখন দেখে নেয়া যাক শিক্ষার মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান পরিমাপের সেই সূচকগুলি কি কি - - ভর্তি প্রক্রিয়া - পাঠ্যক্রম ও বিষয়ের ব্যপ্তি - ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত - মেধা যাচাই প্রক্রিয়া - গবেষণা - গবেষণা প্রকাশনা ও এর মান - পাশকৃত গ্র্যাজুয়েটদের গন্তব্য - আন্তর্জাতিক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোলাবরেশন শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের মানোন্নয়ন শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের মানোন্নয়নে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাই কারো কারো মতে, গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগত উন্নয়নে কম বরাদ্দ রাখায় বাজেটে নতুন কোন বৈচিত্র্য আসেনি। দিন বদলের অঙ্গীকার ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা ছিল আরো বেশী। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আরো বাড়ানো উচিত ছিল। বাজেটে শিক্ষার উন্নয়ন খাতে চেয়ে অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেশী।

অধিকাংশ অর্থই ব্যয়িত হবে বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদানে। কিন্তু শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ও পরিকল্পনায় পর্যায়ক্রমে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা এবং তথ্য ও প্রযুক্তি সেক্টর গুরুত্ব পেয়েছে। শিক্ষার বানিজ্যিকীকরণ প্রবণতা বন্ধ করা একটি জাতিকে উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হলে শিক্ষা খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হয়। তা না হলে দেশের মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে জাতীয় উন্নয়নে শরিক করা যাবে না।

তাই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারের প্রয়োজন ছিল শিক্ষা খাতে কমপক্ষে মোট জাতীয় বাজেটের ২৫ শতাংশ এবং জাতীয় আয়ের ৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখার। দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে ও জনশক্তিকে মানব সম্পদে রূপান্তরিত করতে শিক্ষার বানিজ্যিকীকরণ প্রবণতা বন্ধ করা এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা খাতে এ বরাদ্দ জরুরী। পর্ব-৪ (চলমান) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.