আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেয়ার বাজার, জিয়ার আইন, প্রধানমন্ত্রীর আত্মসমর্পণঃ বাহারী ডিগ্রির চাপে ভাগ্যবিড়ম্বিত নিঃস্ব মানুষের আহাজারি-আর কত তামাশা দেখবো ভারতপ্রেমীদের?

www.theeconomist2011@yahoo.com আজকে চট্টগ্রাম ও ঢাকার শেয়ার বাজার ফাঁকা। কেন বন্ধ হলো এই শেয়ার বাজার? এর আগে তদন্ত কমিটির তামাশা দেখিয়ে সরকার জনগণকে কলা দেখিয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা তো নেয়নি সরকার-উপরন্তু সরকার তার আদরের দরবেশকে পরিচালক করে পুরুস্কার দিয়েছে। উদ্দেশ্য দরবেশবাবার নেক নজর!! দিনে রাতে নতুন নতুন সার্কুলার জারি, অর্থমন্ত্রীর শেয়ার বাজার বুঝতে না পারার স্বীকারোক্তি। অর্থ উপদেষ্টার নির্মম তামাশা।

অতপর স্বয়ং প্রমানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং রুদ্ধদ্বার বৈঠক। স্বপ্নচোখে নিঃস্বমানুষ কিন্তু ফিরে পায়নি তাদের ভরসা। কারণ কি, কিভাবে শেয়ার বাজার ঠিক হবে? হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকৃত অর্থ পাচার হয়ে গিয়েছে, কোথায় কোথায় গিয়েছে-তা দেশের মানুষ জানে। বঙ্গবন্ধু গবেষণা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা অর্থমন্ত্রী, পরিচালক নাকি পাওয়ার পয়েন্ট বিজ্ঞানী ডালিমকুমার-তাদের কাছে কত অর্থ গিয়েছে তার হিসাব নিশ্চয় একদিন হবে।

আজ যেমন খালেদা জিয়া স্বশরীরে আদালতে হাজিরা দিয়েছেন, আগামীতেও নিশ্চয় সময় হলে আম্লীগ আমলের অর্থ পাচারের বিচার হবে। কিন্তু নিঃস্ব মানুষের কি হবে? তাদের দেনা কে পরিশোধ করবে, কিভাবে তাদের পরিবার আর সন্তানাদির ভবিষ্যত চলবে? সর্বশেষ আজকের সিদ্ধান্ত, জরুরী মিটিং চলছে, শেয়ার বাজার দুটোই বন্ধ। প্রধানমন্ত্রী তার পরামর্শ দাতাদের কাছে গতকাল জানতে চান কিভাবে শেয়ার বাজারকে কোরামিন দিয়ে চালানো যায়? পরিষদবর্গ তাকে পরামর্শ দিয়েছেন, সরকারী কর্মচারী কর্মকর্তাদের বিনিয়োগ বন্ধ করে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন এটা কিভাবে সম্ভব হবে? পারিষদবর্গ মনে করিয়ে দিলেন, এটা সম্ভব প্রেসিডেন্ট জিয়ার করা একটি আইন আছে, যা -সরকারী কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ নামে পরিচিত। দূরদর্শী জিয়ার করা এই আইনটির কাছে আজ ৩২ বছর পর ড. ডিগ্রিধারী দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রীকে আত্মসমর্থন করতে হলো!! সকাল বিকাল বিষোদগার করে মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার চরিত্রহনন করলেও আজ এমন চিপায় পড়ে জিয়ার আইনকেই ইজ্জত বাচাঁনোর ঢাল হিসাবে ব্যবহার করলেন।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একবারও জিজ্ঞাসা করলেন না, এর আগে বহুখরচের রোডশো করে কেন বিনিয়োগের আহবান জানালেন? আজ ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত ক্ষতির মধ্যে ডুবিয়ে মারা জন্য এই আইনটির কথা মনে পড়লো? দু’বারের সরকার চালানো প্রধানমন্ত্রীর কি এই আইনটির কথা জানা ছিলোনা? অবশ্যই ছিলো। কিন্তু এই আইনের ব্যবহার হলে ‘জনতার মঞ্চ’ করা যেতোনা, ক্ষমতাসীন হওয়া যেতোনা!! তাই আইনটিকে একদিন আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে ‘জনতার মঞ্চ’ করেছিলেন সরকারী সচিব ম খা দের দিয়ে। আজ জিয়ার আইনের দোহাই দিচ্ছেন কেবল নিজেদের অদক্ষতা, সীমাহীন লোভ আর অর্থপাচারকে বৈধ করার জন্য, শেয়ার ব্যবসায়ীদের ধমক দেওয়ার জন্য, তাদের আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য। নিশ্চিত হয়েই বলতে পারি, এই আইনের দোহাই দিয়ে বিনিয়োগ বন্ধ করে শেয়ার বাজার তো ঠিক হবেইনা বরং দীর্ঘমেয়াদী রসাতলে যাওয়ার ব্যবস্থা হলো, শেষরক্ষা হবেনা। নিঃসন্দেহে এই আইনটির যথাযথ প্রয়োগ উচিত ছিলো।

সেক্ষেত্রে ম খা দের বিচার করতে হবে। তা কি হাসিনা সরকার করবেন? মইনদের বিচার করবেন? না, যতটুকু হলে ক্ষমতা নিষ্কন্টক হবে ততটুকুই করবেন-এটা দেশবাসী অতীতে দেখেছে, এরা নাটকবাজ, অভিনয় এরা নিজের সাথেও করে থাকে। কি আছে জিয়ার এই আইনটিতে-যার কাছে আত্মসমপর্ণঃ গণকর্মচারী(আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯, তারিখঃ ১৮/০৫/১৯৭৯ এই আইনানুযায়ী সরকারী কর্মচারী কারা? বিধি-২: বাংলাদেশের ভিতরে বা বাহিরে অবস্থানরত সকল বেসামরিক সরকারী কর্মচারীদের ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ সরকারের অধীনে কর্মরত অবস্থায় থাকুন বা অন্য কোনো সরকারী প্রতিনিধি বা কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত থাকুন, এ বিধিমালা তাদের উপর প্রযোজ্য হবে। তবে যাদের উপর প্রযোজ্য হবেনা- এ) যাদের ক্ষেত্রে রেলওয়ে সংস্থাপন কোড প্রযোজ্য; বি) মেট্রোপলিটান পুলিশের অধঃস্তন অফিসারবৃন্দ; সি) পুলিশ ইন্সপেক্টর পদের নীচের পুলিশ সদস্যবৃন্দ; ডি) বিজিবি-র অধঃস্তন অফিসার, লাইনম্যান ও সিগনালাম্যান; ই) ডেপুটি জেলরের নিন্মের এবং সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টরের পদমর্যাদার নিন্মের অধঃস্তন অফিসারবৃন্দ; এফ) প্রয়োজনে সরকারী গেজেট কর্তৃক নির্ধারিত সদস্য ও কর্মচারীবৃন্দ। ব্যবসা করার ব্যাপারে আইনে কি বলা আছে? বিধি অনুযায়ী, ১৫(৩): কোনো সরকারী কর্মচারী এমন কোনো কিছুতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না, যেখানের তথ্য সরকারী কর্মচারী হওয়ার দরুন তিনি নিজে জানেন অথচ সাধারণ মানুষ তা জানেনা।

১৬: ‘‘সরকারের সাধারণ বা বিশেষ আদেশের বিধান সাপেক্ষে একজন সরকারী কর্মচারী ১৯৪০ সালের সমবায় সমিতি আইনের অধীনে নিবন্ধনকৃত সমবায় সমিতি স্থাপনে, নিবন্ধীকরণে অথবা ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ’’ ১৭(১): এ বিধির অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে কোনো সরকারী কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমতি ছাড়া তার সরকারী কার্য ব্যতীত অন্যকোনো ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন না অথবা কোনো চাকরী বা কর্ম গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে একজন নন গেজেটেড সরকারী কর্মচারী সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে তার পরিবারের সদস্যদের শ্রম কাজে লাগানো যায় এরূপ ক্ষুদ্র ব্যবসা চালাতে পারবেন এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে সম্পত্তির ঘোষণা পত্রের সাথে ব্যবসায়ের বিস্তারিত বিবরণ দাখিল করতে হবে। ১৭(৩): কোনো সরকারী কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে তার পরিবারের কোনো সদস্যকে তার এখতিয়ারাধীন এলাকায় কোনো ব্যবসায়ে জড়িত হবার অনুমতি প্রদান করতে পারবেন না। এই আইনটি প্রয়োগ হলে জনতার মঞ্চ থেকে সুবিধা নিতে পারতোনা মখা আর আম্লীগ বশংবদ।

এরকম একটি আইন করতে হলে দেশপ্রেম দরকার আছে বৈকি। জনতার কথা ভাবলেই কেবল এরকম আইন করা যায়। কিন্তু আম্লীগ জীবনভর নিজেদের স্বার্থ ছাড়া জনতার স্বার্থে কিছূ করতে চেয়েছে-তার প্রমান আমরা দেখছি শেয়ার বাজারে কাদঁতে থাকা নিঃস্বদের আহাজারিতে। তাই তো আদালতের রায় লেখা না হলেও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায় মাত্র ১০ মিনিটে কারো দাবী ছাড়া-যা সম্পূর্ণ গণবিরোধী। উপরন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী আইন করেছেন সরকারী কর্মচারীদের দায়মুক্তি দিয়ে-বিদ্যুতের সীমাহীন দূর্নীতির ক্রয় সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে কোনো সরকারী কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা যাবেনা, আইনের আওতায় আনা যাবেনা-অথচ জনগণের কাছে প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি কর্মকর্তা তাদের কাজের জন্য দায়ী থাকবেন, এটাই সংবিধানের নির্দেশ।

সামান্য ৫০০০ টাকার জন্য এই সরকারের পুলিশকে দেখি বৃদ্ধকে কোমড়ে রশি বেঁধে থানায় নিতে। এখানেই জিয়ার দেশপ্রেম আর হাসিনার দূনীর্তি তোষণের পার্থক্য । একটি ভবিষ্যত বানীঃ শেয়ার বাজারে লেনদেন হয় সেকেন্ডারী শেয়ার, আর তা হস্তান্তর হয়ে থাকে কেবল বিশ্বাসের উপর। সরকারী নীতি, পলিসি, ভীশন এবং সরকারের জনসম্পৃক্তার উপর। জনগণের আস্থাহারানো এই সরকারের আমলে আর শেয়ার বাজার ঠিক হবেনা।

শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি নির্মম ভবিষ্যত বানী হলেও এটাই সত্য যে,বাংলাদেশের শেয়ার বাজার ঠিক তখনই হবে যখন এই সরকার পরিবর্তন হবে-আমার শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা এটাই বলে। ব্লগারদের কাছে জিজ্ঞাসাঃ ১. শেয়ার বাজারে নিঃস্ব বিভ্রান্ত হতাশ কর্মহীন যুবকের স্বকর্মের ব্যবস্থায় ডাকাতির দায়ে সরকারের নৈতিক অবস্থান কি থাকে কারো বিরোদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করার? ২. ডি-লিট ডিগ্রির জন্য ব্যয়িত সময় আর অর্থ একজন খুন হওয়া মেধাবী যুবায়েরের প্রাণ রক্ষা করতে পারতো কিনা? ৩। এই সরকারকে দেশের সমগ্র অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য ব্রুটমেজরিটিতে ক্ষমতাসীন করা হয়েছিলো কিনা? ৪। এদেশের মানুষের ভোটে আম্লীগ ক্ষমতাসীন হয়েছে নাকি ভারতের ডিগ্রির কল্যাণে হয়েছে-গোপন কোনো মিশন বাস্তবায়নের জন্য?  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.