আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেয়ার বাজার-১৪: অতিমূল্যায়িত ও অবমূল্যায়িত শেয়ার

oracle.samu@googlemail.com

বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের সাথে যারা পরিচিত অথবা এর সম্পর্কে টুকটাক খোঁজ-খবর রাখেন তাদের কাছে সবচেয়ে পরিচিত শব্দটি সম্ভবত 'অতিমূল্যায়িত'। আবার মাঝে মাঝে শোনা যায় ব্যাংক শেয়ারগুল অবমূল্যায়িত। তাই অনেকেই এই দুট টার্ম নিয়ে কনফিউজড হয়ে পড়েন। 'অতিমূল্যায়িত' শব্দটি এতই ব্যাবহৃত যে এটা শুনতে শুনতে সব বিনীয়োগকারীর কান ঝালা-পালা । এই শব্দের আবার ভংঙ্কর চেহারা ও আছে, বাজার নিয়োন্ত্রক সংখ্যা মানে DSE অথবা SEC এর মুখ থেকে 'অতিমূল্যায়িত' শব্দটি বেরন মানেই বাজার সংশোধনের জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ অত্যাসন্ন; ফলস্বরুপ মূল্য পতন।

ভয়-ভীতি এমন স্থানে পৌচেছে যে, DSE অথবা SEC পূর্বনীর্ধারিত মিটিং এর দিন বাজেরে মূল্য পতন নিয়মিত ঘটনায় পরিনত হয়েছে। তা হলে আসুন এই 'অতিমূল্যায়িত' দৈত্য ও 'অবমূল্যায়িত' আলাদিনের চেরাগের সাথে পরিচিত হই আজ। অতিমূল্যায়িত (Overvalued): যে শেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্য তার আর্থিক সামর্থকে অনুসরন করে না, সে শেয়ার গুলই অতিমূল্যায়িত শেয়ার বলে পরিচিত হয়। আর বাজার সংশোধনে এরাই সবার আগে মূল্য হাড়ায়। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় কোন শেয়ারের উচ্চ বাজার মূল্যই অতিমূল্যায়নের লক্ষণ।

আর অবমূল্যায়ন বা নিম্নমূল্যায়ন (Undervalued) হল অতিমূল্যায়িত (Overvalued) এর বিপরীত অবস্থা। সুতরাং অতিমূল্যায়িত শেয়ার খুজে বেরকরতে পারলে অবমূল্যায়িত শেয়ার গুলও বের করা সম্ভব। মূলত ৬ ভাবে অতিমূল্যায়িত শেয়ার চিন্থিত করা যায়: ১। High p/e or low earnings yield: আয় ও বাজার মূল্যের অনুপাত বেশি হলেই তা অতিমূল্যায়িত। আমাদের বাজারে পিই ১৫-২০ গ্রহনযোগ্য কিন্তু তা ২৫ ছাড়ালেই শতর্ক হওয়া উচিত।

আর earnings yield হল পিইর আরেক রূপ। earnings yield = ১/পিই = (১/২৫)*১০০ = ৪% এটা যত কম হবে ঝুকি তত বাড়বে। ২। Falling dividend yield: কম্পানির বোনাস পলিসির পরিবর্তন হলেই ডিভিডেন্ড দেয়ার হার কমে/বাড়ে। যে কম্পানি আগে ১০০ টাকা লাভ করলে ৭৫ টাকা বোনাস দিত সেই কম্পানি যদি হটাৎ করে ৬০ টাকা দেয়া শুরু করে কিন্তু বাজারে দামের কোন লক্ষনিয় হের-ফের হয় না তখন বুঝতে হবে এই শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে পরছে।

৩। High price to earnings growth ratio: ধরুন কম্পানি ক এর ২০০৮ এর আয় (EPS) ১০ ও ২০০৯ এ ১১ টাকা। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির হার {(১১-১০)/১০}*১০০ = ১০% আবার ২০০৯ এ পিই হল ২৫। মানে ২০০৯ এ আয় বৃদ্ধির হার ও পিই'র অনুপাত (২৫/১০)= ২'৫ । এই অনুপাত ২ এর বেশি হলে তা অতিমূল্যায়নের লক্ষণ বলে ধরা হয়।

৪। High price to book ratio: ধরুন কম্পানি ক এর শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (NAV) ২০০ টাকা আর বাজার মূল্য ৬০০ টাকা। অর্থাৎ দুটর অনুপাত হল ৩ ! যেখানে ২ হলেই শীর্ষস্থানীয় শেয়ার বাজারে হাউ-কাউ শুরু হয়ে যায়। তবে আমাদের দেশের অবস্থা ভিন্ন তাই এখেত্রে NAV কমলেও যদি বাজার মূল্য না করে তবে বুঝতে হবে এই শেয়ার অতিমূল্যায়নের দিকে যাচ্ছে। ৫।

Low return on equity: কম্পানির নিট লাভ ও শেয়ার হোল্ডারদের হাতে থাকা শেয়ারের সব শেয়ারের দামের অনুপাত (বাৎসরিক গড় দাম * মোট শেয়ার সংখ্যা)। এই অনুপাত বিগত বছরগুলর সাথে মিলিয়ে যদি দেখা যায়, অনুপাতের পতন ঘটেছে তখন তা অতিমূল্যায়নের ইঙ্গিত দেয়। ৬। The boss is selling: সব চেয়ে সোজা উপায় আর কি ! কম্পানির মূল্য উদ্দোগতা বা স্পনসররা যখন তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেয় তখন বুজতে হবে ঐ কম্পানির অবস্থা খারাপ হচ্ছে। ৩ কারনে এই বিক্রি হতে পারে - ক।

এক জন শেয়ার হোল্টার কোন কম্পানির বাজারে ছারা মোট শেয়ারের ৫% হোল্ড করতে পারেন। ফলে বোনাস আকারে এই শেয়ারের পরিমান বেড়ে গেলে অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হয়। খ। মূলধন অন্য কোন ব্যাবসায় স্থানান্তর করতে। গ।

উঠতি বাজারে বিক্রি করে তা আবার কম মূল্যে কেনার উদ্দশ্যে। মূলত খ ও গ এর ক্ষেত্রে তা শেয়ারের অতিমূল্যায়ন ইনডিকেট করে। তাই শেয়ার কেনার আগে দেখুন আপনার পছন্দের শেয়ারের বর্তমান অবস্থা কি? অতিমূল্যায়িত শেয়ার এড়িয়ে চলুন এবং খুজতে থাকুন অবমুল্যায়িত শেয়ার সমূহ কারন কিছু দিনের মধ্যেই তাদের মূল্য বৃদ্ধি শুরু হবে। আর শেয়ার বাজারে টিকে থাকার মূল মন্ত্র হল- "শেয়ার কেনার সময়ই লাভ করতে হবে বিক্রির সময় নয়। " কৃতজ্ঞতা: আরিফ ভাই যিনি টপিকটার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ইমেইলের মাধ্যমে।

শেয়ার বাজার নিয়ে আমার লেখা সব পোস্ট একত্রে পেতে ক্লিক করুন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.