আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেলাল হাফিজের ৫টি কবিতা

......... রাখাল-হেলাল হাফিজ আমি কোনো পোষা পাখি নাকি? যেমন শেখাবে বুলি সেভাবেই ঠোঁট নেড়ে যাবো, অথবা প্রত্যহ মনোরঞ্জনের গান ব্যাকুল আগ্রহে গেয়ে অনুগত ভঙ্গিমায় অনুকূলে খেলাবো আকাশ, আমি কোনো সে রকম পোষা পাখি নাকি? আমার তেমন কিছু বাণিজ্যিক ঋণ নেই, কিংবা সজ্ঞানে এ বাগানে নির্মোহ ভ্রমণে কোনোদিন ভণিতা করিনি। নির্লোভ প্রার্থনা শর্ত সাপেক্ষে কারো পক্ষপাত কখনো চাবো না। তিনি, শুধু তিনি নাড়ীর আত্মীয় এক সংগঠিত আর অসহায় কৃষক আছেন ভেতরে থাকেন, যখন যেভাবে তিনি আমাকে বলেন হয়ে যাই শর্তাহীন তেমন রাখাল বিনা বাক্য ব্যয়ে। কাঙাল কৃষক তিনি, জীবনে প্রথম তাকে যখন বুঝেছি স্বেচ্ছায় বিবেক আমি তার কাছে শর্তাহীন বন্ধক রেখেছি। নাম ভূমিকায় -হেলাল হাফিজ তাকানোর মতো করে তাকালেই চিনবে আমাকে।

আমি মানুষের ব্যকরণ জীবনের পুষ্পিত বিজ্ঞান আমি সভ্যতার শুভ্রতার মৌল উপাদান, আমাকে চিনতেই হবে তাকালেই চিনবে আমাকে। আমাকে না চেনা মানে মাটি আর মানুষের প্রেমের উপমা সেই অনুপম যুদ্ধকে না চেনা। আমাকে না চেনা মানে সকালের শিশির না চেনা, ঘাসফুল, রাজহাঁস, উদ্ভিত না চেনা। গাভিন ক্ষেতের ঘ্রাণ, জলের কসম, কাক পলিমাটি চেনা মানে আমাকেই চেনা। আমাকে চেনো না? আমি তোমাদের ডাক নাম, উজাড় যমুনা।

নিখুঁত স্ট্র্যাটেজী – হেলাল হাফিজ পতন দিয়েই আমি পতন ফেরাবো বলে মনে পড়ে একদিন জীবনের সবুজ সকালে নদীর উলটো জলে সাঁতার দিয়েছিলাম। পতন দিয়েই আমি পতন ফেরাবো বলে একদিন যৌবনের শৈশবেই যৌবনকে বাজি ধরে জীবনের অসাধারণ স্কেচ এঁকেছিলাম। শরীরের শিরা ও ধমনী থেকে লোহিত কণিকা দিয়ে আঁকা মারাত্মক উজ্জ্বল রঙের সেই স্কেচে এখনো আমার দেখো কী নিখুঁত নিটোল স্ট্র্যাটেজী। অথচ পালটে গেলো কতো কিছু,–রাজনীতি, সিংহাসন, সড়কের নাম, কবিতার কারুকাজ, কিশোরী হেলেন। কেবল মানুষ কিছু এখনো মিছিলে, যেন পথে-পায়ে নিবিড় বন্ধনে তারা ফুরাবে জীবন।

তবে কি মানুষ আজ আমার মতন নদীর উলটো জলে দিয়েছে সাঁতার, তবে কি তাদের সব লোহিত কণিকা এঁকেছে আমার মতো স্কেচ, তবে কি মানুষ চোখে মেখেছে স্বপন পতন দিয়েই আজ ফেরাবে পতন। নিরাশ্রয় পাচঁটি আঙুল – হেলাল হাফিজ নিরাশ্রয় পাচঁটি আঙুল তুমি নির্দ্বিধায় অলংকার করে নাও, এ আঙুল ছলনা জানে না। একবার তোমার নোলক, দুল, হাতে চুড়ি কটিদেশে বিছা করে অলংকৃত হতে দিলে বুঝবে হেলেন, এ আঙুল সহজে বাজে না। একদিন একটি বেহালা নিজেকে বাজাবে বলে আমার আঙুলে এসে দেখেছিলো তার বিষাদের চেয়ে বিশাল বিস্তৃতি, আমি তাকে চলে যেতে বলিনি তবুও ফিরে গিয়েছিলো সেই বেহালা সলাজে। অসহায় একটি অঙ্গুরী কনিষ্ঠা আঙুলে এসেই বলেছিলো ঘর, অবশেষে সেও গেছে সভয়ে সলাজে।

ওরা যাক, ওরা তো যাবেই ওদের আর দুঃখ কতোটুকু? ওরা কি মানুষ? প্রতিমা – হেলাল হাফিজ প্রেমের প্রতিমা তুমি, প্রণয়ের তীর্থ আমার। বেদনার করুণ কৈশোর থেকে তোমাকে সাজাবো বলে ভেঙেছি নিজেকে কী যে তুমুল উল্লাসে অবিরাম তুমি তার কিছু কি দেখেছো? একদিন এই পথে নির্লোভ ভ্রমণে মৌলিক নির্মাণ চেয়ে কী ব্যাকুল স্থপতি ছিলাম, কেন কালিমা না ছুঁয়ে শুধু তোমাকেই ছুঁলাম ওসবের কতোটা জেনেছো? শুনেছি সুখেই বেশ আছো, কিছু ভাঙচুর আর তোলপাড় নিয়ে আজ আমিও সচ্ছল, টলমল অনেক কষ্টের দামে জীবন গিয়েছে জেনে মূলতই ভালোবাসা মিলনে মলিন হয়, বিরহে উজ্জ্বল। এ আমার মোহ বলো, খেলা বলো অবৈধ মুদ্রার মতো অচল আকাঙ্ক্ষা কিংবা যা খুশী তা বলো, সে আমার সোনালি গৌরব নারী, সে আমার অনুপম প্রেম। তুমি জানো, পাড়া-প্রতিবেশী জানে পাইনি তোমাকে, অথচ রয়েছো তুমি এই কবি সন্নাসীর ভোগে আর ত্যাগে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।