আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বান্দারবানের দুর্ঘটনা, নান্দনিক বাঁকে বাঁকে মৃত্যুর ভয়াল ফাঁদ

১. বর্তমান সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যদিনের স্বাভাবিক বিষয়। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় খরচ হয়ে যায় খুচরো মানুষ। দুর্ঘটনায় প্রানহানীর সংখ্যা বেশী হলে অথবা গুরুত্বপূর্ণ কেউ মৃত্যু বরণ করলে পত্রিকার প্রথম পাতার জৌলুস বারে, লাল হেডিং-এর সংবাদ হয়। অডিও ভিজুয়াল মিডিয়ার সংবাদে কয়েক সেকেন্ডের ফুটেজ হয়। যে পরিবারের সদস্যটি দুর্ঘটনার শিকাড় হন, তাদের কাছে এই ফুটেজ, এই সংবাদ সবই অর্থহীন।

সড়ক দুর্ঘটনা এখন সকালের নাস্তা খাবার মত, দুপুরের বিষন্নতার মত স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। ২. গতকাল সকালে ফোন পেলাম। শুনলাম ভয়ানক দুর্ঘটনার কথা। বাংলাদেশের অন্যতম পশ্চাদপদ উপজেলা থানচি থেকে বান্দারবান সদরে আসার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বান্দারবান জেলা পরিষদের সদস্য অং প্রু জানালেন দুর্ঘটনাস্থলেই সতেরো জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় মারা গেছেন আরো চার জন। গুরুতর আহত হয়েছেন সাত থেকে আটজন। গুরুতর আহত না বলে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন বলা ভাল। দুর্ঘটনার কারন বাসের স্টিয়ারিং ফ্রি/ অকার্যকর হয়ে যাওয়া। দুর্ঘটনার জন্য বাস চালক দায়ী কারণ তিনি পরীক্ষা করা ছাড়াই বাস নিয়ে বের হয়েছেন আর দায়ী বিপজ্জনক সড়ক।

৩. বান্দারবান দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। দিনে দিনে বান্দারবানের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বান্দারবান বা পার্বত্যজেলাগুলির উন্নয়নের প্রতি স্পষ্ট অবহেলা বিদ্যমান। একথা সত্য যে, গত কয়েক বছরে বান্দারবানে নতুন নতুন সড়ক হয়েছে। বান্দারবানের সরল আদিবাসীগোষ্ঠী আর শান্তিপ্রিয় বাঙালীরা সড়ক পেয়েই আনন্দিত।

সড়কের বাকগুলিতে কোন চিহ্ন বা নির্দেশিকা নেই। বাঁকের শেষ মাথা পর্যন্ত না পৌঁছালে বোঝা যায়না বাক পেরিয়ে রাস্তাটি কোন দিকে মোড় নিয়েছে। সড়কটি কতটা নিরাপদ সে প্রশ্ন অবান্তর। কারণ নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল। বান্দারবানের এই কানা মামা সড়কের নান্দনিক বাঁকে বাঁকে মৃত্যু ওত পেতে থাকে।

৪. বান্দারবান থেকে থানচি পর্যন্ত যাবার সড়কটি অধিকাংশ স্থানেই সরু। কিছুদুর পরে পরেই রয়েছে অতি বিপজ্জনক বাঁক। সড়কের কোন কোন স্থানে দুটি গাড়ি একসাথে ক্রস করতে পারেনা। এমন সড়কেও চলে জোড়ে গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতা এবং বিপজ্জনক ওভারটেকিং। ওভারটেকিং-এর ক্ষেত্রে ভাড়া করা জীপ এবং চান্দের গাড়ির চালকদের অপার উদ্দীপনা।

এই উদ্দীপনার ছোবলে প্রাণ হারায় নিরীহ যাত্রীরা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে পার্বত্য অঞ্চলের একটা জায়গায় ভীষণ মিল রয়েছে। সেই মিলটা হল পার্বত্য অঞ্চলগুলিতেও গাড়ি চালক ও পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে সাধারণ যাত্রীরা জিম্মি। প্রতিদিন মৃত্যুকে সাথে নিয়ে চলাফেরা করেন সাধারন যাত্রীরা। ৫. দুধ দেয় গরুর লাথিও ভাল।

আভ্যন্তরীন পর্যটন ক্ষেত্রে বান্দারবান এক দুধ দেয়া গরু। কিন্তু তার লাথ দেয়ার ক্ষমতা নেই। সরল আদিবাসী আর বাঙালীরা জীবন যাপনের কঠিন বৃত্তে আবদ্ধ। সামান্য সড়ক হয়েছে এতেই তারা খুশী। নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করার সময় তাদের নেই।

পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হওয়া সম্পর্কেও তাদের কোন অভিযোগ নেই। সড়কে বাস চলছে এটাই বা কম কিসে। অতি সামান্য প্রাপ্তী আর উন্নয়নে এই জটিলতাহীন মানুষগুলি কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হয়। ৬. সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগ এবং বিশেষত জেলা পরিষদের কাছে সবিনয় নিবেদন করছি, বান্দারবানের সড়কগুলি নিরাপদ করার ব্যবস্থা নিন। আপনাদের আন্তরিক উদ্যোগে আর সদিচ্ছাতেই সড়কগুলি নিরাপদ হতে পারে।

বান্দারবানের আভ্যন্তরীন পরিবহনের সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষন দিন। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন। সড়কের বিপজ্জনক বাঁকগুলি এবং প্রয়োজনীয় স্থানে নির্দেশিকা চিহ্ন দিন। আপনাদের চেষ্টায় বান্দারবানে গত কয়েক বছরে অনেক সড়ক তৈরী হয়েছে। কিন্তু এই সড়কগুলিকে নিরাপদ রাখার বিষয়টিও আপনাদেরই নিশ্চিত করতে হবে।

সড়ক যদি বিপজ্জনক হয় তবে সেই সড়কের প্রয়োজন কি! ৭. বান্দারবানের সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় যারা চলে গেছেন তারা ফিরে আসবেন না। তাদের শূণ্যতায় পরিবারগুলি প্রতি মূহুর্তে বিদ্ধ হবে। এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করবার ভাষা আমার জানা নেই। শোকের ভাষা জানবার প্রয়োজনও নেই। সাত জন মৃত্যুবরন করুন আর সাতাশজন করুন তাতে আমাদের কি! আমরা ফিরে যাব পত্রিকার অন্য সংবাদে।

আমরা নিমগ্ন হব সংবাদ শেষে অন্য অনুষ্ঠানে।  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।