আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাবিতে প্রক্টরের হাতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি লাঞ্ছিত

সত্য প্রকাশে সংকোচহীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনার পর এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লাঞ্জিত করলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এ মামুনকে। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে শিক্ষক সমিতিরি সভা মূলতবি ঘোষণার পর এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রক্টরের পদত্যাগসহ ৮দফা দাবিতে কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন উপাচার্য বিরোধী আওয়ামীপন্থি, জাতীয়তাবাদী ফোরাম ও সাধারণ শিক্ষকরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এ ঘটনাকে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি করেছেন প্রক্টর অধ্যাপক আরজু মিয়া। এদিকে প্রক্টরের পদত্যাগসহ ৪দফা দাবিতে শোকর‌্যালী ও সমাবেশ করেছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ দাবির প্রতি সংহতি ঘোষণা প্রকাশ করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক সমিতির সভায় উপস্থিত একাধিক শিক্ষক সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধরে শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় করণীয় নিয়ে শিক্ষক সমিতির আগের দিন বুধবারের মুলতবি সভা গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এ মামুন সভা পরিচালনা করেন। তিনি আগ্রহী শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে কথা বলার সুযোগ দেন। সভায় তৃতীয় বক্তা হিসেবে উপাচার্যপন্থি আওয়ামী শিক্ষক শিকদার মো. জুলকারনাইন জুবায়ের হত্যার ঘটনায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এ মামুনের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন ।

তিনি বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ শিক্ষক হয়ে জুবায়েরের ওপর হামলার খবর শুনে ঘটনার দিন রাতেই হাসপাতালে ছুটে গেলাম। অথচ শিক্ষক সমিতির সভাপতি হওয়ার পরও তিনি (এএ মামুন) জুবায়ের হত্যার খবর শুনে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি নয়, শিক্ষক সমিতির সভাপতিরই পদত্যাগ করা উচিত। ’ তার এ বক্তব্যে উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয়তাবাদী, উপাচার্য বিরোধী ও সাধারণ শিক্ষকরা তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

এসময় উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরাও জুলকারনাইনকে সমর্থন করে চিৎকার শুরু করেন। এসময় সেমিনার রুমে হইচই ও হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এসময় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম সেলিম দঁড়িয়ে সবাইকে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকতে বলেন। এর প্রতিবাদে উপাচার্যপন্থি জুনিয়র শিক্ষকরা তাকে ‘তুই বস’ বলে সম্বোধন করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নূরুল ইসলাম জুনিয়রদের তুই বলে সম্বোধন করেন।

তবে তিনি তার সাবেক এক ছাত্র ও বর্তমানে একই বিভাগের জুনিয়র শিক্ষককে তুই বলে সম্বোধন করেন বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে হইচই চলতে থাকলে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দ মামুন মঞ্চে উঠে কথা বলার জন্য জুলকারনাইনের কাছ থেকে মাইক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় তাদের মধ্যে মাইক নিয়ে কাড়াকাড়ি হয়। সভা কক্ষে তুমুল হইচই এর শুরু হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সমিতির সভাপতি এ এ মামুন সভা স্থগিতের ঘোষণা দেন।

তিনি দাবি করেন, সমিতির গঠনতন্ত্রের ৭(ক)১ ধারা মেনেই তিনি সভা মূলতবি ঘোষণা করেন। উপস্থিত একাধিক শিক্ষক জানান, এসময় পেছন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আরজু মিয়া শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এ মামুনের দিকে তেড়ে আসেন। তিনি মামুনের কোর্ট ধরে ধাক্কাধাক্কি করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এসময় তাকে ‘কই যাস, দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে বের হয়ে যা’ বলে ধাক্বাধাক্কি করতে থাকেন। এসময় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এম এ মতিন এগিয়ে এসে আরজু মিয়াকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন।

এরই মধ্যে প্রক্টরের সঙ্গে যোগ দেন উপাচার্যপন্থি আরো ১৫/২০জন জুনিয়র শিক্ষক। এসময় জাতীয়তাবাদি, উপাচার্য বিরোধী আওয়ামীপন্থি ও সাধারণ শিক্ষকরা মামুনকে পরিবেস্টিত করে সভাস্থল থেকে বাইরে নিয়ে আসেন। এসময় মামুন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, বাইরের দেশের বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরীর অফার ত্যাগ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আছি মাটির মায়ায়। অথচ শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হয়েও আমাকে প্রক্টরের হাতে লাঞ্চিত হতে হলো।

’ এসময় তার শরীরের উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে এ্যাম্বুলেন্স এনে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে ঘটনাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেছেন উপাচার্যপন্থি একাধক শিক্ষক। শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক হাসিবুর রহমান বলেন, হইচই হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছে। তবে ধাক্কাধাক্কির কোন ঘটনা ঘটেনি। ধাক্কাধাক্কির ঘটনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে আরজু মিয়া বলেন, সম্পূর্ণ ঘটনা সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক।

এর আগে সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, আগের রাতে প্রক্টর আরজু মিয়া আমাকে ফোন করে সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে বলেন। তাদের দাবি অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে আরজু মিয়া এ ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যই সভায় সাংবাদিকদের রাখা হয়নি। এদিকে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা দুপুর ১২ টার দিকে উপাচার্য অফিসের সামনে গিয়ে সমাবেশ করেন।

সমাবেশে অধ্যাপক এমএ মতিন ও অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সভাপতিকে আক্রমনকারী প্রক্টরের অপসারণ দাবি করেন। এসময় তাঁরা বলেন, বর্তমান ক্যাম্পাসে ভয়ংকর নিরাপত্তাহীন পরিবেশ বিরাজ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে খুন হয়। প্রক্টর নিজে শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলেন। তারা অবিলম্বে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।

পরে দুপুর একটার দিকে সমাজ বিজ্ঞান ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে জরুরী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে শিক্ষক সমাজ। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক মো. শরিফ উদ্দিন, অধ্যাপক এমএ মতিন, অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি এএ মামুনকে আক্রমনকারী প্রক্টর অধ্যাপক আরজু মিয়াকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ এবং কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুসারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। এছাড়া নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, জুবায়ের হত্যার বিচারে গঠিত প্রশাসন মদদপুষ্ট তদন্ত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন ও এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশ, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অবাধ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি নিশ্চিত করা এবং গণনিয়োগ দেয়া শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করার দাবি জানান শিক্ষকরা । সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের অপসারণ ও প্রক্টারের বিচার না পর্যন্ত ক্লাস ও সকল পেশাগত দায়িত্ব পালন না করার ঘোষণা দিয়েছেন।

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামীকাল সকাল ১০টার দিকে অমর একুশের পাদদেশে গনসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি না মানলে অনির্বাচিত উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করার হুমকি দেন তারা। এদিকে ধাক্কাধাক্কির এঘটনার পর দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে জহির রায়হান মিলনায়তনে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছেন, কেউ সভাপতি লাঞ্চিত করেন নি। বরং তাদের কিছু শিক্ষক আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। পরিকল্পিতভাবে মিটিং বন্ধ করে তারা সভা স্থগিত করে আমাদের নামে অপ্রচার চালাচ্ছে ।

এসময় প্রক্টর অধ্যাপক আরজু মিয়া বলেন, ২০ হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দেয়া একজন প্রক্টরের পক্ষে সম্ভব নয়। শিক্ষক সমিতির সভাপতির হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, সভাপতিকে আক্রমণ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধ করার জন্য একটি কুচক্রী মহল লাশ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সার্থক, তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি সার্থকভাবে মোকাবেলা করছে। এর আগে সকাল ১০টার দিকে গোলাম আজমসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে মানবন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ।

এসময় মানববন্ধনে জোরপূর্বক বিভিন্ন হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের ্উপস্থিত করার অভিযোগ পাওয়া যায়। একই সময়ে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে অমর একুশের পাদদেশে সমাবেশ করে শিক্ষক সমাজের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষকরা। এদিকে এদিকে প্রক্টরের পদত্যাগসহ ৪দফা দাবিতে শোকর‌্যালী ও সমাবেশ করেছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকাল ১১টার দিকে তারা শোকর‌্যালি নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে অমর একুশের পাদদেশে সমাবেশ করে। এর আগে একই দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

আজ রাজধানীর জাদুঘরের সামনে বিকেল ৩টায় একই দাবিতে মানববন্ধন করবে সাবেক শিক্ষার্থীরা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.