আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঁধ কাটার কাজ করছেন মাত্র তিন শ্রমিক পরাণের আকুতি বাড়ছে তিতাসের

আমরা সবাই বাংলাদেশী তিতাস নদীর প্রাণ ফিরে পাওয়ার আকুতি আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। নদীর বুকে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে তৈরি করা আলোচিত রাস্তাটি ঘটা করে কেটে ফেলার কাজ শুরুর দ্বিতীয় দিনেই ঢিলেমি দেখা দিয়েছে। গতকাল দেখা গেল, মাত্র তিনজন শ্রমিক দিয়ে চলছে প্রায় ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তা কাটার কাজ। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত পথে এ ধরনের ১৭টি বিকল্প সড়ক আছে। কিন্তু এসব সড়ক কেটে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ নেওয়ার জন্য ২০১০ সালের শেষ দিকে তিতাস নদীর ওপর বাঁধ-সড়ক তৈরির কাজ শুরু হয়। ৪ জানুয়ারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশের শেষ চালানটি বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে আগরতলায় যায়। বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে এসব ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনের দায়িত্বে থাকা সংস্থা আসাম বেঙ্গল ক্যারিয়ার (এবিসি) ইন্ডিয়া লিমিটেড। কথা ছিল, তারাই নিজ খরচে এই বিকল্প সড়ক কেটে তিতাসকে মুক্ত করবে। কিন্তু কনটেইনার পরিবহনের কাজ শেষ হলেও নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করা হয়নি।

গত সোমবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রাস্তার মাটি সরিয়ে নদীর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক, মৎস্য কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কাজের অগ্রগতি দেখতে যান। তাঁদের উপস্থিতিতে ওই সময় বিশাল ক্রেন ও বিপুল লোকবলকে কাজে লাগানো হয়। এলাকাবাসী আশায় বুক বাঁধে, এবার বুঝি তিতাসের প্রাণ রক্ষা হলো। কিন্তু বড়কর্তাদের পরিদর্শনের এক দিন পরই গতকাল দেখা গেল, মাত্র তিনজন শ্রমিক দিয়ে সড়কের মাটি কাটার কাজ চলছে।

আর মাইল খানেক দূরে ফেলে রাখা আছে ক্রেনটি। ফলে বিকল্প সড়কের মাটি সরিয়ে তিতাসের পানিপ্রবাহ বহমান করা যায়নি। স্থানীয় বাসুদেব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রুস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, বাঁধের ভাটিতে থাকা কয়েকটি গ্রামের মানুষ পেশায় জেলে ও কৃষক। হাজার হাজার মানুষের আকুতি, যত দ্রুত সম্ভব বাঁধটি খুলে দেওয়া হোক। বাঁধের মাটি কাটার ঠিকাদার মজনু মিয়া জানান, এই লোকবল দিয়ে পুরো সড়কটি থেকে মাটি সরিয়ে নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে আরও দেড়-দুই মাস লাগবে।

যেহেতু চুক্তিতে কাজটি নেওয়া হয়েছে, তাই কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। যোগাযোগ করা হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিকল্প সড়কের মাটি কেটে নদীর পানিপ্রবাহ ঠিক করতে আমরা এবিসি লিমিটেডকে বলেছি লোকবল বাড়ানোর জন্য। আশা করি, শিগগিরই তারা লোকবল বাড়িয়ে বাঁধটি কেটে ফেলবে। ’ পর্যায়ক্রমে অন্য বিকল্প সড়কগুলো কেটে ফেলা হবে বলে জানান তিনি। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, তিতাস নদীর বাঁধটি ছাড়া অন্য ১৭টি বিকল্প সড়ক কাটার কাজ শুরুই হয়নি।

এর মধ্যে সোনারামপুর, ঘাটুরা, পৈরতলা, রামরাইল, রাধিকা, সুলতানপুর, ভাতশালা ও কোড্ডা এলাকার বিকল্প সড়কগুলো পানিপ্রবাহ আটকে রেখেছে। ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ বা ওভার ডাইমেনশনাল কার্গোজ (ওডিসি) পরিবহনের জন্য ২০১০ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৯৬টি কনটেইনার পশ্চিমবঙ্গ থেকে নৌপথে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ত্রিপুরায় পৌঁছানো হয়। ভারতীয় কনটেইনারগুলোর সর্বোচ্চ ওজন ৩২৫ মেট্রিক টন।

এ কারণে অতি পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু-কালভার্টের পরিবর্তে নদী এবং খালের ওপর বাঁধ দিয়ে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়। সূত্র: প্রথম আলো  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।