আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝিগাতলা-ধানমন্ডিতে যারা থাকেন, তারা দয়া করে পড়েন!

ধুর ঝিগাতলা-ধানমন্ডিতে ফ্যামিলি থেকে মনে হয় মেসের সংখ্যাই বেশি। এই এলাকাতে বেশ কিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থাকায় এবং ঢাবি, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ, রাইফেলস কলেজ খুব কাছাকাছি হওয়ায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী মেস করে থাকতে বাধ্য হয়। যেহেতু এই ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় ৯৯.৯৯%ই ঢাকার বাইরের, সুতরাং তাদেরকে "ভেসে আসা" ধরে নেয় প্রত্যেক বাড়িওয়ালা। আর এই "ভেসে আসা" ছাত্র-ছাত্রীদের উপর চলে বাড়িওয়ালাদের অমানবিক নির্যাতন। অবশ্য এখানে এক তরফা ভাবে ছাত্র-ছাত্রী বললে ভূল হবে।

কারণ ফ্যামিলি হিসাবে যারা থাকেন, তাদের উপরেও কম যান না এই বাড়িওয়ালারা। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে একটু বেশিই যায়। আসেন কিছু কিছু নমুনা দেখিঃ ১. ভাড়াঃ এটা নিয়ে খুব বেশি কিছু্ বলার আছে বলে মনে হয় না। ছোট জায়গা, কিন্তু ভাড়া অনেক। বছর বছর ইচ্ছা মত ভাড়া বৃদ্ধি।

কিন্তু নতুন কোন সুযোগ সুবিধা দুরে থাকুক, ঘরের কোন রিপেয়ারিং করায় না। ২. পানিঃ মাসের ৩০ দিনের মধ্যে ৫-৭ দিন পানির মটর নষ্ট। কিন্তু দিনের মধ্যে কিছু সময় ঠিকই পানি পাওয়া যায়। সহজ একটা ব্যখ্যা আছে, তা হল মালিক নিজের দরকার হলে পানি তুলে তা ধরে রাখে, বাকি সময় বন্ধ করে রাখে। আবার কিছু এডভান্স বাড়িওয়ালা আছেন, যারা তাদের জন্য আলাদা পাইপের ব্যবস্থা রাখেন, উপরে যেয়ে শুধু নিজের পাইপ চালু রেখে ভাড়াটিয়াদের পাইপ বন্ধ করে রাখেন।

৩. বাড়িওয়াল ছেলে ও তার বন্ধুরাঃ এর মত বিরক্তিকর জিনিষ মনে হয় আর নাই। বেশির ভাগ বাড়িওয়াল ছেলেরাই একটু কেন যেন মাস্তান টাইপের হয়। আর তার সাথে থাকে তাদের ল্যাজ হিসাবে অন্য বাড়িওয়াল ছেলেরা এবং এলাকার কিছু ছেলেপেলে। যারা বাড়ির ছাদে ইচ্ছা মত আড্ডা দিবে। এতে আমার কোন আপত্তি নাই।

কিন্তু এদর ভাব এতই বেশি যে এদের সালাম দিয়ে না চললে খুব খারপ ব্যবহারের মুখে পড়তে হয়। আবার অনেক সময় এরা বিনা করণে মেসের মধ্য ঢুকে পড়ে। এবং হাতের কাছে যদি কিছু পায় তাহলে তা নাই করে দেয়। ৪. সুযোগ সুবিধাঃ বছর বছর ভাড়া বাড়লেও সুযোগ সুবিধা বাড়ে না। ঘরের পলেস্তরা খুলে যায়, রং জ্বলে যায়, জানালার কাচঁ খুলে যায়, ট্যাপ ভেঙ্গ যায়.... কিন্তু সারাবার কোন নামই নেন ন তারা।

আর ভাড়াটিয়াদের ঘরের জানালার কাচঁ দেখেছেন কখনও? এতই নিন্ম মানের কাচঁ ব্যবহার করা হয় যে শীতের সময় মনে হবে যে সরাসরি বাতাস ঢুকছে। ৫. বিদ্যুত বিলঃ কিছু বাড়িওয়ালা আছেন যারা ভাড়াটিয়ার হাতে তার বিদ্যুত বিল না দিয়েই বলে দেন যে এত টাকা বিল আসছে। আর বিল দেখতে গেলে তাদের সোজা কথা, "বিশ্বাস না করতে পারলে বাড়ি ছাড়"। এখানে বলে রাখি, আমি নিজে ঝিগাতলার এক বাসায় থাকতাম, যেখানে দেখেছি যে বাড়িওয়ালা পুরা বাড়ি থেকে বিদ্যুত বিল তুলেছেন ২০,০০০ টাকা, কিন্তু আসল ভাড়া আসছে (উনার নিজের ফ্লোরের ভাড়া সহ) ১২,০০০ টাকা। অর্থাৎ নিজের বিদ্যুত বিলের টাকাও নিজে দেয় না।

৬. ব্যবহারঃ শুধু এইটাই বলব, মাঝে মাঝে বাড়িওয়ালর কথা শুনলে নিজেকে রাস্তার নেড়ি কুকুর ভাবতেও কষ্ট হয়। কারণ রাস্তার নেড়ি কুকুরের সাথেও মানুষ এত খারাপ ব্যবহার করে না। ৭. সালামঃ যারা ইসলামি আইন জানেন, তারা এটা জানেন যে সালাম দেওয়া সুন্নত। অর্থাৎ আমার ইচ্ছা হলে দিতে পারি। যদিও দেওয়া ভাল, কিন্তু আমি বাধ্য নই।

কিন্তু বাড়িওয়ালা, বাড়িওয়ালী আর তাদের ছেলে (ছোট হোক বা বড় হোক) সালাম তাদের দেওয়া ফরজ (তাদের নিজেদের রুল)। আর না হলে কঠিন বকুনি। ৮. বন্ধুতে এলার্জিঃ বাড়িওয়ালারা তাদের ছেলেদের বন্ধু-বান্ধুব সহ্য করতে পারলেও কোন ভাড়াটিয়া তাদের বন্ধু-বান্ধব আনবে তা সহ্য করতে পারে না। ছেলেদের মেসে ছেলে বন্ধু এবং মেয়েদের মেসে মেয়ে বন্ধু আসা যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা এটা মানতে নারাজ।

তাদের কথা, "এটা কি নিজের বাড়ি? বন্ধু সব রাস্তায়"। তাদের কথা শুনলে মনে পড়ে যে বড় বড় এপার্টমেন্ট বিল্ডং এর নিজে গেইটে লেখা থাকে, "গেষ্টদের গাড়ি পার্কিং বাইরে"। ৯. ডেড লাইনঃ স্বাভাবিক ভাবে বাড়ি ভাড়া দেবার ডেডলাইন থাকে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্তু। কিন্তু কোন একটা অজানা কারণে মালিক আগের মাসের ২৫ তারিখ থেকেই তাগেদা দিতে থাকে। আর ১ তারিখ হলে ভোর বেলায় হাজির।

তারা বুঝতেই চায় না যে সবার হাতে মাসের ১ তারিখ ভোর বেলায় টাকা থাকে না। আর বলতে ইচ্ছা করছে না। গত ৪ বছর ধরে ঢাকায় মেসে থাকি। সারা জীবনে (২৬ বছরে) যতটুকু কষ্ট করেছি, তার সবটুকু এক করলেও এই চার বছরের প্রতিটি এক এক মাসের থেকে কম হবে। আমার বড়ির মালিক আবার একটু এডভান্স।

উনি মাত্র ২ মাস আগে প্রতি রুমে ৫০০ টাকা বাড়িয়েছেন। অর্থাৎ অন্যরা যেখানে প্রতি ফ্লাটে ৫০০-১,০০০ টাকা বাড়ান, উনি বাড়িয়েছেন ২,০০০ টাকা। কিন্তু গত কালকে উনি আবার জানালেন যে খুব শিগ্রহী রুম প্রতি আরও ৫০০ বাড়াতে হবে। কি করব? কেউ কি আছেন একটা দিনের মাত্র ১ ঘন্টা একটা মানব বন্ধনে দাড়াবেন? কেউ কি আছেন ক্ষমতার লোভ না করে একটা সংগঠন করবেন যেখানে আমরা আমাদের দাবি সরকারের সামনে তুলে ধরতে পারব? মিডিয়া কাভারেজের ব্যবস্থা করা যাবে। শুধু আপনাকে দরকার।

আছেন কেউ? আর যদি থাকেন, তাহলে শুধু মন্তব্যের ঘরে "সাথে আছি" লিখে চলে যাবেন না। পোষ্টটি বারবার রিপোষ্ট করতে থাকেন। ফেসবুক সহ সবখানে শেয়ার করেন। আর সহ্য হচ্ছে না। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।