আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"ড্রাইভার-কাজের মেয়েটা- কাজের মেয়েটার বর- আমি"

অপ্রয়োজনে অনেক কথা বলে যাই, কিন্তু বলা হয়না আরো অনেক বেশী কথা- অনেক আপন মানুষদেরকে। তাইতো, এই খোলা চিঠি। হয়তো কারোর চোখে পরবে কোনদিন, যখন আমি থাকবোনা..... "আমার জন্য বিয়ের সংগা" মাঝে মাঝে ভাবি, পয়সাও যেন মনে হয়, আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান। ওর কেবল দুটো পিঠ , আর আমার সুখ-দু্ঃখের মাঝে আছে দুশ্চিন্তা। সমস্যাটা কম হতো যদি "চিন্তা" শব্দটার সামনে নতুন বৌয়ের ঘোমটার মতো দুঃখের "দুঃ" টা নাকের আগায় এসে না বসতো।

আমার দুশ্চিন্তার কারন- মা আমার "বিয়ের তোড়জোড়" জোরের সাথে শুরু করেছে। তাতে ঘি ঢালছে , ছোট বোনের বান্ধবীরা (তারা পটাপট প্রতি মাসে একজন করে বিয়ের পিড়িতে বসতেছে)। মায়ের চিন্তা- আমাকে বিয়ে না দিয়ে আমার চেয়ে সাত বছরেরে ছোটটার বিয়ে নিয়ে ভাবা যায়না। মা আমার চিন্তায় চিন্তায় অস্থির। আমার অবস্থা সমীচিন।

মাথার উত্তাপের কল্যানে- আমার "জীবন আকাশের সকল মেঘ" গলায়ে পানি আর পায়ের নীচের মাটির আদ্র হওয়ার উপক্রম। মাঝে মাঝে ভাবতে মন চায়- মাথার উপরে কড়াই রাখলে বুঝি , ডিম পোচ হইতে ১ মিনিট লাগতো আর হ্যাটের উপর আস্ত ডিম রাখলে নির্ভাৎ মুরগির ছানা ডাকা শুরু করতো। তাই আপাদত বরফ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে - যেমনি মায়ের চিন্তা দূর করার কথা ভাবা বাদ দিয়া , ফেসবুকে ঢুকলাম- দেখি আমার এক ক্লাসমেট তার ছোট কন্যার প্রথম জন্মদিন পালন করতেছে, পাশে তার স্কুল পড়ুয়া বড় পুত্র। অত্যন্ত সুন্দর ছবিটায় কমেন্ট করতে গিয়ে মনে পরলো- কমেন্ট করলেই আমার "মা বাদে" পুরা পৃথিবী (ক্লাসমেট-সিনিয়র-জুনিয়র-আত্বীয়স্বজন) আবার তাদের প্রিয় টপিক খুজে পাবে। কোন দরকার নাই- "হট কেক" হওয়ার।

তাই তারাতারি লগ আউট করলাম- পাছে আবার রুমমেটের নজরে পরে যাই। শালার রুমমেটটাও বেরসিক- আমার পার্টনা "না থাকা" নিয়া মস্ককরা করে। "এক ড্রাইভারের জন্য - বিয়ে" মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলাম- মোটের উপর সবাই অন্যের বিয়ে নিয়ে খুবই উৎসাহি থাকে। পাত্রের অথবা পাত্রীর যোগ্যতা নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নাই। একদিন আমাদের ড্রাইভার বললো- আমারে ১ সপ্তাহের ছুটি দেন -আমার বিয়া ।

জানতে চাইলাম "তোমার বেতনে তোমার ভাইবোন-বাবা মাকেই তো ঠিকভাবে সাহায্য করতে পারোনা, বিয়ে করে সব ম্যানেজ করবে কেমন করে?" তার উত্তর - "আমিও তো তাই এখন বিয়া করতে চাই নাই। ভাবছিলাম ভাইটার কলেজ শেষ করলে , বোনটারে বিয়া দিয়া - পরে বিয়া করমু। কিন্তু মা-বাপ তো মানে না। আসলে বাপ-মাও খুব যে চায় তাও না। আত্বীয় স্বজন-গ্রামের লোকেরা খালি কয়।

অহন তারাও কয়। " আমি বোঝালাম - মা-বাবা তো আর অবুঝ না, তাদেরকে বোঝাও। তুমি তো সংসারের ভালোর জন্যই করছো?" "গতবার ঈদের পরে,একবার বিয়া ঠিক করছিল বইলা - বাড়ি থেইকা পলাইছি, এইবার মায়ে কছম দিছে। " ভাবলাম- নিজের ইচ্ছা নাই, তাও যেন বাধ্য হয়ে বিয়ে করা। "বাসার কাজের মেয়েটার জন্য - বিয়ে" আমাদের বাসায় ৫ বছর কাজ করার পর আমাদের কাজের মেয়েটাকে ওর বাবা-মা , মোটামোটি জোর করেই বিয়ে দিয়ে দিল।

বাচ্চা একটা ছেলের (দাড়ি-গোফ ঠিক মত গজায় নাই) সাথে মেয়েটা এলো দেখা করতে। ছেলে কিছুই করেনা, হাঁপানীর রোগী, বয়স মাত্র ১৬ কি ১৭। এই পাত্র ? রাগ সামলে , ছেলেটাকে জিগ্ষাসা করলাম- "কামাই নাই, তো বিয়ে করছো কেন?" উত্তর-"ওর (মেয়েটার) গ্রামের একজন কইলো, মেয়েটা ভালো। আর আমারও বিয়ার বয়স হইছে । বেবাকে মিল্লা জোর করলো।

তাই করলাম। তয় আমিও কইছিলাম- বৌরে কি খাওয়ামু। " মেয়েটা কেবল আমার মায়ের পায়ের কাছে বসে কাঁদলো। জানতাম- ওর বাবা মা ও নিরুপায় হয়েই বিয়ে দিয়ে ছিল, একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে। সমাজে বাস করার দায়।

অতি উৎসাহি এই সমাজ কি নেবে এই পরিবারগুলোর খাওয়াবার দায়িত্ব? না, তা তো আর তার দায়িত্বের মাঝে পরেনা। দেবে কি আমার অনিচ্ছায় করা বিয়ের সুখের গ্যারান্টি? ভাবে দেখলাম "ড্রাইভার-কাজের মেয়েটা- কাজের মেয়েটার বর- আমি" সবাই যেন ভিন্ন দামের পোষাকে মোড়া একই পুতুল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।