আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতিথি

সকালটা শুরুই হল তুমুল হট্টগোলে। ঘর থেকে বেরুতেই দেখি বসার ঘরে চার থেকে আট বছর বয়েসি চার পাঁচটে বিচ্ছুর গলা দিয়ে বিকট আওয়াজ বেরোচ্ছে। ব্যাপার ঘোরতর; একজনের পায়ের ওপর দিয়ে আরেকজন ট্রাইসাইকেল চালিয়ে ইচ্ছে করে 'আকসিটেন' করায় এই শোরগোল। বিচার সালিশ শুরু করার আগেই ক্রন্দনরত অত্যাচারিত উঠে এসে অত্যাচারীর প্যান্ট টেনে নামিয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে নিল। এইবার অত্যাচারীর আঁতে বিষম চোট লাগায় সে রেগে লাল হয়ে ঘোষণা দিল, এর প্রতিবাদ হিসেবে সে আজ সারাদিন প্যান্টই পড়বে না।

কোন দিকেই কুল করতে না পেরে জরুরী অধ্যাদেশ জারি করলাম, সবাই শান্ত হয়ে বস, এখন আমরা নতুন গ্লাসে করে জুস খাব। জুস খাওয়া শেষ হতেই একজন ঠং করে গ্লাস মাটিতে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, আমার শেষ। সাথে সাথে বাকিরাও ছুঁড়ে দিয়ে কোরাসে বললে, আমারও শেষ। সদ্য কেনা গ্লাস সেটের চুরমার চেহারা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, আমিও শেষ ! এই ক্ষুদে বিচ্ছুগুলো আমাদের অতিথি। কিন্তু এক দিনেই এরা ঘরের যে হাল করেছে তাতে নিজের বাড়ি আর নিজের বলে চেনার যো নেই।

অবস্থা আয়ত্তে আনতে তাই দ্রুত ফন্দি এঁটে ফেলি। রূপকথা ! হ্যাঁ ! রূপকথার গল্প শোনালে নিশ্চয় ঘন্টাখানেক আটকে রাখা যাবে। তাড়াতাড়ি ঠাকুমার ঝুলিখানা টেনে এনে সবাইকে জড়ো করে বসি। বেড়ালছানার মত শান্ত টুকটুকে মুখে ওরাও কৌতূহলী হয়ে গা ঘেঁষে বসে। -এক ছিল রাজা... -কোন দেশের রাজা ? রাজা কেন ? প্রেসিডেন্ট না কেন ? রাজা কি করে ? -সেকি তা-ও জানিস না ? রাজা খালি চেয়ারে বসে থাকে আর আঙ্গুর খায়! -আহা, হট্টগোল করেনা।

শোনই না... তার ছিল সাত রানি... -ওও, রানি মানে ওয়াইফ ? কিন্তু সাআতটা ? রানিরা কেস করেনি ? -আহ্‌, এমন কল্লে কিন্তু গল্প বলব না। -আচ্ছা আচ্ছা বল... ...তারপর তো সেই সাত পারুল ফুলের ভেতর থেকে সাতটি রাজপুত্র বেরিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল রানীর বুকে... হা হা হা হি হি হি...এইটা কেমন গল্প ? ইউ আর ইম্পসিবল হি হি হি... এরপর আর কথা চলেনা। নিজেকে কেমন বেকুব বেকুব লাগে। যে বলেছিল শিশুরা ফুলের মত সে বোধ করি ক্যাকটাসের ফুলের কথাই বলেছিল মনে হতে থাকে। সন্ধ্যায় ঠিক হল সবাই মিলে ভূত দেখতে যাব।

মানে সত্যিকারের ভূত নয়। রেস্টুরেন্ট ভুত। সেখানে গা ছমছমে অন্ধকারে খাবার দেয়া হয়, সাথে একটু পরপর ভূত এসে হাঁউমাঁউখাঁউ বলে ভয় দেখায়। হইহই করে সব বেরোলাম। রেস্টুরেন্টে গিয়ে সবার তুমুল উত্তেজনা।

কিন্তু আলো আঁধারি আর ভয় ধরানো মিউজিকের জন্যেই বোধ হয় কেউই তেমন ট্যাঁ ফোঁ করছে না। মনে মনে হাসলাম, সারাদিনে একটুও যদি চুপ হয়ে বসে এগুলো ! এইবার ঠিক হয়েছে ! একটু পরেই খাটো মাঝারি আর লম্বা মাপের তিনটে 'ভূত' কালো কাপড় আর বিদঘুটে চেহারা বানিয়ে সামনে এসে হাউহাউ করে ভয় দেখাতে শুরু করল। হটাত কি থেকে যেন কি হয়ে গেল। দেখি সামনের ছোট দুইজন তড়াক করে লাফিয়ে একটা ভূতের ঘাড়ে চেপে বসে গদাম গদাম কিল চড় ঘুষি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাকিগুলোও 'আক্রোমঅঅন্‌' বলে তেড়ে এসে ভূতেদের মুখোশ টুখোশ কেড়ে নিয়ে লাথি ঘুষি দিয়ে একদম ধরাশায়ী করে ফেললে।

লম্বা আর মেজো ভূত একপাশে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। আর ছোটভূত সবকটাকে নিয়ে জড়ামড়ি করে মাটিতে পড়ে কোঁকোঁ করতে লাগলো । হাঁ হাঁ করে সবাই ছুটে এসে কোনরকমে ক্ষুদে দানোদের হাত থেকে ভূতদের ছাড়িয়ে আনতেই তারা অবশিষ্ট কাপড় সামলে একদম চোঁ চাঁ দৌড়। একটু ধাতস্থ হয়ে বসে বাকি খাবারটা শেষ করে বিল মিটিয়ে বেরোতে বেরোতে পাশ থেকে একজন বললে, আপা, এই বাচ্চাগুলা কী খায় ? হতাশ চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, আমার মাথা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।