আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিতাসিক ট্রাজেডি

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে তিতাস নদী জুরে হো হো করে বাতাস হেসে বেড়াচ্ছে। ঠিক কড্ডায় এসে হাসি থেমে যায়। ফিরতি পথ ধরে। এমন এক বাতাস কনাকে জিজ্ঞেস করলো তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা, কি হলো, মুখটা হাড়ির মত করে ফিরে আসলে কেনো? বাতাস এসে বসলো জমির আলে, যেখানে তার প্রেমিকা নতুন পত্র পল্লব ছড়িয়ে আছে। পরকীয়া সম্পর্কের এই উজানী তান্ডব অলঙ্ঘনীয়।

তার পাশে বসবেই বাতাস। চুমুতে ভরিয়ে দেবে সারা দেহ। বললো, তিতাসের বুকটা কে যেনো বিদীর্ণ করেছে! আমার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে! প্রেয়সী মমতাময়ী। হাঁটতে পারে না, দৌঁড়াতে পারে না। যেখানে জন্মেছে সেখানেই তার যৌবন প্রাপ্তি, ঘরদোর, বিয়ে - আর অসংখ্য পাতাবহর জন্ম দিয়ে এখন সে বন্দী গৃহিনী বৃক্ষ।

বাতাস এসে সঙ্গ দেয়। অগোচরে ছুঁয়ে দেয় প্রতিটি রোমকূপ। অথচ আজকে তার কলরব নেই। যখন বাতাস আসে তখন জমিনে লাফ দিয়ে ওঠে প্রতিবেশী শৌল, জমিয়ে আড্ডা মারে। লম্বা কাণ্ড ঝাকি দিয়ে আসক্ত প্রেমিকা বলে, শুনেছিলাম আগেই, তোমার তো উড়াউড়ি না করলে চলে না, তখন থেকেই আশংকায় ছিলাম, এবার যখন বাতাস বেড়াবে - কেমন লাগবে তার! বাতাস নীরব।

যেনো তার ডানা কাটা গেছে। বৃক্ষ নীরব। তার বাতাস বিমর্ষ বলে। প্রতিবেশী শৌল নীরব। স্থলে উঠতে ভরসা পাচ্ছে না।

বন্ধু বৃক্ষ প্রেমিক-কাতর দেখে। এমন বিহ্বল অবস্থায় একদল মানুষের আগমন ঘটলো। তারা বাতাসকে খুঁজতে এসেছে। বৃক্ষের পাশে মলিন বাতাসের চেহারা দেখে তাদের মেজাজ বিগড়ে গেলো। তুমি কি এখানে বসে থাকবে? স্বক্রোধে একজন আগন্তুক প্রশ্ন করলো।

তিনি জাতিতে পরিবেশবিদ। আরেকজন বললো, তোমার শরীরে কি আছে আর অবশিষ্ট? পুরো তো গেছোই নষ্ট হয়ে? তারপরেও কেনো তিতাসের বাঁধ দেখে হতাশ হচ্ছো? প্রশ্নকর্তা জাতিতে একজন পানিবিজ্ঞানী। কানে কানে অন্য একজন মানুষ বললো, ওর সাথে এত ভালো ব্যবহারের কি আছে? ঘাড় ধরে বেটাকে নিয়ে গেলেই হলো। জাতিতে রাজনীতিবিদ এই বিক্ষুব্ধ ব্যক্তির ক্রোধ থেকে রেহাই পেলো না বাতাসের প্রেমিকা। তীব্র চোখে তাকে ভর্ৎসনা করে বললো, লজ্জা করে না বাতাসের সাথে নষ্টামি করতে? বেহায়া বৃক্ষ কোথাকার! এই দেখাচ্ছি মজা! বাতাসের চোখের সামনে তার প্রেমিকার শরীর থেকে একটা অঙ্গ টেনে ছিড়ে ফেলা হলো।

তাই দেখে বাতাস চিৎকার করে আর্তনাদ করতে থাকলো। মানুষের অন্যান্য জাতিদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলো বৃক্ষের মত, বাতাসের মত, মৎস্যের মত, তাদের কেউ বাঁধা দিলো না। বাতাসকে বন্দী করে একজন পরিবেশবিদ, একজন পানিবিজ্ঞানী ও একজন রাজনীতিবিদ নিয়ে চললো কড্ডার দিকে। যাবার সময় আহত বৃক্ষের ম্লান দুচোখের দিকে তাকিয়ে বাতাসের বুক ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। মানুষের দল খণ্ডিত তিতাসের অন্য পাড়ে নিয়ে বাতাসকে ছেড়ে দিলো।

কিন্তু মুক্তি পেয়েও বাতাস সেখানে দাড়িয়ে রইলো। দূরে, বহুদূরে আহত প্রেয়সী তখনও তার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। বাতাস সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, যে করেই হোক এবার সে ঝড় কে রাজি করাবে, একবার যেনো তার বিধ্বংসী তান্ডবে তিতাসকে উল্টে দিয়ে যায়, মানুষের এই বাঁধ যেনো উড়ে যায় তুলোর মত। দূর থেকে প্রেমিকা বৃক্ষ বাতাসের চোখের চকমকি দেখে বুঝে ফেললো বিষয়টা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.