আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার তাহলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাটা বাড়ান

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! আমাদের দেশে সরকার যখন কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় তখন এটাকে জায়েয বা শুদ্ধ করার জন্য সে বিষয়ে প্রতিবেশী দেশের একটি তুলনামুলক চিত্র উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। যখন সরকার জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি করেন, যখন বাজার দর নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তখন সরকার বা তাঁর অনুগতরা সামগ্রীক বিষয়টিকে যৌক্তিক করার জন্য প্রতিবেশী দেশের বাজার দর বা তাদের সিদ্ধান্ত-কে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন। তবে এক্ষেত্রে বেমালুমভাবে ভুলে বা চেপে যাওয়া হয় প্রতিবেশী দেশটির মাথাপিছু আয়ের বিষয়টি। বস্তুত পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আমাদের চাইতে হতে পারে। তাই বলে কিন্তু এটা বলা যাবেনা যে আমরা তাদের চেয়ে স্বস্তিতে আছি।

কারণ এখানে দামের সাথে আরো যেটা বিবেচনায় আনা উচিত তা হচ্ছে জনগণের ক্রয়-সামর্থ্য। সরকার সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করেছে। এক্ষেত্রে অনেকগুলো যুক্তির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রতিবেশী দেশের কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা। সরকারের মতে প্রতিবেশী দেশের কর্মচারীরা যদি ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরী করার সুযোগ পান তবে আমাদের কর্মচারীরা কেন তা পাবেন না। ঠিক আছে, সরকার যদি মনে করে তার কর্মচারীরা ৫৯ বছর পর্যন্ত চাকরী করলে সে এবং কর্মচারী উভয়েরই লাভবান হবেন তবে সেক্ষেত্রে বলার কিছু নেই।

তবে এক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্তে অন্যান্য যে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে তা নিরসন করার দায়িত্বও সরকারের। সরকার হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অভিভাবকত্বের চূড়ান্ত পর্যায়। একজন নীতিবান অভিভাবক যেমন তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখেন তেমনি সরকারেরও উচিত হবে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন সকলকে সমভাবে সুবিধা দেয়া। সরকারের এই সিদ্ধান্তে সমায়িকভাবে হয়তো বয়স্ক কিছু কর্মচারী বা কতিপয় উর্ধ্বতন আমলা লাভবান হবেন, তবে সামগ্রীকভাবে দেশে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাবে। প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে যারা শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে বর্তমানে চাকরীতে প্রবেশের চেষ্টায় আছেন।

স্বাভাবিকভাবে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করতে একজন শিক্ষার্থীর ২৫-২৭ বছর চলে যায়। উপরন্তু আগামী দু’বছরে স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি একেবারে বন্ধ থাকার কারণে চাকরী প্রাপ্তিতে স্থবিরতা দেখা দিবে। কাজেই এখন যারা চাকরীতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সসীমার শেষ পর্যায়ে আছেন তাদের জন্য চাকরীর বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি ক্ষতিকর। চূড়ান্ত অভিভাবক হিসেবে সরকারের উচিত হবে এ সমস্ত চাকরি প্রার্থীদের দিকে বিশেষ নজর দেয়া। এক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে সরকার চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্তত দু’বছর বৃদ্ধি করতে পারেন।

সরকার যেমন চাকরীর বয়সসীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের ব্যবস্থাকে উদাহরণ হিসেবে নিয়েছে তেমনি চাকরীতে প্রবেশের বয়সসীমার ক্ষেত্রেও প্রতিবেশী দেশের একটি রাজ্যের সিদ্ধান্তকে এদেশের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারেন। সম্প্রতি পশ্চিবঙ্গের রাজ্য সরকার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে যোগদানের বয়স ৪০ বছর করেছে। এক্ষেত্রে আগের বয়সসীমার সাথে আট বছর বেশি করা হল। রাজ্য সরকারের এ সিদ্ধান্তে তফসিলি জাতি ও উপজাতির বয়সসীমা ৪২ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫ বছর। ওবিসি ও প্রতিবন্ধীদের বয়সসীমা ৪০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৩ বছর।

বর্তমান প্রেক্ষিত বিবেচনায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি সংক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের উক্ত সিদ্ধান্তটি আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও যথার্থভাবে প্রযোজ্য হতে পারে। সরকার যদি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের উল্লেখিত সিদ্ধান্তটি উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করে আমাদের দেশেও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্তত ২ বছর বৃদ্ধি করেন তাহলে সরকারি চাকরির বয়স বাড়ানোর কারণে ইমিডিয়েট ক্ষতিগ্রস্থরা কিছুটা হলেও তাদের ক্ষতিটা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবেন। সংগত কারণেই আমার মনে হয় এ বিষয়টা নিয়ে ভাববার মতো পর্যাপ্ত দায়বদ্ধতা সরকারের নীতি-নির্ধারকদের রয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.