আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বছরজুড়ে ‘গলাবাজি’ ছাড়া কোনো সফলতা নেই বিএনপি’র

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২০১১ সালে ছয়টি হরতাল ও তিনটি রোডমার্চের মাধ্যমে বছর পার করেছে। বছরজুড়ে নানা ইস্যু পেলেও নেতারা ‘গলাবাজি’ আর মিডিয়ায় মুখ দেখানো ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেননি। এ বছর তারা হারিয়েছেন দলের মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নেতারা সরকারবিরোধী জোরালো বক্তৃতা দিলেও রাজপথে চোখে পড়ার মতো কোনো আন্দোলন করতে পারেননি। সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে তিনটি রোডমার্চের মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারলেও হরতালে জোরালো কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি দলীয় নেতাকর্মীরা।

এ বছর বেশ কিছু ইস্যু হাতে পেলেও সরকার হার্ড লাইনে থাকায় মাঠ দখল করতে ব্যর্থ হয় দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, জাতীয় সংসদের ভোলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া নির্বাচনে পরাজয়, বার বার জ্বালানি তেল, সিএনজি গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, জুলাই মাসে হরতাল চলাকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে পুলিশের নির্যাতন, নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচনে সেনাবাহিনী না দেয়া, ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগ করা, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে আসা দলীয় লোকদের ওপর পুলিশি হামলার মতো ইস্যু পেয়েও আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয় বিএনপি। দলের তৃণমূল কর্মীদের দাবি তারা আন্দোলন করতে রাস্তায় নামতে চাইলেও নেতৃত্বের কমান্ড না পেয়ে নামতে পারছেন না। কয়েকটি সমমনা দলকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পারাটাই বিএনপি’র এ বছরের সর্বোচ্চ সফলতা বলে মনে করেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। এ বছর বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে দুটি নতুন মামলা দেয়া হয়।

দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি করা হয়। এছাড়া মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মানি লন্ডারিং মামলায় সাজা দেয় আদালত। বছরের প্রথম দিকেই ১৬ মার্চ দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। এরপর ২০ মার্চ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পায়ের চিকিৎসার জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার প্রাক্কালে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব পালনের মৌখিক নির্দেশ দেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার পর দলের স্থায়ী কমিটির সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন। দীর্ঘ আট মাস ধরে তিনি ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছেন। গত বছর ১৩ নভেম্বর দীর্ঘ ৩৮ বছরের বসতবাড়ি সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাড়ি ছাড়ার পর পাঁচ মাস ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের গুলশানের বাড়িতে অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। এরপর এ বছর ২১ এপ্রিল বেগম তিনি ভাড়াবাড়ি ‘ফিরোজায়’ উঠেন। এ বছর বিভিন্ন দাবিতে ছয়টি হরতাল পালন করে বিএনপি।

ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল, খালেদা জিয়াসহ আড়িয়ল বিল এলাকার ২১ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, শেয়ারবাজারের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির দাবিতে হরতাল পালন করে। পিকেটারবিহীন এ হরতাল জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করেছে বলে দাবি করে দলটি। এরপর ৫ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে একটি হরতাল পালন করে বিএনপি। এরপর টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল পালন করে ১২ ও ১৩ জুন। দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রক্ষা, সদ্য উত্থাপিত আগামী অর্থবছরের বাজেট এবং নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার না করা।

এ বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার প্রতিবাদে টানা তিনদিনের হরতাল পালন করে দলটি। এ হরতালের প্রথম দিন ৬ জুলাই বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুককে পুলিশ বেধরক লাঠিপেটা করে। পুলিশের হাতে মার খেয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক তিন মাস আমেরিকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর প্রায় দুই মাস পর জালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২২ সেপ্টেম্বর একদিন ও ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগ করার প্রতিবাদে ৪ ডিসেম্বর সর্বশেষ হরতাল পালন করে বিএনপি। ৪ ডিসেম্বর হরতাল পালনকালে সাদেক হোসেন খোকাকে পুলিশ হেফাজতে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ করলেও এর বিরুদ্ধে তেমন কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দলটি।

বছরের ছয়টি হরতালের আগে নেতাকর্মীরা ঘোষণা দিয়েও মাঠে থাকেনি। কোনো হরতালেই পিকেটিং ও মিছিল করতে দেখা যায়নি বিএনপির নেতাকর্মীদের। এমনকি শরিক ও সমমনা দলের কোনো নেতাও রাস্তায় নামেনি পুলিশের ভয়ে। হরতালে মাঠে না থাকলেও দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনগুলোতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। টিভি ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী।

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ বছর বেশ কয়েকবার বিদেশ সফর করেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত ছিল উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সৌদি আরব সফর করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সফরে আসা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে সাক্ষাত করেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, জার্মানির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান ভুলফ, ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি।

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে সাক্ষাত করে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সারা বছরই বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে নেয়ার জন্য তৎপরতা চালায়। এ নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যস্ত সময় কাটান। জাসদ রব, বিকল্প ধারা, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে অনেকগুলো বৈঠক করেন তিনি। এসব দলের নেতাদের সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও আলাদা আলাদা বৈঠক করেন।

এতে তারা ইতিমধ্যেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিজেদের পাশে পেয়েছেন এলডিপি ও কল্যাণ পার্টিকে। বিকল্প ধারা সরকারবিরোধী আন্দালনে এক সঙ্গে কাজ করার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তাদের তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক করলেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে পাশে পাননি তাকে। চারদলীয় জোট সক্রিয় করা ও জোট সম্প্রসারণের জন্য বছরের শেষ দিকে বিএনপি বেশ তৎপর হয়ে ওঠে। এ সময় বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।

সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর চারদলীয় জোটের বৈঠক শেষে নেতারা সাংবাদিকদের জানান, আরেকটি বৈঠকের পরই তারা দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা দেবেন। এ জোটে ১৬টি দল থাকতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। বছরের প্রথম দিকে দলের মহাসচিব হারানোর বেদনা কাটিয়ে ওঠার আগেই বছরের মাঝামাঝি সময়ে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রবাসী অভিভাবক হিসেবে পরিচিত আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কমর উদ্দিনকে হারায়। বছরের শেষ মাসে ৩০ ডিসেম্বর দলের আর একজন বড় নেতাকে হারায় বিএনপি। তাদের দলের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান বীর প্রতীক মারা যান এদিন।

বিএনপি’র সব পর্যায়ের নেতাদের দাবি ২০১২ সালে তারা সরকার পতন আন্দোলন চাঙ্গা করতে চান। এ আন্দোলনে সফলতা কতখানি আসবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.