আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিতাস বাঁচান দেশ বাঁচান

কিছু দিন আগে তিতাস নিয়ে একটি রিপোর্ট দেখিছিলাম একুশে টেলিভিশনে। দেখলাম ঠিক তিতাস নদীর মাঝখানে একটি রাস্থা বানানো হয়েছে। আমি চিন্তা করতে পারিনা যে, এত টুকু সাধারণ জ্ঞান ও তাদের মধ্যে কাজ করেনি যে এর ফলে কি হতে পারে। এটা বুঝার জন্য আর খুব বেশী জ্ঞানী কিংবা বুদ্ধিজীবী হতে হয় না। দিনের আলোর মত স্পষ্ট বুঝা যায় যে নদী তে বাঁধ দিলে নদীর স্বাভাবিক গতি মরে যাবে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হবে, কৃষিকাজ বাধা গ্রস্থ হবে, জ্বেলেরা মাছ ধরতে পারবেনা, নদীর উপর বয়ে চলা স্বাভাবিক নৌ যোগাযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। তিতাসের দুই পাড়ের পানির ভারসাম্য ঠিক থাকবেনা। একজন সাধারণ মানুষ ও আশা করি এই বিষয় গুলো বুঝতে পারে। যারা নদী বিশেষজ্ঞ তারা হয়তবা আরো অনেক বেশী বলতে পারবেন। কিন্তু দুঃখ যে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা এসব বুঝেনা।

বুঝতে চান ও না। বুঝার দরকার ও মনে করে না। কিন্তু এই ভাবে আর কত দিন। একজন স্থানীয় মানুষ কে টেলিভিশন রিপোর্ট এ বলতে দেখলাম যে, সে আফসোস করে বলতেছে যে আমরা কি বাংলাদেশ এ বসবাস করি নাকি অন্য কোথাও! দেশের সরকার কেমন করে এই কাজ করতে পারে। উনারা কি আমাদের কথা একবার ও ভাবে নাই।

তাহলে কার জন্য এই রাস্থা। কারা এর উপর দিয়া চলাচল করবে। না, এসব কিছুই আমাদের সরকার ভাবে নাই। তাই বলে আমরা যারা আমজনতা আছি তারাও কি ভাববনা। তা কি করে হয়।

সাধারণ মানুষের তো আর বিবেক খোয়া যায় নাই। আমরা যারা প্রবাসে থাকি তারা হয়তবা একটু বেশী আবেগী। আমার সাথে যারা এইখানে সুইডেন র ছোট শহর লুন্দ এ থাকে তাদের সাথে হঠাৎ একদিন কথা বলতে বলতে তিতাস এর কথা চলে আসে। তারা সবাই এই বিষয় টা জানে এবং এ নিয়ে খুব চিন্তা গ্রস্থ ও মনে হল। কি করা যায়।

ভাবতে ভাবতেই বন্ধু রিফাত আর শাকিল এর মনে চলে এলো এর সুন্দর ধারনা। যে আমরা অন্তত পক্ষে আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানাতে পারি। কি হবে না হবে সেটা পরের বিষয়। বলা ও তো যায় না আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের টনক নড়লেও ত নড়তে পারে। যেই ভাবনা সেই কাজ।

ভাবনার সাথে যুক্ত হল আর অনেকেই। গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করল শাফি ভাই এবং তার পরিবার। উনারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে লুন্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ভবনের সামনে মানব বন্ধন করবে। এর পর সেখান থেকে লুন্দ শহরের কেন্দ্রে যাওয়া হবে। সেখানে আমরা নিরব প্র্রতিবাদ যানাবো।

সময় এবং তারিখ ঠিক করা হল। এর মধ্যে রিফাত ভাই, শাকিল এবং শাফি ভাই উনারা সারা রাত কাজ করে বেশ কিছু সুন্দর প্লে কার্ড বানাল। এক একটি প্লে কার্ড যেন অনেক অনেক আবেগ দিয়ে গড়া। লিখা গুলো ছিল অনেক গাড় নীল ঠিক যেন তিতাসের নীল কষ্ট মাখা। আগের দিন এ ব্যাপারে স্থাণীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমুতি নেয়া হল যে সকাল দশ টা থেকে বারোটা পর্যন্ত নিরব প্রতিবাদ জানানোর জন্য।

আস্তে আস্তে সব কিছু প্রস্থুত । এবার শুধু অপেক্ষা। প্রতিবাদ এর দিন ঠিক সকাল দশ টায় আমি আতিক ভাই এর বাসায় যায়। পুরু ব্যাপারটার পিছনে ছিল উনার অনেক ত্যগ এবং প্রানোদনা। ধীরে ধীরে সবাই উনার বাসায় এসে হাজির।

আরো অনেকর ই আসার ইচ্ছা ছিল কিন্তু আসতে পারে নাই। বিদেশের জীবন খুবই ছকে বাঁধা। এখানে জীবন চলে ঘড়ির কাটা অনুসারে। কি ই বা করবে। সবাই এখানে পড়াশোনা করে।

সেই সাথে নিজস্ব খরচ যোগাতে কিছু কাজ ও করতে হয়। ভালই লাগে সুইডেন এর এই লুন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা প্রায় শখানেক বাংলাদেশী ছাত্র আছি। কেউবা মাস্টার্স করছি কিংবা পি এইচ ডি করছে। সবার সাথে সবার ভাল যোগাযোগ আছে। যে যায় করুক না কেন সবার ই হৃদয়ে বাংলাদেশ।

যাই হোক যে ক জন এসেছে তারা সবাই মিলে রউনা দিলাম বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পাস এর উদ্দেশ্যে। কথা ছিল যে সবাই ঠিক সাড়ে দশটায় একটা নির্দিষ্ট যায়গায় উপস্থিৎ থাকবে। এর পরে আধা ঘন্টা চলবে প্রস্তুতি। আর এগারো টা থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। কিন্তু বিধি বাম।

জাতে আমরা বাঙালী। ইউরোপ , আমেরিকা কেন, আমার ধারনা মঙ্গল গ্রহে থাকলেও সময় এর ব্যাপারে আমরা একটু অলস ই থেকে যাব। এর মধ্যে দেখা গেল শাফি ভাই বেশ কয়েক জন কে ফোণ করে আসার জন্য বলতেছে। অপর পাশ উত্তর শোনা যাচ্ছে, এইত ভাইয়া চলে আসতেছি। বুঝেন না ছুটির দিন তাই গত রাতে আর আগে থেকে এলার্ম দিতে মনে ছিলনা।

হাঁ আমরা এখুনি চলে আসছি। ঘড়ির কাটাই তখন ঠিক এগারটা। আমরা সবাই হাতে প্লে কার্ড নিয়ে দাড়িয়ে গেলাম। আশপাশ থেকে মানুষ হেটে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার ফিরে তাকাচ্ছে যে, কি হচ্ছে দেখার জন্য।

কেউ কেউ আবার অতি আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসে আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেছে যে তোমরা কোন দেশ থেকে এসেছো। কিংবা তোমরা কিসের প্রতিবাদ করতে এসছো। রিফাত ভাই এর দায়িত্ব ছিল কেউ কোন কিছু জানতে চাইলে তা বুঝিয়ে বলার। উনি উনার দায়িত্ব যথারীতী পালন করলেন। প্রতি উত্তরে কিছু সমবেদনা পাওয়া গেল।

আহারে এটা একটা কথা হল। এটা কেমন করে হয়। এইভাবে একটা নদীকে গলা টিপে হত্যা করা ত ঠিক হবেনা। এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করার কারনেই আজকে পৃথিবীর এই অবস্থা।

তোমদের জন্য শুভ কামনা রইল। আশা করি তোমরা সফলকাম হবে। এর মধ্যে শাকিল, সাইফুল ভাই উনারা ভিডিও ফুটেজ এর কাজটা আশা করি ভাল ভাবেই করেছেন। দেখতে দেখতে বারোটা বেজে গেল। আমরা সবাই যার যার কাজে চলে গেলাম।

এর পর থেকে শুরু হল অপেক্ষা। যে মিডিয়া তে কতো টুকু সাড়া পাওয়া যায়। রিফাত ভাই কে এই কাজে যথেষ্ট পাকা মানুষ ই মনে হল। উনি উনার পক্ষে সম্ভব যত টুকু করার ছিল তাই করছেন। সেই সাথে বেশ ভাল সাড়া ও পাওয়া ও গেছে।

আমাদের প্রতিবাদ এর ঠিক পরের দিন এ একুশে টেলিভিশন যথেষ্ট গুরুত্ত সহকারে এই সংবাদ টা ভিডিও ফুটেজ সহকারে প্রচার করল। এর ই মধ্যে বিভিন্ন দৈনিক এও এই সংবাদ চলে আসলো। আমার ধারণা এইটা একটা সূচনা মাত্র। হয়তবা কেউ কেউ নড়ে চড়ে বসেছেন। হুম তাইতো।

এতো হতে দেয়া যায়না। একদিন শুরু হয়েছিল ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে। এর পরিণাম আর নতুন করে বলার কিছু নেই। এখন শোনা যাচ্ছে টিপাইমুখ এ বাঁধ এর কথা। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এই নিয়ে অনেক লিখা লিখি হচ্ছে।

অনেক প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে। বিভিন্ন ব্লগ এ ব্লগার রা লিখে যাচ্ছেন আপন মনে। কিন্তু যারা আসলে সত্যিকার অর্থে এসব বন্ধ করতে পারে তারা কি ভাবছেন? আপনাদের কর্ণ কুহুরে কি এত টুকু প্রবেশ করছে যে জনগন এইসব বাঁধ চায়না। প্রকৃতি কোন ভাবেই এই সব বাঁধের মধ্যে নিজেকে বন্দি করে রাখতে চায়না। আপনাদের এতো কিসের জুজুর ভয়।

কেন আপনারা চুপ করে আছেন। আপনারা ত সবাই বাংলাদেশী। দেশের মানুষের ভাল মন্দ দেখার জন্য আপনাদের কে নির্বাচিত করা হয়েছে। কোন প্রতিবেশী দেশের যোগাযোগ ভাল মন্দ দেখার জন্য নয়। তিতাস কে তার আপন গতিতে ফিরিয়ে দিন।

নইলে তিতাসের জল একদিন আপনাদের চোখের জলে পরিণত হবে। তখন আর দেখার কেউ থাকবেনা... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.