আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোপাল ভাড়ের মজার গল্প

আমি সত্য জানতে চাই গ্রাম বাংলার গল্পে, কিচ্ছা কাহিনীতে গোপাল ভাঁড়ের গল্প প্রায়শই শোনা যায়। আমি নিজেও গোপাল ভাঁড়ের গল্প শুনেই বড় হয়েছি। পাঠকদের জন্য গোপাল ভাড়ের কয়েকটি মজার গল্পঃ পরিচয়ঃ কৃষ্ণনগরের উত্তর দিকে ঘুর্নি নামের এক গ্রামে গোপাল ভাঁড়ের ন্ম। নয় বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। গরীব বলে লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি।

কিন্তু অল্পশিক্ষা আর তাঁর নিজের অসীম বুদ্ধি ও প্রতিভার গুনেই তিনি আজও বাচ্চা বুড়ো সকলের মনে রয়ে গেছেন। নদীয়ার সম্রাট মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র নানা লোকের মুখে গোপালের রসিকতা ও বুদ্ধিসত্তার কথা শুনে তাঁকে রাজসভায় স্থান দিয়েছিলেন। সেই থেকে গোপালের পরিচিতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কথায় বলে নাপিতরা ধূর্ত হয়। গোপালরা জাতিতে নাপিত ছিলেন।

গোপাল অসম্ভব ধূর্ত ছিলেন কিন্তু তাঁকে কখনোই নাপিত বলা চলে না। তাঁর অসম্ভব বুদ্ধিমত্তা তকে শ্রেষ্ঠ ভাঁড় রূপে পরিচিতি দিয়েছে। তাই তিনি গোপাল ভাঁড়। জোঁকসঃ ১। নবাবদের খেয়ালের অন্ত নেই।

একবার নবাবের খেয়াল হলো- মাটির নীচে কি আছে তা জ্যোতিষী পণ্ডিত দ্বারা গণনা করিয়ে নিতে হবে। আর গণনা সত্য কি মিথ্যা তা তো সঙ্গে সঙ্গে কিছু মাটি খুঁড়েই বোঝা যাবে। মাটির নীচে কি আছে সঠিকভাবে বলে দিতে পারলে- নবাব প্রত্যেক পণ্ডিতকে এক হাজার আশরফি করে পুরস্কার দেবেন। না বলতে পারলে আজীবন কারাবাস। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র কিছু দরিদ্র জ্যোতিষী পণ্ডিতকে নবাব-দরবারে পাঠিয়েছিলেন- তারা কেউ মাটির নীচে কি আছে বলতে না পারায় কারাগারে রয়েছে।

এমন খবর পেয়ে স্বভাবতঃই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বিষণ্ণ মুখে বসেছিলেন, তিনি ভাবছিলেন একমাত্র তাঁরই দোষে এতগুলো ব্রাহ্মণ পণ্ডিতকে নবাবের কারাগারে পচে মরতে হবে। সদাহাস্যময় গোপাল মহারাজের ঐ ভাব দেখে বলল- মহারাজ, অমন গোমরামুখ করে বসে আছেন কেন? মহারাজ গোপালের কাছে সব ঘটনা বলেলেন। গোপাল শুনে বলল- এর জন্য ভাবনা কি? আপনি নবাবের কাছে একটি চিঠি দিন যে, একজন বড় জ্যোতিষী পাঠালাম, যিনি অনায়াসে মাটির নীচে কি আছে গণনা করে বলে দিতে পারেন। মহারাজ অবাক হয়ে বললেন- গোপাল, তুমি গণনা করবে? -কি করব জানি না। তবে নিজেও বেঁচে আসব, আর দরিদ্র ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণকে নবাবের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনবো, তাছাড়া আপনার সম্মানও অক্ষুণ্ণ রাখব।

মন্ত্রী বললেন-এ অসম্ভব। গোপাল বলল-আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আমি সহজেই কার্যসিদ্ধ হয়ে ফিরে আসব। মহারাজ বললেন- তুমি যদি দরিদ্র জ্যোতিষী পণ্ডিতদের নবাবের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে পার- আমি তোমাকে হাজার টাকা পুরস্কার দেব। গোপাল বাড়ি ফিরে গিয়ে ভাঙা খাটের একটা ভাঙা পায়াকে চৌদ্দ পর্দা শালুর কাপড় দিয়ে বেশ ভালভাবে জড়িয়ে নিল।

গরদের কাপড়, গরদের চাদর, কাঁধে নামাবলী, মাথায় লম্বা টিকি ঝুলিয়ে এবং চৌদ্দ পর্দা কাপড়ে জড়ানো খাটের পায়াখানা হাতে নিয়ে নবাব-দরবারে গিয়ে উপস্থিত হ’লো। নবাবকে যথোচিত সেলাম জানিয়ে বলল- খোদাবন্দ, আমাকে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আপনার দরবারে পাঠিয়েছেন। মাটির নীচে কি আছে- আমি তা অনায়াসেই গণনা করে বলে দিতে পারি। গোপালের কথা শুনে নবাব খুব সন্তুষ্ট হয়ে বললেন- আপনার চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছি- আপনি একজন মহান পণ্ডিত। আপনি আসন গ্রহন করুন এবং একটু বিশ্রাম করে বলুন- মাটির নীচে কি আছে।

গোপাল নির্দিষ্ট আসনে বসে- চৌদ্দ পর্দা জড়ানো খাটের পায়ার তিন পর্দা সরিয়ে মন্ত্র পড়বার ভাণ করে, নবাবকে বলল- হুজুরালি, সর্বং সারং খট্টাঙ্গ পুরাণম্। হিন্দু পণ্ডিতং ন শক্যং ভূতলগণনম্। - পণ্ডিতমশাই, আপনার এ শ্লোকের অর্থ কি? গোপাল মুচকি হেসে বলল- হুজুরালি, অষ্টাদশ পুরাণের সার এই খট্টাঙ্গ পুরাণ। এতে বলছে মাটির নীচে কি আছে- তা কোন হিন্দু পণ্ডিতই গণনা করে বলতে পারবে না। গোপালের কথা শুনে নবাব বললেন- তবে কারা এরূপ গণনা করতে পারবে মহাশয়? গোপাল বলল- সেকথাও উল্লেখ আছে নবাব সাহেব।

যবন বা ম্লেচ্ছং ভূতলগনং শক্যং। হিন্দু পণ্ডিতা পৃথিবী বা তদূর্ধ্বং। অর্থাৎ যবন বা ম্লেচ্ছগণকে মরবার পরে মাটির নীচে কবর দেওয়া হয়। অতএব যবন বা ম্লেচ্ছ পণ্ডিতগণ ভূতলের নীচে কি আছে অনায়াসে গণনা করে বলে দিতে পারবে। আর যেহেতু হিন্দু পণ্ডিতগণ মরবার পর তাদের দাহ করা হয় অতএব হিন্দু পণ্ডিতগণ অনায়াসে মাটি ও উপরের আকাশে কি আছে সহজেই গণনা করে বলে দিতে পারবে।

আপনি অনর্থক কতগুলো হিন্দু পণ্ডিতকে কারাগারে আটকে রেখে কষ্ট দিচ্ছেন। গোপালের যুক্তিপূর্ণ কথা ও শাস্ত্রবচন নবাবের খুব মনঃপূত হলো, তিনি সমস্ত হিন্দু পণ্ডিতকে মুক্ত করে দিলেন এবং প্রত্যেককে একশো টাকা পুরস্কার দিয়ে বদায় দিলেন। তারপর গোপালের হাতে পাঁচশো টাকা দিয়ে বললেন- আপনি যথার্থ কথা বলেছেন পণ্ডিতমশাই। আপনি না বললে আমি অনেক হিন্দু পণ্ডিতকে অনর্থক কষ্ট দিতুম। এই সামান্য কিছু নিন।

আমি এক্ষুণি কাঠমোল্লা পণ্ডিতদের ডেকে এনে মাটির নীচে কি আছে তা গণনা করাচ্ছি। নবাবের কাছ থেকে পাঁচশ টাকা পুরস্কার পেয়ে, খট্টাঙ্গ পুরাণখানা হাতে নিয়ে গোপাল একরকম নাচতে-নাচতে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় এসে উপস্থিত হলো। নবাবের কারাগার থেকে যেসব জ্যোতিষী পণ্ডিত মুক্ত হয়েছিল- তারাও এসে সকলেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় উপস্থিত হলো। গোপালের মুখে সব ঘটনা শুনে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ও সভার সকলেই জয়ধ্বনি করে উঠল- জয় গোপালের জয়। জয় খট্টাঙ্গ পুরাণের জয়।

মহারাজ গোপালকে প্রতিশ্রুতিমত এক হাজার টাকা পুরস্কার দিয়ে বললেন- তোমার খট্টাঙ্গ পুরাণখানা একবার দেখাও তো। গোপাল পুরস্কারের টাকা ট্যাঁকে গুঁজে খট্টাঙ্গ পুরাণের ওপরে জরানো চৌদ্দ পর্দা কাপড় সরিয়ে ফেলতেই খাটের একটি ভাঙা পায়া বেরিয়ে পড়ল। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় তুমুল হাসির রোল উঠল। ২। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় একজন লোক মাঝে মাঝেই আসত।

সে লোকটা নানা ভাষায় কথা বলত। কি যে তার আসল মাতৃভাষা, কোথায় তার আসল দেশ কেউ জানতো না। সবগুলো ভাষাতেই সে সমান দক্ষ। প্রায় সবগুলো ভাষাতেই সে লিখতে পড়তে পারত। যেমন বাংলা বলত, তেমনি হিন্দী বলত, আবার ফার্সীও বলত।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র একদিন গোপালকে বল্লেন, 'গোপাল, লোকটা কি জাতি এবং ওর মাতৃভাষাই বা কি, তুমি যদি ঠিক ঠিক বলতে পার- আমি তোমাকে পুরস্কার দেব'। মহারাজের কথা শুনে গোপাল বলল, 'এ আর তেমন কষ্ট কি? আমি দু’দিনের মধ্যেই ঠিক বলে দিতে পারব'। গোপালের কথা শুনে মন্ত্রী মশায় বল্লেন, 'ওহে গোপাল, কাজটা যত সোজা ভাবছ, ততটা সোজা নয়। লোকটা তোমার থেকেও সেয়ানা। ও সহজে ধরা দেবে না'।

গোপাল বলল, 'মন্ত্রী মশাই, আমার নামও গোপাল ভাঁড়। দেখবেন, আমি লোকটির আসল পরিচয় বের করে নেব'। পরদিন গোপাল অনেক আগেই এসে রাজসভার দ্বারে একপাশে লুকিয়ে রইল। কারন, বিশেষ কাজে ঐ দিনই ঐ লোকটার রাজসভায় আসার কথা ছিল। কিছুক্ষণ পরেই ঐ লোকটা এল।

গোপাল বেরোতে যাবার ভাণ করে-আচমকা লোকটাকে ধাক্কা দিল, লোকটা একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বলল, 'সঁড়া অন্ধা! দিনের বেলা চোখে দেখতে পাওনা? এই বয়সেই চোখের মাথা খেয়ে বসে আছ'? গোপাল বলল, 'গালাগাল দাও, আর যাই বল- তুমি যে উড়ে আমি বুঝতে পেরেছি। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়ে তোমার মুখ থেকে সবার আগে যে ভাষা বেরিয়েছিল, ওটা-তোমার মাতৃভাষা-তুমি বাপু উড়ে'। লোকটা শেষ পর্যন্ত স্বীকার করল যে, সে উড়ে। মহারাজ সন্তুষ্ট হয়ে গোপালকে একশো টাকা পুরস্কার দিলেন। ৩।

ছোটবেলা গোপাল ভাঁড় কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে বুড়োরা তাকে ক্ষেপাত আর হাসত, ‘গোপাল, এর পর তোমার পালা। ’ শুনে গোপালের খুব রাগ হত। বুড়োদের কিভাবে জব্দ করা যায়, সেই পথ খুঁজতে লাগল এবং এক সময় পেয়ে গেল। শবদাহ আর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে গিয়ে ঐসব বুড়োদের বলতে লাগল, ‘এর পর তোমার পালা!’ ৪। গোপাল নন্দীগ্রামে যাবে শুনে গোপালের প্রতিবেশী এক গোঁড়া বৈষ্ণব এসে গোপালকে বলল, "নন্দীগ্রামের পরম বৈষ্ণব ত্রিলোচনের ছেলে বটুকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।

তুমি যখন নন্দীগ্রামে যাচ্ছ-তখন আমার জামাইয়ের একটু খোঁজ নিও। নিন্দুকেরা নানা কথা বলে কিন্তু আমার জামাইকে তোমার খুবই ভাল লাগবে। গোঁড়া বৈষ্ণব বংশের ছেলে, ভালো না হয়ে যায় কোথায়? অনেক বেছে বেছেই তো মেয়েকে ওখানে বিয়ে দিয়েছি"। দিন সাতেক পরে গোপাল যখন নন্দীগ্রামে থেকে ফিরে এল, সেই বুড়ো বৈষ্ণব ভদ্রলোক তখন গোপালের কাছে জামাইয়ের খোঁজ নিতে এল। -ওহে গোপাল, আমার জামাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে? -দেখা হয়েছে বৈকি, আমি তো দিন সাতেক বলতে গেলে আপনার জামাইয়ের ওখানে ছিলাম।

-তাই নাকি? তবে তো ভালোভাবেই পরিচয় হয়েছে। আমার জামাইকে তোমার কেমন লাগল গোপাল? -আপনার জামাইটি খুবই ভালো, তবে... -তবে কি গোপাল? গোঁড়া বৈষ্ণব ওরা। -একটু পেঁয়াজ খায় আর কি। -বলো কি গোপাল, পেঁয়াজ খায়! ওর বাবা গোঁড়া বৈষ্ণব। বৈষ্ণবের ছেলে হয়ে পেঁয়াজ খায়? -রোজ কি খায় তাই বলে? এই মাঝে মাঝে খায়, যখন একটু মাংস-টাংস খায়।

-কি বলছ গোপাল, আমার জামাই মাংস খায়? বৈষ্ণব বংশের ছেলে হয়ে মাংস খায়- এ যে আমি ভাবতেই পারছি না একদম। -এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই, রোজ কি আর মাংস খায় নাকি? এই যখন একটু টানে তখনই খায়। -টানে মানে? সে তামাক খায় নাকি? -না তামাক নয়। গুরুজনের সামনে তামাক খাবে কি করে? টানে মানে- যখন একটু মদ টানে। তবে আপনার জামাইয়ের বেশ জ্ঞানগম্যি আছে বৈকি।

সবার সামনেই কি আর মদ টানে, লুকিয়ে লুকিয়ে টেনে আসে। -কি বলছ গোপাল, আমার জামাই মদ খায়? -রোজ কি আর মদ খায় নাকি? এই যেদিন একটু এদিক-ওদিক যায়, সেদিন কেবল খায়। -এদিক-ওদিক যায় মানে? -এই পাড়ায়-টাড়ায় যায়। বুঝলেন না- বেশ্যা পাড়ায় মেয়েছেলেরা তো মোটেই ভাল নয়, ওদের পাল্লায় পড়ে মাঝে মাঝে মদ টানতে হয়। গোপালের কথাশুনে বৈষ্ণব ভদ্রলোক আর স্থির থাকতে পারলেন না, অস্থিরচিত্তে বাড়ি ফিরে গেলেন।

তারপর আর গোপালের কাছে কখনও জামাইয়ের খোঁজ নিতে আসেননি, নিজেও জামাইবাড়িতে আর বেড়াতে যাননি। ৫। গোপাল যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি। মাথার ওপর গনগনে সূর্য। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গোপাল এক গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে বসল।

বেশি গরম লাগায় ফতুয়াটা খুলে পাশে রেখে একটু আয়েশ করে বসল। বসে বিশ্রাম নিতে নিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল, নিজেই জানে না। ঘুম যখন ভাঙল গোপাল দেখে, তার ফতুয়াটা চুরি হয়ে গেছে। হায় হায়! এখন কী হবে! খালি গায়ে তো আর শ্বশুরবাড়ি ওঠা যায় না। কী আর করা।

সে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে বলতে লাগল, ‘হে ভগবান, রাস্তায় অন্তত ১০টি মুদ্রা যেন কুড়িয়ে পাই, তাহলে পাঁচ মুদ্রায় আমার জন্য একটা ভালো ফতুয়া কিনতে পারি। আর তোমার জন্য পাঁচটি মুদ্রা মন্দিরে দান করতে পারি···। ’ আর কী আশ্চর্য! ভাবতে ভাবতেই দেখে, রাস্তার ধারে কয়েকটি মুদ্রা পড়ে আছে। খুশি হয়ে উঠল গোপাল, গুনে দেখে পাঁচটি মুদ্রা! গোপাল স্বগত বলে উঠল, ‘হে ভগবান, আমাকে তোমার বিশ্বাস হলো না, নিজের ভাগটা আগেই রেখে দিলেন। ৬।

পাড়া-পড়শী অনেকের বাড়িতেই মেয়ে-জামাই বেড়াতে এসেছে দেখে, গোপালের স্ত্রী একদিন গোপালকে বলল- তুমি কি গা! জামাই আনার নাম পর্যন্ত কর না। দু’বছর হয়ে গেল, একবারটি জামাইকে আনলে না? স্ত্রীর কথা শুনে গোপাল বলল- জামাই আনা কি চাট্টিখানি কথা! কত খরচ বলতো? গোপালের কথা শুনে গোপালের স্ত্রী বলল- তুমি দেখছি হাড় কেপ্পন হয়ে গেলে গো। রাজবাড়ি থেকে এত টাকা-পয়সা আনছ- সে টাকা-পয়সায় ছাতা পড়ে গেল। আমি কোন কথা শুনতে চাইনে- আজকালের মধ্যে জামাই না আনলে আমি বাপের বাড়ি চলে যাব। গোপাল ভাবল, এবার আর জামাই না এনে উপায় নেই, তাই সে বিকেল বেলায় জামাই নিয়ে ফিরল।

জামাই আসবার পরও প্রায় একমাস হ’তে চলল, জামাই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে নড়তে-চায় না। বসে বসে এমন চর্ব্য-চূষ্য-লেহ্য-পেয় পাবে কোথায়? জামাই শাশুড়ীকে বলল- মা, এখানে এসে আমার শরীরটা বেশ ভাল হয়েছে, ভাবছি আরও কিছুদিন থাকব। জামাইয়ের কথা শুনে শাশুড়ী বলল- তা তোমার যতদিন ইচ্ছা থাক না। তোমার শ্বশুর তো এখন দু’হাতে টাকা আনছে। যতদিন ইচ্ছে থাক।

শাশুড়ী ও জামাইয়ের কথোপকথন শুনে গোপাল মনে মনে প্রমাদ গুনল। না, আর নয়। যেভাবেই হোক, বুদ্ধি করে জামাই বাবাজীকে তাড়াতে হবে, নইলে যে জমানো টাকা ভাঙতে হবে। জামাই পোষা না হাতী পোষা! মনে মনে ফন্দি এঁটে সে জামাইকে বলল- বাবাজী, এ পাড়ায় ভীষণ ছিঁচকে চোরের উৎপাত। এই যে দেখছ লেবুগাছটা, এতে হাজার হাজার লেবু এলেও- আমি সময়মত দেখতে পাই না, বেচলেও বেশ পয়সা হ’তো।

তুমি বাপু একটু লেবু গাছটার দিকে নজর রেখো। সব সময় নজর রাখতে হবে না, বিশেষ করে সন্ধ্যের পরে একটু নজর রেখো। বাতি নিভিয়ে দু’চারদিন গাছের দিকে নজর রাখলে নিশ্চয় চোর ধরতে পারবে। শ্বশুরের কথা শুনে জামাই বলল- আপনি কিছু ভাববেন না, চোর আমি ধরবই। সেদিন সন্ধ্যেবেলা গোপাল রাজবাড়ি থেকে ফিরে বাড়ির ভেতর গিয়ে বলল- ওগো, পেটটা ভাল নেই।

কি রকম ভুটভুট করছে। গাছ থেকে দুটো লেবু এনে একটু লেবুর সরবৎ করে দাও তো। ঘরে আর অন্য কোন বাতি না থাকায় গোপালের স্ত্রী অন্ধকারেই লেবু আনতে গেল। জামাই চোর ধরার অপেক্ষায় আগে থেকেই ওৎ পেতে বসেছিল। চোর ভেবে শাশুড়ীকে জাপটে ধরল।

চীৎকার চেঁচামেচি শুনে গোপাল সঙ্গে সঙ্গে বাতি নিয়ে ছুটে গেল। তখনও জামাই শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে আছে। গোপাল তাই দেখে বলল- তাই তো বলি, শাশুড়ীর এত জামাই আনার ধূম কেন? গোপালের স্ত্রী ভীষণ লজ্জা পেয়ে রান্নাঘরে চলে গেল, জামাইও ভীষণ লজ্জা পেয়ে রাতের অন্ধকারে শ্বশুরবাড়ি ত্যাগ করল। গোপাল মনের সুখে বারান্দায় বসে তামাক টানতে লাগল ৭। গোপাল একবার তার দুই বেয়াই-এর সাথে এক জায়গায় যাচ্ছিল।

পথের ধারে দক্ষিণমুখো হয়ে সে প্রস্রাব করতে বসলে এক বেয়াই বলল, “আরে করেন কি, আপনি জানেন না, দিনের বেলা দক্ষিণমুখো হয়ে প্রস্রাব করতে নেই, শাস্ত্রে নিষেধ আছে যে!” অপর বেয়াই বলল, “শুনেছি উত্তরমুখো হয়েও নাকি ওই কাজটি করতে নেই। ” গোপাল বলল, “ওসব পন্ডিতলোকদের বচন, আমি গাঁইয়া মুখ্যুসুখ্যু মানুষ, ওসব বাছবিছার আমি করি না, সব মুখেই প্রস্রাব করি। বড় বেয়াই যে মুখে বললেন সে মুখে করি আর ছোট বেয়াই যে মুখে বললেন সে মুখেও করি। ” গোপালের মুখের কথা শুনে বেয়াইদের মুখে আর কথা নেই। ৮।

গোপাল একদিন পেটব্যথার যন্ত্রণায় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিল, সে এক ভীষণ যন্ত্রণা। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে সে রাজসভাতেই শুয়ে পড়ে বলতে লাগস- দোহাই মা কালী! আমার পেটের যন্ত্রণা কমিয়ে দাও মা, এ যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না। মা- মাগো, আমার যন্ত্রণা ভালো করে দাও- আমি সাতদিনের মধ্যে তোমার কাছে জোড়া পাঁঠা বলি দেব। কিছুক্ষণ পরে গোপালের যন্ত্রণার উপশম ঘটল, সে উঠে বসে একটা পান খেয়ে বলল- পেটের যন্ত্রণা তো এমনিতেই কমে যেত, এতে আর মা কালীর কেরামতি কোথায়? তবে আর মা কালীর কাছে জোড়া পাঁঠা বলি দিতে যাব কোন্ দুঃখে? গোপাল দিব্যি খোশ মেজাজে গল্প করতে লাগল। কিন্তু আবার কিছুক্ষণ পরে ভীষণ যন্ত্রণা শুরু হলো।

গোপাল কাটা ছাগলের মতই দাপাতে দাপাতে বলল- ওমা, মা কালী, আমি কি আর তোমায় জোড়া পাঁঠা দিতাম না? আমি তো উপহাস করছিলাম। এত বোঝ মা, উপহাস বোঝ না? ৯। একবার গোপাল পাড়ার এক দোকান থেকে বাকি খেয়েছে। অনেক দিন হয়ে গেল দেনা সে শোধ করছে না। তখন মুদি রেগে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে আরজি জানাল।

পাঁচ টাকা দেনা ছিল সাত টাকার দাবিতা মুদি মহারাজের কাছে নালিশ করল। গোপাল রাজার তলব পেয়ে রাজসভায় গিয়ে বলল ‘সাত টাকা নয় হুজুর, পাঁচ টাকা দেনা, আমি ক্রমে আস্তে-আস্তে শোধ করব। আমায় দয়া করে কিস্তি-বন্দী করার হুকুম দিন। ’ মহারাজের তাতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু গোল বাধলো দেনার পরিমাণ নিয়ে।

পাওনাদার বলে, সাত টাকা; দেনাদার বলে পাঁচ টাকা। অবশেষে মুদির খাতা তলব করা হলো। দেখা গেল- খাতা অনুসারে সাত টাকাই দেনা দাঁড়ায় বটে! গোপাল খাতার ভেতর লেখা ভালভাবে দেখে বলল ‘হুজুর! এই যে দেখুন, কত বড় জোচ্চুরি। যে-কদিন অড়র ডাল নিয়েছি, সেই কদিনই মুদি আমার নামে ঘি-ও লিখে রেখেছে। অথচ আমি কোন দিন অড়র-ডালে ঘি খাই না।

আমি গরীব মানুষ কি ঘি খেতে পারি? প্রতিদিন আমাদের কি সম্ভব অড়হরের ডাল ঘি খেতে পারা?’ মুদি বললে- ‘দেখুন হুজুর, কত বড় মিথ্যে কথা বলছে, ঘি না দিয়ে কি কেউ অড়হর ডাল রান্না করে খেতে পারে?’ মহারাজের তাই মনে হলো। মহারাজের নিজের বাড়িতেও যখনি অড়হর ডাল রান্না হয়, তখনই রাতে প্রচুর ঘি দেওয়া হয়। কাজেই গোপাল নিশ্চয়ই মিথ্যা কথা বলছে। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র সাত টাকারই ডিক্রি দিলেন মুদিকে। কি আর করবে! গোপাল ডিক্রি অনুযায়ী মুদির ডিক্রি শোধ করল বাধ্য হয়ে।

গোপালের কিন্তু মুদি যে ঠকিয়ে টাকা নিয়েছে, এ রাগ তার কিছুতেই গেল না। সে এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভাবল। মনে মনে সে ফন্দী আঁটতে লাগল- কী করে এই মুদি জব্দ করা যায়। হঠাত একদিন সে একটা বুদ্ধি বের করল। সেবছরে গোপালের বাড়িতে আখের চাষ খুব ভাল হয়েছিল।

সে কিছু আখের গুড় লোকের দ্বারা তৈরী করিয়ে নিল। তারপর বেশ কিছুদিন সে এমনভাবে আলাপ-ব্যবহার করতে লাগল মুদির সঙ্গে যে মুদির ভুলক্রমেও সন্দেহ হল না তাকে জব্দ করার ফন্দী করছে গোপাল। গোপাল একদিন কথা প্রসঙ্গে মুদিকে বলল, সে কিছু আখের গুড় সস্তায় বিক্রি করতে চায়। সামান্য লাভ রেখেই বেচে দেবে। টাকার বিশেষ প্রয়োজন।

সস্তা দামের কথা শুনে মুদি কিছু গুড় কিনতে চাইল। গোপাল গুড় বিক্রি করতে রাজি হলো যে নগদে ক্রয় করতে হবে। মুদি নগদ টাকা দিয়ে পিপে ভর্তি গুড় সস্তায় কিনে গরুর গাড়ি করে আনন্দে বাড়ি নিয়ে গেল। কয়েকদিন পরে পিপে খুলে সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। কি সর্বনাশ! সামান্য গুড় উপর দিকটায় আসে বটে, কিন্তু তার তলায় সে সবই বালি মেশানো ইট সুরকির কুচি দানা।

হায় হায় করে মুদি কাঁদতে লাগল এবং মনে মনে রাগ হল। গোপাল গুড় বিক্রি করে নগদ টাকা পেয়ে ছেলে, মেয়ে, বৌ নিয়ে বেশ কয়েকদিন বাইরে বেড়াতে গেল মনের আনন্দে। মুদি কিছুদিন পর অনেক খোঁজাখুঁজি করে গোপালকে বার করল। গুড়ের তলায় বালি সুরকির কথা বলে চোটপাট শুরু করতেই গোপাল বলল, ‘চটো ক্যান মুদি ভাই? ঘি ছাড়া অড়হর ডাল ব্যাচন যায় না, আর আমি বালি-সুরকি ছাড়া সরেস দানা গুড় বেচুম্‌ ক্যামনে?’ এই বলে হেসে হেসে গড়িয়ে পড়ল মাটিতে। ১০।

রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দরবারে রাজবৈদ্য নিয়োগ দেওয়া হবে। দেশদেশান্তর থেকে চিকিত্সকেরা এলেন যোগ দিতে। গোপালকে রাজা দায়িত্ব দিলেন চিকিত্সক নির্বাচনের। গোপাল খুশিমনে বসলেন তাঁদের মেধা পরীক্ষায়। —আপনার চিকিত্সালয়ের আশপাশে ভূতের উপদ্রব আছে? —জি আছে।

প্রচুর ভূত। ওদের অত্যাচারে ঠিকমতো চিকিত্সা পর্যন্ত করতে পারি না। দিন দিন ওদের সংখ্যা বাড়ছেই। এবার দ্বিতীয় চিকিত্সকের পালা। —আপনার চিকিত্সালয়ের আশপাশে ভূতের উপদ্রব কেমন? —আশ্চর্য, আপনি জানলেন কীভাবে! ওদের জ্বালায় আমি অস্থির।

দিন দিন ওদের সংখ্যা বাড়ছেই। এভাবে দেখা গেল সবার চিকিত্সালয়ের আশপাশেই ভূতের উপদ্রব আছে। একজনকে শুধু পাওয়া গেল, যাঁর কোনো ভূতসংক্রান্ত ঝামেলা নেই। গোপাল তাঁকে রাজবৈদ্য নিয়োগ দিলেন। পরে দেখা গেল এই চিকিত্সকই সেরা।

রাজাও খুশি। একদিন রাজা ধরলেন গোপালকে। গোপাল বললেন, ‘আজ্ঞে মহারাজ, দেখুন, সবার চিকিত্সাকেন্দ্রের আশপাশে ভূতের উপদ্রব শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। এর অর্থ হলো, তাঁদের রোগী মরে আর ভূতের সংখ্যা বাড়ে…আর যাঁকে নিলাম, তাঁর ওখানে কোনো ভূতের উপদ্রব নেই…অর্থাত্ তাঁর রোগীএকজনও মরে না ১১। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সব সভাসদদের সামনে গোপালকে জব্দ করার উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘বুঝলে গোপাল, আমার সাথে তোমার চেহারার কিন্তু দারুণ মিল! তা বাবার শাসনামলে তোমার মা কি এদিকে আসতেন-টাসতেন নাকি?’ গদগদ হয়ে গোপাল বলে, ‘আজ্ঞে না রাজামশাই! তবে মা না এলেও বাবা কিন্তু প্রায়শই আসতেন!’ ১২।

গোপাল একবার গ্রামের মোড়ল হয়েছিল। তো একদিন ভোরবেলায় এক লোক এসে ডাকতে লাগল, ‘গোপাল? গোপাল?’ গোপাল ভাঁড় কোনো উত্তর না দিয়ে শুয়েই রইল। এবার লোকটা চিৎকার করে ডাকতে লাগল, ‘মোড়ল সাহেব, মোড়ল সাহেব। ’ এবারও গোপাল কোনো কথা না বলে মটকা মেরে শুয়ে রইল। গোপালের বউ ছুটে এসে বলল, ‘কী ব্যাপার, লোকটা মোড়ল সাহেব মোড়ল সাহেব বলে চেঁচিয়ে পড়া মাত করছে, তুমি কিছুই বলছ না!’ গোপাল কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।

তারপর বলল, ‘আহা, ডাকুক না কিছুক্ষণ, পাড়ার লোকজন জানুক আমি মোড়ল হয়েছি। ’ ১৩। একজন বৈরাগী গোপালকে চিনত না। সে গোপালের সামনে এসে বলল, “ঈশ্বরের সেবার জন্য আপনি কিছু চাঁদা দেবেন?” গোপাল কিছু না বলে বৈরাগীকে একটা টাকা দিল। টাকাটা পেয়ে বৈরাগী খুশি হয়ে পথ হাঁটতে লাগল।

কিছুটা যেতেই গোপাল তাকে ডাকল, “ও বৈরাগী, একবারটি আমার কাছে এসো। ” বৈরাগী খুশিমনে তার কাছে আসলে গোপাল বলল, “তোমার বয়স কত?” “আঠারো আজ্ঞে। ” “আমার বয়স পঞ্চান্ন। ” “তাতে কি হল?” “এইমাত্র ঈশ্বরের সেবার জন্য যে একটা টাকা নিয়েছ সেটা ফেরত দাও, কারণ তোমার আগেই আমি স্বর্গে যাব এবং ঈশ্বরের সেবার সুবর্ণ সুযোগ পাব। ” ১৪।

গোপালের তখন বয়স হয়েছে। চোখে ভালো দেখতে পারে না। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, কী গোপাল, গতকাল আসনি কেন? —আজ্ঞে চোখে সমস্যা হয়েছে। সবকিছু দুটো দেখি। কাল এসেছিলাম।

এসে দেখি দুটো দরবার। কোনটায় ঢুকব, ভাবতে ভাবতেই…। —এ তো তোমার জন্য ভালোই হলো। তুমি বড়লোক হয়ে গেলে। আগে দেখতে তোমার একটা বলদ, এখন দেখবে দুটো বলদ।

—ঠিকই বলেছেন মহারাজ। আগে দেখতাম আপনার দুটো পা, এখন দেখছি চারটা পা…ঠিক আমার বলদের মতোই! ১৫। বেড়াতে বেরিয়ে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার গোপালের হাত চেপে ধরে আস্তে আস্তে মোচড়াতে লাগলেন। গোপাল: আমার হাত নির্দোষ, ওকে রেহাই দিন। রাজা: জোর করে ছাড়িয়ে নাও।

গোপাল: সেটা বেয়াদবি হবে। রাজা: উহু, তাহলে হাত ছাড়ব না। গোপাল তখন যে রোগের যে দাওয়াই বলে রাম নাম জপতে থাকলেন। রাজা: এতে কি আর কাজ হবে? দাওয়াই কোথায়? গোপাল: রাম নাম জপাই তো মোক্ষম দাওয়াই। রাজা: মানে? গোপাল: পিতামহ, প্রপিতামহের আমল থেকে শুনে আসছি, রাম নাম জপলে ভূত ছাড়ে।

রাজা গোপালের হাত ছেড়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গে। ১৬। গোপাল যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি। মাথার ওপর গনগনে সূর্য। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গোপাল এক গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে বসল।

বেশি গরম লাগায় ফতুয়াটা খুলে পাশে রেখে একটু আয়েশ করে বসল। বসে বিশ্রাম নিতে নিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল, নিজেই জানে না। ঘুম যখন ভাঙল গোপাল দেখে, তার ফতুয়াটা চুরি হয়ে গেছে। হায় হায়! এখন কী হবে! খালি গায়ে তো আর শ্বশুরবাড়ি ওঠা যায় না। কী আর করা।

সে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে বলতে লাগল, ‘হে ভগবান, রাস্তায় অন্তত ১০টি মুদ্রা যেন কুড়িয়ে পাই, তাহলে পাঁচ মুদ্রায় আমার জন্য একটা ভালো ফতুয়া কিনতে পারি। আর তোমার জন্য পাঁচটি মুদ্রা মন্দিরে দান করতে পারি···। ’ আর কী আশ্চর্য! ভাবতে ভাবতেই দেখে, রাস্তার ধারে কয়েকটি মুদ্রা পড়ে আছে। খুশি হয়ে উঠল গোপাল, গুনে দেখে পাঁচটি মুদ্রা! গোপাল স্বগত বলে উঠল, ‘হে ভগবান, আমাকে তোমার বিশ্বাস হলো না, নিজের ভাগটা আগেই রেখে দিলে? ১৭। গোপাল একবার তার দুই বেয়াই-এর সাথে এক জায়গায় যাচ্ছিল।

পথের ধারে দক্ষিণমুখো হয়ে সে প্রস্রাব করতে বসলে এক বেয়াই বলল, “আরে করেন কি, আপনি জানেন না, দিনের বেলা দক্ষিণমুখো হয়ে প্রস্রাব করতে নেই, শাস্ত্রে নিষেধ আছে যে!” অপর বেয়াই বলল, “শুনেছি উত্তরমুখো হয়েও নাকি ওই কাজটি করতে নেই। ” গোপাল বলল, “ওসব পন্ডিতলোকদের বচন, আমি গাঁইয়া মুখ্যুসুখ্যু মানুষ, ওসব বাছবিছার আমি করি না, সব মুখেই প্রস্রাব করি। বড় বেয়াই যে মুখে বললেন সে মুখে করি আর ছোট বেয়াই যে মুখে বললেন সে মুখেও করি। ” গোপালের মুখের কথা শুনে বেয়াইদের মুখে আর কথা নেই। ১৮।

রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সব সভাসদদের সামনে গোপালকে জব্দ করার উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘বুঝলে গোপাল, আমার সাথে তোমার চেহারার কিন্তু দারুণ মিল! তা বাবার শাসনামলে তোমার মা কি এদিকে আসতেন-টাসতেন নাকি?’ গদগদ হয়ে গোপাল বলে, ‘আজ্ঞে না রাজামশাই! তবে মা না এলেও বাবা কিন্তু প্রায়শই আসতেন!’ ১৯। গোপাল একবার গ্রামের মোড়ল হয়েছিল। তো একদিন ভোরবেলায় এক লোক এসে ডাকতে লাগল, ‘গোপাল? গোপাল?’ গোপাল ভাঁড় কোনো উত্তর না দিয়ে শুয়েই রইল। এবার লোকটা চিৎকার করে ডাকতে লাগল, ‘মোড়ল সাহেব, মোড়ল সাহেব। ’ এবারও গোপাল কোনো কথা না বলে মটকা মেরে শুয়ে রইল।

গোপালের বউ ছুটে এসে বলল, ‘কী ব্যাপার, লোকটা মোড়ল সাহেব মোড়ল সাহেব বলে চেঁচিয়ে পড়া মাত করছে, তুমি কিছুই বলছ না!’ গোপাল কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, ‘আহা, ডাকুক না কিছুক্ষণ, পাড়ার লোকজন জানুক আমি মোড়ল হয়েছি। ’  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।