আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল-কুরানের আলোকে আহলে বাইত(আঃ)(নবী পরিবার)

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। গ্রন্থবদ্বকরনঃআল-বালাঘ ফাউন্ডেশন অনুবাদঃমুঃমতিউর রহমান মহিমান্বিত আল-কুরান,সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট হতে শেষনবী সাইয়েদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)এর উপর নাজিলকৃ্ত ওহী,ইসলাম ধর্মের সকল আইনের উৎস। ইহা মানব সমাজের জন্য একটি পুর্নাঙ্গ জীবন পদ্বতি এবং নৈ্তিক মুল্যবোধের সুসংজ্ঞায়িত বিধি-বিধান। প্রত্যেক মুসলমান অবগত যে,তার দৈনন্দিন জীবনে কুরানের বিধি-বিধানের প্রয়োগ করে চলার ও পথনিদেশের প্রয়োজনে তাকে অনুসরন করার জন্য বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নবী পরিবার(আঃ) অত্যন্ত সুউচ্চ স্তরের মর্যাদাবান এবং কেবলমাত্র তাঁরাই অনুসরনযোগ্য-পবিত্র কুরানের অসংখ্য আয়াত ইহা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিশেষভাবে উপস্থাপন করেছে,যেন মুসলমানগন তাঁদের পথ বিশ্বস্ততার সাথে অবিচল্ভাবে অনুসরন করে,বিচ্যুতির হাত হতে পরিত্রান পায়।

সার্বিককভাবে বলতে গেলে এই আয়াতগুলোকে নিম্নের শ্রেনিতে বিন্যাস করা যায়ঃ ১)কুরানশরিফের আয়াতে নবীপরিবারের(আঃ) বিশেষ মর্দাযা সম্পকিত সরাসরি তথ্যনিদেশক দলিল রয়েছে,যেমন-আয়াতে তাতহির(পবিত্রতার আয়াত)এ নবী পরিবার বা আয়াতে মাওয়াদ্দাহয়(নিকট আত্নীয়ের আয়াত)আল-কুরবা(নিকটাত্নীয়)। আবার, কোন কোন সময় কুরান শরিফের আয়াতসমুহ এতদসম্পকিত দলিল পরোক্ষভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যা রাসুল(সাঃ) সাহাবীদেরকে ব্যাখ্যার মাধ্যমে সুস্পষ্ট করেছেন। ২) আহলে বায়েতের সাথে সম্পকিত এবং তাঁদের মযাদাসুচক ও গুনাবলীর নিদেশক কতিপয় ঘটনাবলীর দলিলও আল-কুরান উল্লেখ করেছে। একইভাবে মুসলিম উম্মাহর নেতৃ্ত্বের ইস্যুটিকেও ইহা ফয়সালা করে দিয়েছে। আহলে বায়েতকে ইহা উপস্থাপন করেছে সামষ্ঠিকভাবে বা এককভাবে ;সামষ্ঠিকভাবে যেমন আয়াতে মুবাহালা ও সুরা দাহার এর ৮ম আয়াতে,অথবা এককভাবে যেমন নিম্নের অলি-সম্পকিত আয়াতেঃ “তোমাদের অলি(অভিভাবক) তো আল্লাহ,তাঁর রাসুল এবং ঐ মু’মিনগন-যারা নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত দেয় রুকু অবস্থায়(সুরা মায়েদাঃ৫৫)”।

আহলে বায়েতের বিশেষ গুনাবলী,যোগ্যতা এবং সুউচচ মযাদার বননা স্মবলিত কুরানের আয়াতের সংখ্যা অনেক। আমরা এখন তদসম্পকিয় কয়েকটি আয়াত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। ১। পবিত্রতার আয়াত (আয়াতে তাতহির) “…..(হে)আহলে বাইত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে”(সুরা আহজাবঃ৩৩)”। কুরানুল করিমের সকল তাফসিরকার এবং রাসুল(সাঃ)এর হাদিছ বননাকারীগন সকলে সবসম্মতভাবে ঐকমত্যে উপনীত হয়াএছেন যে,আহলে বায়েত শব্দটি দ্বারা, যেমনটি আল্লাহ কুরানে ব্যাবহার করেছেন,কেবলমাত্র ৪ ব্যাক্তিত্বকে নিদেশ করা হয়েছেঃরাসুল(সাঃ)এর কন্যা ফাতিমা(আঃ),তাঁর স্বামী আলী(আঃ) এবং তাঁদের ২ সন্তান হাসান(আঃ) ও হুসাইন(আঃ)।

বিখ্যাত তাফসিরকার জালালুদ্দিন সয়ুতি তাঁর সুপ্রসিদ্ব তাফসীর গ্রন্থ দুররে মানসুরে উম্মে সালামা সনদে তাবারানী’র বননা উদ্বৃত করেছেনঃরাসুলুল্লাহ(সাঃ)তাঁর প্রিয়তমা কন্যা ফাতিমাকে একদা তাঁর স্বামী ও তাঁর ২ ছেলে হাসান ও হুসাইনকে ডাকতে বললেন। তাঁরা যখন এলেন রাসুল(সাঃ) তাঁদেরকে ফাদাকের(মদিনার উপকন্ঠে)১খানা চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন এবং তাঁদের উপর তাঁর পবিত্র হাত রেখে দোয়া করলেনঃহে আল্লাহ এরাই হচ্ছে আলে মুহাম্মাদ(ভিন্ন বননায় বলা হয়েছে আল্,অথ হচ্ছে পরিবার) । সুতরাং তুমি তোমার রহমত ও বরকত আলে মুহাম্মাদের উপর বষন কর যেমন তুমি আলে ইব্রাহিমের উপর বষন করেছিলে;তুমিই তো সবোত্তম প্রশংসার অধিকারী ও পরম গৌরবময়। উম্মে সালামা বলেন যে,তিনি তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য সেই চাদরটি উত্তোলন করেছিলেন,কিন্তু মহানবী(সাঃ)তার হাত থেকে সেটি টেনে নিলেন এবং বললেনঃতুমিও সঠিক পথের উপর অবস্থান করছো(মানাকিবে আহলে বাইত,ভলিউম-২,পৃঃ৩০৮)। উম্মে সালামার সনদে অন্য এক বননায় উদ্বৃত হয়েছে যে,একদা মহানবী(সাঃ) তার ঘরে বিছানায় শায়িত ছিলেন।

তিনি আবৃত ছিলেন খায়বরের একটি চাদর দ্বারা। এমন সময় তাঁর প্রিয়তমা কন্যা হযরত ফাতিমা(আঃ)’খাজিরা’-র(এক বিশেষ ধরনের খাবার) একটি থালাসহ ঘরটিতে প্রবেশ করলেন। নবীজী(সাঃ) তাঁকে তাঁর স্বামী(আলী) এবং দুই পুত্র হাসান ও হুসাইন-কে ডাকার জন্য বললেন। তিনি তাঁদের ডাকলেন। তাঁরা যখন খাবার খেতে একত্র বসলেন,আল্লাহ তখন রাসুলের (সাঃ) উপর এই আয়াতটি নাজিল করেনঃ “….হে আহলে বায়েত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে”(সুরা আহজাবঃ৩৩)”।

এই প্রেক্ষিতে রাসুলাল্লাহ(সাঃ) তাঁদের সকলকে তাঁর চাদর দ্বারা আবৃত করলেন এবং আকাশের দিকে দ’হাত তুলে ধরে বললেনঃ “হে আল্লাহ!এরাই হলো আমার আহলে বায়েত(পরিবারের লোক) এবং আমার নিকটতম আত্নীয়। অপবত্রিতা থেকে তাঁদেরকে দূরে রাখো এবং তাঁদেরকে সবতোভাবে পুতঃপবিত্র রাখো!” উম্মে সালামা আরো বলেন,রাসুল(সাঃ) তিন বার এই শব্দগুলো পুনরাবৃত করলেন। অতঃপর যখন তিনি চাদরের ভিতর তার মাথা গলিয়ে দিয়ে নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন,‘আমিও কি আপনাদের মধ্যে আছি?’ তখন তাকে নিরস্ত করার সুরে নবীজী দুইবার বললেনঃ“তুমিও সৎ(ন্যায়নিষ্ঠদের) বান্দাদের মধ্যে অন্তরভুক্ত আছো”(এই হাদিছটি ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল ‘গায়াত আল- মারাম’গ্রন্থে ৩জন বননাকারীর সনদে উম্মে সালামা হতে বননা করেছেন)। অনেকগুলো উপলক্ষে মুসলমানদের নিকট এই আয়াতের অন্তরনিহিত তাৎপরয রাসুলাল্লাহ(সাঃ) উপস্থাপন করেছেন এবং এর গুরুত্বের প্রতি তাদের মনযোগ আকষ্রন করেছেন। আবু সাইদ খুদরি রাসুলের(সাঃ)উদ্বৃতি উল্লেখ করে বলেন,তিনি(নবীজী) বলেছেনঃ “এই আয়াত নাজিল হয়েছে ৫ ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্য করেঃআমি নিজে, আলী, ফাতিমা,হাসান ও হুসাইন”।

“….হে আহলে বায়েত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে”(সুরা আহজাবঃ৩৩)”। (এই বননাটি আবু সাঈদ খুদরিকে উদ্বৃত করে বননা করেছেন ইবনে জরীর তাবারী,ইবনে আবি হাতাম এবং তাবারানী। ‘গায়াত আল- মারাম’গ্রন্থেও উম্মে সালামার সালাবী-র তাফসীর,ইবনে মারদাওয়াইয়া ও বায়হাকীর সুনান-কে উদ্বৃত করে বননা করেছেন)। এই আয়াতটির দ্বারা ঐ ৫ ব্যাক্তিকেই বুঝানো হয়েছে। উম্মুল মু’মেনিন হযরত আয়েশার বনিত একটি হাদিছও ইহা নিশ্চিত করে।

তিনি বলেছেনঃ “একদিন রাসুল(সাঃ) একটি কালো চাদর দ্বারা আবৃত হয়ে ঘরে ফিরলেন। তারপর হাসান এলেন এবং তিনি তাঁকে চাদরের নীচে ডেকে নিলেন। তারপর হুসাইন এলেন এবং তাদের সাথে চাদরের নীচে একত্রিত হলেন। কিছুক্ষনের মধ্যে তার কন্যা ফাতিমা এলেন এবং তিনি তাকেও চাদরের ভিতর নিয়ে নিলেন;অতঃপর আলী এলেন এবং তাকেও চাদরের নিচে দেকে নেয়া হলো। যখন ৫ ব্যাক্তির সকলে চাদরের নিচে সমবেত হলেন,আয়েশা বলেন,রাসুল(সাঃ)আহলে বায়েতের মযাদা পুনঃনিশ্চিতের জন্য এই পবিত্র আয়াতটি(আয়াতে তাতহীর) তেলাওয়াত করলেন,যেমন এই আয়াতটি পুবে নাজিল হয়েছিল এই ৫ মাসুম(নিশপাপ)ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্য করেঃ “….হে আহলে বায়েত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে”(সুরা আহজাবঃ৩৩)”।

(ইহা ‘গায়াত আল- মারাম’ অনুযায়ী আয়াশাকে উদ্বৃত করে বুখারি ও মুসলিমের ‘সহিহাইন’এর বননার অনুরুপ। ‘তাফসীর আল-কাশশাফে’ জামাখশারি আয়াতে মোবাহেলার ব্যাখ্যায় ইহা বননা করেছেন)। ইসলামি শাস্রে আর একটি বিখ্যাত হাদিছে দেখে যায়,এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসুল(সাঃ) ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে যখনি কন্যা ফাতিমার(আঃ)ঘর অতিক্রম করতেন,তখনি তিনি এই বলে আহবান করতেনঃ “নামাজের জন্য আসো,হে আহলে বায়েত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে”(সুরা আহজাবঃ৩৩)”। (ইবনে আবি শায়াবার সনদের ভিত্তিতে ইবনে মারদাওয়াইয়্যা,আহমদ,তিরমিজি,ইবনে মুনজির,তাবারানি ও হাকিম এর বিশুধ্ব বননা। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আল্লামা তাবাতাবাঈর আল মিজান কি তাফসির আল কুরান,আয়াতে তাতহির-এর ব্যাখ্যা দেখুন।

) আল-কুরান আহলে বায়েত(আঃ)কে এভাবেই উপস্থাপন করেছে,এবং অপবিত্রতা,অবাধ্যতা,পাপ ও খামখেয়ালিপনা মুক্ত তাঁদের নিস্পাপ (মাসুম) বাক্তিত্বকে স্পষ্টায়ন করেছে। কামালিয়াত(পুনতার)পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের চরিত্র ও আদব কায়দা হচ্ছে মুসলমানদের জন্য আদশ/মডেল। তাঁদের মহানুভব অবস্থান ও উচ্চপদমযাদার প্রতি কুরান বিশেষ গুরত্ব নিদেশ করেছে যাতে মুসলিম উম্মাহ তাঁদের উজ্জ্বল উদাহরনসমুহ অনুসরন করে এবং রাসুল(সাঃ)এর পর শরিয়তের আইন ও সিদ্বান্ত সম্পকিত তথ্যাদি ও পথনিদেশের জন্য তাঁদেরকে মেনে চলে। তাঁরা হচ্ছেন সেই ব্যাক্তিত্ব যারা ইসলামের বাস্তব নমুনা এবং ধারনা,মতামত ও চিন্তার মতদ্বৈততা নিরসনের বিষয়ে ঐকমত্যের প্রতীক। আল-কুরানের অসংখ্য আয়াত এই বাস্তবতাকে সুপ্রতিষ্টিত করেছে,এবং এটাও সন্দেহাতিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে,রাসুল(সাঃ) পর নেতৃ্ত্বের দায়িত্ব হল আহলে বায়েতের।

প্রত্যহ ভোরে কন্যা ফাতিমার(আঃ) ঘরের দরজায় নিয়মিতভাবে দাঁড়ানো, এবং তাঁর(ফাতিমা জাহরা)পরিবারের সদস্যবরগকে আহলে বায়েত হিসেবে সম্বোধনের বিষয়টি দ্বারা এই অথই বুঝায় যে, রাসুলের (সাঃ)কাযত মুসলমানদের নিকট এর দ্বারা আয়াতে তাতহীরের(পবিত্রতার আয়াত) প্রায়োগিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। রাসুলুল্লাহ(সাঃ) আহলে বায়েতের এই গুরুত্বের প্রতি মুসলিম উম্মাহর মনোযোগ আকষন করেছেন যাতে করে তারা তাঁদেরকে ভালবাসতে পারে,আনুগত্য ও অনুসরন করতে পারে,এবং গোমরাহ হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে। । …….. …….। অতএব উক্ত আলোচনা হতে ইহা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে,রাসুল(সাঃ) কতৃক তাঁর কন্যা ফাতিমার(আঃ) গৃহে প্রত্যহ দাড়ানোর অভ্যাস ও তাঁর পরিবারের সদস্যগনকে ‘আহলে বায়েত’ হিসেবে সম্বোধন উদ্দেশ্যবিহীন ছিল না।

প্রকৃ্তপক্ষে তিনি এর দ্বারা ‘আহলে বায়েত’এর পরিভাষাগত অথের ব্যাখ্যা স্পষ্টায়ন করেছেন এবং মুসলমানদের নিকট আয়াতে তাতহীরের (পবিত্রতার আয়াতের) প্রায়োগিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। আরো সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে,ইহা দ্বারা রাসুলাল্লাহ(সাঃ) আহলে বায়েতের গুরুত্ব এবং তাঁর অবতমানে তাঁদের(আহলে বায়েত)নেতৃ্ত্বে আসীন হওয়ার বিষয়ের প্রতি মুসলিম উম্মাহর মনোযোগ আকষন করেছেন যাতে মুসলমানগন তাঁদেরকে মহব্বত করতে পারে এবং আনুগত্য ও অনুসরন করতে পারে। আরো অগ্রসর হওয়ার পুবে পাঠকদের মনে উদ্রেক হতে পারে এমন যে ধরনের সন্দেহ অপনোদন করা প্রয়োজন,যেমন-এই আয়াত(আয়াতে তাতহীর) উম্মুল মোমেনিনগনকেও অন্তরভুক্ত করে কি-না। কিছু কিছু লোক নিশ্চিতভাবে এর ভুল ব্যাখ্যা করতে থাকে। প্রকৃ্ত সত্য হলো,এই আয়াত(আয়াতে তাতহীর) উম্মুল মোমেনিনগনকে কোন ভাবেই অন্তরভুক্ত করেনা।

কারন,পুববতি আলোচনা হতে ইহা স্ফটিকের মত স্পষ্ট প্রমানিত হয়েছে যে,ইহা ইতিপুবে উল্লেখিত কেবলমাত্র বিশেষ ৫ ব্যাক্তিকেই উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছে,যাদের মধ্যে ৪জন পুরুষ,ব্যাতিক্রম শুধু রাসুলাল্লাহর (সাঃ)কন্যা ফাতিমা(আঃ)। অধিকন্তু,এই আয়াতে পুংবাচক লিঙ্গ ব্যাবহার হয়েছে। আরবী ভাষা সম্পকে যাদের ধারনা আছে তাদের নিকট ইহা সুস্পষ্ট যে-‘আনকুম’ এবং ‘ইউতাহহিরাকুম’ শব্দ দুটি(যাদের অথ ‘তোমাদের থেকে’ ও ‘তোমাদেরকে সম্পুনরুপে পুতঃপবিত্র করতে’)পুংবাচক শব্দ হিসেবে ব্যাবহার হয়েছে এবং ঐ ব্যাক্তিদেরকে,যাদের অধিকাংশই হলো পুরুষ,যৌথভাবে নিদেশ করেছে। যদি এর দ্বারা আল্লাহ উম্মুল মোমেনিনদেরকে বুঝাতে চাইতেন,যেমন কেউ কেউ ভ্রান্ত ধারনা পোষন করে থাকেন,তবে আরবী ভাষার সবচেয়ে নিখুত সবশ্রেষ্ট গ্রন্থ আল-কুরান অবশ্য অবশ্যই পুং-বাচক ঐ শব্দ দুটির পরিবরতে স্ত্রী-বাচক শব্দ আনকুন্না এবং ইউতাহহিরাকুন্না ব্যাবহার করতো,কারন তারাই ছিলেন সংখ্যায় অধিক। এভাবে স্পষ্ট হয়ে যায় যে,এই আয়াত মানুষের মনে আল্লাহর গ্রন্থ আল-কুরানের সঠিক উদ্দেশ্যের সুস্পষ্ট ছবি একে দেয়।

ইস্পাতদৃঢ় অটল অক্ষশক্তি আহলে বায়েতের পুতঃপবিত্রতা এবং শুধ্ব-সৎ নিরভরযোগ্য দৃঢ় বুনিয়াদের উপর মুসলিম সমাজের সৌধ বিনিরমানের প্রচেষ্টা গ্রহন করে। ২। মহব্বতের আয়াত(আয়াতে মাওয়াদ্দাহ) “……(হে মুহাম্মাদ!)আপনি মানবজাতিকে বলুন,আমি এই (নবুয়তি) কাজের বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আমার নিকট আত্নীয়দের প্রতি(আহলে বায়েত) গভীর ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান চাইনা। যে উত্তম কাজ করে আমি তার জন্য এতে কল্যান বধিত করি;….”(সুরা শুরা ৪২,আয়াত ২৩)। ৩।

লা’নতের আয়াত(আয়াতে মুবাহেলা) “তোমাদের নিকট জ্ঞান পৌঁছানোর পর যে কেহ এই বিষ্যে তোমার সাথে বিতক করে,তা’হলে তাকে বলঃ’এস,আমরা আহবান করি আমাদের সন্তানদেরকে আর তোমরাও তোমদের সন্তানদেরকে,আমরাও আমদের নারীদেরকে আর তোমরাও তোমাদের নারীদিগকে,আমাদের নিজদিগকে ও তোমাদের নিজদিগকে;অতঃপর আমরা(আল্লাহর কাছে) বিনীত ফরিয়াদ জানাই এবং মিথ্যাবাদীদের উপর দেই আল্লাহর লা’নত”(সুরা আলে ইমরানঃ৬১)। এ আয়াতখানি নবযুগের সুচনা সৃষ্টিকারী একটি ঘটনার প্রতি অঙ্গুলি নিদেশ করে। সকল ঐতিহাসিক ও তাফসিরকার এই ঘটনা বননা করেছেন। এ ঘটনা পরম মহিমান্বিত আল্লাহর নিকট রাসুল(সাঃ)এর পরিবার(আহলে বায়েত) কত আপন আর কত প্রিয় মুদলমানদের কাছে তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ ঘটনা রাসুল(সাঃ)এর আহলে বায়েতের সুনিদিষ্ট মযাদাকে সুষ্পষ্টভাবে চিঞ্ছিত করেছে যা ইসলামের ইতিহাসের ঘটনাপঞ্জিতে মুবাহেলা (অথাত মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা’নত প্রাথনা করা)নামে পরিচিত।

ঐতিহাসিক ও তাফসিরকারকগন ঘটনাটিকে নিম্নরুপে বননা করেছেনঃ নাজরানের খৃষ্টানগনদের একটি প্রতিনিধিদল রাদের ধমবিশ্বাসের সপক্ষে যুক্তি-তক উপস্থাপনের জন্য পয়গাম্বরে ইসলাম(সাঃ)এর কাছে এসেছিল। নবীপাক(সাঃ) তাদের কাছে উপঞ্ছাপন করলেন যে,মরিয়মের পুত্র ঈসা(আঃ) ছিলেন একজন মানব সন্তান ও একজন নবী,এবং তাঁকে আল্লাহর পুত্র গন্য করা আল্লাহর পবিত্রতার বিষয়ে ঠাট্টা করার শামিল;কারন পরম মহিমান্বিত আল্লাহ এ ধরনের সকল মানবীয় বৈশিষ্ঠের অনেক উধ্বে। রাসুল(সাঃ) যখন তাঁর বিষয় পরিপুনরুপে যুক্তি প্রমানের সাহায্যে দৃঢ়তার সাথে উপস্থাপন করছিলেন,তখন দেখা গেল তারা উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে ঈসা(আঃ)কে ঈশ্বর হিসেবে বিবেচনায় করার তাদের মিথ্যা বিশ্বাসের উপর অনঢ় অবস্থান গ্রহন করল। অতঃপর সেই সময় আল্লাহপাক এই আয়াত নাজিল করেন। এটা খৃষ্টানগনদের প্রতি চ্যালেঞ্জ-আল্লাহর কাছে প্রাথনা করা এবং ফরিয়াদ জানানো যেন তাঁর লা’নত সেই দলটিকে ধ্বংস করে দেয় যারা মিথ্যাকে আকড়ে ধরেছে ( ইবনে সাবাক্ক মালেকী,আল০ফুসুল আল-মুহিম্মা,গ্রন্থকারের মুখবন্দ)।

পরের দিন জিলহজ্জ মাসের ২৪ তারিখে সকালে আল্লহর আদেশ অনুসারে রাসুল(সাঃ) নিদিষ্ট মাঠে আগমন করলেন;হুসাইনকে কোলে নিয়ে এবং হাসানকে তাঁর হাত ধরে(আমাদের ছেলেদের),তাঁকে অনুসরন করে পিছনে পিছনে এলেন তাঁর প্রিয়তমা কন্যা ফাতিমা(আমাদের নারীগন),তাঁর পিছনে আলি(নিজদিগকে)ইসলামের পতাকা বহন করে এলেন। রাসুল(সাঃ)এর সাথে তাঁর নিকট পরিবারকে আসতে দেখে এবং মুঃসাঃএর সত্যবাদী হওয়া সম্পকে তারা নিজেরা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায়,তা-না হলে এই প্রেক্ষাপটে তিনি তাঁর সাথে তাঁর প্রিয়তম নিকট আত্নীয়দের নিয়ে আসতে সাহস করতে পারতেন না, খৃষ্টানগন পরস্পরকে লা’নত দেয়ার মুখোমুখি দ্বন্দ্ব থেকে পিছু হটে গেল,এবং এর পরিবতে জিজিয়া কর দিতে রাজী হলো। জামাখশারী তার রচিত ‘আল-কাশশাফ’ গ্রন্থে বলেনঃ(যখন এই আয়াতটি নাজিল হয়) তখন মহানবী(সাঃ) খৃষ্টানদের কাছে জানতে চাইলেন তারা মিথ্যাবাদীদের উপর লা’নত বষন করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রাথনা জানাতে একটি মুবাহেলা করতে রাজি আছে কিনা। সেই রাতেই খৃষ্টানগন তাদের নেতা নিজেদের মধ্যে একটি আলোচনা সভায় মিলিত হলো। সেই সভায় তাদের নেতা আব্দুল মসিহ তার মতামত ব্যাক্ত করেছিল এইভাবেঃ “আল্লাহর কসম,হে খৃষ্টানগন!তোমরা জানো যে,মুহাম্মাদ আল্লহর প্রেরিত নবী যিনি তোমাদের কাছে তোমাসের প্রতিপালক প্রভুর নিকট হতে চুড়ান্ত পয়গাম নিয়ে এসেছেন।

আল্লাহর কসম!কোন জাতিই আজ পযন্ত কখনো একজন নবীর সাথে লা’নত দেয়ার চ্যালেঞ্জ করতে সাহস করেনি,কেননা তাতে তাদের উপর দুদশা নিপতিত হতো। লা’নত দ্বারা শুধুমাত্র তারাই ধংস হয়ে যাবে না বরং তাদের সম্প্রদায়ও ধ্বংশ হবে”। এর মাধ্যমে তিনি একথা বুঝাতে চাইলেন যে, তাঁর সত্যকে চ্যালেঞ্জ করার ও তার ফলে ধ্বংশ হয়ে যাওয়ার পরিবতে বরং রাসুল(সাঃ)এর সাথে একটি আপোষ মীমাংসায় উপনীত হওয়া অধিকতর মঙ্গলজনক। খৃষ্টান নেতা আব্দুল মাসীহ তার দলকে শত্রুতা ও বিবাদ-বিসংবাদ বন্দ্ব করার ও রাসুল (সাঃ)প্রদত্ত শতগুলো মেনে নিয়ে তাদের নিজেদের ধরমকে রক্ষা করার পরামশ দান করলো। “সুতরাং তোমরা যদি(মুখোমুখি হওয়ার জন্য)অবিচল থাকো,তাহলে আমরা সকলে ধ্বংশ হয়ে যাবো।

কিন্তু যদি তোমাদের ধরমকে টিকিয়ে রাখতে চাও তাহলে চরম শক্তি পরীক্ষা হতে তোমাদের বিরত থাকা উচিৎ;কাজেই তোমরা যেমন আছো তেমনটি থাকো। অতঃপর তোমরা সেই মানুষটির(মহানবী)সাথে সন্ধ্বি কর এবং তোমাদের দেশে ফিরে যাও”। জামাখশারী আরো বলেনঃ “পরের দিন রাসুল(সাঃ) হুসাইনকে কোলে নিয়ে এবং হাসানের হাত ধরে,তাঁর পিছনে পিছনে কন্যা ফাতিমা আর তাঁর পিছনে আলী(আঃ) সেই নিধারিত স্থানে এলেন;আহলে বায়েতের(আঃ)উদ্দেশ্যে তিনি বললেনঃ “যখন আমি আল্লাহর কাছে মোনাজাত করব,তখন তোমরা সকলেই বলবেঃ আমীন”। মহানবী(সাঃ)কে এবং তাঁর পরিবারকে দেখে নাজরানের প্রধান ধ্রম যাজক খৃষ্টান্দের সম্বোধন করে বললেনঃ “হে খৃষ্টানগন,আমি এমন সব চেহারা দেখতে পাচ্ছি যে,যদি আল্লাহ চান তো তাদের খাতিরে পরবতমালা তার নিজ স্থান থেকে সরিয়ে দেবেন। মুবাহেলার জন্য তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করোনা,কেননা যদি তোমরা তাই করো তাহলে তোমরা সকলে ধ্বংশ হয়ে যাবে এবং পুনরুথান দিবস পযন্ত আর কোন খৃষ্টান পৃথিবীর বুকে থাকবে না”।

তাঁর উপদেশের মরম বুঝে খৃষ্টানগন রাসুল(সাঃ)কে বললোঃ”হে আবুল কাসিম,আমরা আপনার সাথে মুবাহেলা না করার সিধ্বান্ত নিয়েছি। আপনি আপনার ধমের পথে চলুন এবং আমরা আমাদের ধমের পথে চলি”। রাসুল(সাঃ) তাদের বললেনঃ “যদি তোমরা মুবাহেলা করতে অস্বিকার করো তাহলে তোমরা ইসলাম কবুল করো;অতঃপর মুসলমানগন যা পায় তোমরাও তাই পাবে,আর তোমরাও তাই দিবে মুসলমানগন যা দেয়”। খৃষ্টানগন আরবদের সাথে মুবাহেলার ব্যাপারে তাদের অনাগ্রহের কথা জানালো। অতঃপর শান্তির জন্য ও বলপ্রয়োগের দরুন নিজ ধম ত্যাগ না করার স্বাধীনতার জন্য তারা সন্ধির প্রস্তাব দিল।

বিনিময়ে তারা মুসলমানদের ২০০০ মুদ্রা বাষিক জিজিয়া কর প্রদান করতে সম্মত হলো,যার ১০০০ হাজার মুদ্রা সফর মাসে এবং বাকী ১০০০ রজব মাসে পরিশোধ করবে। এছাড়াও এই সন্ধির আওতায় তারা ৩০টি লৌহ বরম প্রদান করবে। এই প্রস্তাব গ্রহন করে রাসুল(সাঃ) মন্তব্য করলেনঃ “সেই একক সত্বার কসম যার হাতে রয়েছে আমার প্রান। নাজরানের লোকদের উপর মৃত্যু আবিভুত হয়াছিল। (মুবাহেলার চ্যালেঞ্জ যদি তারা গ্রহনের ধৃষ্টতা প্রদরশন করতো তাহলে)তাদেরকে বানর ও শুকরে রুপান্তরিত করা হতো এবং(নাজরান) উপত্যকাকে জ্বালিয়ে দেয়া হতো।

আল্লাহ নাজরানকে তার লোকজনসহ ধ্বংশ করে ফেলতেন। গাছের মাথায় বসে থাকা পাখিও নিস্তার পেতো না এবং বছর শেষ হওয়ার আগেই খৃষ্টানগন সকলেই মৃত্যুমুখে পতিত হতো”( ইবনে সাবাক্ক মালেকী,আল০ফুসুল আল-মুহিম্মা,গ্রন্থকারের মুখবন্দ)। জামাখশারী আয়াতে মুবাহেলার তাফসীর সম্পকে আরো গভীরে অগ্রসর হন। এব্যাপারে তিনি আহলে বায়েতের মযাদার উপর জোর গুরুত্ব উপস্থাপন করার জন্য রাসুল(সাঃ)এর স্ত্রী হজরত আয়েশা থেকে নীচের বননা উদ্বৃত করেছেনঃ “তিনি তাদের কাছে ‘নফস’(অথাত নিজদিগকে) শব্দটিকে উল্লেখ করার আগে আহলে বায়েতের কথা উল্লেখ করেছেন;ইহা করেছিলেন আহলে বায়েতের মযাদা ও আল্লাহর কাছে তাঁদের নৈকটের অবস্থানকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে,এবং ‘নফস’-এর (নিজদিগের) কাছে তাঁদের অগ্রাধিকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার জন্য। ‘আহলে কিসা’র (আহলে কিসা একটি পরিভাষা।

এর দ্বারা তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যাঁরা রাসুলুল্লাহ(সাঃ)এর চাদরের নীচে তখন একত্রিত যখন তাঁদের উদ্দেশ্য করে আয়াতে তাতহির নাজিল হয়েছিল। তাঁরা হলেনঃআলী,ফাতিমা,হাসান এবং হুসাইন। )মযাদা সম্পকে এর চেয়ে অধিকতর জোরালো প্রমান আর নেই। এটা রাসুল(সাঃ)এর নবুয়তি মিশনের সত্যতার প্রমান। কেননা কেউ যত পক্ষপাতদুষ্টই থাকুক না কেন খৃষ্টানগন মুবাহেলার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে সাহস দেখিয়ে ছিল এটা কেউ কখনই বননা করেনি”(জামাখশারী,তাফসীর আল কাশশাফ,সুরা আলে ইম্রানঃ৬১ এর তাফসীর)।

ফখরুদ্দিন রাজী তাঁর ‘তাফসীর আল কাবির’ কেতাবে অভিন্ন বননা উদ্বৃত করেছেন,এবং জামাখশারীর উল্লেখিত বননা উদ্বৃত করার পর বলেছেনঃ “তোমরা মনে রেখো,(কুরানের)সকল তাফসীরকারকগন এবং (হাদিছের) সকল বননাকারীগন এই বননার প্রামানিকতা সম্পকে সরবসম্মতভাবে একমত পোষন করেছেন”(তাফসীর আল কাশশাফ,সুরা আলে ইম্রানের তাফসীর। মুযাহিদ ও কুলাইবির সনদের ভিত্তিতে তাফসীরে সালাবী-তেও এই একই বিষয় বনিত হয়েছে)। আধুনিক কালের প্রখ্যাত তাফসীরকার আল্লামা মুহাম্মাদ হোসাইন তাবাতাবাই তার রচিত আল-কুরানের অমর তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীর আল-মিজানে’ এই আয়াত-‘উহারা তারা আল্লাহ যাদের মাধ্যমে তাদের শত্রদের উপর লা’নত দিয়েছেন’-এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেনঃরাসুলুল্লাহ(সাঃ),আলী,ফাতিমা,হাসান এবং হুসাইন ছাড়া এই ব্যাক্তিবগ আর কেউ নন। তিনি আরও বলেন,’….সকল হাদিছ বননাকারীগন এই হাদিছ বননা করেছেন এবং সকল হাদিছ সংগ্রাহক তাদের সংকলনে ইহা লিপিবদ্ব করেছেন,যেমন-মুসলিম কতৃক তার সহীহ-তে ও তিরমিজি কতৃক তার সহীহ-তে। ঐতিহাসিকগনও যথারীতি এই ঘটনাকে নিশ্চিত করেছেন।

সুচনালগ্ন থেকে আজ পযন্ত সকল তাফসীরকার এবং তাবারী,আবুল ফিদা,ইবনে কাছির,সয়্যুতি প্রমুখের মত প্রখ্যাত হাদিছবেত্তা ও ঐতিহাসিকগন কোনরুপ আপত্তি বা সন্দেহ ছাড়াই ইহা উল্লেখ করেছেন। এভাবে উক্ত আলোচনার আলোকে ইহা সুষ্পষ্ট যে,সকল তাফসীরকার সবসম্মতভাবে আহলে বায়েত হিসেবে আলী,ফাতিমা,হাসান ও হুসাইনকে নিদেশ করেছেন। মুবাহেলার আয়াতে তাঁদেরকে উল্লেখ করার ফলে তাঁরা আল্লাহর সাহায্য প্রাথনার উসিলায় পরিনত হয়েছেন;ইহা(এই আয়াতে তাঁদের উল্লেখ)তাঁদের সুউচ্চ ও পবিত্র মানসিক ও নৈ্তিক গুনাবলীর একটি সুস্পষ্ট নিদেশক। আর এই ঘটনা তথা মুবাহেলার ময়দানে এই সকল পুতঃপবিত্র ব্যাক্তিবগকে আনয়নের জন্য আল্লাহ কতৃক তাঁর রাসুল(সাঃ)কে প্রদত্ত নিদেশনা তাঁদের(আহলে বায়েতের)পুতঃপবিত্র থাকার আরও একটি সুস্পষ্ট প্রমান হয়ে দাড়ায়। আর শত্রদের উপর আল্লাহর লা’নত প্রাথনা করার জন্য রাসুলের(সাঃ) এই চ্যালেঞ্জ আল্লাহর কাছে তাঁরা কত সুউচ্চ মযাদার অধিকারী তা প্রকাশ করে দেয়।

যেহেতু দ্বন্দ্ব ছিল সত্য এবং মিথ্যা এ দুটো সরাসরি বিপরীতমুখী স্রোত ধারার মধ্যে,সেহেতু ইসলামের সমগ্র অবকাঠামো যাদের উপর দাড়িয়েছিল এরুপ সরবোত্তম ব্যাক্তিবরগের মাধ্যমে ধরম বিশ্বাসের উপস্থাপনই ছিল সেই সময়ের পরিস্থিতির দাবী। মুবাহেলায় মহানবী(সাঃ)এর সঙ্গী হওয়ার মত আহলে বায়েত ছাড়া এমন যোগ্যতার অধিকারী আর কেউ ছিল না যাদের উপর ইসলামের ভাগ্য নিরভর করা সম্ভব ছিল। তাঁরা ছিলেন আহলে বায়েত হেদায়াত ও সৎকরমের আলোকবরতিকা। সবশক্তিমান আল্লাহ নিজে আল-কুরানে তাঁদেরকে পবিত্রতার আধার হিসেবে মযাদা প্রদান করেছেন। ইহা তাঁদেরকে পুনরায় সকল দৃষ্টিকোন হতেই পরিনত করেছিল সবশ্রেষ্ট আকষনীয় ব্যাক্তিত্বে।

তাঁরা ছিলেন ইসলামের মহাসত্যের হুজ্জাত(অকাট্য প্রমান)। প্রকৃ্তপক্ষে,মহাজ্ঞানী আল্লাহ মুসলমানদেরকে অঙ্গুলি নিদেশ করেছেন যে,খোদায়ী মিশনের ধারাবাহিকতা খাতামুন নাবিয়ীনের পর থেমে যাবে না,বরং তাঁর মাসুম(নিষ্পাপ) বংশধরদের মাধ্যমে উহা অব্যাহত থাকবে। তাঁদের কোনও প্রাথনা নামঞ্জুর থাকবে না এবং তাঁদের কোনও কথা বিভ্রান্ত হবে না। তাঁদের কথায় পরবত পযন্ত ঞ্ছানান্তর হতে পারে,মুবাহেলায় খৃষ্টানরা যা অনুধাবন করতে পেরেছিল। এসব নিষ্কলুষ(মাসুম)ব্যাক্তিবগের ব্যাপারে শত শত বছরের মুনাফেকীর ফসল হিসেবে উম্মাহর কিছু অংশের মধ্যে ভ্রান্ত ধারনা সুদীরঘকাল ধরে প্রতিষ্টিত থেকে যায়।

অসংখ্য সাধারন মানুষ এর দ্বারা বিভ্রান্ত হয়। তবে,এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য শুধুমাত্র এই আয়াতটিই যথেষ্ট। কুয়াশা কেটে যাওয়ার সাথে সাথে আহলে বায়েত হতে প্রাপ্ত সত্যের ছবি আরও সুস্পষ্ট রুপে প্রতিভাত হতে থাকবে;সুস্পষ্ট হতে থাকবে তাঁদের প্রদশিত শিক্ষা,চিন্তা-চেতনা,ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন,বননা-বিবরন,ফেকাহ….. ইত্যাদি রাসুলুল্লাহ(সাঃ)এর পয়গাম ও আহলে বায়েত কতৃক একনিষ্টভাবে সংরক্ষিত ও পৌছে দেয়া ইসলামের পুতঃপবিত্র নিরভেজাল অমীয়সুধা। তাঁদের দ্বারা পাক কুরান ইসলামের শত্রুদের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল এবং সরবকালের জন্য স্পস্টায়ন করেছিল যে,যারা তাঁদেরকে প্রত্যাখান করে তারা মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কিছুই নয়,তারা লা’নত ও শাস্তি পাওয়ার যোগ্যঃ’….. আর মিথ্যাবাদীদের উপরে আল্লাহর লা’নত দেই’। তাঁদের(আহলে বায়েত) চিরন্তন সত্যতা ও অনমনীয় দৃঢ়তা/ ন্যায়পরায়নতা ব্যাতিরেকে আল্লাহতায়ালা তাঁদেরকে এমন উচ্চমযাদা দান করতেন না,আর কুরান পাকেও তাঁদের সম্পকে এমন উচ্চমযাদাপুন ভাষ্য উচ্চারিত হতো না।

এই আয়াতে ভাষা সম্পকীয় কয়েকটি বিষয় রয়েছে যা পযবেক্ষনের জন্য মনোযোগের দাবী রাখে। এই দল(আলী,ফাতিমা,হাসান ও হুসাইন) বিশেষ একটি ‘আমাদের নারীদেরকে’ আর ‘আমাদের নিজদিগকে’ শব্দগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় নবীজী শব্দটি এখানে করতা(একটি কারক সম্বন্ধীয় পদ)হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে। রাসুল(সাঃ) যদি ফাতিমাকে(আঃ) না নিতেন তাহলে লোকেরা ‘আমাদের নারীদেরকে’ বলতে উম্মুল মোমেনিনদেরকে ভাবতো,’আমাদের সন্তান্দেরকে’ বলতে ফাতিমা(আঃ)কে উল্লেখ করতো যদিও তিনি মাত্র একজন মহিলা এবং ‘আমাদের নিজদিগকে’ বলতে কেবলমাত্র তাঁর পবিত্র সত্বাকে নিদেশ করতো। কিন্তু কেবলমাত্র এই ৪জনকে নিদিষ্ট করে সাথে নিয়ে,এবং এর বাহিরে আর অন্য কাউকে না নিয়ে,মহানবী(সাঃ) মুসলমানদের দেখাচ্ছিলেন যে,নারীদের জন্য সবোত্তম আদশ ফাতিমা(আঃ),বালকদের জন্য হাসান ও হুসাইন(আঃ);কুরানের বাক্য প্রকাশের ধারা অনুসারে আরও সূক্ষভাবে আলী(আঃ)এর জন্য ‘আমাদের নিজদিগকে’ শব্দটিকে ব্যাবহার করা হয়েছে যা দ্বারা মহানবী(সাঃ)এর সাথে তাঁর ঘনিষ্ট নৈকট্যের প্রতি মনোযোগ আকষন করা হয়েছে এবং উত্তরাধিকারের প্রশ্নটির সমাধান চিরতরে করে দেয়া হয়েছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।