আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্ট্রেলিয়াতে গাড়ী কেনা

অস্ট্রেলিয়াতে মাইগ্রেন্ট হয়ে আসলে রাস্তা ঘাট চেনা নিয়ম কানুন জানা বাড়ি ভাড়া করা শেষ হলে যে জিনিসটার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে লোকজন সেটা হলো গাড়ী। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এখানে বাংলাদেশের চাইতে ভালো হলেও দেখা যায় এমন এক জায়গায় আপনার কাজ পড়েছে সেখানে বাস ট্রেন ফেরী করে যেতে হয়। এখানে যেহেতু কাজ এর পারিশ্রমিক দেয় হয় ঘন্টা হিসেবে সেহেতু যেতে আসতে দুই ঘন্টা ব্যয় হলে দিনে পচিশ টাকা ঘন্টার চাকরিতে মিনিমাম ৫০ ডলার লস সপ্তাহে ২৫০ ডলার যা কিনা বাড়ী ভাড়ার সমান অন্য দিকে একটা ভাংগা চোরা গাড়ী থাকলেও ৫০ ডলারের পেট্রলে সপ্তাহ আরামসে পার করে দেয়া যায়। সেই সাথে নিজের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা রিতিমত বোনাস। এই সব সাত পাচ চিন্তা ভাবনা করতে করতেই গাড়ী কেনার তাগাদা অনুভব করেন মাইগ্রেন্ট লোকজন।

প্রথমেই খোজ নেন আগে যারা গাড়ী কিনেছেন তাদের কাছে ঘোরাঘুরি করেন গাড়ীর শো-রুমগুলিতে তারপরে ধুম করে কিনে ফেলেন জীবনের প্রথম গাড়ী এরপরে নানা রকম ধাক্কা খেয়ে আস্তে আস্তে হয়ে ওঠেন নিজেও একজন গাড়ী স্পেশিলস্ট মানে গাড়ী কেনার স্পেলিস্ট। অস্ট্রেলিয়াতে গাড়ী বিক্রি হয় তিন ভাবে প্রথমত গাড়ীর লাইসেন্সড ডিলার বা শো-রুম থেকে। ২য়ত প্রাইভেট বিক্রেতা বা সাধারন বিক্রেতা। ৩য়ত আরেকশ্রেনীর বিক্রেতা আছেন যারা বিভিন্ন ড্যামেজ বা ভাংগা গাড়ীর অকশন থেকে গাড়ী কিনে ঠিক ঠাক করে বা ডিলার অকশন থেকেই সস্তায় গাড়ী কিনে প্রাইভেট বিক্রেতা সেজে নেটে বিজ্ঞাপন দিয়ে গাড়ী বিক্রি করেন। এদের কাছে অনেক সময় সস্তায় ভালো ভালো গাড়ী পাওয়া যায়।

যেহেতু তারা সাধারনত ট্যাক্স দেয় না এবং তাদের নিদ্রিস্ট কোনো শো-রুম নেই বা এস্টাবলিশমেন্ট বা ম্যানেজমেন্ট কষ্ট নাই সেহেতু তারা অন্য শো-রুম থেকে সস্তায় গাড়ী দিতে পারে। এরা সাধারনত ই-বে , কার সেলস(,http://www.carsales.com.au/ ) বা গাম-ট্রি(http://brisbane.gumtree.com.au/) বা ট্রেডিং পোস্টে ( Click This Link )বা কারস গাইড ( http://www.carsguide.com.au/ )তে প্রাইভেট সেলার হিসেবে বিজ্ঞাপন দিয়ে গাড়ী বিক্রি করে। অস্ট্রেলিয়া প্রথম দেখায় অনেক নিরাপদ সভ্য ভব্য দেশ মনে হলেও বাস্তবে এখানেও অপরাধ হয় প্রচুর গাড়ী চুরি হওয়া তার মধ্যে অন্যতম এবং সেই চোরাই গাড়ী বিজ্ঞাপন দিয়ে সস্তায় বেচে দেয়ার ঘটনাও মোটামুটি কমন। আবার অনকেই ফাইনেন্সে বা লোন করে গাড়ী কেনেন কিছুদিন যাওয়ার পর ইনকাম কমে গেলে বা ফাইনেন্সের রি-পেমেন্ট দিতে না পেরে দেখা যায় গাড়ী বেচে দিয়ে অন্য স্টেটে চলে যায় অথবা অন্য স্টেটে যেয়ে গাড়ী বেচে দিয়ে নিজেরা টাকা নিয়ে চলে যায় অন্যদিকে ফাইনেন্স কোম্পানী গন্ধ শুকতে শুকতে দেখবেন পুলিশ নিয়ে টো-ট্রাক নিয়ে চলে এসেছে আপনার ড্রাইভওয়েতে , টেনে নিয়ে যাচ্ছে আপনার সাধের গাড়ী। সাধারনত ৫০০০ ডলারের ওপরে গাড়ী হলেও এই ধরনের কেস হবার চান্স থাকে।

আবার আরেক ধরনের কাহিনী হয় সেটা হলো একসিডেন্ট করা গাড়ী। গাড়ী একসিডেন্ট হলে কিছু কিছু ত্রুটি আছে যা অল্পতে ঠিক করা যায় এবং রাস্তায় চলার জন্য ঝুকিপুর্ন নয় আবার কিছু কিছু গাড়ীর ত্রুটি আছে যা ঠিক করা গেলেও রাস্তায় চলার জন্য ঝুকিপুর্ন যা এখানে রাইট অফ ভেহিকেল নামে সু-পরিচিত। সাধারনত গাড়ী একসিডেন্ট হলে এখানে ইনশুরার এর এসেসর এসেস করে গাড়ী ঠিক করার উপোযগী না হলে একসিডেন্ট করা গাড়ীর বিপরীতে নতুন গাড়ী কেনার টাকা গাড়ী মালিককে দিয়ে দেন এবং সেই সাথে গাড়ী ডিটেইলস রিটেন অফ গাড়ীর রেজিস্টারে যুক্ত করে দেন। পরে গাড়ী মালিক সেই ভাংগা গাড়ীকে রাইট অফ বা ড্যামেজ গাড়ী হিসেবে ৫০ থেকে ১০০ ডলারে বিক্রি করে দেন জাঙ্ক কালেক্টরদের কাছে। জাঙ্কিদের কাছ থেকে সেই গাড়ী পাচ শ বা এক হাজার টাকায় কিনে আরেক শ্রেনীর লোক রাস্তা থেকে আরেকটা গাড়ী চুরি করে সেটার ভিন প্লেট খুলে ড্যামেজ গাড়ীর ভিন প্লেট ওটাতে লাগিয়ে কয়েক পদের ইন্সপেকশন এর ধাপ পার করিয়ে আবার বাজারে ছাড়ে।

পুরো ব্যাপারটায় এই পর্যায় পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয় কারন পুরোটাই চলে চ্যানেলের মাধমে। সমস্যা হয় রাস্তায় চলতে গিয়ে বেরসিক পুলিশের পাল্লায় পড়লে যে তার ডাটা বেইজের সাথে গাড়ির ইঞ্জিন নাম্বার ট্রান্সমিশন নাম্বার আর ভিন প্লেট মেলাতে যায় তখন কপাল খুব ভালো না হলে এই তিনটা আর মিলতে চায় না কেমন করে যেনো একটা বা দুইটা ডিজিট এদিক সেদিক হয়ে যায়। আর মেজাজ আরো খারাপ হবে যখন সেই বেরসিক পুলিশ ভদ্রমহিলা/মোহদয়টি আপনাকে বলবে পরিচিত কাউকে ডেকে একটা লিফট নেবার জন্য বা ট্যাক্সি ডাকার জন্য কারন আপনার চালিত গাড়িটি চোরাই !!!আর আগামীকাল সকাল দশটায় অমুক পুলিশ স্টেশনে গিয়ে একটা ছোট খাট ঘন্টা দুয়েকের ইন্টারভ্যু দেয়ার জন্য। আর অইদিকে যার কাছ থেকে গাড়ীটি কিনেছেন তার নাম্বারে রিং দিলে বলবে এই নাম্বারটি বর্তমানে খালি আছে বা সুচড অফ। এছাড়াও আরেক পাট্টি আছে যারা দুইটা একসিডেন্ট করা গাড়ী কে জোড়া দিয়ে বিক্রি করে অর্থাত একটা সেইম মডেলের গাড়ী সামনে একসিডেন্ট করা আর পেছনে একসিডেন্ট করা গাড়ী কে মাঝখান থেকে খুলে জোড়া দিয়ে নতুন পেইন্ট করে বিক্রি করা।

এই সমস্যা থেকে বাচার জন্য কোনো গাড়ী বাজার দর থেকে তুলনামুলক ভাবে কম দাম চাইলেই একটা কাজ করতে পারেন সেটা হলো গাড়ীর হিস্টোরি চেক করে নেয়া http://www.carhistory.com.au/ এখান থেকে ৩২ ডলারে যেই গাড়ী কিনবেন সেই গাড়ির ভিন নাম্বার দিয়ে চেক করিয়ে দেখে নিবেন গাড়ির আগের কোনো কাহিনি আছে কিনা বা গাড়ী কোনো ফাইনেন্স কোম্পানীর কাছে বন্ধক আছে কিনা অথবা আপনার নিকটস্থ মেইন রোডস বা আর টি এ তে গেলেও গাড়ির ইতিহাস বলে দেবে। পরের পর্ব ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।