আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রিপল সেঞ্চুরীর খানাপিনা (দুঃসাহসটা করেই ফেললাম)

ট্রিপল সেঞ্চুরী হয়েছে আগের পোস্টে। পুলাপাইনের দাবীতে ইরান সিরিজ আপাতত মুলতুবী রেখে খানাপিনা পোস্ট নিয়ে চলে এলাম। তাও আবার গুগল মামুর কাছ থেকে ধার করা খাবার নিয়ে না, নিজের রান্না নিয়ে। (যেন কত বড় রাঁধুনি!) শুধু কয়েকটা খাবারের ছবিই দিতে পারতাম। কিন্তু ব্লগে এতদিন হয়ে গেল, ৩০০ পোস্ট দিয়ে ফেললাম, অথচ এখন পর্যন্ত কোন রেসিপি পোস্ট দেয়া হয়নি।

তাই এই পোস্টে একটা রেসিপি দেয়ার দুঃসাহসই করে ফেলি, তাও আবার সচিত্র। খাবারের নাম "এগ রোল"। রোল বলতে যেরকম হয়, ভেজিটেবল রোল কিংবা বিফ রোল, ওগুলোর সাথে পার্থক্য হল ঐ রোলে ভেজিটেবল বা বিফ থাকে রোলের ভিতরে, এখানে ডিম থাকবে রোলের বাইরে। প্রথমে উপকরণ: ছয়টা এগ রোলের পরিমাণ দিলাম। (এইটা যে এত কঠিন কাজ কে জানত।

উপকরণের পরিমাণ লিখতে গিয়ে ইচ্ছা করছিল প্রতিটার পাশে লিখে রাখি 'আন্দাজমত' ) আটা বা ময়দা: ৩/৪ কাপ। (মানে এক কাপের চার ভাগের তিন অংশ, আবার তিন-চার কাপ মনে করবেন না। ) পানি: ৩/৪ কাপ। লবণ: আন্দাজমত। (এইটার পরিমাণ বলাটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ।

) শুকনা মরিচ গুঁড়া: দুই চিমটি। ডিম: ২ টা। টমেটো: ২ টা। গাজর: ছোট হলে ৪-৫ টা। মাঝারী হলে ২ টাই যথেষ্ট।

কাঁচামরিচ: ২ টা। সরিষার তেল: এক চামচ। সয়াবিন তেল: পরিমাণমত। এইবার পদ্ধতিতে আসি। প্রথমে গাজরের খোসা ছাড়িয়ে গাজর, টমেটো আর কাঁচা মরিচ ধুয়ে নিলাম।

গাজর আর কাঁচামরিচ কুচি কুচি করে কেটে নিলাম। কেউ চাইলে গাজর ঝুরি করে নিতেও পারেন। টমেটোও কুচি করে নিতে হবে। যত ছোট করা যায় তত ভালো। কুচিগুলো একসাথে রেখে দিলাম, এক্ষুণি লবণ দিলাম না, নইলে পানি উঠে যাবে।

এবার একটা পাতিলে (অথবা যে যেভাবে আটা বা ময়দা সিদ্ধ করেন) পানি নিয়ে চুলায় বসিয়ে দিলাম, যতক্ষণ না এইভাবে পানি ফুটতে শুরু করে। পানি ফুটে উঠলেই তাতে আধা চামচ লবণ গুলে আটা বা ময়দা দিয়ে তাড়াতাড়ি কাঠের খুন্তি দিয়ে নেড়ে আটা বা ময়দা সিদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর পিড়ি বেলন বের করলাম। সুন্দর করে আটা বা ময়দার কাই তৈরী করলাম, এইভাবে কোলবালিশের মত করে। পানির পরিমাণ একটু বেশি ইচ্ছা করে নিয়েছি যাতে কাইটা নরম হয়।

শক্ত হলে রুটি পাতলা হবে না। এইবার কোলবালিশ ভেঙে ছোট ছোট ছয়টা বল করে ফেললাম। বলগুলো একটা একটা করে বেলে ছয়টা পাতলা নরম গোল গোল রুটি বানিয়ে ফেলুন। পাতলা হওয়া দরকার এইজন্য যে এগুলো চুলায় খুব অল্প সময় থাকবে, পাতলা না হলে ভিতরে কাঁচা থেকে যেতে পারে। রুটি বানানো হলে আসল উপকরণে আসা যাক।

দুইটা মাঝারি সাইজের ডিম। মুরগী বা হাঁস যার যেমন পছন্দ। আমি নিয়েছি ফার্মের মুরগীর ডিম। একটা বাটিতে ডিম ভেঙে নিয়ে তাতে এক চিমটি লবণ আর দুই চিমটি শুকনা মরিচ গুঁড়া নিলাম। এবার ডিমটুকু ফেটে নিলাম।

চামচ দিয়ে যেটুকু ফেটানো যায় ওটুকুই যথেষ্ট। এবার কড়াই বা ফ্রাইপ্যানে মৃদু আঁচে অল্প করে তেল গরম করে ফেটানো ডিমের মধ্যে রুটি একটা একটা করে ডুবিয়ে নিয়ে গরম তেলে ছেড়ে দিলাম, একটু পর উল্টে দিলাম। ঠিক যেভাবে বোম্বাই টোস্ট বানায় পাউরুটি দিয়ে। তেল একবারেই বেশি না দিয়ে প্রতিবার একটু একটু করে দেয়া ভালো। এবার আমাদের টমেটো-গাজর কুচিতে আন্দাজমত লবণ আর এক চামচ সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে নিলাম।

এই মিশ্রণটুকু একটু করে ডিমে ভাজা রুটির মধ্যে নিয়ে নিলাম। এইবার রোল করে দিলেই তৈরী হয়ে গেল মজাদার এগ রোল। ছয়টা রোল কয়জন খাবেন সেটা আপনাদের ব্যাপার। আমি তো একাই সব সাবাড় করি। অবশ্য দুই বেলায়।

কেউ চাইলে ভিতরের সালাদটা ইচ্ছামত করতে পারেন, শসাকুচি, পেয়াঁজকুচিও দেয়া যায়। আবার ডিমের মধ্যেও পেঁয়াজকুচি দেয়া যায়। আমার কাছে অবশ্য এই খাবারে পেঁয়াজটা কেন যেন ভালো লাগে না। এই রান্নার পিছনের ইতিহাসও বলি একটু। কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পিছনের গেটের বাইরে রাস্তায় খাবারের ঠেলা নিয়ে দুইজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জানতে চাইলাম তারা কী বিক্রী করে।

খুব আগ্রহ নিয়ে তারা বলল, দিদি, এর নাম এগ রোল, খাবেন? ওদের রুটি বানানোই ছিল। গরম তাওয়ায় তেল দিয়ে ডিমের মধ্যে রুটিটা সেঁকে দিয়ে সালাদ দিয়ে মুড়ে দিল। গরম গরম ঐ এগ রোলের স্বাদ যেন এখনও পাই। এবার একটা ছোটখাট দুঃসংবাদ। আমার ইরানের দিনগুলো সিরিজটা আবার ফিরে আসবে পূর্ণোদ্যমে।

যদিও মূলকথাগুলো বলা শেষ, কিন্তু এখনও আরও অনেক বাড়তি কথা বলার আছে। সেগুলো এক পর্বে শেষ করে দিব বলে লিখেও ফেলেছিলাম, আমার ব্লগ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পোস্ট হয়েছিল সেটা। কিন্তু সামুর বাঘের কাছে আমার হার স্বীকার করতেই হল। পুরো লেখাটা গায়েব হয়ে গিয়েছে। আবার ধৈর্য্য ধরে লিখতে বসব, তবে অত বড় করে আর লেখা সম্ভব হবে না।

আরও তিন-চার পর্ব নিয়ে লিখতে হবে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.