আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

""ইকোরান বাংলাদেশ'' - বাংলাদেশের সর্বপ্রথম গাড়ি তৈরির প্রতিযোগিতা

পরীক্ষামূলক সম্প্রচার ... ... !!! গাড়ি নিয়া শখ আহ্লাদ আছে এমন মানুষের সংখ্যা মনে হয় তাবৎ দুনিয়ায় খুব একটা কম না। আর সেই জন্যই গাড়ি নিয়া বানানো ম্যুভিই বলি আর গাড়ির রেসই বলি - কোনটাতেই দর্শকেরও অভাব হয়না। আর রেসিং গেম হইলে তো কথাই নাই!!! ছোটবেলায় কম্প্যুটার বলতেই বুঝতাম দুই প্রকার বাক্স => একটাতে এনেফেস-রোড রাশ আছে, আরেকটাতে এনেফেস-রোড রাশ নাই!!! অবশ্য আরেক জাতের মানুষ আছে যাদের গাড়িতে চড়ে ঘুইরা বেড়ানোর চাইতে কিংবা গাড়িতে চইড়া 'ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস' দেখতে যাওয়ার চাইতেও 'অটোবট' মার্কা ধুম ধারাক্কা কার বানাইতে আরো বেশি আগ্রহ!!! তবে আমাদের দেশে এতদিনেও সেই অর্থে গাড়ি বানানো টাইপ কিছু হয় নাই। কার কাস্টোমাইজ করা পর্যন্তই আমাদের দৌড়। অবশ্য মাঝে মধ্যে লিমুজিন বানাই ফেলার ঘটনাও আমাদের এখানেই ঘটে যায়!!! এইদিকে আমাদের ভার্সিটিতেও যে খুব বেশি কিছু হয় তাও না।

ব্যাপারটা খুবই প্যাথেটিক। রোবোকনের সুবাদে আমাদের ডিপার্টমেন্ট বেশ কয়বার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্তত কয়বার কমপিট করার সুযোগ তৈরি করে নিয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ থেকে সেটাও বন্ধ। আমরা তাই ভাবছিলাম নিজেরাই কিছু করা যায় কিনা। এইজন্য গত দুই টার্ম ধরে টুকটাক কিছু কিছু কাজও করছিলাম স্টুডেন্ট লেভেল থেকেই।

তবে এবার মনে হয় ঘুম ভাংতে যাচ্ছে বুয়েটের, বাংলাদেশের। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির উদ্যোগে কিছুদিন আগে (খুব সম্ভবত সেটা এপ্রিল '১১, আমার পুরোপুরি মনে নাই) বুয়েটের সাথে যোগাযোগ করা হয় একটা নতুন কনসেপ্ট নিয়ে। কনসেপ্ট অনেকটা এরকম ছিল যে - জাপানে বেশ অনেক বছর ধরেই একটা প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে যার নাম "ইকোরান' । এই কনটেস্টের মনোযোগের দিকটা হল ফুয়েল এফিসিয়েন্সি, মানে একটা গাড়ি কত কম তেল খরচে কত বেশি দূর যেতে পারে। জাপানি 'হোন্ডা' কোম্পানি এই প্রতিযোগিতাটার স্পন্সর করে থাকে।

সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি গাড়ি নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। (এমনকি স্কুলের বাচ্চারাও সেখানে নিজেদের বানানো গাড়ি নিয়ে অংশগ্রহণ করে থাকে!!!) সেখানে যেন আমরা বাংলাদেশের হয়ে অংশগ্রহণ করি। এখন দেখার বিষয় হল যে জাপানীরা এই প্রতিযোগিতায় অনেক অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ব্যবহার করতে পারে। যার প্রমাণ হল ফুয়েল এফিসিয়েন্সিতে তাদের সাফল্য। তাদের এখন পর্যন্ত রেকর্ড হল এক লিটার ফুয়েল খরচ করে তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়া!!! এতোটুকু পড়েই মনে হয় বোঝা যাচ্ছে যে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়াটা শেষ পর্যন্ত আমাদের জন্য 'অংশগ্রহণই মুখ্য কথা!!' হয়ে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

তাই বুয়েটের পক্ষ হতে প্রস্তাব দেয়া বাংলাদেশের বাস্তবতায় এখানেই একটা কনটেস্ট করা হোক। এবং প্রস্তাব দেয়া হয় জাপানীরা আমাদের কিছু থ্রি হুইলার (মানে তিন চাক্কার গাড়ির!!) ইঞ্জিন দিবে, আমরা সেগুলো ব্যবহার করে গাড়ি বানাবো। এখানে আরো একটা কিন্তু থেকে যায়। জাপানে প্রতিযোগিতাটা হয় থ্রি হুইলার নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় ফোর হুইলার নিয়ে কাজ করার আগ্রহটা অনেক বেশি।

কারণটা খুব সহজ। কেউ তিন চাকার গাড়ি নিয়ে কাজ করছে শুনলেই আমাদের মনে হয় - ওও! টেম্পুর কাজ!!! কিন্তু ফোর হুইলারের কথা শুনলেই মাথায় আসে - ওরেব্বাস!! কার বানাচ্ছে!!! সোজা কথায়, ফোর হুইলার নিয়ে কাজ করাটা আমাদের কাছে অনেক বেশি "কুল' একটা ব্যাপার! তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারের নীতি অনেকটাই ফোর হুইলারবান্ধব। তাই, বুয়েট প্রস্তাব দেয় প্রতিযোগিতাটা যেন ফোর হুইলার নিয়ে হয়। জাপানিদের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলতে থাকে। গত অক্টোবর নাগাদ বুয়েট থেকে বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যাদের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়।

তাছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি ইন্ডাস্ট্রি যারা অটোমোবাইল সেক্টরে কাজ করছে তাদের সাথেও যোগাযোগ করা হয়। সবাই অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহও দেখায়। এই প্রাথমিক পর্যায়ের কাজগুলো শেষ করার পর বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট একটা সেমিনার আয়োজন করে তাদের স্টুডেন্টদের নিয়ে। সেখানে ড: এহসান এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন শিক্ষার্থীদের সামনে। এরপর সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটা প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য একটা সাব কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য কি কি স্পেসিফিকেশনে গাড়ি বানাতে হবে তার একটা প্রাথমিক নির্দেশনা তৈরি করে। গত ২২ ডিসেম্বর তারিখে আরো একটা সেমিনার হয়। সেখানে বুয়েটের শিক্ষকদের পাশাপাশি জাইকার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিল। ইকোরানে অংশ নেয়া এক জাপানি যিনি বাংলাদেশে ইকোরানের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন, তিনি এই প্রতিযোগিতার খুঁটিনাটি তুলে ধরেন। এই সেমিনারে গাড়ি বানানোর টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশানগুলো তুলে ধরা হয়।

এগুলোর ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের গাড়ির কনসেপ্ট ডিজাইন তৈরি করতে বলা হয়। বুয়েটে সামনে মাস থেকে টার্ম ফাইনাল শুরু হবে বলে সামনের ফেব্রুয়ারিতে এই ডিজাইনগুলো জমা দিতে বলা হয়। সেখান একটা বা দুইটা ডিজাইন ফাইনাল করা হবে যেগুলোর উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে গাড়ি বানানো হবে। তাছাড়া আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া হয়। "ওয়ালটন' শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব গাড়ি বানাবে সেগুলোর ইঞ্জিন স্পন্সর করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানানো হয়।

এখন পর্যন্ত ইকোরান বিষয়ে এগুলোই আপডেট। এইটাও আমার আরেকটা তাড়াহুড়ার লেখা। কালকে ম্যাথ অলিম্পিয়াডের জন্য খাগড়াছড়ি যাচ্ছি। সেখান থেকে ফিরে লেখাটা এডিট করে প্রকাশ করব। আপাতত এটুকুই... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।